বাবার বীভৎস মুখ দেখতে ভয় by সালমান ফরিদ
বাবার
বীভৎস মুখ দেখে আঁৎকে উঠেছিল এক বছরের ছোট মেয়ে সুনাইশা। প্রথমবার দূর
থেকে তাকিয়ে থেকেছিল শুধু। কিন্তু যখন বাবার আদার নেয়ার জন্য তাকে সামনে
নেয়া হলো, সে ভয়ে চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠে। সেই যে কান্না শুরু করেছিল আর মুখ
ফিরিয়েছিল বাবার দিক থেকে তারপর আর সে পোড়া-বীভৎস মুখের দিকে আর তাকায় নি।
শান্ত করার জন্য তাকে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে আসতে হয়েছে। তখন মেয়েকে কাছে
পেয়ে আদর করতে না পারায় এবং তাকে দেখে ভয় পাওয়ায় বাবা নিজেও কেঁদেছিলেন
অঝোর ধারায়। কথাগুলো বলছিলেন গৃহিণী রত্না বেগম (২২)। গত ২৪শে জানুয়ারি
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীবাহী গাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হওয়া খোকনের (৩১)
স্ত্রী তিনি। গতকাল তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে।
তিনি বলেন, মেয়ে ছোট্ট। পুড়ে তার বাবার যে চেহারা হয়েছে তা দেখে সে কেন
আমিও ভয় পাচ্ছি। অবরোধের আগুনে পুড়ে তার চেহারা এতটাই বিকৃত হয়েছে যে,
প্রথমে স্বামীকে দেখে আমি চিনতেই পারিনি। একজন দেখিয়ে দেয়ার পর এবং গায়ের
কাপড় দেখে নিশ্চিত হলাম তিনি আমার স্বামী। এখনও তার চেহারার যে অবস্থা তাতে
মাঝে মধ্যে আমিও ভয়ে আঁৎকে উঠি। তিনি জানান, মেয়েকে দেখতে প্রতিদিনই বায়না
ধরেন খোকন। নিজেকে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি ভাবছেন। সেজন্য বারবার মেয়েকে
দেখতে চান। আদর করতে চান। কিন্তু সে ভয় পাওয়ায় আমরা তাকে আর হাসপাতালে এনে
তার সামনে নিতে চাইছি না। আগুনে তার মুখ, মাথা ও দুই হাত পুড়ে গেছে। এখনও
তাকে পাইপের সাহায্যে ওষুধ ও খাবার খাওয়াতে হচ্ছে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে
আলাপকালে খোকন বলেন, ঘটনার পর মনে হয়নি বেঁচে যাব। আবার এই পৃথিবীর আলো
বাতাসে ফিরে আসতে পারবো। আমরা রাজনীতি করি না। বুঝিও না। দিনে আনি দিনে
খাই। আমাদের উপর এই সহিংসতা কেন? এর বিচার কি নেই? তিনি বলেন, সাক্ষাৎ
মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসায় এখন বেঁচে থাকতে খুব ইচ্ছা করছে। অন্তত মেয়েটার
জন্য বাঁচতে চাই। আমি ছাড়া তার মুখে ভাত তুলে দেয়ার মতো কেউ নেই। খোকন
গুলিস্তানের ফুটপাতে জুতার দোকান দিতেন। যা আয় করতেন তা দিয়েই কোন রকমে
দিনপাত চালাতেন। থাকতেন রূপগঞ্জের ভুলতায় ভাড়া বস্তিতে।
ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে প্রতিদিনই অবরোধে সহিংসতার শিকার হয়ে কেউ না কেউ এসে ভর্তি হচ্ছে। বাড়ছে অগ্নিদগ্ধ মানুষের সংখ্যা। তৃতীয় তলায় একটি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি সবগুলোতে এবং বারান্দায় অতিরিক্ত বিছানায় স্থান হচ্ছে তাদের। মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে নেমেছেন জীবন-মরণ যুদ্ধে। তাদের কেউ কেউ লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে। আর তার পাশে বসে স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন কিংবা মা-বাবা আতঙ্কে আছেন অনিশ্চত ভবিষ্যতের। আর দগ্ধরা কাতরাচ্ছেন তীব্র যন্ত্রণায়। তাদের সারা শরীরে পুড়ে দগ্ধ হওয়ার ব্যথা। মনে ব্যথা নিরপরাধ হয়েও রাজনৈতিক সহিংসতায় কষ্ট ভোগ করায়। অবরোধের আগুন থেকে রক্ষা পাননি নারী কিংবা শিশুও। মৃত্যুর তালিকায় আছে তাদের নামও। বৃদ্ধরাও আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে। তাদেরই একজন আবু তাহের। ৭০ বছর বয়সের এই প্রবীণ লোকটি দেশের বাড়ি পাবনা থেকে ২ সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে গত ১৭ই জানুয়ারি অবরোধের বিভীষিকায় আক্রান্ত হন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রাতে ব্রাদার্স পরিবহন থেকে নামার আগেই তারা শিকার হন সহিংসতায়। এ ঘটনায় তার মুখ, হাত ও শরীরের আরও কিছু অংশ পুড়ে গেছে। লাফিয়ে নামতে গিয়ে হাত ভেঙেছে ছেলে আবু বক্করের। আর পা ভেঙেছে আরেক ছেলে সুজনের। বয়সের ভারে এমনিতেই ন্যূব্জ।
তারওপর সহিংসতার শিকার হওয়ায় তার অবস্থা করুণ। কোন রকমে কথা বলতে পারছিলেন। বললেন, এখন মানুষের মাঝে কোন দয়া মায়া নেই। দেশের সব মানুষকে পুড়িয়ে হলেও যে তারা ক্ষমতা ভোগ করতে চায়। তাদের কাছে আমাদের মূল্য থাকলে এই বয়সে এসে অন্তত এভাবে আগুনে পুড়ে হাসপাতালে কাতরাতে হতো না। নালিশ দেয়ার কোন জায়গা নেই, উপরওয়ালাই এর বিচার করবেন। যাত্রাবাড়ীর সংহিসতার শিকার মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন (৩০) বলেন, মাঝে-মধ্যে মনে হয় আগুনে পুড়ার এই যন্ত্রণা থেকে মরণই ভাল। যারা মরে গেছেন তারা বেঁচে গেছেন। এই যন্ত্রণা আমাদের কষ্ট দিয়ে মারবে। সারা শরীরে ব্যথা। হাত-পা নাড়ানো যায় না। ঘাড় ফেরানো যায় না। এমনকি ঠোঁট নাড়াতেও কষ্ট হয়। এ অবস্থায় বাঁচা যায় না। যারা আমাদের এ অবস্থার জন্য দায়ী তারা যদি আগুনে পুড়তো তাহলে এর স্বাদ কি তা বুঝতে পারতো।
এদিকে গতকাল থেকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে আকেটি হেলপ ডেস্ক খুলেছে সরকার সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ। ইউনিটের ১০৬ রুমে সব সময় ঢামেকের একজন চিকিৎসক অবস্থান করে রোগীতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা তথ্য দিয়ে সহায়তা করছেন। বিকালে দায়িত্ব পালনকারী ডা. রায়হান ইসলাম বলেন, আমরা ওষুধ দিয়ে বা চিকিৎসা দিয়ে সহায়তা করছি না, তবে রোগী কি কারণে কোথায় কোন চিকিৎসকের কাছে যাবেন, কোন ওষুধ কোথায় পাওয়া যাবে। কোন টেস্টের জন্য কোথায় যেতে হবে সেই তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। যেহেতু আগুনে পড়ুার ঘটনা অনেক পরিবারের জন্য নতুন, তাই তারা এ সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না। তারা এ ডেস্ক থেকে পরামর্শমূলক সহায়তা পাবেন।
ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে প্রতিদিনই অবরোধে সহিংসতার শিকার হয়ে কেউ না কেউ এসে ভর্তি হচ্ছে। বাড়ছে অগ্নিদগ্ধ মানুষের সংখ্যা। তৃতীয় তলায় একটি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি সবগুলোতে এবং বারান্দায় অতিরিক্ত বিছানায় স্থান হচ্ছে তাদের। মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে নেমেছেন জীবন-মরণ যুদ্ধে। তাদের কেউ কেউ লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে। আর তার পাশে বসে স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন কিংবা মা-বাবা আতঙ্কে আছেন অনিশ্চত ভবিষ্যতের। আর দগ্ধরা কাতরাচ্ছেন তীব্র যন্ত্রণায়। তাদের সারা শরীরে পুড়ে দগ্ধ হওয়ার ব্যথা। মনে ব্যথা নিরপরাধ হয়েও রাজনৈতিক সহিংসতায় কষ্ট ভোগ করায়। অবরোধের আগুন থেকে রক্ষা পাননি নারী কিংবা শিশুও। মৃত্যুর তালিকায় আছে তাদের নামও। বৃদ্ধরাও আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে। তাদেরই একজন আবু তাহের। ৭০ বছর বয়সের এই প্রবীণ লোকটি দেশের বাড়ি পাবনা থেকে ২ সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে গত ১৭ই জানুয়ারি অবরোধের বিভীষিকায় আক্রান্ত হন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রাতে ব্রাদার্স পরিবহন থেকে নামার আগেই তারা শিকার হন সহিংসতায়। এ ঘটনায় তার মুখ, হাত ও শরীরের আরও কিছু অংশ পুড়ে গেছে। লাফিয়ে নামতে গিয়ে হাত ভেঙেছে ছেলে আবু বক্করের। আর পা ভেঙেছে আরেক ছেলে সুজনের। বয়সের ভারে এমনিতেই ন্যূব্জ।
তারওপর সহিংসতার শিকার হওয়ায় তার অবস্থা করুণ। কোন রকমে কথা বলতে পারছিলেন। বললেন, এখন মানুষের মাঝে কোন দয়া মায়া নেই। দেশের সব মানুষকে পুড়িয়ে হলেও যে তারা ক্ষমতা ভোগ করতে চায়। তাদের কাছে আমাদের মূল্য থাকলে এই বয়সে এসে অন্তত এভাবে আগুনে পুড়ে হাসপাতালে কাতরাতে হতো না। নালিশ দেয়ার কোন জায়গা নেই, উপরওয়ালাই এর বিচার করবেন। যাত্রাবাড়ীর সংহিসতার শিকার মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন (৩০) বলেন, মাঝে-মধ্যে মনে হয় আগুনে পুড়ার এই যন্ত্রণা থেকে মরণই ভাল। যারা মরে গেছেন তারা বেঁচে গেছেন। এই যন্ত্রণা আমাদের কষ্ট দিয়ে মারবে। সারা শরীরে ব্যথা। হাত-পা নাড়ানো যায় না। ঘাড় ফেরানো যায় না। এমনকি ঠোঁট নাড়াতেও কষ্ট হয়। এ অবস্থায় বাঁচা যায় না। যারা আমাদের এ অবস্থার জন্য দায়ী তারা যদি আগুনে পুড়তো তাহলে এর স্বাদ কি তা বুঝতে পারতো।
এদিকে গতকাল থেকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে আকেটি হেলপ ডেস্ক খুলেছে সরকার সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ। ইউনিটের ১০৬ রুমে সব সময় ঢামেকের একজন চিকিৎসক অবস্থান করে রোগীতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা তথ্য দিয়ে সহায়তা করছেন। বিকালে দায়িত্ব পালনকারী ডা. রায়হান ইসলাম বলেন, আমরা ওষুধ দিয়ে বা চিকিৎসা দিয়ে সহায়তা করছি না, তবে রোগী কি কারণে কোথায় কোন চিকিৎসকের কাছে যাবেন, কোন ওষুধ কোথায় পাওয়া যাবে। কোন টেস্টের জন্য কোথায় যেতে হবে সেই তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। যেহেতু আগুনে পড়ুার ঘটনা অনেক পরিবারের জন্য নতুন, তাই তারা এ সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না। তারা এ ডেস্ক থেকে পরামর্শমূলক সহায়তা পাবেন।
No comments