প্রতিদিন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড- সরকার ভুল পথে চলছে
বিরোধী
দলের নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের বিচারের আওতায় না এনে তথাকথিত ‘ক্রস ফায়ারে’
হত্যা করে সরকার চলমান রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের কৌশল নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রকাশ্য হরতাল ও অবরোধের সাথে জড়িতদের গুলি
করে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এর পর থেকে প্রতিদিন দেশের কোথাও-না-কোথাও
তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে
দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের তিন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।
কুমিল্লা ও রাজশাহীতে দুই শিবির নেতা ও যশোরে এক জামায়াত নেতাকে হত্যা করা
হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে পুলিশের পক্ষ থেকে একই ধরনের কাহিনী
প্রচার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাখ্যা যা-ই হোক না কেন,
এগুলো যে নিখাদ রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সর্বশেষ এক
দিনে যে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে তার মধ্যে দু’জন ছাত্র। তাদের বিরুদ্ধে
যদি কোনো অভিযোগ থাকত তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিত ছিল তাদের
গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা। এরপর বিচারের মাধ্যমে তাদের যেকোনো শাস্তি
দেয়া যেত। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আইনিপ্রক্রিয়ার মধ্যে
না এনে হত্যা করেছে। আইনের দৃষ্টিতে এগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং
অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচারবহির্ভূত
হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত বা নির্দেশদাতাও অপরাধী। বাংলাদেশে চলমান
রাজনৈতিক সঙ্কট রাজনৈতিকভাবে নিরসন না করে ক্ষমতাসীনেরা বল প্রয়োগের
মাধ্যমে দমনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিরোধী দলের রাজনৈতিক আন্দোলনকে
সন্ত্রাসী তৎপরতা হিসেবে উল্লেখ করে নানা ধরনের নিপীড়নমূলক তৎপরতা চালানো
হচ্ছে। সরকারের এই কৌশল যে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে গত এক মাসের ঘটনা তা
প্রমাণ করে। সরকারের একাধিক মন্ত্রী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু
এক মাসেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি বরং আগামী দিনগুলোতে অস্থিরতা ও জনগণের
নিরাপত্তাহীনতা আরো তীব্র রূপ নেবে তার আলামত সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আমরা মনে
করি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হত্যা করে বা ভয় দেখিয়ে এ ধরনের আন্দোলন দমন
করা সম্ভব হবে না বরং তা আরো তীব্র রূপ নিতে পারে। কারণ এ ধরনের হত্যাকাণ্ড
বিরোধী নেতাকর্মীদের আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় করে। বিরোধী দলের
নেতাকর্মীদের হত্যা করার পথ সম্পূর্ণ ভুল পথ। সরকারের উচিত এ ধরনের
হত্যাকাণ্ড বন্ধ করে রাজনৈতিক আলোচনা শুরু করা।
No comments