রেকর্ড সংখ্যক সফরসঙ্গী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আজ নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন
জাতিসংঘের
৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাতে নিউ ইয়র্কের পথে
রওনা হচ্ছেন। ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় মেয়াদে
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি এই প্রথম সর্বোচ্চ সংখ্যক বিশ্বনেতার
উপস্থিতিতে কোন ফোরামে অংশ নিচ্ছেন। অবশ্য অতীতের সব বেকর্ড ভঙ্গ করে এবার
প্রায় পৌনে ২০০ সফরসঙ্গী প্রধানমন্ত্রীর বহরে যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে
মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সরকারি কর্মকর্তারা যাচ্ছেন রাষ্ট্রীয়
খরচে। সফর প্রস্তুতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, শেষ
মুহূর্ত পর্যন্ত তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন অব্যাহত থাকায় গত রাতে এ রিপোর্ট
লেখা পর্যন্ত তা চূড়ান্ত হয়নি। খসড়া তালিকা অনুযায়ী ৯ জন
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন ওই বহরে। তাদের অনেকের সহধর্মিণীর নাম তালিকায়
না থাকলেও তাদের জন্য নিউ ইয়র্কে হোটেলের রুম বুকিং দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে দু’একজন আগেই চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লিতে রয়েছেন, সেখান থেকে নিউ ইয়র্ক পৌঁছবেন। ওই
তালিকায় যারা রয়েছেন তারা হলেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত,
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম (সস্ত্রীক), প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার
খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (ব্যক্তিগত
খরচে, ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছেন), খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম,
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক
উপদেষ্টা মশিউর রহমান ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান দীপু মনি
যাচ্ছেন। ওই কমিটির আরও দু’ জন সদস্য মেহজাবিন খালেদ এমপি ও রাজি মো.
ফখরুলও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে,
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকায় না থাকলেও রেওয়াজ অনুযায়ী পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সব সদস্যই তিন মাস ধরে চলা জাতিসংঘের
সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের কোন না কোন পর্বে অংশ নেন। অবশ্য এবারই রেকর্ড
সংখ্যক মন্ত্রী ও সচিব একই সঙ্গে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের সনদ
জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ মিয়া সস্ত্রীক
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন। সচিবদের ওই তালিকায় পরিবেশ ও বন সচিব,
শ্রম সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, নৌ সচিব,
পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্য রয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার উচ্চ পদস্থ
কর্মকর্তারাও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন। সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ
বড়ুয়া মন্ত্রী হিসেবে গত অধিবেশনে গিয়েছিলেন। এবারও তিনি যাচ্ছেন।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। অবশ্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার
নেতৃবৃন্দসহ মহাজোটের শরিক বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা এবার প্রধানমন্ত্রীর
সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় খরচে তাদের সফর হলেও নিউ ইয়র্কে
সরকারি কোন কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। একাধিক কূটনৈতিক
সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ১৬ কর্মকর্তা পররাষ্ট্র
দপ্তরের ২৫ (নিউ ইয়র্কস্থ স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি ও ওয়াশিংটন দূতাবাসের
কর্মকর্তাসহ), অন্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থা ১৩, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় ২০,
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং ও সংযুক্ত মিডিয়ার প্রতিনিধি মিলে ২২ জন
সফরসঙ্গী হচ্ছেন।
বিশিষ্ট ব্যক্তির তালিকায় রয়েছেন- পঞ্চগড়-১ এর সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া এডভাইজর ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিকুল্লা খান মাসুদ, সুপ্রিম কোর্টের সহকারী এটর্নি জেনারেল এডভোকেট এম এম কামরুল হাসান খান, আওয়ামী লীগের সাব-কমিটির সহকারী সম্পাদক মো. মশিউর রহমান, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম রাজু, ফেনী আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান, ফেনী আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল বাসার মজুমদার, কক্সবাজার জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান কাজী ফাতেমা আহমেদ, দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র সাব-এডিটর বেগম ফরিদা ইয়াসমিন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার প্রেসিডেন্ট এ কে এম আবদুল হামিদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম আবদুল মোতালেব, অনিল দাশগুপ্ত, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার প্রফেসর ড. এম শহিদুল্লাহ, গণআজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস কে সিকদার প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- মুখ্যসচিব আবদুস সোবহান সিকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মো. আবদুস সোবহান মিয়া প্রমুখ। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ট্রাস্টের কন্ট্রোলার অব একাউন্টস সিদ্দিক হোসেন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বেগম সেলিমা খাতুন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি এ কে এম শামিম চৌধুরীও রয়েছেন। ওই বহরে পররাষ্ট্রদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক, মহাপরিচালক জাতিসংঘ সাঈদা মুনা তাসনিম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ, চিফ অব প্রটোকল আসাদ আলম সিয়াম, পরিচালক বহিঃপ্রচার নৃপেন চন্দ্র দেব নাথ, ওয়াশিংটন দূতাবাসের কাউন্সিলর নিরুপম দেবনাথ, ডেপুটি চিফ অব প্রটোকল (সফর) মো. মনিরুল ইসলাম, পরিচালক (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তর) শাহ আসিফ রহমান, পরিচালক (পররাষ্ট্র সচিবের দপ্তর) ইকবাল আহমেদ, পরিচালক (এমআরপি) বি এম জামাল হোসাইন, পরিচালক (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর) দেওয়ান আলী আশরাফ, পরিচালক (অর্থনৈতিক সম্পর্ক) সঞ্চিতা হক, সহকারী সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) নওরিদ শারমিন, সিনিয়র সহকারী সচিব (সফর) হুমায়ুন কবির, সহকারী সচিব (জাতিসংঘ) আবদুল ওয়াদুদ আখন্দ, সহকারী সচিব (সফর) মো. সফিউল আজম, সহকারী সচিব (এসএসএ) মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন, সহকারী সচিব (সফর) মো. মাহমুদুল ইসলাম, সহকারী সচিব (মিশন-১) তানভির আহমেদ তফরদার প্রমুখ।
অন্য মন্ত্রণালয়ের ও সংস্থার প্রতিনিধিদের মধ্যে রয়েছেন-বন ও পরিবেশ সচিব নজিবুর রহমান, শ্রম সচিব মিকাঈল সিপার, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সদস্য শামসুল আলম, নৌসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রাইসুল আলম মণ্ডল, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ-এর ফারহা কবির, রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ আল কবির, পিকেএসফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন সামস। গণমাধ্যমের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের মধ্যে রয়েছেন- ইত্তেফাকের সিটি এডিটর আবুল খায়ের, চ্যানেল আই-এর নিউজ এডিটর প্রণব কুমার শাহ, ডিএফপির অফিসিয়াল ফিল্ম ক্যামেরাম্যান লুৎফর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসাইন, দৈনিক জনকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি দেবাশিস্ চক্রবর্তী, বরিশাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি গাজী আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঞা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ ও দৈনিক বর্তমানের যুগ্ম সম্পাদক দুলাল আহমেদ চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত প্রেস ও মিডিয়া টিমের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মো. নজরুল ইসলাম, সময় টেলিভিশনের সিইও আহমেদ যোবায়ের, প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি সেক্রেটারি মো. আশরাফুল আলম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বিশেষ প্রতিনিধি এ জেড এম সাজ্জাদ হোসাইন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, বাংলাদেশ বেতারের কন্টোলার অব নিউজ মো. আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিনিয়র ক্যামরাম্যান মো. রোবায়েত হাসান খান, বিটিভির নির্বাহী পরিচালক (নিউজ) মো. আসিফুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব আসিফ কবির, বাংলা নিউজের চিফ করসপন্ডেন্ট মাহমুদ মেনন খান, বিডি নিউজের সিনিয়র করসপন্ডেন্ট সুমন মাহবুব শেখ, ইউএনবির সিনিয়র করসপন্ডেন্ট ফাহাদ ফেরদৌস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ফটোগ্রাফার হাবিবুর রহমান হাবিব, পিআইডির অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার সুমন দাস। এছাড়াও এফবিসিসিআই-র প্রেসিডেন্ট কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক ব্যবসায়িক নেতার সমন্বয় গঠিত একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নিজেরাই নিজেদের ব্যয় নির্বাহ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর যত কর্মসূচি: আগামী ২৭শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করবেন। এবারও তিনি বক্তৃতা দেবেন বাংলায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই অধিবেশনে বক্তৃতা দেয়া ছাড়াও বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। আগামী ২৩শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুনের উদ্যোগে আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনে এবং ২৪শে সেপ্টেম্বর বৈশ্বিক শিক্ষাবিষয়ক বৈঠকে বক্তৃতা করবেন। ২৬শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আয়োজিত শান্তিরক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে তিনি যৌথ সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। একই দিনে তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৪০ বছর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও বক্তৃতা করবেন। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নিউ ইয়র্ক অবস্থানের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত, নেপাল, চিলি, কাতার ও বেলারুশসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া, অন্যবারের মতো এবারও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আয়োজিত দু’টি আলাদা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। পাশাপাশি তিনি ইউএস চেম্বারস ও ইউএস বিজনেস কাউন্সিলের যৌথ আয়োজিত একটি বৈঠকে যোগ দেবেন।
No comments