আশার বাণী শোনাতে পারেনি ভারত
দিল্লি বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টন ও
সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে কোন অগ্রগতি হয়নি। আশার কথা শোনাতে পারেনি ভারত।
কিন্তু ভারতীয় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা যেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন
সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে
রাজি হয়েছে বাংলাদেশ। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। এতে আরও বলা হয়, আলোচনায়
বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ
আলী। আর ভারতের পক্ষে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। জেসিসি
কাঠামোর মধ্যে দু’দেশের এটাই প্রথম বৈঠক। বৈঠক শেষে ভারত জানিয়েছে, তিস্তা
বা স্থলসীমান্ত চুক্তি দু’টোর ব্যাপারেই ভারতের ভেতরে রাজনৈতিক ঐকমত্য
তৈরির কাজ চলছে। সে কাজ এখনও শেষ হয়নি। তারা আশাবাদী এ কাজ শেষ হবে দ্রুত।
কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা বাংলাদেশকে কোন আশার কথা শোনাতে পারেননি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকের শেষে জানিয়েছেন, তারা হতাশ নন। তারা
বোঝেন যে এ ব্যাপারে ভারতেরও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা আছে। তারা এ ব্যাপারে
একটি ইতিবাচক ফলের জন্য অপেক্ষা করবেন। ভারত অনেক দিন ধরেই চাইছিল যাতে
ভারতীয় শিল্পপতিরা সহজে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন এমন সুবিধা। বাংলাদেশ
তাতে রাজি হয়েছে এবং বলেছে যে, প্রস্তাবিত ১৬টি জায়গা তারা ভারতকে দেখাতে
চায়, যেখানে ভারতীয় শিল্পপতিরা বিনিয়োগ করতে পারেন। এ ১৬ জায়গা থেকে একটিকে
বেছে নিয়ে ভারতীয় শিল্পপতিরা সেখানে বিনিয়োগ করবেন। সেখানে উৎপাদিত পণ্য
বাংলাদেশে বা ভারত কিংবা তৃতীয় কোন দেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। সরকারি
সূত্র জানিয়েছে, মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য এ উদ্যোগটাকে ব্যবহার করা
হতে পারে। এটা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের ভেতরে ভারতীয় শিল্পপতিরা বিশেষ
ইকোনমিক জোন, ভারত যেটাকে এসইজেড বলে, সেটাতে এ বিনিয়োগ সম্ভব হবে।
কলকাতা থেকে পরিতোষ পাল জানান, গতকালের বৈঠক শেষে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক দিক নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিনও পানি সমস্যা সমাধানে ভারতের ইতিবাচক অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানান, পানি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। আমরা এ বিষয়টি সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বিষয়কে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমাধানে ভারত সরকার কাজ করে যাচ্ছে। জেসিসি বৈঠকে ভারতের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, প্রস্তাবিত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের হিমালয় অববাহিকার অংশের ব্যাপারে ভারত সরকার এককভাবে এমন কোন সিদ্ধান্ত তবে না যাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উভয় দেশ ঢাকায় সুবিধামতো সময়ে ৩৮তম যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক আয়োজনের ব্যাপারে একমত হয়েছে। চার বছর ধরেই এই বৈঠক হয়নি। তাই এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বৈঠকে বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছিল বলে জানা গেছে। এছাড়া টিপাইমুখ পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প সংক্রান্ত সাব-গ্রুপের তৃতীয় বৈঠক দ্রুত বসানো এবং তথ্য বিনিময়ের ব্যাপারেও একমত হয়েছে উভয় দেশ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধিরা এদিন দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা আলোচনা করেন। আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হযেছে বলে জানানো হয়েছে। বৈঠকে নিরাপত্তার প্রশ্নে বাংলাদেশ যে ভাবে সহায়তা করেছে সে জন্য ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। সীমান্তে হত্যার ঘটনা কমানোর ব্যাপারে বিএসএফ যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে বৈঠকে দুই দেশই সীমান্তে হত্যার মতো অনভিপ্রেত ঘটনা শূন্যে নিয়ে আসার ব্যাপারে একমত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে জেসিসি বৈঠকে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে যে সব অশুল্ক বাধা রয়েছে তার তালিকা তুলে দেয়া হয়েছে। ভারত বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবে বলে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে ভারতের জন্য আলাদা ইকোনমিক জোন করার ঘোষণাকে ভারত স্বাগত জানিয়েছে। দুই দেশের জণগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য দুই দেশের মন্ত্রী উভয় দেশে আরও কূটনৈতিক প্রতিনিধি বাড়ানোর ব্যাপারে একমত হয়েছেন। এছাড়া বিদ্যুৎ, পরিকাঠামো, রেল সংযোগের মতো সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যূৎ দেয়ার কাজ চলছে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া বেঢ়ামারা-বহরমপুর বিদ্যুৎ গ্রিডে ১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ দেয়ার ব্যাপারে কারিগরি দিক খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যোগাযোগ বৃদ্ধির স্বার্থে ঢাকা-শিলং বাস চালানোর প্রস্তাবকে স্বাগত জানানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চারদিনের ভারত সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ভারতে এসেছিলেন। তিনি বৃহস্পতিবার সারা দিনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায় সহ ভারতের বিভিন্ন মন্ত্রকের মন্ত্রীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। শনিবার তিনি বিরোধী নেতা কংগ্রেসের গুলাম নবী আজাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এদিন মধ্যরাতেই জাতিসংঘের ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী রওনা হয়ে যাওয়ার কথা।
No comments