‘স্বামীর মরা মুখটাও দেখতে পারলাম না’ by মানসুরা হোসাইন
‘স্বামীর
মরা মুখটাও দেখতে পারলাম না। শুনছি মরার সময় নাকি বাচ্চাগুলারে দেখবার
চাইছে। বাচ্চাগুলারেও বাপের মুখটা একটু দেখাইতে পারলাম না। ট্রেনের রাস্তা
তুইল্যা ফালাইছে। একজনের লাইগ্যা গিয়া তো আর দুই বাচ্চারে মাইরা ফালাইতে
পারি না।’
কথাগুলো বলছিলেন খোদেজা বেগম। তিনি ঢাকায় মালিবাগে গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাঁর তিন সন্তানের বড়টি ছেলে। বয়স ১২ বা ১৩। সে মৌলভীবাজারে টেইলার্সে কাজ শেখে। আর ছোট দুই ছেলে-মেয়ের একজন যাত্রাবাড়ী আরেকজন রাজারবাগে বাসায় কাজ করে। খোদেজার স্বামী আবদুল জলিল আরেক স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে থাকতেন হবিগঞ্জের মাধবপুরের আরিচপুর গ্রামে। সাত-আট বছর আগে প্যারালাইসিসে অচল হয়ে পড়েন তিনি। গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার খবর খোদেজা ফোনে জেনেছেন রাত একটায়। তারপর শুধুই বুকফাটা কান্না।
চলমান অবরোধের কারণে খোদেজা তাঁর সন্তানদের নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জে যেতে পারেননি। খোদেজা অবরোধ মানে কী, তা বোঝেন না। টেলিভিশনে দেখে যা বুঝতে পারছেন খোদেজার ভাষায় তা হচ্ছে ‘হাসিনা-খালেদা কিছু একটা নিয়া লাগছে। ওরাই দিছে এই অবরোধ।’
খোদেজা জানান, স্বামীর সঙ্গে শেষ দেখা হয় পাঁচ মাস আগে। তখন তিনি কাজ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। এরপর টেলিফোনে স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছে তা-ও অনেক দিন। স্বামী অসুস্থ ছিলেন, তবে হুট করে মারা যাবেন, তা বুঝতে পারেননি। শেষবার ফোনে যখন কথা হয়েছিল, স্বামী খুব কান্নাকাটি করছিলেন বলে জানালেন খোদেজা। তিনি বলেন, গরিব মানুষ। তার ওপর অসুস্থ। মরে গেলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে খোদেজা কীভাবে কী করবেন, ছেলে-মেয়েকে দেখতে ইচ্ছা করে ইত্যাদি বলছিলেন। আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে টেলিফোনে কথা হয় জলিলের অন্য ঘরের ছেলে খালেদের (২৪) সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মা তো বাচ্চাকাচ্চা নিয়া আইতে পারল না। পুরা দিন ভাবছিলাম আইতে পারব। তাই আসর নামাজের পর বাবারে মাটি দিয়া ফালাইছি।’
রাশেদ আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘মানুষ মরল, তার মরা মুখটাও দেখতে পারল না। এক ভাই মৌলভীবাজার থেইক্যা কোনো মতে আইয়া বাপের মুখ দেখছে। অন্য ভাই-বোন যদি একবার বাপের মুখটা দেখতে পারত। সারা দিন লাশ রেখে দেওয়ায় ফুলে গিয়েছিল। ফলে ইচ্ছা থাকলেও আর লাশ রাখা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া কাল যে অবরোধ থাকবে না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।’
রাশেদ নিজেও বিএনপির সমর্থক। তাই অবরোধ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে খানিকক্ষণ চুপ করে থাকেন। পরে বলেন, ‘কী বলতাম, আমিও বিএনপি করি। কিন্তু পার্টি পার্টি গ্যাঞ্জাম করে, আর আমরা সাধারণ মানুষ কষ্ট পাই। এইটা হওন ঠিক না।’
খোদেজা ঢাকায় কাজ করেন মো. আবদুল হালিমের বাসায়। তিনি পেশায় সাংবাদিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অফিসে এসে ভালোভাবে খবর নিয়ে জানলাম সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ। রেললাইনের ফিশ প্লেট তুলে ফেলায় ট্রেন লাইনচ্যুত। পরে আমার স্ত্রী ফোন করে জানালেন, খোদেজা যাবেন না ঠিক করেছেন। আমি শোকে স্তব্ধ। একজন নারী তাঁর স্বামীকে, সন্তানেরা তাদের বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে পারছে না। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে?’
হালিম পাঁচ ঘণ্টা আগে তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের নেত্রীই তাঁদের সবচেয়ে কাছের মানুষকে হারিয়েছেন। স্বজন হারানোর ব্যথা তাঁরাও অনুভব করেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, তাঁরা শুধু নিজেদের কষ্টটাই অনুভব করেন, অন্যেরটা না। দুই নেত্রী কি পারবেন শামসুনের মার (আমার গৃহপরিচারিকা) মতো এমন অনেক নারীকে শেষবারের মতো স্বামীর মুখ দেখার ব্যবস্থা করে দিতে? তাঁর দুই সন্তানের মতো অনেক সন্তানকে বাবার মুখটা শেষবারের মতো ছুঁয়ে দেখার ব্যবস্থা করতে? যদি না পারেন, তাহলে তাদের রাজনৈতিক কমর্সূচি দিয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কি কোনো অধিকার আছে?’
কথাগুলো বলছিলেন খোদেজা বেগম। তিনি ঢাকায় মালিবাগে গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাঁর তিন সন্তানের বড়টি ছেলে। বয়স ১২ বা ১৩। সে মৌলভীবাজারে টেইলার্সে কাজ শেখে। আর ছোট দুই ছেলে-মেয়ের একজন যাত্রাবাড়ী আরেকজন রাজারবাগে বাসায় কাজ করে। খোদেজার স্বামী আবদুল জলিল আরেক স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে থাকতেন হবিগঞ্জের মাধবপুরের আরিচপুর গ্রামে। সাত-আট বছর আগে প্যারালাইসিসে অচল হয়ে পড়েন তিনি। গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার খবর খোদেজা ফোনে জেনেছেন রাত একটায়। তারপর শুধুই বুকফাটা কান্না।
চলমান অবরোধের কারণে খোদেজা তাঁর সন্তানদের নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জে যেতে পারেননি। খোদেজা অবরোধ মানে কী, তা বোঝেন না। টেলিভিশনে দেখে যা বুঝতে পারছেন খোদেজার ভাষায় তা হচ্ছে ‘হাসিনা-খালেদা কিছু একটা নিয়া লাগছে। ওরাই দিছে এই অবরোধ।’
খোদেজা জানান, স্বামীর সঙ্গে শেষ দেখা হয় পাঁচ মাস আগে। তখন তিনি কাজ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। এরপর টেলিফোনে স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছে তা-ও অনেক দিন। স্বামী অসুস্থ ছিলেন, তবে হুট করে মারা যাবেন, তা বুঝতে পারেননি। শেষবার ফোনে যখন কথা হয়েছিল, স্বামী খুব কান্নাকাটি করছিলেন বলে জানালেন খোদেজা। তিনি বলেন, গরিব মানুষ। তার ওপর অসুস্থ। মরে গেলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে খোদেজা কীভাবে কী করবেন, ছেলে-মেয়েকে দেখতে ইচ্ছা করে ইত্যাদি বলছিলেন। আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে টেলিফোনে কথা হয় জলিলের অন্য ঘরের ছেলে খালেদের (২৪) সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মা তো বাচ্চাকাচ্চা নিয়া আইতে পারল না। পুরা দিন ভাবছিলাম আইতে পারব। তাই আসর নামাজের পর বাবারে মাটি দিয়া ফালাইছি।’
রাশেদ আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘মানুষ মরল, তার মরা মুখটাও দেখতে পারল না। এক ভাই মৌলভীবাজার থেইক্যা কোনো মতে আইয়া বাপের মুখ দেখছে। অন্য ভাই-বোন যদি একবার বাপের মুখটা দেখতে পারত। সারা দিন লাশ রেখে দেওয়ায় ফুলে গিয়েছিল। ফলে ইচ্ছা থাকলেও আর লাশ রাখা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া কাল যে অবরোধ থাকবে না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।’
রাশেদ নিজেও বিএনপির সমর্থক। তাই অবরোধ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে খানিকক্ষণ চুপ করে থাকেন। পরে বলেন, ‘কী বলতাম, আমিও বিএনপি করি। কিন্তু পার্টি পার্টি গ্যাঞ্জাম করে, আর আমরা সাধারণ মানুষ কষ্ট পাই। এইটা হওন ঠিক না।’
খোদেজা ঢাকায় কাজ করেন মো. আবদুল হালিমের বাসায়। তিনি পেশায় সাংবাদিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অফিসে এসে ভালোভাবে খবর নিয়ে জানলাম সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ। রেললাইনের ফিশ প্লেট তুলে ফেলায় ট্রেন লাইনচ্যুত। পরে আমার স্ত্রী ফোন করে জানালেন, খোদেজা যাবেন না ঠিক করেছেন। আমি শোকে স্তব্ধ। একজন নারী তাঁর স্বামীকে, সন্তানেরা তাদের বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে পারছে না। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে?’
হালিম পাঁচ ঘণ্টা আগে তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের নেত্রীই তাঁদের সবচেয়ে কাছের মানুষকে হারিয়েছেন। স্বজন হারানোর ব্যথা তাঁরাও অনুভব করেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, তাঁরা শুধু নিজেদের কষ্টটাই অনুভব করেন, অন্যেরটা না। দুই নেত্রী কি পারবেন শামসুনের মার (আমার গৃহপরিচারিকা) মতো এমন অনেক নারীকে শেষবারের মতো স্বামীর মুখ দেখার ব্যবস্থা করে দিতে? তাঁর দুই সন্তানের মতো অনেক সন্তানকে বাবার মুখটা শেষবারের মতো ছুঁয়ে দেখার ব্যবস্থা করতে? যদি না পারেন, তাহলে তাদের রাজনৈতিক কমর্সূচি দিয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কি কোনো অধিকার আছে?’
No comments