সুইট শো—একটি খসড়া by আসিফ নজরুল
সুপ্রিয় দর্শকমণ্ডলী, শুরু হচ্ছে ইয়েস
টিভির নিয়মিত আলোচনা অনুষ্ঠান সুইট শো। অনুষ্ঠানে আপনাদের স্বাগত
জানাচ্ছি আমি মশিউর রহমান চৌধুরী। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানে এমন দুজন অতিথি
রয়েছেন, যাঁদের আসলে পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এঁদের একজন সিনিয়র
সাংবাদিক নূরুল করিম। আরেকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক এবং
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. হাসিব নজরুল।
দর্শকমণ্ডলী, আমরা আজ আলোচনা শুরু করছি গণতন্ত্রের এক হীরকোজ্জ্বল মুহূর্তে। আপনারা জানেন, মাত্র কয়েক দিন আগে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসন বিল পাস হয়েছে। এটি ছিল আমাদের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী, যাকে বলা যায় সুইট সিক্সটিন্থ। এই সংশোধনীর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহু বছরের স্বপ্ন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে দেশের সাংবাদিকদের বহু বছরের প্রাণের দাবি সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষকে জঙ্গি, সন্ত্রাসী এবং একাত্তরের রাজাকারদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি আইন করা হয়েছে। যা-ই হোক, এবার মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আজ আমরা আলোচনা করব মূলত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে। এ প্রসঙ্গে আমি প্রথমে কিছু বলার জন্য ড. হাসিব নজরুলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
হাসিব নজরুল: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, জাতির জীবনের এই গৌরবোজ্জ্বল অর্জন নিয়ে আমাকে কিছু বলতে দেওয়ার জন্য। সত্যি বলতে কি এই সংশোধনী নিয়ে আমারও কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদে প্রদত্ত ভাষণ শুনে আমার সব দ্বিধা কেটে গেছে। তিনি সংসদে বলেছেন, আগে উচ্চ আদালতের বিচারকদের চাকরি যেত মাত্র তিনজন বিচারকের মতামতে আর এখন তাঁদের চাকরি খেতে হলে সংসদের সাড়ে তিন শ সদস্যের মতামত লাগবে। তার মানে তিনি এই ইঙ্গিত প্রদান করেছেন যে বিচারকদের চাকরির নিরাপত্তা এখন শতাধিক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অসাধারণ পাণ্ডিত্যের জন্য আমি তাঁকে প্রাণঢালা ধন্যবাদ জানাই। আমি মনে করি, এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়কসহ সবার চাকরিচ্যুতির ক্ষমতা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে অর্পণ করে গণতন্ত্রের ভিতকে আরও মজবুত করা উচিত।
মশিউর রহমান চৌধুরী: কিন্তু কিছু মহলের পক্ষ থেকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সংসদ জনপ্রতিনিধিত্বশীল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। জনাব করিম?
নূরুল করিম: আমি জানি এই প্রশ্ন আপনি করবেন। এই প্রশ্ন যারা তোলে, তারা মূর্খ; তাদের জ্ঞান, পড়াশোনা ও ইতিহাসবোধ নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। আমরা জানি, গ্রিক নগর রাষ্ট্রে যে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে বৃহৎ রাষ্ট্রকাঠামোতে অচল হয়ে পড়ে। এরপর রোমান রিপাবলিকের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র ধারণাটির বাস্তবায়ন শুরু হয়, যদিও রোমান রিপাবলিক আসলেই প্রতিনিধিত্বশীল ছিল কি না, তা নিয়ে রাষ্ট্রচিন্তকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের প্রকৃত বিকাশ আসলে ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রসমূহে। এসব কোনো গণতন্ত্র যা করতে পারেনি, তাই হয়েছে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গণতান্ত্রিক, সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন!
মশিউর রহমান চৌধুরী: কীভাবে?
নূরুল করিম: আমি সেই আলোচনাতেই আসছি। আপনি জানেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মানে আমাদের বুঝতে হবে। এর মানে হচ্ছে এঁদের যোগ্যতা, সততা এবং দেশপ্রেমে মুগ্ধ হয়ে অন্য কেউ প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেননি। এই সংসদের সিংহভাগ প্রতিনিধি তাই তাঁদের এলাকার শতভাগ জনগণের প্রতিনিধি। এই সংসদের মতো প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ তাই পৃথিবীর ইতিহাসে একটিও নেই। এই সংসদের হাতে বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়ে জনগণ ও গণতন্ত্রকে বরং সম্মানিত করা হয়েছে।
মশিউর রহমান চৌধুরী: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই চমৎকার ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য। তা ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে এও বলা হচ্ছে যে আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারতের মতো রাষ্ট্রেও একই বিধান রয়েছে।
হাসিব নজরুল আপনি কিছু বলবেন?
হাসিব নজরুল: আমি মনে করি না অন্য রাষ্ট্রের তুলনা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন এখন আমাদের রয়েছে। ব্রিটেন বা ভারতে বিরোধী দল যখন ইচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, সরকার কোনো পরিকল্পনা করলে নিজেরা আরেকটি পরিকল্পনা হাজির করে, তারা নাকি শ্যাডো গভর্নমেন্ট—ছায়া সরকার। এ ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কোনো কাজ আমাদের বিরোধী দল বর্তমানে করে না। বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি বরং সরকারের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছে। তারা সরকারে যোগদান করেছে, সরকারের সঙ্গে একযোগে যোড়শ সংশোধনী পাস করেছে, এমনকি নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তা মীমাংসা করেছে। কাজেই আমরা আশা করতে পারি, সংসদ যদি কোনো বিচারককে চাকরিচ্যুত করে, তাহলে তা হবে সংসদের প্রতিটি সদস্যের মতৈক্যের ভিত্তিতে। দেশের ১৬ কোটি লোকের মতামত তাতে প্রতিফলিত হবে বলে আমি মনে করি।
নূরুল করিম: ড. নজরুলের সঙ্গে আমি একটু যোগ করতে চাই। সরকার আর বিরোধী দলের এই একত্রে কাজ করার নজির এখন বিদেশেও অনুসৃত হচ্ছে। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার বিপক্ষে ব্রিটেনে সরকারি দল আর বিরোধী দলগুলো একসঙ্গে কাজ করেছে। ব্রিটেনের স্বাধীনতা আর অখণ্ডতা তারা এভাবেই বাংলাদেশের মডেল অনুসরণ করে রক্ষা করতে পেরেছে।
মশিউর রহমান চৌধুরী: কিন্তু ভবিষ্যতে কোনো সংসদে সরকার আর বিরোধী দলের এমন সদ্ভাব তো নাও থাকতে পারে।
নূরুল করিম: আপনার এই আশঙ্কা একেবারেই অমূলক। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলেছেন যে ভবিষ্যৎ নির্বাচন ৫ জানুয়ারির মতোই হবে। কাজেই ভবিষ্যতেও আমরা বিরোধী দলকে বর্তমানের মতো গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে দেখব। ভবিষ্যৎ নিয়ে ২০৪১ সাল পর্যন্ত আমাদের আসলে চিন্তার কিছু নেই।
মশিউর রহমান চৌধুরী: কিন্তু ভবিষ্যতে যদি বিএনপি আর ভুল না করে! তারা যদি নির্বাচনে অংশ নেয়! রওশান এরশাদের চেয়ে বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তা যদি বৃদ্ধি পায়, যদি তিনি আবারও বিরোধী দলের নেত্রী হতে চান?
হাসিব নজরুল: নিরপেক্ষতার স্বার্থে আমরা তাঁর চাওয়ার বিরোধিতা করতে পারি না। তবে আমার ধারণা, ভবিষ্যৎ নির্বাচনে তিনি বা তাঁর ছেলে অংশ নিতে পারবেন না। সংসদের হাতে বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা ফিরে এসেছে। কোনো আদালতই এখন দুর্নীতিবাজ বা জঙ্গি নেতাদের কোনো ছাড় দেওয়ার সাহস পাবে না। ছাড় দিলে শুধু চাকরি যেতে পারে তা নয়। আমরা দেখেছি, তারেক রহমানকে দুর্নীতির মামলায় খালাস দেওয়া বিচারকের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন তৎপর হয়েছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
নূরুল করিম: আমার ধারণা, যুদ্ধাপরাধী আদালতের ইনভেস্টিগেশন টিম একটু তৎপর হলে ওই বিচারকদের বিরুদ্ধে একাত্তরের গণহত্যার অভিযোগও আনা যেত। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে মালয়েশিয়া থেকে ধরে এনে এখনো তা করা সম্ভব।
মশিউর রহমান চৌধুরী: যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গ যখন এল, তখন আমরা মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তিনি বলেছেন, সাঈদীর বিচারের রায় নিয়ে নীরব থেকে বিএনপির নেত্রী যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ অবলম্বন করেছেন।
নূরুল করিম: তিনি ঠিকই বলেছেন। জনাব ইনু ইদানীং সব কথাই ঠিক বলছেন, সব কাজই ঠিক করছেন। একজন মানুষ তাঁর আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে কতটা নিখাদ সোনায় পরিণত হতে পারে, তিনি তার উজ্জ্বল উদাহরণ। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। আজ তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় প্রেমিক হয়েছেন। জাসদ গণ-আন্দোলন থেকে হঠকারিতা ও সহিংসতার রাজনীতির পথে গিয়েছিল যাঁদের পরামর্শে, তিনিও তাঁদের একজন ছিলেন। তিনি আজ সহিংসতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার কণ্ঠ হয়েছেন। জাসদের ভেতর ঢুকে পড়ে স্বাধীনতাবিরোধী চক্ররা এ দেশে রাজনৈতিকভাবে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। অথচ তিনি এখন স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা নিয়েছেন। তাঁর সাহসিকতা, বাকচাতুর্য ও দেশপ্রেমের পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি নির্বাচনে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। এবার তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, বাংলাদেশের একটি মানুষও তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাঁকে অসম্মানিত করতে চায়নি।
হাসিব নজরুল: আর এখানেই আমি মনে করি জনাব ইনুর কাছ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার অনেক কিছু শেখার আছে। তিনিও তাঁর ভুল বুঝতে পারলে ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারেন। এমনকি ভবিষ্যতে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিত্ব লাভ করে তাঁর লাল পাসপোর্ট ফেরত পেতে পারেন। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করার কাফফরা দেওয়ার সুযোগ পাওয়ার অধিকার তাঁরও রয়েছে।
মশিউর রহমান চৌধুরী: আপনি ঠিকই বলেছেন। আমাদের মনে আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, নির্বাচনে এলে বিএনপিও সংসদে কিছু আসন পেত, কয়েকজনকে মন্ত্রীও বানানো হতো।
নূরুল করিম: আমি মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতির পথ ধরেই আমাদের ভবিষ্যতে এগোতে হবে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির মতো বড় দলগুলো একসঙ্গে মিলেমিশে অংশ নিলে ১৫৪টি কেন, হয়তো কোনো আসনেই ভোটাভুটি করার প্রয়োজন আমাদের পড়বে না। এতে আমাদের কোটি কোটি টাকার সাশ্রয় হবে, অহেতুক প্রাণহানি ও হানাহানি থেকে দেশ রক্ষা পাবে, ব্যালট পেপারের কাগজ এবং ভোটকেন্দ্র বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে দেশে পরিবেশ বিপর্যয় ও জলবায়ুর পরিবর্তন থেকে রক্ষা করা যাবে।
মশিউর রহমান চৌধুরী: কিন্তু এটি বৈধ নির্বাচন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এর সমাধান কী?
হাসিব নজরুল: সমাধান তো হাইকোর্ট দিয়েছেন। হাইকোর্ট বলেছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ আসনে নির্বাচন বৈধ। কাজেই ভবিষ্যতে ৩০০ আসনেও তা বৈধ হবে।
নূরুল করিম: আমি আমার বক্তব্য শেষ করতে পারিনি। ২০১৯ সালে এমন একটি নির্বাচন করেই আমাদের থেমে থাকলে হবে না। নির্বাচনের পর বিরোধী দল আর সরকার মিলে দেশ গঠন করতে হবে। বেগম জিয়া যদি বিরোধী দলের নেত্রী হয়েও যান তাতে অসুবিধা নেই। ওনার সঙ্গে তারেক রহমানের কোনো কোন্দল হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ উনারা নিতে পারবেন। আমি বিশ্বাস করি, এই ঔদার্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। উনার পরামর্শ নিয়ে সবাই দেশের জন্য কাজ করে আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে শুধু মধ্যম আয় নয়, উচ্চ আয়ের একটি সোনার বাংলায় পরিণত করতে পারব।
মশিউর রহমান চৌধুরী: ধন্যবাদ জনাব নূরুল করিম ও হাসিব নজরুল। জনাব নূরুল করিমের আশাবাদের মধ্য দিয়েই আজকের অনুষ্ঠানের শেষ করছি। আমরা আশা করব সবার মধ্যে সমন্বয়ের রাজনীতির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের অসমাপ্ত স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু-কন্যার হাতে পূরণ হবে। দর্শকমণ্ডলী, আপনারা সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, উন্নয়নের স্বপ্ন দেখুন এবং আমাদের আলোচকদের মতো গঠনমূলক চিন্তা করতে থাকুন। জয় বাংলা।
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
দর্শকমণ্ডলী, আমরা আজ আলোচনা শুরু করছি গণতন্ত্রের এক হীরকোজ্জ্বল মুহূর্তে। আপনারা জানেন, মাত্র কয়েক দিন আগে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসন বিল পাস হয়েছে। এটি ছিল আমাদের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী, যাকে বলা যায় সুইট সিক্সটিন্থ। এই সংশোধনীর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহু বছরের স্বপ্ন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে দেশের সাংবাদিকদের বহু বছরের প্রাণের দাবি সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষকে জঙ্গি, সন্ত্রাসী এবং একাত্তরের রাজাকারদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি আইন করা হয়েছে। যা-ই হোক, এবার মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আজ আমরা আলোচনা করব মূলত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে। এ প্রসঙ্গে আমি প্রথমে কিছু বলার জন্য ড. হাসিব নজরুলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
হাসিব নজরুল: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, জাতির জীবনের এই গৌরবোজ্জ্বল অর্জন নিয়ে আমাকে কিছু বলতে দেওয়ার জন্য। সত্যি বলতে কি এই সংশোধনী নিয়ে আমারও কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদে প্রদত্ত ভাষণ শুনে আমার সব দ্বিধা কেটে গেছে। তিনি সংসদে বলেছেন, আগে উচ্চ আদালতের বিচারকদের চাকরি যেত মাত্র তিনজন বিচারকের মতামতে আর এখন তাঁদের চাকরি খেতে হলে সংসদের সাড়ে তিন শ সদস্যের মতামত লাগবে। তার মানে তিনি এই ইঙ্গিত প্রদান করেছেন যে বিচারকদের চাকরির নিরাপত্তা এখন শতাধিক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অসাধারণ পাণ্ডিত্যের জন্য আমি তাঁকে প্রাণঢালা ধন্যবাদ জানাই। আমি মনে করি, এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়কসহ সবার চাকরিচ্যুতির ক্ষমতা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে অর্পণ করে গণতন্ত্রের ভিতকে আরও মজবুত করা উচিত।
মশিউর রহমান চৌধুরী: কিন্তু কিছু মহলের পক্ষ থেকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সংসদ জনপ্রতিনিধিত্বশীল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। জনাব করিম?
নূরুল করিম: আমি জানি এই প্রশ্ন আপনি করবেন। এই প্রশ্ন যারা তোলে, তারা মূর্খ; তাদের জ্ঞান, পড়াশোনা ও ইতিহাসবোধ নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। আমরা জানি, গ্রিক নগর রাষ্ট্রে যে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে বৃহৎ রাষ্ট্রকাঠামোতে অচল হয়ে পড়ে। এরপর রোমান রিপাবলিকের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র ধারণাটির বাস্তবায়ন শুরু হয়, যদিও রোমান রিপাবলিক আসলেই প্রতিনিধিত্বশীল ছিল কি না, তা নিয়ে রাষ্ট্রচিন্তকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের প্রকৃত বিকাশ আসলে ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রসমূহে। এসব কোনো গণতন্ত্র যা করতে পারেনি, তাই হয়েছে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গণতান্ত্রিক, সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন!
মশিউর রহমান চৌধুরী: কীভাবে?
নূরুল করিম: আমি সেই আলোচনাতেই আসছি। আপনি জানেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মানে আমাদের বুঝতে হবে। এর মানে হচ্ছে এঁদের যোগ্যতা, সততা এবং দেশপ্রেমে মুগ্ধ হয়ে অন্য কেউ প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেননি। এই সংসদের সিংহভাগ প্রতিনিধি তাই তাঁদের এলাকার শতভাগ জনগণের প্রতিনিধি। এই সংসদের মতো প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ তাই পৃথিবীর ইতিহাসে একটিও নেই। এই সংসদের হাতে বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়ে জনগণ ও গণতন্ত্রকে বরং সম্মানিত করা হয়েছে।
মশিউর রহমান চৌধুরী: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই চমৎকার ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য। তা ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে এও বলা হচ্ছে যে আমেরিকা, ব্রিটেন, ভারতের মতো রাষ্ট্রেও একই বিধান রয়েছে।
হাসিব নজরুল আপনি কিছু বলবেন?
হাসিব নজরুল: আমি মনে করি না অন্য রাষ্ট্রের তুলনা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন এখন আমাদের রয়েছে। ব্রিটেন বা ভারতে বিরোধী দল যখন ইচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, সরকার কোনো পরিকল্পনা করলে নিজেরা আরেকটি পরিকল্পনা হাজির করে, তারা নাকি শ্যাডো গভর্নমেন্ট—ছায়া সরকার। এ ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কোনো কাজ আমাদের বিরোধী দল বর্তমানে করে না। বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি বরং সরকারের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছে। তারা সরকারে যোগদান করেছে, সরকারের সঙ্গে একযোগে যোড়শ সংশোধনী পাস করেছে, এমনকি নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তা মীমাংসা করেছে। কাজেই আমরা আশা করতে পারি, সংসদ যদি কোনো বিচারককে চাকরিচ্যুত করে, তাহলে তা হবে সংসদের প্রতিটি সদস্যের মতৈক্যের ভিত্তিতে। দেশের ১৬ কোটি লোকের মতামত তাতে প্রতিফলিত হবে বলে আমি মনে করি।
নূরুল করিম: ড. নজরুলের সঙ্গে আমি একটু যোগ করতে চাই। সরকার আর বিরোধী দলের এই একত্রে কাজ করার নজির এখন বিদেশেও অনুসৃত হচ্ছে। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার বিপক্ষে ব্রিটেনে সরকারি দল আর বিরোধী দলগুলো একসঙ্গে কাজ করেছে। ব্রিটেনের স্বাধীনতা আর অখণ্ডতা তারা এভাবেই বাংলাদেশের মডেল অনুসরণ করে রক্ষা করতে পেরেছে।
মশিউর রহমান চৌধুরী: কিন্তু ভবিষ্যতে কোনো সংসদে সরকার আর বিরোধী দলের এমন সদ্ভাব তো নাও থাকতে পারে।
নূরুল করিম: আপনার এই আশঙ্কা একেবারেই অমূলক। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলেছেন যে ভবিষ্যৎ নির্বাচন ৫ জানুয়ারির মতোই হবে। কাজেই ভবিষ্যতেও আমরা বিরোধী দলকে বর্তমানের মতো গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে দেখব। ভবিষ্যৎ নিয়ে ২০৪১ সাল পর্যন্ত আমাদের আসলে চিন্তার কিছু নেই।
মশিউর রহমান চৌধুরী: কিন্তু ভবিষ্যতে যদি বিএনপি আর ভুল না করে! তারা যদি নির্বাচনে অংশ নেয়! রওশান এরশাদের চেয়ে বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তা যদি বৃদ্ধি পায়, যদি তিনি আবারও বিরোধী দলের নেত্রী হতে চান?
হাসিব নজরুল: নিরপেক্ষতার স্বার্থে আমরা তাঁর চাওয়ার বিরোধিতা করতে পারি না। তবে আমার ধারণা, ভবিষ্যৎ নির্বাচনে তিনি বা তাঁর ছেলে অংশ নিতে পারবেন না। সংসদের হাতে বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা ফিরে এসেছে। কোনো আদালতই এখন দুর্নীতিবাজ বা জঙ্গি নেতাদের কোনো ছাড় দেওয়ার সাহস পাবে না। ছাড় দিলে শুধু চাকরি যেতে পারে তা নয়। আমরা দেখেছি, তারেক রহমানকে দুর্নীতির মামলায় খালাস দেওয়া বিচারকের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন তৎপর হয়েছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
নূরুল করিম: আমার ধারণা, যুদ্ধাপরাধী আদালতের ইনভেস্টিগেশন টিম একটু তৎপর হলে ওই বিচারকদের বিরুদ্ধে একাত্তরের গণহত্যার অভিযোগও আনা যেত। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে মালয়েশিয়া থেকে ধরে এনে এখনো তা করা সম্ভব।
মশিউর রহমান চৌধুরী: যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গ যখন এল, তখন আমরা মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তিনি বলেছেন, সাঈদীর বিচারের রায় নিয়ে নীরব থেকে বিএনপির নেত্রী যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ অবলম্বন করেছেন।
নূরুল করিম: তিনি ঠিকই বলেছেন। জনাব ইনু ইদানীং সব কথাই ঠিক বলছেন, সব কাজই ঠিক করছেন। একজন মানুষ তাঁর আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে কতটা নিখাদ সোনায় পরিণত হতে পারে, তিনি তার উজ্জ্বল উদাহরণ। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। আজ তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় প্রেমিক হয়েছেন। জাসদ গণ-আন্দোলন থেকে হঠকারিতা ও সহিংসতার রাজনীতির পথে গিয়েছিল যাঁদের পরামর্শে, তিনিও তাঁদের একজন ছিলেন। তিনি আজ সহিংসতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার কণ্ঠ হয়েছেন। জাসদের ভেতর ঢুকে পড়ে স্বাধীনতাবিরোধী চক্ররা এ দেশে রাজনৈতিকভাবে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। অথচ তিনি এখন স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা নিয়েছেন। তাঁর সাহসিকতা, বাকচাতুর্য ও দেশপ্রেমের পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি নির্বাচনে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। এবার তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, বাংলাদেশের একটি মানুষও তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাঁকে অসম্মানিত করতে চায়নি।
হাসিব নজরুল: আর এখানেই আমি মনে করি জনাব ইনুর কাছ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার অনেক কিছু শেখার আছে। তিনিও তাঁর ভুল বুঝতে পারলে ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারেন। এমনকি ভবিষ্যতে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিত্ব লাভ করে তাঁর লাল পাসপোর্ট ফেরত পেতে পারেন। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করার কাফফরা দেওয়ার সুযোগ পাওয়ার অধিকার তাঁরও রয়েছে।
মশিউর রহমান চৌধুরী: আপনি ঠিকই বলেছেন। আমাদের মনে আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, নির্বাচনে এলে বিএনপিও সংসদে কিছু আসন পেত, কয়েকজনকে মন্ত্রীও বানানো হতো।
নূরুল করিম: আমি মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতির পথ ধরেই আমাদের ভবিষ্যতে এগোতে হবে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির মতো বড় দলগুলো একসঙ্গে মিলেমিশে অংশ নিলে ১৫৪টি কেন, হয়তো কোনো আসনেই ভোটাভুটি করার প্রয়োজন আমাদের পড়বে না। এতে আমাদের কোটি কোটি টাকার সাশ্রয় হবে, অহেতুক প্রাণহানি ও হানাহানি থেকে দেশ রক্ষা পাবে, ব্যালট পেপারের কাগজ এবং ভোটকেন্দ্র বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে দেশে পরিবেশ বিপর্যয় ও জলবায়ুর পরিবর্তন থেকে রক্ষা করা যাবে।
মশিউর রহমান চৌধুরী: কিন্তু এটি বৈধ নির্বাচন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এর সমাধান কী?
হাসিব নজরুল: সমাধান তো হাইকোর্ট দিয়েছেন। হাইকোর্ট বলেছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ আসনে নির্বাচন বৈধ। কাজেই ভবিষ্যতে ৩০০ আসনেও তা বৈধ হবে।
নূরুল করিম: আমি আমার বক্তব্য শেষ করতে পারিনি। ২০১৯ সালে এমন একটি নির্বাচন করেই আমাদের থেমে থাকলে হবে না। নির্বাচনের পর বিরোধী দল আর সরকার মিলে দেশ গঠন করতে হবে। বেগম জিয়া যদি বিরোধী দলের নেত্রী হয়েও যান তাতে অসুবিধা নেই। ওনার সঙ্গে তারেক রহমানের কোনো কোন্দল হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ উনারা নিতে পারবেন। আমি বিশ্বাস করি, এই ঔদার্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। উনার পরামর্শ নিয়ে সবাই দেশের জন্য কাজ করে আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে শুধু মধ্যম আয় নয়, উচ্চ আয়ের একটি সোনার বাংলায় পরিণত করতে পারব।
মশিউর রহমান চৌধুরী: ধন্যবাদ জনাব নূরুল করিম ও হাসিব নজরুল। জনাব নূরুল করিমের আশাবাদের মধ্য দিয়েই আজকের অনুষ্ঠানের শেষ করছি। আমরা আশা করব সবার মধ্যে সমন্বয়ের রাজনীতির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের অসমাপ্ত স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু-কন্যার হাতে পূরণ হবে। দর্শকমণ্ডলী, আপনারা সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, উন্নয়নের স্বপ্ন দেখুন এবং আমাদের আলোচকদের মতো গঠনমূলক চিন্তা করতে থাকুন। জয় বাংলা।
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments