সরকারি জমি দখল করে ‘জমিদার’ ক্ষমতাসীনেরা by প্রণব বল
ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে
চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর দখল করে
বস্তি-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বকশিরহাট ওয়ার্ড
যুবলীগের সহসভাপতি মো. আকতার হোসেন। পাশাপাশি বিরোধী দল বিএনপি, স্থানীয়
ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীরা এই দখলপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।
দখল সুসংহত রাখতে গঠন করা হয়েছে ‘ভেড়ামার্কেট শ্রমজীবী সমবায় কল্যাণ সমিতি’ নামে একটি সংগঠন। সমিতির সভাপতি আকতার হোসেন। সমিতির নেতাদের প্রত্যেকের পাঁচ থেকে ৫০টি পর্যন্ত কক্ষ রয়েছে। এঁরা ‘জমিদার’ নামে পরিচিত।
আকতার হোসেনের নামে সবচেয়ে বেশি ৬০টি কক্ষ রয়েছে। তিনি কসাই আকতার নামে পরিচিত। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী। বকশিরহাট ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উত্তম নাগেরও বেশ কিছু ঘর রয়েছে।
সমিতির সভাপতি এবং ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি আকতার হোসেন দাবি করেন, ‘এখানে গরিব লোকজন থাকেন। যাঁরা জমি দখল করেছেন, তাঁদের কেউ ব্যবসায়ী, কেউ রাজনীতিক কেউবা বড় চাকুরে। এগুলো ব্রিটিশ আমলে ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদ ছিল। একসময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে চর জেগে উঠলে এগুলো সরকারি খাস হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। আমরা চর ভরাট করে ১৫-২০ বছর ধরে বসবাস করছি। এগুলো নিয়ে মামলাও চলছে।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আকতার, সাত্তার, উত্তম নাগ ছাড়াও দখলদারদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা আকতার কামাল, ড্রেজার মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর মেম্বার, ফরিদ চেয়ারম্যান, আজিম সওদাগর, ইছহাক সওদাগর, ইয়াহিয়া খান, শুক্কুর আলী, এরশাদ আলী, আলী আব্বাস তালুকদার, জোস মোহাম্মদ, ইয়াছিন প্রমুখ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চাক্তাই এবং রাজাখালী খালের পাশে জেগে ওঠা চরের কর্ণফুলী নদীর কিনারের অংশে সীমানাদেয়াল। দেয়াল থেকে নদীর কিনারার অংশের মালিক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাকি ১০০ একরের বেশি জায়গা সরকারি খাস জমি। এই জমির তদারকিতে রয়েছে জেলা প্রশাসন। ওই জমিতে গড়ে উঠেছে বস্তি। বস্তির মাঝামাঝি ভেড়ামার্কেট শ্রমজীবী সমবায় কল্যাণ সমিতির একটি সাইনবোর্ড এবং কার্যালয়। বস্তিতে কাঁচা, সেমিপাকা এবং পাকা ঘর মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে রয়েছে বিদ্যুৎ-সংযোগ। সবার জন্য রয়েছে সাধারণ শৌচাগার। প্রতিটি কক্ষ থেকে মাসে এক থেকে দেড় হাজার টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। বস্তির বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন, তিনি সাত-আট বছর ধরে এই বস্তিতে আছেন। তাঁর কক্ষের ভাড়া নেওয়া হয় দেড় হাজার টাকা।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘শত শত একর জমিতে বস্তি গড়ে উঠেছে। এর পেছনে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী অনেকে থাকতে পারেন। যাঁরাই জড়িত থাকুন, আমরা বস্তি উচ্ছেদ করব। বস্তি উচ্ছেদ করে জায়গা খালি রাখা যাবে না। খালি রাখলে আবার দখল হবে। সেখানে কী করা যায়, সেই পরিকল্পনা করেই দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে।’
মেরিনার্স ড্রাইভ সড়কের কাজ ব্যাহত: বস্তির মাঝখান দিয়ে চলে গেছে মেরিনার্স ড্রাইভ সড়ক। সড়কটি কর্ণফুলী তৃতীয় সেতুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা। বস্তির কারণে সড়কের নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তবে সম্প্রতি বস্তির কয়েকটি ঘর উচ্ছেদ করে সড়ক সম্প্রসারণ কাজ করা হয়।
এরই মধ্যে সড়কের দুই পাশে ভাসমান দোকান বসানোর হিড়িক পড়েছে। বস্তির লোকজন এসব দোকান বসাচ্ছে। সড়কটি চালু হলে এসব দোকানের কদর বাড়বে। ইলিয়াছ নামে বস্তির একজন বাসিন্দা একটি দোকান দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সড়কটি চালু হলে এসব দোকানে ব্যবসা ভালো হবে। এই আশায় একটি ভাসমান দোকান করেছি। কাউকে টাকা দিতে হয়নি।’
সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘করপোরেশনের আওতাধীন মেরিনার্স সড়ক নির্মাণের জন্য কিছু ঘর আমরা ভেঙে দিয়েছি। আমরা সড়কের জন্য ৬০ ফুট জায়গা নিয়েছি। কিন্তু এর দুই পাশে এখনো অবৈধ বস্তি রয়েছে। সড়কের দুই পাশের জায়গাও দখল হচ্ছে।’
No comments