রাজৈনতিক সংকট- এই অশুভ প্রতিযোগিতার অবসান জরুরি by বদিউল আলম মজুমদার
আমাদের
দুটি প্রধান দল—আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—যেন এক ভয়াবহ অশুভ প্রতিযোগিতায়
লিপ্ত হয়েছে। কোন দল কত কঠোর, হঠকারী ও নিষ্ঠুর হতে পারে, এটি তারই
প্রতিযোগিতা। গত ৩১ জানুয়ারি বিএনপির পক্ষ থেকে এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল
ডাকা হয়েছিল। ওই দিনই সরকারের একজন মন্ত্রী খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের,
যেখানে তিনি গত তিন সপ্তাহের অধিককাল ধরে অবস্থান করছেন, পানি ও বিদ্যুৎ,
এমনকি খাবার সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দেন। আরেকজন মন্ত্রী তাঁকে ইনজেকশন
দিয়ে ঘুমিয়ে রাখার হুমকি দেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই খালেদা জিয়ার কার্যালয়
থেকে বিদ্যুৎ, ডিশলাইন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, যদিও
প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ-সংযোগ আবার পুনঃস্থাপন করা হয়। এসব হুমকি ও
কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গত কয়েক সপ্তাহের সহিংস আন্দোলনের সঙ্গে, যে
আন্দোলনে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬৬ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আর এসবই করা
হয় জনগণের নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার নামে। আমরা মনে করি, এই অশুভ
প্রতিযোগিতার স্থায়ীভাবে অবসান জরুরি।
এ প্রসঙ্গে ছোটবেলায় পড়া একটি গল্পের কথা মনে পড়ে। একদল শিশু খেলাচ্ছলে একটি ডোবায় ঢিল ছুড়ছিল। সেই ডোবায় অনেকগুলো ব্যাঙ বাস করত, ঢিলের আঘাতে যারা ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর একটি বয়স্ক ব্যাঙ বলে উঠল, তোমাদের জন্য যেটা খেলা, আমাদের জন্য সেটা নির্ঘাত মৃত্যু। তেমনিভাবে আমাদের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের জন্য যেটা ক্ষমতার খেলা, বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেটা এক চরম অশনিসংকেত। কারণ, এমন অশুভ প্রতিযোগিতা চলতে থাকলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে শাসনের অযোগ্য হয়ে যেতে পারে এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। এমনকি আমরা গৃহযুদ্ধের দিকেও ধাবিত হতে পারি, যা সাধারণ জনগণের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে বাধ্য।
আমরা মনে করি যে, অনাকাঙ্ক্ষিত কঠোরতা দল দুটির অন্তর্নিহিত দুর্বলতারই প্রতিফলন। যুক্তিতে দুর্বল হলে মানুষ যেমন উচ্চকণ্ঠ হয়, তেমনি জনবিচ্ছিন্ন হলেও রাজনৈতিক দল অযৌক্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০১-০৬ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি-জামায়াত দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন তথা তাদের কৃত অপকর্ম ও অপশাসনের জন্য জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। আর এই জনবিচ্ছিন্নতার কারণেই তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বিতর্কিত এবং তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের প্রতি ভয়ংকর আচরণ করে, যার চরম মাশুল অবশ্য তাদের দিতে হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও আওয়ামী লীগ ও তার জোটভুক্তরা তাদের বহু ব্যর্থতা ও অপকর্মের কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর এই জনবিচ্ছিন্নতার কারণে তারা পুরো তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল করে নির্বাচনী ‘খেলা’ শুরুর আগে একতরফাভাবে খেলার নিয়মই বদলে দেয় এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে, যেখানে ভোটারের উপস্থিতি ছিল অতি নগণ্য। ফলে ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রথমবারের মতো—১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া, যে নির্বাচনের ফলাফল টিকে থাকেনি—জনগণ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। আর আমাদের নির্বাচনসর্বস্ব ‘এক দিনের গণতন্ত্র’ পরিণত হয় ভোটারবিহীন প্রহসনে।
৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সরকার বলপ্রয়োগ করে ক্ষমতায় টিকে থাকার এবং গত ৩ জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়াকে ইট-বালুর ট্রাক দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। তার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে দেশব্যাপী হরতাল ও অবরোধের ডাক দেওয়া হয়, যা ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায়ই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন নাগরিক সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই বিচ্ছিন্ন করার রাজনীতিতে লিপ্ত হয়ে ক্ষমতাসীনেরা নিজেরাই যেন ক্রমাগতভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। হরতাল-অবরোধ, সহিংসতা এবং ছাত্রছাত্রীদের জীবন নিয়ে হঠকারিতার জন্য বিএনপিও ইতিমধ্যে জনগণের সহানুভূতি হারিয়েছে।
অনেকেই বলবেন যে, জনবিচ্ছিন্ন হলেও আওয়ামী লীগ আর বিএনপিই আমাদের দেশে এখনো সবচেয়ে বড় দল। এ কথা সত্য যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। তবে এঁদের অধিকাংশই একটি ফায়দার চেইনে বাঁধা এবং কতগুলো স্লোগান ও প্রতীকের দ্বারা হিপনোটাইজড, তাঁরা নীতি-আদর্শের দ্বারা আকৃষ্ট নন। কারণ, আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলে নীতি-আদর্শ বলে কিছু নেই। ক্ষমতা এবং ক্ষমতায় গিয়ে বা ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে নগদ নারায়ণ কামাই যেন তাদের জন্য রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার বড় আকর্ষণ। তাই অন্যায়ভাবে অর্জিত টাকা ও পেশিশক্তির মালিকেরাই বহুলাংশে আজ আমাদের দুটি রাজনৈতিক দলের প্রাণশক্তি। নীতি-আদর্শ বা কর্মসূচি দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে যেসব নেতা-কর্মী অতীতে এই দুটি দলে যুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই আজ সাইড লাইনে। আর যেসব দলনিরপেক্ষ ভোটারের সমর্থনে তাঁরা বারবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন, তাঁরাও দল দুটি থেকে বহুলাংশে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে আমাদের দুটি প্রধান দলই আজ ফায়দাপুষ্ট, শিষ্টাচারবিবর্জিত দল দাসদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আর এ ধরনের জনবিচ্ছিন্নতার কারণেই তারা পরস্পরের প্রতি অযৌক্তিক আচরণ ও নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করছে, যার মাধ্যমে অবশ্য তারা একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করার স্বপ্ন দেখছে।
আমরা জানি না, কী কারণে কিংবা কাদের প্রভাবে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে এসেছে। তবে আমরা এতে কিছুটা উৎসাহিত হয়েছি, কারণ মনে হয় যেন সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আশা করি যে সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হাস্যাস্পদ হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করবে এবং সুস্পষ্ট অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যাঁরা সম্পৃক্ত নন, তাঁদের কারাগার থেকে মুক্তি দেবে। একই সঙ্গে বিরাজমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে সব স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সংলাপে বসার একটি তারিখ ঘোষণা করবে, কারণ সংলাপ এবং সমঝোতাই একমাত্র গণতন্ত্রের ভাষা। অপরদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট তাদের হরতাল-অবরোধ অবিলম্বে প্রত্যাহার করবে এবং প্রায় ১৫ লাখ ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলা করার হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। ফলে সবাই মিলে সংলাপে বসে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছার এবং সমস্যার একটি টেকসই সমাধানে উপনীত হওয়ার পথ সুগম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আমরা শঙ্কিত যে এ ধরনের অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ শাসনেরই অযোগ্য হয়ে পড়বে।
বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
এ প্রসঙ্গে ছোটবেলায় পড়া একটি গল্পের কথা মনে পড়ে। একদল শিশু খেলাচ্ছলে একটি ডোবায় ঢিল ছুড়ছিল। সেই ডোবায় অনেকগুলো ব্যাঙ বাস করত, ঢিলের আঘাতে যারা ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর একটি বয়স্ক ব্যাঙ বলে উঠল, তোমাদের জন্য যেটা খেলা, আমাদের জন্য সেটা নির্ঘাত মৃত্যু। তেমনিভাবে আমাদের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের জন্য যেটা ক্ষমতার খেলা, বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেটা এক চরম অশনিসংকেত। কারণ, এমন অশুভ প্রতিযোগিতা চলতে থাকলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে শাসনের অযোগ্য হয়ে যেতে পারে এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। এমনকি আমরা গৃহযুদ্ধের দিকেও ধাবিত হতে পারি, যা সাধারণ জনগণের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে বাধ্য।
আমরা মনে করি যে, অনাকাঙ্ক্ষিত কঠোরতা দল দুটির অন্তর্নিহিত দুর্বলতারই প্রতিফলন। যুক্তিতে দুর্বল হলে মানুষ যেমন উচ্চকণ্ঠ হয়, তেমনি জনবিচ্ছিন্ন হলেও রাজনৈতিক দল অযৌক্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০১-০৬ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি-জামায়াত দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন তথা তাদের কৃত অপকর্ম ও অপশাসনের জন্য জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। আর এই জনবিচ্ছিন্নতার কারণেই তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বিতর্কিত এবং তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের প্রতি ভয়ংকর আচরণ করে, যার চরম মাশুল অবশ্য তাদের দিতে হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও আওয়ামী লীগ ও তার জোটভুক্তরা তাদের বহু ব্যর্থতা ও অপকর্মের কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর এই জনবিচ্ছিন্নতার কারণে তারা পুরো তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল করে নির্বাচনী ‘খেলা’ শুরুর আগে একতরফাভাবে খেলার নিয়মই বদলে দেয় এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে, যেখানে ভোটারের উপস্থিতি ছিল অতি নগণ্য। ফলে ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রথমবারের মতো—১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া, যে নির্বাচনের ফলাফল টিকে থাকেনি—জনগণ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। আর আমাদের নির্বাচনসর্বস্ব ‘এক দিনের গণতন্ত্র’ পরিণত হয় ভোটারবিহীন প্রহসনে।
৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সরকার বলপ্রয়োগ করে ক্ষমতায় টিকে থাকার এবং গত ৩ জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়াকে ইট-বালুর ট্রাক দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। তার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে দেশব্যাপী হরতাল ও অবরোধের ডাক দেওয়া হয়, যা ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায়ই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন নাগরিক সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই বিচ্ছিন্ন করার রাজনীতিতে লিপ্ত হয়ে ক্ষমতাসীনেরা নিজেরাই যেন ক্রমাগতভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। হরতাল-অবরোধ, সহিংসতা এবং ছাত্রছাত্রীদের জীবন নিয়ে হঠকারিতার জন্য বিএনপিও ইতিমধ্যে জনগণের সহানুভূতি হারিয়েছে।
অনেকেই বলবেন যে, জনবিচ্ছিন্ন হলেও আওয়ামী লীগ আর বিএনপিই আমাদের দেশে এখনো সবচেয়ে বড় দল। এ কথা সত্য যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। তবে এঁদের অধিকাংশই একটি ফায়দার চেইনে বাঁধা এবং কতগুলো স্লোগান ও প্রতীকের দ্বারা হিপনোটাইজড, তাঁরা নীতি-আদর্শের দ্বারা আকৃষ্ট নন। কারণ, আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলে নীতি-আদর্শ বলে কিছু নেই। ক্ষমতা এবং ক্ষমতায় গিয়ে বা ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে নগদ নারায়ণ কামাই যেন তাদের জন্য রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার বড় আকর্ষণ। তাই অন্যায়ভাবে অর্জিত টাকা ও পেশিশক্তির মালিকেরাই বহুলাংশে আজ আমাদের দুটি রাজনৈতিক দলের প্রাণশক্তি। নীতি-আদর্শ বা কর্মসূচি দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে যেসব নেতা-কর্মী অতীতে এই দুটি দলে যুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই আজ সাইড লাইনে। আর যেসব দলনিরপেক্ষ ভোটারের সমর্থনে তাঁরা বারবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন, তাঁরাও দল দুটি থেকে বহুলাংশে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে আমাদের দুটি প্রধান দলই আজ ফায়দাপুষ্ট, শিষ্টাচারবিবর্জিত দল দাসদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আর এ ধরনের জনবিচ্ছিন্নতার কারণেই তারা পরস্পরের প্রতি অযৌক্তিক আচরণ ও নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করছে, যার মাধ্যমে অবশ্য তারা একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করার স্বপ্ন দেখছে।
আমরা জানি না, কী কারণে কিংবা কাদের প্রভাবে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে এসেছে। তবে আমরা এতে কিছুটা উৎসাহিত হয়েছি, কারণ মনে হয় যেন সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আশা করি যে সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হাস্যাস্পদ হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করবে এবং সুস্পষ্ট অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যাঁরা সম্পৃক্ত নন, তাঁদের কারাগার থেকে মুক্তি দেবে। একই সঙ্গে বিরাজমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে সব স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সংলাপে বসার একটি তারিখ ঘোষণা করবে, কারণ সংলাপ এবং সমঝোতাই একমাত্র গণতন্ত্রের ভাষা। অপরদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট তাদের হরতাল-অবরোধ অবিলম্বে প্রত্যাহার করবে এবং প্রায় ১৫ লাখ ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলা করার হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। ফলে সবাই মিলে সংলাপে বসে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছার এবং সমস্যার একটি টেকসই সমাধানে উপনীত হওয়ার পথ সুগম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আমরা শঙ্কিত যে এ ধরনের অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ শাসনেরই অযোগ্য হয়ে পড়বে।
বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
No comments