রাজাপক্ষে কি এবার হারতে চলেছেন?
পুনর্নির্বাচিত হয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসতে চান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তবে বিষয়টি এবার খুব নিশ্চিত নয়। রাজাপক্ষে ও তাঁর প্রভাবশালী ভাইয়েরা এবার জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবারই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রাজাপক্ষে প্রায় এক দশক ধরে শ্রীলঙ্কার একচ্ছত্র নেতা। কর্মকাণ্ড বিবেচনায় তাঁকে ‘রাজা’ বললে হয়তো খুব বাড়িয়ে বলা হবে না। সমর্থকদের অনেকে তাঁকে সে রকম সম্বোধনও করে থাকে। রাজাপক্ষেকে প্রায়ই তুলনা করা হয় প্রাচীন যুগের সিংহলি সম্রাটদের সঙ্গে। তামিল বিদ্রোহীদের কাছ থেকে ‘রাজা’ কীভাবে দেশকে বাঁচিয়েছেন, তার বিবরণসংবলিত একটি গান কিছুদিন আগেও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে নিয়মিত প্রচার করা হতো। রাজাপক্ষের তিন ভাই যথাক্রমে প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগের প্রধান এবং পার্লামেন্টের স্পিকার পদে কাজ করছেন। কিন্তু তার পরও ‘সম্রাট’ এবার বিপাকে পড়তে পারেন। তিনি নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মাইথ্রিপালা সিরিসেনা নামের একজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর আবির্ভাব হয়। তিনি রাজাপক্ষের নিজ দলেরই একজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ছিলেন। জনসাধারণের কাছে বর্তমান প্রেসিডেন্টের মতো সহজাত আকর্ষণীয় ক্ষমতার ছিটেফোঁটাও সিরিসেনার মধ্যে নেই। কিন্তু কৃষক পরিবারের সন্তান সিরিসেনার প্রতি জনগণের একটা অংশের জোরালো সমর্থন রয়েছে। রাজাপক্ষের বিরোধী জোট চূড়ান্ত মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের প্রার্থী হিসেবে সিরিসেনার নামটি গোপন রেখেছিল। তিনি ক্ষমতাসীন দল ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় সঙ্গী হিসেবে অনেককেই পেয়েছেন। শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে দলবদল করাটা সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় সব দলত্যাগের ঘটনায় মূল লক্ষ্য ছিল সরকারি দলে যোগ দেওয়া। এখন বিপরীতমুখী স্রোত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বাসভঙ্গের মতো অনেক ব্যাপারও ঘটছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদপত্র সানডে অবজারভার মন্তব্য করেছে, ‘সিরিসেনাকেও পরাজয়ের পর জুডাসের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে। ভোটারদের উচিত, এ রকম বিশ্বাসঘাতকদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া।’ কিন্তু ৬৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষেকে এবার তুলনামূলক দুর্বল এবং ক্লান্ত মনে হচ্ছে। সংখ্যাগুরু সিংহলি এবং সংখ্যালঘু তামিলদের মধ্যে কয়েক দশকের লড়াইয়ের জেরে শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক বিভাজন খুবই তীব্র। তামিল গেরিলাদের বিরুদ্ধে জয় এবং যুদ্ধ-পরবর্তী অবকাঠামো নির্মাণে রাজাপক্ষের ভূমিকা সিংহলিদের অনেকে শ্রদ্ধাভরে স্বীকার করেন। কিন্তু বাকিরা তামিল ও মুসলমান সম্প্রদায়ের অধিকাংশ তাঁর শাসনের অবসান চায়। তামিলরা মনে করে, তারা ক্ষমতাসীন সিংহলি ও বৌদ্ধদের শাসনের ফলে ক্রমশ প্রান্তিক অবস্থানে চলে যাচ্ছে। আর মুসলিমদের ওপর কট্টর বৌদ্ধরা বেশ কয়েক দফা আক্রমণ করার পরও রাজাপক্ষে সরকার তাতে বাধা দেয়নি। কিন্তু সিরিসেনা ক্ষমতায় এলে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে? নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি দুর্নীতিবিরোধী অভিযান এবং সাংবিধানিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর জোটে নানা ধরনের রাজনৈতিক দল রয়েছে। কেউ তামিলদের প্রতি সহানুভূতিশীল, আবার কেউ বিরূপ মনোভাব ধারণ করে। সিরিসেনা অবশ্য ইশতেহারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার বা জাতিগত বিরোধের কোনো রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলেননি। আবার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কোনো রাজনৈতিক নেতার বিচার করার সম্ভাবনাও বাতিল করে দিয়েছেন। তবু যত সীমাবদ্ধতাই থাকুক, পরিস্থিতি এখন সিরিসেনাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। রাজাপক্ষের জোটের প্রধান মুসলিম রাজনীতিকেরা তাঁকে ছেড়ে গেছেন। আর তামিলদের প্রধান দলটি বলছে, রাজাপক্ষের সরকার তামিল ও মুসলিমদের জন্য ‘শুধুই যন্ত্রণা ও দুর্ভোগ’ বয়ে এনেছে। তাই তাদের এখন সিরিসেনাকে ভোট দেওয়া উচিত।
No comments