খালেদার অনুপস্থিতিতেই সাক্ষ্যগ্রহণ
জিয়া
অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জবানবন্দি দিয়েছেন এই মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ। পুরান ঢাকার
বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে গতকাল তিনি জবানবন্দি
দেন। বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু আহামেদ জমাদার অসমাপ্ত জবানবন্দি
গ্রহণ করে আগামী ১৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি করেছেন। দুপুর
পৌনে একটা থেকে শুরু করে দেড়টা পর্যন্ত সাক্ষ্য দেন হারুনুর রশীদ। তিনি গত
বছরের ২২শে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে আরও চার কার্যদিবসে আংশিক সাক্ষ্য
দিয়েছেন। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে খালেদা জিয়া গতকাল আদালতে হাজির ছিলেন
না। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে খালেদার আইনজীবী মাসুদ
আহমেদ তালুকদার খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত হাজিরা ও সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবিসহ
দুটি মামলায় চারটি আবেদন করেন। তিনিসহ অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া ও অ্যাডভোকেট
আমিনউদ্দিন এসব আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন
অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। শুনানি শেষে বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে
অনুপস্থিতির জন্য বুধবারের জন্য ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে খালেদাকে অব্যাহতি
দিলেও সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আদেশ দেয় আদালত। সঙ্গে
সঙ্গে আদেশ পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানিয়ে আবারও আবেদন করেন খালেদা
জিয়ার আইনজীবীরা। আদালত শুনানি শেষে রিভিউ আবেদনও নামঞ্জুর করলে সাক্ষ্য
গ্রহণ শুরু হয়। খালেদার আইনজীবীদের দাখিল করা সময়ের আবেদনে বলা হয়, সরকার
খালেদা জিয়াকে ‘অবরুদ্ধ’ করে রেখেছে। তাছাড়া তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাই তিনি
আদালতে আসতে পারেননি। শুনানিতে মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়া
আদালতে আসতে পারছেন না এটা ঠিক নয়। ওনাকে আসতে দেয়া হচ্ছে না। সারা বিশ্ব
দেখেছে তার বাসার সামনে ইট ও বালুর ট্রাক দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা
হয়েছে। তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তার ওপর মরিচের গুঁড়া সেপ্র করা
হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার অবস্থা ক্ষণে ক্ষণে খারাপ হচ্ছে। মাসুদ বলেন,
এই মামলার সিনিয়র আইনজীবীরাও আজ আদালতে আসতে পারেননি। কেন পারেননি সেটা
আপনিও অবগত আছেন। আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবীরা যেন মামলা পরিচালনা না করতে
পারেন, সেজন্য তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দেয়া হয়েছে। সিনিয়র আইনজীবীদের
অনেকেই বাড়িঘরে থাকতে পারছেন না। তাই তারাও আদালতে আসেননি। এ কারণে
সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর আবেদন জানাচ্ছি। শুনানিতে অংশ নিয়ে খালেদার অপর
আইনজীবী মহসীন মিয়া বলেন, খালেদা জিয়া আজকে আসবেন, এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে
তিনি কথাও বলেছিলেন। কিন্তু শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি আজ আসতে পারেননি।
এই দোষ আমাদের বা খালেদা জিয়ার নয়। এটা আপনি অবশ্যই অবগত আছেন। শুনানিতে
অংশ নিয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ নন।
তিনি মুক্ত। তিনি যদি চান তাহলে এই মুহূর্তে উপস্থিত হয়ে এই মামলা শুনতে
পারেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ইচ্ছে করলেই তার হাজিরা নিশ্চিত করতে পারতেন।
এ সময় ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০(এ) ও ৩৩৯ (বি) (২) এর উদাহরণ দিয়ে তিনি
বলেন, এই আইনে বলা আছে একজন বা দুজন আসামির অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম
চালানো যেতে পারে। তাই এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হোক। শুনানি শেষে
বিচারক আবু আহমেদ জমাদার খালেদার অনুপস্থিতির আবেদন মঞ্জুর করে ও সাক্ষ্য
গ্রহণ না করার আবেদন নামঞ্জুর করে সাক্ষীকে জবানবন্দি দেয়ার নির্দেশ দেন।
প্রায় ৪৫ মিনিট স্থায়ী জবানবন্দি শেষে দুপুর দেড়টায় আদালতের কার্যক্রম
মুলতবি করেন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। খালেদা জিয়া ছাড়াও জিয়া অরফানেজ
ট্রাস্ট মামলার অপর পাঁচ আসামি হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান
তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল,
ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। এদের
মধ্যে কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল এবং শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে
আছেন। তারা গতকাল আদালতে হাজির ছিলেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে
দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় একটি মামলা করে
দুর্নীতি দমন কমিশন। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশী ব্যাংক
থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা
করা হয়। মামলাটি তদন্ত করেন দুদকের তখনকার সহকারী পরিচালক হারুনুর রশীদ।
খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ মোট ছয়জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ই আগস্ট
আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট তেজগাঁও থানায়
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে
অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকার সমপরিমাণ অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে
খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী
পরিচালক হারুনুর রশীদ। এ মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার
রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল
ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার
একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। জামিনে থাকা মনিরুল ইসলাম খান গতকাল
সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতে হাজির ছিলেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই
পলাতক।
No comments