আব্বু আম্মুকে এনে দাও -আল আমিন-বিউটি দম্পতির সন্তানদের আর্তি by সরকার মাজহারুল মান্নান
(রংপুরে
নিখোঁজ দলিল লেখক আল আমিন ও তার স্ত্রী জেসমিন নাহার বিউটির অপেক্ষায়
দাদি মাতোয়ারা বেগমের সাথে ছেলে রাইয়ান ও মেয়ে আলপনা। ইনসেটে আল আমিন ও তার
স্ত্রী বিউটি : নয়া দিগন্ত) পাঁচ
বছরের আল্পনা, আর ৯ বছরের রাইয়ান। অবুঝ দুই ভাইবোন। চোখে শুধুই পানি।
নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। ঘুমও নেই চোখে। রাজ্যের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মলিন হয়ে গেছে
শিশু দু’টির চেহারা। কাউকে দেখামাত্রই বলছে ‘আব্বু আম্মুকে ফিরিয়ে দিন।’
তাদের ছাড়া আমরা ঘুমাতে পারি না। গত ১৪ জানুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুরের চিথলী
দক্ষিণপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে বিকেলে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে
সশস্ত্র পোশাকি ও সাদা পোশাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়
তাদের পিতা আল আমিন ও মা জেসমিন নাহার বিউটিকে। সেই থেকে গতকাল রোববার
পর্যন্ত পেরিয়ে গেছে ১৮ দিন। হয়েছে হরতাল। র্যাব, পুলিশসহ প্রশাসনের
সর্বত্রই দেয়া হয়েছে লিখিত আবেদন। কিন্তু তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়নি সন্তানদের
কাছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এরকম কোনো নিখোঁজের
ঘটনা তাদের জানা নেই।
আল আমিনের (৪০) বাবা শাহজাহান মিয়া (৬৫)। তিনি পেশায় স্থানীয় মিঠাপুকুর রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন ও খুদে পানের দোকানদার ও মা মাতোয়ারো বেগম (৫৫) গৃহিণী। আল আমিন পেশায় মিঠাপুকুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক। মিঠাপুকুর রেজিস্ট্রি অফিসের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে লাগোয়া আল আমিনের বাড়ি। আল আমিনের বড় ছেলে রাইয়ান স্থানীয় অর্কিড কিন্ডারগার্টেনের তৃতীয় শ্রেণী এবং মেয়ে আল্পনা শিশু নিকেতনের প্লে কাসে পড়ালেখা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা : আল আমিনের তৃতীয় ভাই আব্দুল আখের বেগের স্ত্রী ইসমত আরা এ্যানি বেগম নয়া দিগন্তকে জানান, ১৪ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টার মতো বাজে। রেজিস্ট্রি অফিস থেকে আমার ভাসুর দুপুরের খাবারের জন্য বাসায় এসে সবেমাত্র খেতে বসেছেন। তখন হঠাৎ করেই ৫০ থেকে ৬০ জন লোক আমাদের বাড়িটি ঘেরাও করে। সবার হাতে ছিল লাঠি, পিস্তল, রিভলবার। কিন্তু কারো গায়ে পুলিশ, র্যাব, কিংবা বিজিবির পোশাক ছিল না। তারা আল আমিনের ঘরে প্রবেশ করলে আল আমিন ভাই ভয়ে খাবার রেখেই বাথরুমে ঢোকে। সেখান থেকে তারা আল আমিনকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে এসে বেদম মারধর করতে থাকে। আমরা বারবার তাদেরকে হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে অনুরোধ করে বলি, উনি ডায়াবেটিসের রোগী। তাকে মারবেন না। কিন্তু তারা শোনেনি। মারতে মারতে তারা তাকে মাটিতে শুয়ে ফেলে।’ ইতোমধ্যে পোশাক পরিহিত র্যাবের সদস্যরাও আসে। একপর্যায়ে তারা র্যাবের মাথায় যে কালো কাপড় থাকে সেই কাপড় দিয়ে আল আমিনের চোখ-মুখ বাঁধে এবং তাকে নিয়ে পাশের বাগানবাড়ি, আশপাশের বাড়িতে নিয়ে যায় ও তল্লাশি চালায়। প্রায় ১ ঘণ্টাব্যাপী এভাবে তল্লাশি চালিয়ে তারা আল আমিনকে নিয়ে যায়।
আল আমিনের মা মাতোয়ারা বেগম নয়া দিগন্তকে জানান, আমার ছেলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো জিডিও নেই। সে একজন সাধারণ মানুষ। তাকে এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা মিঠাপুকুর থানায় যাই। থানা থেকে বলা হয়, এরকম নামের কাউকেই আটক করা হয়নি।
আল আমিনের বাবা বয়োবৃদ্ধ শাহজাহান মিয়া নয়া দিগন্তকে জানান, পুত্র, পুত্রবধূ ও কাজের মেয়ের এভাবে গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনায় আমি মিঠাপুকুর থানায় গিয়ে জিডি করতে চাই। কিন্তু তারা জিডি নেননি।
আল আমিনের দ্বিতীয় ভাই ওমর ফারুক সোহাগের স্ত্রী আয়েশা ফারুক আইরিন নয়া দিগন্তকে জানান, ২০ জানুয়ারি বেলা ২টায় আমি রাইয়ান ও আল্পনাকে নিয়ে র্যাব-১৩ অফিসে যাই। সেখানে গেটে গিয়ে দায়িত্বরত র্যাব সদস্যদের পরিচয় দিয়ে বলি, ‘ আল আমিনের ছেলে-মেয়ে তার সাথে দেখা করার জন্য এসেছে। পরে তিনি ভেতরে নিয়ে যান। এরপর একজন বড় অফিসার আসেন। তখন তার কাছে বলি আল আমিন ও তার স্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছি তখন ওই র্যাব কর্মকর্তা আমাকে বলেন, ‘ওনারা এখানে আছেন, ভালো আছেন। তবে দেখা করা যাবে না।’
আইরিন বেগম আরো বলেন, ‘তখন আমি তাকে (র্যাব কর্মকর্তা) বলি, যেহেতু এখানে আছে, সেহেতু সন্তান দু’টির সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেন। তখন ওই র্যাব কর্মকর্তা আমাকে বলেন, ‘দেখা করা যাবে না। আপনি শিশু দু’টিকে ভালোভাবে দেখেশুনে রাখেন।’ এরপর আমি সেখান থেকে চলে আসি।
আইরিন বলেন, শিশু দু’টি খুব কান্নাকাটি শুরু করলে আবারো ২২ জানুয়ারি সকাল ১০টায় র্যাব-১৩ রংপুর অফিসে যাই। তখন গেট থেকে আবারো আমাদের সম্মানের সাথে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ওই র্যাব অফিসার ছিলেন না। যারা ছিলেন, তাদের আবারো অনুরোধ করি শিশু দু’টিকে বাবা-মায়ের সাথে দেখা করিয়ে দিতে। কিন্তু তখন তারা বলেন, ‘আপনাকে তো বলেই দেয়া হয়েছে। দেখা হবে না। আপনি আর আসবেন না। ওনারা ভালো আছেন। আপনি চলে যান। না গেলে আমাদের চাকরি থাকবে না।’ এরপর আমি সেখান থেকে ফিরে আসি।
আইরিন বলেন, এখন শিশু দু’টিকে কিছুতেই মানানো যাচ্ছে না। সারাক্ষণ শুধু বলছে, আব্বুর কাছে যাবো। আম্মুর কাছে যাবো। তারা কিছু খাচ্ছেও না। ঘুমাচ্ছেও না। এ অবস্থায় আমি চরম অসহায় হয়ে আছি।
কাছে যেতেই হু হু করে কাঁদতে থাকল আল আমিনের অবুঝ মেয়ে আল্পনা। কাঁদতে কাঁদতেই সে বলল, আমি আম্মু-আব্বুর গায়ের ওপর পা দিয়ে ছাড়া ঘুমাতে পারি না। কিন্তু ওরা আব্বুকে মেরে ধরে নিয়ে গেছে। আম্মুকেও নিয়ে গেছে। আমার আব্বু-আম্মুকে কেন তারা ছেড়ে দিচ্ছে না। আম্মু- আব্বু না এলে আমি ভাতও খাবো, ঘুমাবোও না।
আল আমিন দম্পতির ছেলে রাইয়ান। কাস থ্রিতে পড়ে। সেদিনের ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাইয়ান বলে, আমার বাবা তো চোরও না ডাকাতও না। তাহলে ওরা কেন আমার আব্বুকে এভাবে মারল। কেন তারা আম্মুকে ধরে নিয়ে গেল। আমার আব্বু-আম্মুকে বাড়িতে এনে দিন। তা নাহলে আমাকেও আব্বু-আম্মুর কাছে নিয়ে যান। দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকমল হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, আল আমিন আমার দলিল লেখক সমিতির একজন সক্রিয় সদস্য। তাকে ভালো মানুষ হিসেবেই জানি।
গত ২৭ জানুয়ারি পুত্র ও পুত্রবধূর এবং কাজের মেয়ের সন্ধান চেয়ে পিতা শাহজাহান ও মা মাতোয়ারা বেগম রংপুর বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, ডিসি, এসপি এবং র্যাব-১৩ অধিনায়ক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। এর আগে তাদের মুক্তির দাবিতে রংপুর বিভাগের আট জেলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২৮ জানুয়ারি সকাল থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করে। গত ১৫ জানুয়ারি রাতে রংপুর রিপোর্টার্স কাবে সংবাদ সম্মেলন করে পুত্র, পুত্রবধূ ও কাজের মেয়ের মুক্তির দাবি জানান মা মাতোয়ারা বেগম। মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির নয়া দিগন্তকে জানান, আল আমিনের বাবা কিংবা মা কেউই থানায় জিডি করার জন্য আসেনি। বিষয়টি আমরা অবহিত নই। র্যাব-১৩ রংপুর অফিসের উপঅধিনায়ক মেজর ফরহান সাংবাদিকদের জানান, অনেক জায়গায় তারা অভিযোগ দিয়েছে, সেটা আমরা জানি। কিন্তু আল আমিন, জেসমিন নাহার বিউটি ও মৌসুমীর নিখোঁজের বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই।
আল আমিনের (৪০) বাবা শাহজাহান মিয়া (৬৫)। তিনি পেশায় স্থানীয় মিঠাপুকুর রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন ও খুদে পানের দোকানদার ও মা মাতোয়ারো বেগম (৫৫) গৃহিণী। আল আমিন পেশায় মিঠাপুকুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক। মিঠাপুকুর রেজিস্ট্রি অফিসের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে লাগোয়া আল আমিনের বাড়ি। আল আমিনের বড় ছেলে রাইয়ান স্থানীয় অর্কিড কিন্ডারগার্টেনের তৃতীয় শ্রেণী এবং মেয়ে আল্পনা শিশু নিকেতনের প্লে কাসে পড়ালেখা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা : আল আমিনের তৃতীয় ভাই আব্দুল আখের বেগের স্ত্রী ইসমত আরা এ্যানি বেগম নয়া দিগন্তকে জানান, ১৪ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টার মতো বাজে। রেজিস্ট্রি অফিস থেকে আমার ভাসুর দুপুরের খাবারের জন্য বাসায় এসে সবেমাত্র খেতে বসেছেন। তখন হঠাৎ করেই ৫০ থেকে ৬০ জন লোক আমাদের বাড়িটি ঘেরাও করে। সবার হাতে ছিল লাঠি, পিস্তল, রিভলবার। কিন্তু কারো গায়ে পুলিশ, র্যাব, কিংবা বিজিবির পোশাক ছিল না। তারা আল আমিনের ঘরে প্রবেশ করলে আল আমিন ভাই ভয়ে খাবার রেখেই বাথরুমে ঢোকে। সেখান থেকে তারা আল আমিনকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে এসে বেদম মারধর করতে থাকে। আমরা বারবার তাদেরকে হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে অনুরোধ করে বলি, উনি ডায়াবেটিসের রোগী। তাকে মারবেন না। কিন্তু তারা শোনেনি। মারতে মারতে তারা তাকে মাটিতে শুয়ে ফেলে।’ ইতোমধ্যে পোশাক পরিহিত র্যাবের সদস্যরাও আসে। একপর্যায়ে তারা র্যাবের মাথায় যে কালো কাপড় থাকে সেই কাপড় দিয়ে আল আমিনের চোখ-মুখ বাঁধে এবং তাকে নিয়ে পাশের বাগানবাড়ি, আশপাশের বাড়িতে নিয়ে যায় ও তল্লাশি চালায়। প্রায় ১ ঘণ্টাব্যাপী এভাবে তল্লাশি চালিয়ে তারা আল আমিনকে নিয়ে যায়।
আল আমিনের মা মাতোয়ারা বেগম নয়া দিগন্তকে জানান, আমার ছেলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো জিডিও নেই। সে একজন সাধারণ মানুষ। তাকে এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা মিঠাপুকুর থানায় যাই। থানা থেকে বলা হয়, এরকম নামের কাউকেই আটক করা হয়নি।
আল আমিনের বাবা বয়োবৃদ্ধ শাহজাহান মিয়া নয়া দিগন্তকে জানান, পুত্র, পুত্রবধূ ও কাজের মেয়ের এভাবে গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনায় আমি মিঠাপুকুর থানায় গিয়ে জিডি করতে চাই। কিন্তু তারা জিডি নেননি।
আল আমিনের দ্বিতীয় ভাই ওমর ফারুক সোহাগের স্ত্রী আয়েশা ফারুক আইরিন নয়া দিগন্তকে জানান, ২০ জানুয়ারি বেলা ২টায় আমি রাইয়ান ও আল্পনাকে নিয়ে র্যাব-১৩ অফিসে যাই। সেখানে গেটে গিয়ে দায়িত্বরত র্যাব সদস্যদের পরিচয় দিয়ে বলি, ‘ আল আমিনের ছেলে-মেয়ে তার সাথে দেখা করার জন্য এসেছে। পরে তিনি ভেতরে নিয়ে যান। এরপর একজন বড় অফিসার আসেন। তখন তার কাছে বলি আল আমিন ও তার স্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছি তখন ওই র্যাব কর্মকর্তা আমাকে বলেন, ‘ওনারা এখানে আছেন, ভালো আছেন। তবে দেখা করা যাবে না।’
আইরিন বেগম আরো বলেন, ‘তখন আমি তাকে (র্যাব কর্মকর্তা) বলি, যেহেতু এখানে আছে, সেহেতু সন্তান দু’টির সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেন। তখন ওই র্যাব কর্মকর্তা আমাকে বলেন, ‘দেখা করা যাবে না। আপনি শিশু দু’টিকে ভালোভাবে দেখেশুনে রাখেন।’ এরপর আমি সেখান থেকে চলে আসি।
আইরিন বলেন, শিশু দু’টি খুব কান্নাকাটি শুরু করলে আবারো ২২ জানুয়ারি সকাল ১০টায় র্যাব-১৩ রংপুর অফিসে যাই। তখন গেট থেকে আবারো আমাদের সম্মানের সাথে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ওই র্যাব অফিসার ছিলেন না। যারা ছিলেন, তাদের আবারো অনুরোধ করি শিশু দু’টিকে বাবা-মায়ের সাথে দেখা করিয়ে দিতে। কিন্তু তখন তারা বলেন, ‘আপনাকে তো বলেই দেয়া হয়েছে। দেখা হবে না। আপনি আর আসবেন না। ওনারা ভালো আছেন। আপনি চলে যান। না গেলে আমাদের চাকরি থাকবে না।’ এরপর আমি সেখান থেকে ফিরে আসি।
আইরিন বলেন, এখন শিশু দু’টিকে কিছুতেই মানানো যাচ্ছে না। সারাক্ষণ শুধু বলছে, আব্বুর কাছে যাবো। আম্মুর কাছে যাবো। তারা কিছু খাচ্ছেও না। ঘুমাচ্ছেও না। এ অবস্থায় আমি চরম অসহায় হয়ে আছি।
কাছে যেতেই হু হু করে কাঁদতে থাকল আল আমিনের অবুঝ মেয়ে আল্পনা। কাঁদতে কাঁদতেই সে বলল, আমি আম্মু-আব্বুর গায়ের ওপর পা দিয়ে ছাড়া ঘুমাতে পারি না। কিন্তু ওরা আব্বুকে মেরে ধরে নিয়ে গেছে। আম্মুকেও নিয়ে গেছে। আমার আব্বু-আম্মুকে কেন তারা ছেড়ে দিচ্ছে না। আম্মু- আব্বু না এলে আমি ভাতও খাবো, ঘুমাবোও না।
আল আমিন দম্পতির ছেলে রাইয়ান। কাস থ্রিতে পড়ে। সেদিনের ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাইয়ান বলে, আমার বাবা তো চোরও না ডাকাতও না। তাহলে ওরা কেন আমার আব্বুকে এভাবে মারল। কেন তারা আম্মুকে ধরে নিয়ে গেল। আমার আব্বু-আম্মুকে বাড়িতে এনে দিন। তা নাহলে আমাকেও আব্বু-আম্মুর কাছে নিয়ে যান। দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকমল হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, আল আমিন আমার দলিল লেখক সমিতির একজন সক্রিয় সদস্য। তাকে ভালো মানুষ হিসেবেই জানি।
গত ২৭ জানুয়ারি পুত্র ও পুত্রবধূর এবং কাজের মেয়ের সন্ধান চেয়ে পিতা শাহজাহান ও মা মাতোয়ারা বেগম রংপুর বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, ডিসি, এসপি এবং র্যাব-১৩ অধিনায়ক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। এর আগে তাদের মুক্তির দাবিতে রংপুর বিভাগের আট জেলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২৮ জানুয়ারি সকাল থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করে। গত ১৫ জানুয়ারি রাতে রংপুর রিপোর্টার্স কাবে সংবাদ সম্মেলন করে পুত্র, পুত্রবধূ ও কাজের মেয়ের মুক্তির দাবি জানান মা মাতোয়ারা বেগম। মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির নয়া দিগন্তকে জানান, আল আমিনের বাবা কিংবা মা কেউই থানায় জিডি করার জন্য আসেনি। বিষয়টি আমরা অবহিত নই। র্যাব-১৩ রংপুর অফিসের উপঅধিনায়ক মেজর ফরহান সাংবাদিকদের জানান, অনেক জায়গায় তারা অভিযোগ দিয়েছে, সেটা আমরা জানি। কিন্তু আল আমিন, জেসমিন নাহার বিউটি ও মৌসুমীর নিখোঁজের বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই।
No comments