আইনের ফাঁদে দুস্থ নারী -ভাঙাতে পারছেন না দুই কোটি ৬৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র by শরিফুজ্জামান
দুস্থ ও বিত্তহীন প্রায় সাড়ে তিন হাজার নারীর ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ৪৭ লাখ টাকা দিয়ে প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র কেনা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। আট বছরের মেয়াদ ২০০৭ সালে পূর্ণ হয়েছে। এরপর সাত বছর ধরে অনেক চেষ্টা করেও সঞ্চয়পত্রগুলো ভাঙাতে পারছেন না হতদরিদ্র সমবায়ী নারীরা।
১৯৯৯ সাল থেকে এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব দুস্থ নারীর মুনাফাসহ পাওনা হয়েছে দুই কোটি ৬৯ লাখ টাকা। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে সপ্তাহে পাঁচ থেকে ২০ টাকা জমিয়ে ৪৭ লাখ টাকা জোগাড় করেছিলেন তাঁরা।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর (সাবেক ব্যুরো) বলছে, সমবায় আইনে নিবন্ধিত সমিতি ছাড়া কোনো উন্নয়নমূলক সমিতি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে না। কিন্তু এই সমিতি দুটি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে (বিআরডিবি) নিবন্ধিত। এ কারণে তাঁরা মুনাফা পাবেন না। এখন মুনাফা ছাড়াই সঞ্চয়পত্রগুলো ভাঙাতে পারবেন।
ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে বিআরডিবির অধীনে পরিচালিত সমিতি দুটির নাম মহিলা বিত্তহীন কেন্দ্রীয় উন্নয়ন সমিতি এবং পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি। বিত্তহীন এক হাজার ২০০ নারীর টাকার পরিমাণ ৩৯ লাখ। আর পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির দুই হাজার ৪০০ সদস্যের টাকার পরিমাণ আট লাখ। এই সমিতিতে পুরুষ আছেন শ খানেক।
মহিলা বিত্তহীন কেন্দ্রীয় উন্নয়ন সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান সালমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সঞ্চয়পত্র কেনার সময় তো এমন প্রশ্ন তোলা হয়নি। তা ছাড়া আমরা এই নিয়মের কথা জানতামও না।’
কেরানীগঞ্জ জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান লায়েক আলী বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ মে সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ আট বছর পূরণ হওয়ার পর সঞ্চয় ব্যুরো এই ত্রুটি বের করে। তখন কিছু খরচ করলে সুদাসলে টাকা ফেরতের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ভেবেছিলেন, দুস্থ নারীদের টাকা নিয়ে এমন অমানবিক আচরণ কেউ করবে না।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ সূত্র জানায়, সাত বছর ধরে চলমান বিভিন্ন উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। সভায় সঞ্চয় পরিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহমুদা আক্তার জানান, দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, এর সঙ্গে জড়িত দুই কর্মকর্তা মারা গেছেন। এখন দুস্থদের প্রাপ্য হলেও তা দেওয়ার এখতিয়ার পরিদপ্তরের নেই।
তবে এই টাকা সুদাসলে দুস্থদেরই প্রাপ্য এবং তা দেওয়া উচিত বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, ঢাকা জেলা প্রশাসক, কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এবং বিআরডিবি। এসব কর্তৃপক্ষ বলছে, কিছু ত্রুটি থাকলেও মানবিক কারণে গরিবের টাকা ফেরত দেওয়া উচিত।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাত বছর ধরে আইনের মারপ্যাঁচে এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়, এক সংস্থা থেকে আরেক সংস্থায় ঘুরছে এসব দরিদ্র মানুষের ভাগ্য। ২০০৮ সালে সঞ্চয় পরিদপ্তর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে এসব সঞ্চয়পত্র মুনাফাসহ নগদায়নের অনুমতি চান। ঢাকার জেলা প্রশাসকও একই সুপারিশ করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি পাঠান। ২০১০ সালে বিআরডিবির মহাপরিচালকও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিবকে একই অনুরোধ জানান। সমবায় সচিব চিঠি দেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবকে। ছয় মাস জবাব না পেয়ে সমবায় সচিব ২০১১ সালে আবারও চিঠি দেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবকে।
চিঠি চালাচালির একপর্যায়ে ২০১১ সালের ১০ মে বাংলাদেশ ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের মধ্যে বৈঠক হয়। ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর বিআরডিবির যুগ্ম পরিচালক এই গঠনতন্ত্র অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে পাঠায়। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর আন্তমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি পর্যালোচনা হয়েছে। এত সভা আর চিঠি চালাচালির ফল শূন্য। এখন উচ্চ আদালতে রিট করার চিন্তা করা হচ্ছে।
বিআরডিবির মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে কেরানীগঞ্জে দরিদ্র, বিত্তহীন ও দুস্থ মানুষকে স্বাবলম্বী করতে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব এম এ কাদের সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। তাঁর নজরে আসার পর সভা ডেকেছেন। কিন্তু আগের সভাগুলোর কোনো কার্যবিবরণী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
১৯৯৯ সাল থেকে এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব দুস্থ নারীর মুনাফাসহ পাওনা হয়েছে দুই কোটি ৬৯ লাখ টাকা। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে সপ্তাহে পাঁচ থেকে ২০ টাকা জমিয়ে ৪৭ লাখ টাকা জোগাড় করেছিলেন তাঁরা।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর (সাবেক ব্যুরো) বলছে, সমবায় আইনে নিবন্ধিত সমিতি ছাড়া কোনো উন্নয়নমূলক সমিতি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে না। কিন্তু এই সমিতি দুটি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে (বিআরডিবি) নিবন্ধিত। এ কারণে তাঁরা মুনাফা পাবেন না। এখন মুনাফা ছাড়াই সঞ্চয়পত্রগুলো ভাঙাতে পারবেন।
ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে বিআরডিবির অধীনে পরিচালিত সমিতি দুটির নাম মহিলা বিত্তহীন কেন্দ্রীয় উন্নয়ন সমিতি এবং পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি। বিত্তহীন এক হাজার ২০০ নারীর টাকার পরিমাণ ৩৯ লাখ। আর পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির দুই হাজার ৪০০ সদস্যের টাকার পরিমাণ আট লাখ। এই সমিতিতে পুরুষ আছেন শ খানেক।
মহিলা বিত্তহীন কেন্দ্রীয় উন্নয়ন সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান সালমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সঞ্চয়পত্র কেনার সময় তো এমন প্রশ্ন তোলা হয়নি। তা ছাড়া আমরা এই নিয়মের কথা জানতামও না।’
কেরানীগঞ্জ জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান লায়েক আলী বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ মে সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ আট বছর পূরণ হওয়ার পর সঞ্চয় ব্যুরো এই ত্রুটি বের করে। তখন কিছু খরচ করলে সুদাসলে টাকা ফেরতের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ভেবেছিলেন, দুস্থ নারীদের টাকা নিয়ে এমন অমানবিক আচরণ কেউ করবে না।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ সূত্র জানায়, সাত বছর ধরে চলমান বিভিন্ন উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। সভায় সঞ্চয় পরিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহমুদা আক্তার জানান, দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, এর সঙ্গে জড়িত দুই কর্মকর্তা মারা গেছেন। এখন দুস্থদের প্রাপ্য হলেও তা দেওয়ার এখতিয়ার পরিদপ্তরের নেই।
তবে এই টাকা সুদাসলে দুস্থদেরই প্রাপ্য এবং তা দেওয়া উচিত বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, ঢাকা জেলা প্রশাসক, কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এবং বিআরডিবি। এসব কর্তৃপক্ষ বলছে, কিছু ত্রুটি থাকলেও মানবিক কারণে গরিবের টাকা ফেরত দেওয়া উচিত।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাত বছর ধরে আইনের মারপ্যাঁচে এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়, এক সংস্থা থেকে আরেক সংস্থায় ঘুরছে এসব দরিদ্র মানুষের ভাগ্য। ২০০৮ সালে সঞ্চয় পরিদপ্তর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে এসব সঞ্চয়পত্র মুনাফাসহ নগদায়নের অনুমতি চান। ঢাকার জেলা প্রশাসকও একই সুপারিশ করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি পাঠান। ২০১০ সালে বিআরডিবির মহাপরিচালকও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিবকে একই অনুরোধ জানান। সমবায় সচিব চিঠি দেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবকে। ছয় মাস জবাব না পেয়ে সমবায় সচিব ২০১১ সালে আবারও চিঠি দেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবকে।
চিঠি চালাচালির একপর্যায়ে ২০১১ সালের ১০ মে বাংলাদেশ ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের মধ্যে বৈঠক হয়। ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর বিআরডিবির যুগ্ম পরিচালক এই গঠনতন্ত্র অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে পাঠায়। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর আন্তমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি পর্যালোচনা হয়েছে। এত সভা আর চিঠি চালাচালির ফল শূন্য। এখন উচ্চ আদালতে রিট করার চিন্তা করা হচ্ছে।
বিআরডিবির মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে কেরানীগঞ্জে দরিদ্র, বিত্তহীন ও দুস্থ মানুষকে স্বাবলম্বী করতে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব এম এ কাদের সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। তাঁর নজরে আসার পর সভা ডেকেছেন। কিন্তু আগের সভাগুলোর কোনো কার্যবিবরণী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
No comments