দুই দলকে জাতিসঙ্ঘের আহ্বান- একগুঁয়েমি সঙ্কটকে আরো জটিল করে দেবে
বাংলাদেশের অবনতিশীল পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসঙ্ঘ রাজনৈতিক মতপার্থক্য মিটিয়ে সমস্যার সমাধানে অব্যাহতভাবে প্রধান দুই দলের নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখার কথা বলেছে। একই সাথে শান্তিপূর্ণ বিােভ সমাবেশ করার অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বসংস্থা। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে জাতিসঙ্ঘ উদ্বিগ্ন। সংস্থার রাজনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত সিনিয়র কর্মকর্তাসহ অন্যরা বারবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। তারা বাংলাদেশের নেতাদের সাথে সাাৎ এবং শান্তিপূর্ণভাবে কিভাবে সঙ্কটের সমাধান করা যায়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশে এখনো ঘটেনি এমন বিষয়ে অব্যাহতভাবে উদ্বেগের কথাও জানানো হয়েছে। উদ্বেগ জানানো হয়েছে সহিংসতা নিয়ে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও বিােভ সমাবেশ করতে দেয়ার কথাও সরকারকে অব্যাহতভাবে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের চলমান অস্থিরতা এবং সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সাথে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সহিংসতার আশ্রয় নেয়ার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, অবশ্যই সব বাংলাদেশীর শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশের অধিকার ও মতা থাকতে হবে। অন্য দিকে, বিএনপি জোটের টানা অবরোধে চলমান নাশকতা ও সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার নাক গলাবে না বলে জানিয়ে দিয়ে বলেছে, ভারত শুধু এটাই চায় যে, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ ভালো থাকুক আর আশা করে যে, তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করবে। বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি চলছে, তার সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক দিক হচ্ছেÑ এ সমস্যাটির সাথে যারা যুক্ত তাদের সবাই এটি যে একটি সঙ্কট সেটিই স্বীকার করতে চাইছে না। জাতিসঙ্ঘ বলছে আলোচনা করে সঙ্কটের সমাধান করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রও বলছে সহিংসতা পরিহার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার দু’টোই নিশ্চিত করতে হবে। ভারত বাংলাদেশের এই অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জড়িত না হওয়ার কথা জানিয়ে অতীতে পালন করা অঘোষিত অবস্থান থেকে একধরনের সরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। অন্য কূটনৈতিক অংশীদারদের বক্তব্যেরও সার কথা হলো, বাংলাদেশে সৃষ্ট পরিস্থিতি একটি রাজনৈতিক সঙ্কট। এই সঙ্কটের সমাধান করতে হবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। আর এ পথে না গেলে কী হবে সেটির ইঙ্গিতও তারা কেউ প্রত্যক্ষ আবার কেউ পরোক্ষভাবে দিচ্ছে। বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ইকোনমিস্ট তো রাখঢাক না করেই সামরিক হস্তক্ষেপ ঘটতে পারে বলে উল্লেখ করেছে। আমরা মনে করি, কেবল আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে বাংলাদেশের চলমান সমস্যার সমাধান করতে হবে। দমন পীড়ন হত্যা ক্রসফায়ার বা বোমা সহিংসতাÑ এসব দেশকে সার্বিকভাবে ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যাবে। এই উপলব্ধি যত দ্রুত সব পক্ষের হবে ততই তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক। এর বাইরে টানেলের অন্ধকার ভেদ করে আলোকরেখা ফুটে ওঠার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। জাতিসঙ্ঘের বক্তব্যেও সেই ইঙ্গিতই পাওয়া যায়। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের একগুঁয়েমি দেশকে আরো জটিল অবস্থায় ঠেলে দেবেÑ এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
No comments