দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আবার কেজরিওয়াল! কংগ্রেসের ভরাডুবি
কংগ্রেসের
নাক কাটা যেতে পারে, আর তাতেই বিজেপির যাত্রাভঙ্গ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা!
শনিবার দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের বুথ ফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত, গত বারের তুলনায়
বিজেপির ভোট বাড়ছে। কিন্তু তার থেকেও বেশি বাড়ছে আম আদমি পার্টি আপের ভোট।
কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কের অনেকটাই চলে যাচ্ছে তাদের দখলে। ফলে আবার দিল্লির
মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন অরবিন্দ কেজরিয়াল। ৭০ আসনের বিধানসভায় সরকার গঠন করতে
দরকার ৩৮ আসনের। আপ এর চেয়ে বেশি পাবে বলেই বেশির ভাগ এক্সিট পোলে দেখা
যাচ্ছে।
শনিবার এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসেন তাদের বুথ ফেরত সমীক্ষায় জানিয়েছে, কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি পেতে পারে ৪৩টি আসন, বিজেপির কপালে জুটতে পারে ২৬টি আসন এবং কংগ্রেস মাত্র একটি আসন পেয়ে তলানিতে ঠেকতে পারে। অন্য প্রায় সব ক’টি বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই এর কাছাকাছি পূর্বাভাস দেখা গিয়েছে।
কিন্তু আসল ছবিটা ধরা পড়েছে শতাংশের হিসেবে। দিল্লিতে ২০১৩ সালে বিধানসভা ভোট হয়। সে বার বিজেপি পেয়েছিল ৩১.১ শতাংশ ভোট। এ বার এবিপি নিউজের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, শতাংশের হিসেবে ভোট বাড়ারই সম্ভাবনা গেরুয়া বাহিনীর। তারা পেতে পারে ৩৪ শতাংশ ভোট। উল্টো দিকে, ২০১৩ সালে আপ পেয়েছিল ২৯.৫ শতাংশ ভোট। বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, এ বার তাদের ৪১ শতাংশ ভোট পাওয়ার কথা। অর্থাৎ তাদের ভোট সাড়ে ১১ শতাংশ বাড়তে পারে। এবং এর জন্য মূলত দায়ী কংগ্রেস!
ঝাড়খণ্ড ভোটের মতো দিল্লিতেও ‘একলা চলো’ নীতি নিয়েছিলেন রাহুল গান্ধি। দলের প্রচারে নিজে প্রধান মুখ হিসেবে দিল্লি ঘুরেও বেড়িয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ যে কিছু হয়নি, সেটা জানিয়ে দিচ্ছে এবিপি নিউজের বুথ ফেরত সমীক্ষা। ২০১৩ সালে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস পেয়েছিল ২৪.৬ শতাংশ ভোট। এবিপি নিউজ জানাচ্ছে, এ বারে তারা পেতে পারে ১৫ শতাংশ ভোট। এই সমীক্ষা যদি ঠিক হয়, তা হলে গত দুই বছরে কংগ্রেসের ভোট কমছে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি। আর সমীক্ষা থেকে এটাও পরিষ্কার, এর পুরো লাভটাই তুলতে পারে কেজরিওয়ালের আপ।
বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল যে সব ক্ষেত্রে মেলে, তা নয়। ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভা ভোটের সময়ও কিছু ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ফলের সঙ্গে বুথ ফেরত সমীক্ষার তফাত দেখা গিয়েছে। তবে মানুষের রায় কোন দিকে যেতে পারে, তার একটা আভাস দিতে অনেক সময় এই সমীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এ বারে দিল্লির ক্ষেত্রে শুধু বুথ ফেরত সমীক্ষাই নয়, ভোটের আগে জনমত সমীক্ষাতেও আভাস ছিল, বিজেপির থেকে কয়েক কদম এগিয়ে রয়েছে আপ। আট মাস আগে লোকসভা ভোটে দেশ জুড়ে নরেন্দ্র মোদি হাওয়া দেখা গিয়েছিল। তাতে তখন শরিক হয়েছিল দিল্লিও। সেই হিসেব ধরলে দিল্লির ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল বিজেপি, আপ মোটে ১০টিতে। লোকসভা ভোটের পরেও মোদির নামে জয়রথ এগিয়ে নিয়ে চলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড বেশির ভাগ জায়গায় হয় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি, নয়তো উঠে এসেছে অন্যতম প্রধান দল হিসেবে। শনিবার বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলোর ফল সামনে আসার পরে মনে হচ্ছে, এই প্রথম ধাক্কা খেতে চলেছে মোদি-অমিতের সেই রথ। যার পিছনে বড় কারণ, কংগ্রেসের আরো ভূমিক্ষয়।
মাত্র ৪৯ দিন সরকার চালানোর পরে ক্ষমতা ছেড়েছিলেন কেজরিওয়াল। দু’বছর আগে সে সময় তার যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছিল। তার পরে আপ ভেঙে অনেকেই বেরিয়ে গিয়েছেন। কেজরিওয়ালের তেমনই একদা সমযোগী কিরণ বেদিকেই এ বারে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে ভোটে নেমেছে বিজেপি। প্রশ্ন উঠেছে, এই অবস্থায় আপ কী এমন করেছে, যাতে দিল্লির মানুষের বড় অংশ তাদেরই আবার তখতে দেখতে চাইছে?
আপের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, লোকসভা ভোটের ফল দেখার পর থেকে তাদের কর্মীরা নিঃশব্দে মহল্লায় মহল্লায় মাটি কামড়ে জনসংযোগের কাজটি করতে শুরু করে দেয়। আপের বক্তব্য, তাদের ৪৯ দিনের সরকার যে ভাবে পুলিশি জুলুম বন্ধ করেছিল, তাতে আমজনতা খুশি। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা সে জন্য এখনও আপ-পন্থী। সেই ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়েই তৃণমূলস্তরে মানুষের কাছে পৌঁছতে চেয়েছিলেন আপের কর্মীরা। দলীয় নেতৃত্বের মতে, সেই লক্ষ্যে যে তারা যে সফল, তা ধরা পড়েছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। এমনকী, বুথ ফেরত সমীক্ষাতেও।
বিজেপিতেও অনেকে মনে করছেন, দিল্লির বিধানসভা ভোট করতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। লোকসভা ভোটের পরপরই এই নির্বাচন হলে ছবিটা অন্যরকম হতেই পারত। গত আট-ন’মাসে মোদির সরকার কিছুটা পুরনো হয়েছে। তাকে ঘিরে আবেগ কমেছে। একই সঙ্গে দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়ে বসে প্রচার চালাতেও দেরি করে ফেলেছে দল। তাই বিজেপির বাড়বৃদ্ধি হলেও আপের তুলনায় সেটা কম।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসল কারণ হল কংগ্রেসের প্রতি মানুষের হতাশা। গত বারেও ৮টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু এ বারে তা কমে এক বা দুইয়ে ঠেকতে পারে বলে জানিয়েছে বেশির ভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষা। আর সেই হতাশারই ফসল তুলতে পারে আপ।
কংগ্রেসের এমন ভরাডুবির আশঙ্কা কেন করা হয়েছে সমীক্ষাগুলোতে? দিল্লির রাজনীতিকদের অনেকেই বলছেন, দিল্লির ভোটাররা আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এক দিকে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা, যারা মোদি সরকারের আর্থিক থেকে বিদেশ, সব নীতিকেই কমবেশি সমর্থন করছেন। অন্য দিকে আছেন নিম্নবিত্ত এবং গরিবরা, যাদের দৈনন্দিন পুলিশি জুলুম থেকে বাঁচিয়েছিল আগের আপ সরকার। এই দ্বিতীয় অংশ এ বারে আর কোনোভাবেই কংগ্রেসকে জন্য বোতাম টিপে নিজেদের ভোট ‘নষ্ট’ করতে নারাজ। তারা চান, আবার আপ-ই আসুক। তাদের আশা, তাতে পুলিশি দৌরাত্ম্য কমবেই, পানি-বিদ্যুৎ মাসুলেও ফের রাশ টানবেন অরবিন্দ।
এ দিন বুথ ফেরত সমীক্ষা দেখার পরে বিজেপির অনেক নেতাই বলছেন, আপের এগিয়ে থাকার এটাই বড় কারণ। এই ভোটে কিরণ বেদিকে মুখ্যমন্ত্রী-মুখ হিসেবে তুলে ধরলেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মোদি-ই। নিজের নাম করে ভোট চেয়েছিলেন দিল্লির ভোটারদের কাছ থেকে। তিন দিন আগে থেকে অবশ্য দলের নেতারা বলতে শুরু করেছেন, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন মোদির নামে নয়। এ কথাটা বিজেপি নেতারা আজও আপ্রাণ বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
বাইরে এ কথা বললেও দলের অন্দরে সম্ভাব্য হারের আরো একটা কারণ তুলে ধরেছেন বিজেপি নেতারা। তাদের বক্তব্য, কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে যে মোক্ষম চাল দিতে চেয়েছিল মোদি-অমিত জুটি, তাতে আদতে হিতে বিপরীত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে এখন। বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন, গত কয়েক মাস ধরে অন্তর্কলহে দীর্ণ দল অনেক চেষ্টা করেও কোনও এক জনের নাম ঠিক করে উঠতে পারেনি। ফলে কেজরীর প্রাক্তন সহযোগী কিরণকে এনে চাল দিয়েছিলেন নেতৃত্ব। কিন্তু কিরণের দাপটে বীতশ্রদ্ধ দিল্লির অনেক বিজেপি নেতাই আর শেষমেশ ভোটে সক্রিয় ভাবে অংশ নেননি। দলের এক নেতা এ দিন কবুল করেন, “আমরা তো মনেপ্রাণে চাইছি, বিজেপি এ বারে হেরে যাক! তাতে অন্তত মোদি-শাহ জুটির একচেটিয়া সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে! দলে অন্তত কিছুটা গণতন্ত্র আসবে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের মতও তাই।”
এই অবস্থায় যে অস্বস্তিকর প্রশ্ন বিজেপিকে ভাবাচ্ছে, সেটা হলো : দিল্লিতে হারলে কি তার প্রভাব বিহার বা পশ্চিমবঙ্গে পড়বে? আর শুধু এই দুই রাজ্যই তো নয়, আগামী দু’বছরে ভোট রয়েছে তামিলনাড়ু, কেরল, অসম, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল, গুজরাত, পঞ্জাব ও গোয়ায়। এতগুলি রাজ্যের জন্য এ বারে কোন কৌশল নিয়ে এগোবে বিজেপি, সেটাই এখন দলের সামনে বড় প্রশ্ন।
কিরণ বেদি অবশ্য বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসেব দেখার পরে ভাঙা গলায় সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, ১০ তারিখের ফলে সব বদলে যাবে। আর যদি পরাজয় হয়, তার দায় শুধু তারই। কিরণের আশা, যেভাবে বিজেপি শেষ বেলায় অমিত শাহের নেতৃত্বে বুথের ‘মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট’ করেছে, তাতে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল মিলবে না। শুক্রবার রাত থেকে অমিত গোটা দিল্লিতে সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপির সাড়ে চারশো নেতাকে নামিয়ে দিয়েছেন প্রতিটি বুথের ভোটারকে ভোটদানে উৎসাহিত করার জন্য। সে জন্য এ বারে ভোটও অনেক বেশি পড়েছে। বিজেপির মতে, এই বেশি ভোট তাদের পক্ষেই যাবে। নিজের দফতরে বসে প্রতি মুহূর্তে সেটি নজরদারি করেছেন খোদ অমিত শাহ।
বাকিটা বলবে ১০ তারিখ সকাল।
শনিবার এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসেন তাদের বুথ ফেরত সমীক্ষায় জানিয়েছে, কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি পেতে পারে ৪৩টি আসন, বিজেপির কপালে জুটতে পারে ২৬টি আসন এবং কংগ্রেস মাত্র একটি আসন পেয়ে তলানিতে ঠেকতে পারে। অন্য প্রায় সব ক’টি বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই এর কাছাকাছি পূর্বাভাস দেখা গিয়েছে।
কিন্তু আসল ছবিটা ধরা পড়েছে শতাংশের হিসেবে। দিল্লিতে ২০১৩ সালে বিধানসভা ভোট হয়। সে বার বিজেপি পেয়েছিল ৩১.১ শতাংশ ভোট। এ বার এবিপি নিউজের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, শতাংশের হিসেবে ভোট বাড়ারই সম্ভাবনা গেরুয়া বাহিনীর। তারা পেতে পারে ৩৪ শতাংশ ভোট। উল্টো দিকে, ২০১৩ সালে আপ পেয়েছিল ২৯.৫ শতাংশ ভোট। বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, এ বার তাদের ৪১ শতাংশ ভোট পাওয়ার কথা। অর্থাৎ তাদের ভোট সাড়ে ১১ শতাংশ বাড়তে পারে। এবং এর জন্য মূলত দায়ী কংগ্রেস!
ঝাড়খণ্ড ভোটের মতো দিল্লিতেও ‘একলা চলো’ নীতি নিয়েছিলেন রাহুল গান্ধি। দলের প্রচারে নিজে প্রধান মুখ হিসেবে দিল্লি ঘুরেও বেড়িয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ যে কিছু হয়নি, সেটা জানিয়ে দিচ্ছে এবিপি নিউজের বুথ ফেরত সমীক্ষা। ২০১৩ সালে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস পেয়েছিল ২৪.৬ শতাংশ ভোট। এবিপি নিউজ জানাচ্ছে, এ বারে তারা পেতে পারে ১৫ শতাংশ ভোট। এই সমীক্ষা যদি ঠিক হয়, তা হলে গত দুই বছরে কংগ্রেসের ভোট কমছে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি। আর সমীক্ষা থেকে এটাও পরিষ্কার, এর পুরো লাভটাই তুলতে পারে কেজরিওয়ালের আপ।
বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল যে সব ক্ষেত্রে মেলে, তা নয়। ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভা ভোটের সময়ও কিছু ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ফলের সঙ্গে বুথ ফেরত সমীক্ষার তফাত দেখা গিয়েছে। তবে মানুষের রায় কোন দিকে যেতে পারে, তার একটা আভাস দিতে অনেক সময় এই সমীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এ বারে দিল্লির ক্ষেত্রে শুধু বুথ ফেরত সমীক্ষাই নয়, ভোটের আগে জনমত সমীক্ষাতেও আভাস ছিল, বিজেপির থেকে কয়েক কদম এগিয়ে রয়েছে আপ। আট মাস আগে লোকসভা ভোটে দেশ জুড়ে নরেন্দ্র মোদি হাওয়া দেখা গিয়েছিল। তাতে তখন শরিক হয়েছিল দিল্লিও। সেই হিসেব ধরলে দিল্লির ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল বিজেপি, আপ মোটে ১০টিতে। লোকসভা ভোটের পরেও মোদির নামে জয়রথ এগিয়ে নিয়ে চলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড বেশির ভাগ জায়গায় হয় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি, নয়তো উঠে এসেছে অন্যতম প্রধান দল হিসেবে। শনিবার বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলোর ফল সামনে আসার পরে মনে হচ্ছে, এই প্রথম ধাক্কা খেতে চলেছে মোদি-অমিতের সেই রথ। যার পিছনে বড় কারণ, কংগ্রেসের আরো ভূমিক্ষয়।
মাত্র ৪৯ দিন সরকার চালানোর পরে ক্ষমতা ছেড়েছিলেন কেজরিওয়াল। দু’বছর আগে সে সময় তার যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছিল। তার পরে আপ ভেঙে অনেকেই বেরিয়ে গিয়েছেন। কেজরিওয়ালের তেমনই একদা সমযোগী কিরণ বেদিকেই এ বারে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে ভোটে নেমেছে বিজেপি। প্রশ্ন উঠেছে, এই অবস্থায় আপ কী এমন করেছে, যাতে দিল্লির মানুষের বড় অংশ তাদেরই আবার তখতে দেখতে চাইছে?
আপের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, লোকসভা ভোটের ফল দেখার পর থেকে তাদের কর্মীরা নিঃশব্দে মহল্লায় মহল্লায় মাটি কামড়ে জনসংযোগের কাজটি করতে শুরু করে দেয়। আপের বক্তব্য, তাদের ৪৯ দিনের সরকার যে ভাবে পুলিশি জুলুম বন্ধ করেছিল, তাতে আমজনতা খুশি। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা সে জন্য এখনও আপ-পন্থী। সেই ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়েই তৃণমূলস্তরে মানুষের কাছে পৌঁছতে চেয়েছিলেন আপের কর্মীরা। দলীয় নেতৃত্বের মতে, সেই লক্ষ্যে যে তারা যে সফল, তা ধরা পড়েছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। এমনকী, বুথ ফেরত সমীক্ষাতেও।
বিজেপিতেও অনেকে মনে করছেন, দিল্লির বিধানসভা ভোট করতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। লোকসভা ভোটের পরপরই এই নির্বাচন হলে ছবিটা অন্যরকম হতেই পারত। গত আট-ন’মাসে মোদির সরকার কিছুটা পুরনো হয়েছে। তাকে ঘিরে আবেগ কমেছে। একই সঙ্গে দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়ে বসে প্রচার চালাতেও দেরি করে ফেলেছে দল। তাই বিজেপির বাড়বৃদ্ধি হলেও আপের তুলনায় সেটা কম।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসল কারণ হল কংগ্রেসের প্রতি মানুষের হতাশা। গত বারেও ৮টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু এ বারে তা কমে এক বা দুইয়ে ঠেকতে পারে বলে জানিয়েছে বেশির ভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষা। আর সেই হতাশারই ফসল তুলতে পারে আপ।
কংগ্রেসের এমন ভরাডুবির আশঙ্কা কেন করা হয়েছে সমীক্ষাগুলোতে? দিল্লির রাজনীতিকদের অনেকেই বলছেন, দিল্লির ভোটাররা আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এক দিকে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা, যারা মোদি সরকারের আর্থিক থেকে বিদেশ, সব নীতিকেই কমবেশি সমর্থন করছেন। অন্য দিকে আছেন নিম্নবিত্ত এবং গরিবরা, যাদের দৈনন্দিন পুলিশি জুলুম থেকে বাঁচিয়েছিল আগের আপ সরকার। এই দ্বিতীয় অংশ এ বারে আর কোনোভাবেই কংগ্রেসকে জন্য বোতাম টিপে নিজেদের ভোট ‘নষ্ট’ করতে নারাজ। তারা চান, আবার আপ-ই আসুক। তাদের আশা, তাতে পুলিশি দৌরাত্ম্য কমবেই, পানি-বিদ্যুৎ মাসুলেও ফের রাশ টানবেন অরবিন্দ।
এ দিন বুথ ফেরত সমীক্ষা দেখার পরে বিজেপির অনেক নেতাই বলছেন, আপের এগিয়ে থাকার এটাই বড় কারণ। এই ভোটে কিরণ বেদিকে মুখ্যমন্ত্রী-মুখ হিসেবে তুলে ধরলেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মোদি-ই। নিজের নাম করে ভোট চেয়েছিলেন দিল্লির ভোটারদের কাছ থেকে। তিন দিন আগে থেকে অবশ্য দলের নেতারা বলতে শুরু করেছেন, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন মোদির নামে নয়। এ কথাটা বিজেপি নেতারা আজও আপ্রাণ বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
বাইরে এ কথা বললেও দলের অন্দরে সম্ভাব্য হারের আরো একটা কারণ তুলে ধরেছেন বিজেপি নেতারা। তাদের বক্তব্য, কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে যে মোক্ষম চাল দিতে চেয়েছিল মোদি-অমিত জুটি, তাতে আদতে হিতে বিপরীত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে এখন। বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন, গত কয়েক মাস ধরে অন্তর্কলহে দীর্ণ দল অনেক চেষ্টা করেও কোনও এক জনের নাম ঠিক করে উঠতে পারেনি। ফলে কেজরীর প্রাক্তন সহযোগী কিরণকে এনে চাল দিয়েছিলেন নেতৃত্ব। কিন্তু কিরণের দাপটে বীতশ্রদ্ধ দিল্লির অনেক বিজেপি নেতাই আর শেষমেশ ভোটে সক্রিয় ভাবে অংশ নেননি। দলের এক নেতা এ দিন কবুল করেন, “আমরা তো মনেপ্রাণে চাইছি, বিজেপি এ বারে হেরে যাক! তাতে অন্তত মোদি-শাহ জুটির একচেটিয়া সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে! দলে অন্তত কিছুটা গণতন্ত্র আসবে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের মতও তাই।”
এই অবস্থায় যে অস্বস্তিকর প্রশ্ন বিজেপিকে ভাবাচ্ছে, সেটা হলো : দিল্লিতে হারলে কি তার প্রভাব বিহার বা পশ্চিমবঙ্গে পড়বে? আর শুধু এই দুই রাজ্যই তো নয়, আগামী দু’বছরে ভোট রয়েছে তামিলনাড়ু, কেরল, অসম, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল, গুজরাত, পঞ্জাব ও গোয়ায়। এতগুলি রাজ্যের জন্য এ বারে কোন কৌশল নিয়ে এগোবে বিজেপি, সেটাই এখন দলের সামনে বড় প্রশ্ন।
কিরণ বেদি অবশ্য বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসেব দেখার পরে ভাঙা গলায় সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, ১০ তারিখের ফলে সব বদলে যাবে। আর যদি পরাজয় হয়, তার দায় শুধু তারই। কিরণের আশা, যেভাবে বিজেপি শেষ বেলায় অমিত শাহের নেতৃত্বে বুথের ‘মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট’ করেছে, তাতে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল মিলবে না। শুক্রবার রাত থেকে অমিত গোটা দিল্লিতে সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপির সাড়ে চারশো নেতাকে নামিয়ে দিয়েছেন প্রতিটি বুথের ভোটারকে ভোটদানে উৎসাহিত করার জন্য। সে জন্য এ বারে ভোটও অনেক বেশি পড়েছে। বিজেপির মতে, এই বেশি ভোট তাদের পক্ষেই যাবে। নিজের দফতরে বসে প্রতি মুহূর্তে সেটি নজরদারি করেছেন খোদ অমিত শাহ।
বাকিটা বলবে ১০ তারিখ সকাল।
No comments