সাখাওয়াতের ভার্চুয়াল মুক্তিযুদ্ধ by আহমেদ মুনির
(মুক্তিযুদ্ধের
পটভূমিতে ক্রস প্ল্যাটফর্ম গেম তৈরি করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন। গেমটির প্রচ্ছদ ও একটি দৃশ্যের
চিত্র l জুয়েল শীল) ১৯৭১
সালের ২৫ মার্চ, রাত ১১টা ৪৫ মিনিট। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে জ্বলছে আগুন।
থেমে থেমে গুলির শব্দ। হাতে থ্রি নট থ্রি নিয়ে এগোচ্ছেন একজন
মুক্তিযোদ্ধা। একটি ভবনের সামনে কয়েকজন পাকিস্তান হানাদার দাঁড়ানো।
গাছের আড়াল থেকে গুলি ছুড়লেন সাহসী যোদ্ধাটি। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়ল
একজন।
মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ নামের ভিডিও গেমের শুরুটা এমন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন গেমটি তৈরি করছেন। ইতিমধ্যে এর ডেমো ভার্সন তৈরি হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্ভাবনী প্রকল্পের আওয়াতায় গেমটির পূর্ণাঙ্গ রূপ তৈরির জন্য সাখাওয়াত প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতও হয়েছেন। সরকারের অনুদান পেলে এটিই হবে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি প্রথম ক্রস প্ল্যাটফর্ম, অর্থাৎ প্রায় সব মাধ্যমে খেলা যায় এমন ভিডিও গেম।
কী থাকছে গেমটিতে? এ ধরনের গেম তৈরির উদ্যোগই বা কেন? গত সোমবার সাখাওয়াতকে এই প্রশ্ন করতেই ডেমো ভার্সনটি চালু করলেন তিনি। গেমের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে একটি লেখা। এরপর পর্দায় ভেসে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণ। মোট ১৪টি লেভেলে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরসহ উল্লেখযোগ্য কিছু সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিতে হবে গেমার বা খেলোয়াড়কে। প্রথম লেভেল শুরু পাকিস্তানি বাহিনীর কুখ্যাত অপারেশন সার্চলাইটের মধ্য দিয়ে। এই পর্ব লোড হওয়ার সময় পর্দায় ভেসে ওঠে পুলিশ লাইনের মানচিত্র। পাশাপাশি তথ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয় পাকিস্তানি বাহিনীর কোন কোন ডিভিশন এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল। এই লেভেলের খেলা শুরু করতে হবে একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে। নির্দিষ্টসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা খতম করতে পারলে জুটবে মেশিনগান। এভাবে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে শত্রু খতম করে গেমাররা দ্বিতীয় লেভেলে যাবে।
গোলগাল মুখ, মাঝারি উচ্চতার সাখাওয়াত কথা বলেন নিচু স্বরে। কেন এই গেম তৈরির পরিকল্পনা, তা জানতে চাইলে বললেন, ‘বছর দুয়েক আগের কথা। একটি টিভি চ্যানেলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিবেদন প্রচারিত হচ্ছিল। বিজয় দিবস কখন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে বলতে পারেনি তারা। একজন বলল, ২৬ মার্চ। বিষয়টা আমাকে খুব আলোড়িত করে। ভাবলাম, একটা গেম তৈরি করব, যাতে খেলতে খেলতে শিশুরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারে।’
ভেবেই বসে থাকেননি এই তরুণ প্রোগ্রামার। দুই বছর ধরে পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, শিখেছেন বিভিন্ন পোগ্রামিং ও থ্রি ডি অ্যানিমেশন কৌশল। অবশেষে চার মাস আগে এই গেমের ডেমো ভার্সন তৈরি করেন তিনি। এ কাজে তাঁকে সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকেরা। এমনকি বিভাগে তাঁর ব্যবহারের জন্য দুটি কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটসুবিধা দেওয়া হয়েছে।
উইনডোজ, ম্যাক, লিনাক্স, ওয়েভ ভার্সন, ফেসবুক, অ্যান্ড্রয়েড, আই ফোন ও উইন্ডোজ ফোনে খেলার উপযোগী করে তৈরি হচ্ছে এই গেম। সি শার্প ও জাভা স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা হয়েছে গেমটির পোগ্রাম ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে।
আগামী এক বছরের মধ্যেই বিনা মূল্যের গেমটি বাজারে আনার জন্য কাজ করছেন সাখাওয়াত। বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ হানিফ সিদ্দিকী গেমটি তত্ত্বাবধান ছাড়াও একটি অংশ নির্মাণের দায়িত্বে আছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ঢাকায় ২০-২৫ জনের একটি দল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গেম তৈরির কাজ করছে। আর সাখাওয়াত এখানে একাই অনেক দূর এগিয়েছেন। এই গেম হবে আন্তর্জাতিক মানের। খেলতে খেলতে শিশুরা মুক্তিযুদ্ধের কথা জানবে। ফেসবুকে www.facebook.com/muktijudhdhagame—এই ঠিকানায় গিয়ে গেমটির ডেমো ভার্সন খেলাও যাবে।
এই গেমে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমান সৈনিক। তাদের নিয়ে যুদ্ধের পরিকল্পনায়ও অংশ নিতে পারবে গেমাররা। পাশাপাশি প্রতিটি লেভেলে দেওয়া থাকবে বিভিন্ন সেক্টর ও সম্মুখযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কুইজের উত্তর দিয়ে নতুন অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহেরও সুযোগ থাকছে।
ব্যবসায়ী বাবার সন্তান সাখাওয়াতের স্বপ্ন সারা বিশ্বের কাছে মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরা। ফেসবুক বা অন্তর্জালে হাজার হাজার গেমার অংশ নেবে ভার্চুয়াল মুক্তিযুদ্ধে। এ কথা বলতে গিয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সাখাওয়াতের চোখ। বলেন, গেমে হারলেও কিন্তু ক্ষতি নেই। কারণ, শত্রুর গুলি খেয়ে মরলে গেমার শহীদ হওয়ার গৌরব লাভ করবে। আর তখন বেজে উঠবে গান, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না...’।
মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ নামের ভিডিও গেমের শুরুটা এমন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন গেমটি তৈরি করছেন। ইতিমধ্যে এর ডেমো ভার্সন তৈরি হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্ভাবনী প্রকল্পের আওয়াতায় গেমটির পূর্ণাঙ্গ রূপ তৈরির জন্য সাখাওয়াত প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতও হয়েছেন। সরকারের অনুদান পেলে এটিই হবে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি প্রথম ক্রস প্ল্যাটফর্ম, অর্থাৎ প্রায় সব মাধ্যমে খেলা যায় এমন ভিডিও গেম।
কী থাকছে গেমটিতে? এ ধরনের গেম তৈরির উদ্যোগই বা কেন? গত সোমবার সাখাওয়াতকে এই প্রশ্ন করতেই ডেমো ভার্সনটি চালু করলেন তিনি। গেমের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে একটি লেখা। এরপর পর্দায় ভেসে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণ। মোট ১৪টি লেভেলে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরসহ উল্লেখযোগ্য কিছু সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিতে হবে গেমার বা খেলোয়াড়কে। প্রথম লেভেল শুরু পাকিস্তানি বাহিনীর কুখ্যাত অপারেশন সার্চলাইটের মধ্য দিয়ে। এই পর্ব লোড হওয়ার সময় পর্দায় ভেসে ওঠে পুলিশ লাইনের মানচিত্র। পাশাপাশি তথ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয় পাকিস্তানি বাহিনীর কোন কোন ডিভিশন এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল। এই লেভেলের খেলা শুরু করতে হবে একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে। নির্দিষ্টসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা খতম করতে পারলে জুটবে মেশিনগান। এভাবে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে শত্রু খতম করে গেমাররা দ্বিতীয় লেভেলে যাবে।
গোলগাল মুখ, মাঝারি উচ্চতার সাখাওয়াত কথা বলেন নিচু স্বরে। কেন এই গেম তৈরির পরিকল্পনা, তা জানতে চাইলে বললেন, ‘বছর দুয়েক আগের কথা। একটি টিভি চ্যানেলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিবেদন প্রচারিত হচ্ছিল। বিজয় দিবস কখন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে বলতে পারেনি তারা। একজন বলল, ২৬ মার্চ। বিষয়টা আমাকে খুব আলোড়িত করে। ভাবলাম, একটা গেম তৈরি করব, যাতে খেলতে খেলতে শিশুরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারে।’
ভেবেই বসে থাকেননি এই তরুণ প্রোগ্রামার। দুই বছর ধরে পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, শিখেছেন বিভিন্ন পোগ্রামিং ও থ্রি ডি অ্যানিমেশন কৌশল। অবশেষে চার মাস আগে এই গেমের ডেমো ভার্সন তৈরি করেন তিনি। এ কাজে তাঁকে সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকেরা। এমনকি বিভাগে তাঁর ব্যবহারের জন্য দুটি কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটসুবিধা দেওয়া হয়েছে।
উইনডোজ, ম্যাক, লিনাক্স, ওয়েভ ভার্সন, ফেসবুক, অ্যান্ড্রয়েড, আই ফোন ও উইন্ডোজ ফোনে খেলার উপযোগী করে তৈরি হচ্ছে এই গেম। সি শার্প ও জাভা স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা হয়েছে গেমটির পোগ্রাম ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে।
আগামী এক বছরের মধ্যেই বিনা মূল্যের গেমটি বাজারে আনার জন্য কাজ করছেন সাখাওয়াত। বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ হানিফ সিদ্দিকী গেমটি তত্ত্বাবধান ছাড়াও একটি অংশ নির্মাণের দায়িত্বে আছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ঢাকায় ২০-২৫ জনের একটি দল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গেম তৈরির কাজ করছে। আর সাখাওয়াত এখানে একাই অনেক দূর এগিয়েছেন। এই গেম হবে আন্তর্জাতিক মানের। খেলতে খেলতে শিশুরা মুক্তিযুদ্ধের কথা জানবে। ফেসবুকে www.facebook.com/muktijudhdhagame—এই ঠিকানায় গিয়ে গেমটির ডেমো ভার্সন খেলাও যাবে।
এই গেমে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমান সৈনিক। তাদের নিয়ে যুদ্ধের পরিকল্পনায়ও অংশ নিতে পারবে গেমাররা। পাশাপাশি প্রতিটি লেভেলে দেওয়া থাকবে বিভিন্ন সেক্টর ও সম্মুখযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কুইজের উত্তর দিয়ে নতুন অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহেরও সুযোগ থাকছে।
ব্যবসায়ী বাবার সন্তান সাখাওয়াতের স্বপ্ন সারা বিশ্বের কাছে মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরা। ফেসবুক বা অন্তর্জালে হাজার হাজার গেমার অংশ নেবে ভার্চুয়াল মুক্তিযুদ্ধে। এ কথা বলতে গিয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সাখাওয়াতের চোখ। বলেন, গেমে হারলেও কিন্তু ক্ষতি নেই। কারণ, শত্রুর গুলি খেয়ে মরলে গেমার শহীদ হওয়ার গৌরব লাভ করবে। আর তখন বেজে উঠবে গান, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না...’।
No comments