‘সাধারণ মানুষের মতো আবার আসবো’
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ তার এক সময়ের
নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা সফর শেষে গতকাল
করিমগঞ্জের চামড়াঘাটে এসে সমবেত জনতার উদ্দেশে বক্তৃতা করেছেন। বক্তৃতায়
তিনি বলেন, যদি বেঁচে থাকি, আবার আমি সাধারণ মানুষের মতো আপনাদের মাঝে ফিরে
আসবো। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শেষে আবার আপনাদের সঙ্গে আগের মতো
ঘুরতে-ফিরতে পারবো। আপনাদের কাছে থাকতে পারব। আপনাদের একজন হয়ে থাকব। তখন
আর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকব না। এ সময় সমবেত জনতা হাততালি দিয়ে
প্রেসিডেন্টকে উৎসাহ দেন।
তার ৫০ বছরের রাজনৈতিক অতীতের কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বলেন, সুদীর্ঘ এ সময়ে আপনাদের সঙ্গেই আমি ওঠাবসা করেছি। কত আন্দোলন, কত সংগ্রাম করেছি। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, দেন-দরবার ও সামাজিক কর্মকাণ্ড করেছি। সব কিছু আমি একা নই, আপনাদের সঙ্গে নিয়ে করেছি। স্বাভাবিকভাবেই আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কাজ করতে গিয়ে অনেকের মনে আঘাত দিয়ে থাকতে পারি। আমার কথা, আচার-আচরণ, চলাফেরায় কেউ যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন, অথবা আমার কোনো সিদ্ধান্তে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন-আজকের দিনে আমি সবার কাছে ক্ষমা চাই। আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।
তখন তিনি তার হজব্রতের কথা উল্লেখ করে সবার কাছ থেকে বিদায় ও দোয়া চান। এ সময় তিনি মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, মৃত্যু এমন একটি বিষয়। সবার জীবনে যে কোন সময় এটি ঘটতে পারে। আমারও হজের সময় বা আগে মৃত্যু হতে পারে। তাই আমার লোকজন ও এলাকাবাসীর কাছে যতটুকু সম্ভব সশরীরের হাজির হয়ে বিদায় ও দোয়া চাইতে এসেছি। আমি পবিত্র কাবা শরীফে গিয়ে দেশ ও আপনাদের শান্তি, মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করব।
প্রেসিডেন্ট বলেন, আমার গ্রাম কামালপুর, কিন্তু আমি মনে করি শুধু কামালপুর নয় আমার গ্রাম পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা। তবে আমি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। ১৬ কোটি মানুষের প্রেসিডেন্ট। দলমত নির্বিশেষে সবার প্রেসিডেন্ট। তাই যাওয়ার আগে পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে সবার কাছ থেকেই বিদায় নেব, দোয়া চাইবো।
এলাকার উন্নয়ন প্রসঙ্গে উপস্থিত শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং কয়েকজন সংসদ সদস্যের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট বলেন- মিলেমিশে কাজ করলে, নিজেদের মধ্যে দলাদলি না করে কাজ করলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। এলাকার উন্নয়ন হবে। আশা করি এ ধারা অব্যাহত রেখে আপনারা এলাকার উন্নয়ন-অগ্রগতিকে এগিয়ে নেবেন।
কিশোরগঞ্জ সফরের চতুর্থ দিনে গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জাহাজযোগে কিশোরগঞ্জের প্রবেশদ্বার চামড়াঘাটে পৌঁছান। আগের দিন তিনি ইটনায় রাত কাটান। চামড়াঘাটে বক্তৃতা শেষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুুল হামিদ সড়ক পথে কিশোরগঞ্জ জেলা সদর যাওয়ার সময় করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদে আবদুুল হামিদ মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি কলেজের ছাত্র-শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং কলেজ প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপন করেন। এরপর বিকালে তিনি কিশোরগঞ্জ সার্কিট হাউজে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
প্রেসিডেন্টের গতকালের কর্মসূচিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক এডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা প্রশাসক এস এম আলম, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম এ আফজাল প্রমুখ অংশ নেন।
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জে পাঁচ দিনের সফরের প্রথম তিন দিনে অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা সফর করেন। গতকাল শনিবার কর্মসূচি শেষে রাতে তিনি জেলা সদরের নিজ বাসভবনে রাতযাপন করবেন। আজ বিকালে হেলিকপ্টার যোগে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে কিশোরগঞ্জ ত্যাগ করবেন।
No comments