মালালা ইউসুফজাই গোটা বিশ্বকে যা শেখাল by মার্ক স্যাপেনফিল্ড
'দুশ্চিন্তা করো না বাবা, আমি ভালো হয়ে যাব। জয় আমাদেরই হবে।' বৃহস্পতিবারের ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরের রিপোর্টে বলা হয়েছে- এই কথাগুলো পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার ১৪ বছর বয়সী শান্তিকর্মী মালালা ইউসুফজাই তার বাবাকে বলেছিল পাকিস্তানের তালেবানরা তার মাথায় দুটি গুলি করার পর।
প্রকৃত অর্থে, মালালার এ কথাগুলো শুধু তার বাবার জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য।
খবরে প্রকাশ পেয়েছে, স্কুল-বালিকাবোঝাই একটি বাসে একজন অস্ত্রধারী উঠে পড়ে এবং শুধু একটি মেয়েকে বেছে নিয়ে মাথায় গুলি চালায়, যে মেয়েটি ইতিমধ্যেই আশা ও শান্তির আন্তর্জাতিক প্রতীক হয়ে উঠেছে। আততায়ীরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনা হয়তো ভালো কিছু করার যে স্পৃহা, তার মূলে আঘাত করতে পারে। মানবজাতির জন্য এর চেয়ে অমানবিক ঘটনা আর কিছুই হতে পারে না।
কিন্তু এ ঘটনা মালালা বা আমাদের অতটা হতভম্ব করেনি। বাস্তবে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার ঘটনাগুলোর অশুভ আক্রমণ থেকে ভালো কিছু বেরিয়ে আসছে এবং কিছু সময়ের জন্য হলেও বিজয় আসছে। কিন্তু একটি বিষয় ঠিক, মালালার এ ঘটনায় একটি সত্য ঝলক দিয়ে গেছে মানবিক চিন্তার বাইরে। আর সেটা হলো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে তার যে প্রতিবাদ, সেটাকে ক্ষান্ত করা যায়নি। পাকিস্তানের মেয়েদের জীবনের উন্নয়ন, ভয় দেখিয়ে তাদের চুপ করিয়ে রাখা অথবা তার কাছ থেকে বিজয়ের যে বিশ্বাস এবং সেই বিশ্বাসের যে শুদ্ধতা তা চরমপন্থীদের বুলেটের চেয়ে অনেক অনেক বেশি শক্তিশালী। তালেবানরাও সেটা জানে।
ইতিহাসে সব সময় শহীদের ভূমিকা আতঙ্কের মধ্যেও ন্যায় ও ভালোবাসাকে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জাগিয়ে তুলেছে। পাকিস্তানে তালেবানদের বহু বিষয়ই সহ্য করা হয়েছে। ওরা মুখে লম্বা দাড়ি রেখে এবং প্রার্থনাসভায় যাতায়াত করে ধার্মিকের লেবাস গায়ে চড়িয়েছে। ওরা পশতুনদের ভ্রাতৃত্ববোধের মুখোশ পরেছে। ওরা ভারত ও পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে জিহাদের উদ্দেশ্যে জাতীয়তাবাদের পোশাক ব্যবহার করছে।
কিন্তু মালালা এই মিথ্যাচারগুলো চোখে দেখতে পেয়েছে। তার কারণেই পাকিস্তানের জনগণের সামনে হয়তোবা প্রথমবারের মতো তাদের মুখোশ খুলে গেছে।
ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরের প্রতিষ্ঠাতা ম্যারি বেকার এডি গভীরভাবে শয়তানের কর্মপদ্ধতি খতিয়ে দেখতে চেষ্টা করেছেন। তিনি বুঝতে চেষ্টা করেছেন, কিভাবে শয়তানের এমন শক্তি হতে পারে, যেখানে বাইবেলে জনের প্রথম চিঠিতে বলা হয়েছে, 'ঈশ্বর হলেন ভালোবাসা। তিনি যা দেখতে পেয়েছেন তা হলো, দুষ্ট বা শয়তান কখনো মঙ্গলের সঙ্গে থাকতে পারে না। যদি কখনো তা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে, এটা মিথ্যা, প্রতারণা অথবা প্রতারণা। শুধু নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য।' এডি মনে করতেন, ধূর্ত বা বিশ্বাসঘাতকের কাজ নিজেকে লুকিয়ে রাখা।
বিষয়টি মালালা আমাদের সামনে আরো একবার প্রকাশ করল। তার মহৎ কাজ অশুভ শক্তিকে মুখোশ খুলে দিয়েছে।
এই অশুভ শক্তি এখন কোথায় লুকাবে? সহজ করে চিন্তা করা মানুষদের জন্য সম্ভব নয়। সায়েন্স মনিটরের প্রতিনিধি হিসেবে আমি পাকিস্তানে গিয়েছিলাম। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ তাদের দেশের সহিংস অবস্থা নিয়ে খুবই আতঙ্কিত। কিন্তু একই সঙ্গে তারা গর্বিত। তাদের নীতিজ্ঞান অত্যন্ত তীব্র। আমার বিশ্বাস, মালালা তার দেশবাসী পাকিস্তানিদের এই মহৎ গুণ দেখতে পেয়েছে। পাকিস্তানিদের ওই শক্তি তার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু মালালা তার দেশবাসীর কাছে এবং আমাদের সবাইকে কী দেখিয়েছে? তার এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা দেখিয়েছে যে কিভাবে পাকিস্তানকে অমঙ্গল চারদিক থেকে অবরোধ করে ফেলছে। মালালাকে গুলি করার আগে পাকিস্তানে এ ধরনের বিষয় ছিল ঠোঁট কামড়ে প্রতিবাদ করার মতো। এখন এটা গোটা জাতির জন্য এক দুর্দমনীয় আহ্বান হয়ে পড়েছে।
কিন্তু মালালা নিজে কি ভালো থাকবে, যা সে বলেছে? মরণশীল কোনো দৃষ্টিভঙ্গি এমন উল্লেখযোগ্য নয়। যে রাতে যিশুখ্রিস্টকে নির্যাতন করে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, তখন তিনি শিষ্যদের বলেছিলেন, 'আমি আমার শান্তি তোমাদের দিয়ে গেলাম, পৃথিবী যেভাবে দেয় সেভাবে আমি দেইনি।'
যাঁরা বিশ্বের বাস্তবতার বাইরে তাকান, তাঁদের জন্য বিশ্বের দৃশ্যাবলি খুব সুখের নয়। যিশু বেঁচেছিলেন কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। তিনি তাঁর ভেতর দিয়েই নিজেকে অভাবনীয়ভাবে গড়ে তুলেছিলেন। নিজের দুঃখ-যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে পিটার এ শিক্ষা পেয়েছিলেন যে, 'ঈশ্বর ব্যক্তিবিশেষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। এই বাণীর মধ্য দিয়েই আমরা আস্থার সঙ্গে এডির কথায় সায় দিয়ে বলতে পারি, ভালোত্ব কখনো তার ঈশ্বরকে হারায় না।'
একটি সন্ত্রাসবাদী ঘটনাও কি ভালোকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে পেরেছে? না।
লেখক : ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরের ডেপুটি এডিটর। দ্য ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর থেকে
ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
খবরে প্রকাশ পেয়েছে, স্কুল-বালিকাবোঝাই একটি বাসে একজন অস্ত্রধারী উঠে পড়ে এবং শুধু একটি মেয়েকে বেছে নিয়ে মাথায় গুলি চালায়, যে মেয়েটি ইতিমধ্যেই আশা ও শান্তির আন্তর্জাতিক প্রতীক হয়ে উঠেছে। আততায়ীরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনা হয়তো ভালো কিছু করার যে স্পৃহা, তার মূলে আঘাত করতে পারে। মানবজাতির জন্য এর চেয়ে অমানবিক ঘটনা আর কিছুই হতে পারে না।
কিন্তু এ ঘটনা মালালা বা আমাদের অতটা হতভম্ব করেনি। বাস্তবে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার ঘটনাগুলোর অশুভ আক্রমণ থেকে ভালো কিছু বেরিয়ে আসছে এবং কিছু সময়ের জন্য হলেও বিজয় আসছে। কিন্তু একটি বিষয় ঠিক, মালালার এ ঘটনায় একটি সত্য ঝলক দিয়ে গেছে মানবিক চিন্তার বাইরে। আর সেটা হলো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে তার যে প্রতিবাদ, সেটাকে ক্ষান্ত করা যায়নি। পাকিস্তানের মেয়েদের জীবনের উন্নয়ন, ভয় দেখিয়ে তাদের চুপ করিয়ে রাখা অথবা তার কাছ থেকে বিজয়ের যে বিশ্বাস এবং সেই বিশ্বাসের যে শুদ্ধতা তা চরমপন্থীদের বুলেটের চেয়ে অনেক অনেক বেশি শক্তিশালী। তালেবানরাও সেটা জানে।
ইতিহাসে সব সময় শহীদের ভূমিকা আতঙ্কের মধ্যেও ন্যায় ও ভালোবাসাকে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জাগিয়ে তুলেছে। পাকিস্তানে তালেবানদের বহু বিষয়ই সহ্য করা হয়েছে। ওরা মুখে লম্বা দাড়ি রেখে এবং প্রার্থনাসভায় যাতায়াত করে ধার্মিকের লেবাস গায়ে চড়িয়েছে। ওরা পশতুনদের ভ্রাতৃত্ববোধের মুখোশ পরেছে। ওরা ভারত ও পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে জিহাদের উদ্দেশ্যে জাতীয়তাবাদের পোশাক ব্যবহার করছে।
কিন্তু মালালা এই মিথ্যাচারগুলো চোখে দেখতে পেয়েছে। তার কারণেই পাকিস্তানের জনগণের সামনে হয়তোবা প্রথমবারের মতো তাদের মুখোশ খুলে গেছে।
ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরের প্রতিষ্ঠাতা ম্যারি বেকার এডি গভীরভাবে শয়তানের কর্মপদ্ধতি খতিয়ে দেখতে চেষ্টা করেছেন। তিনি বুঝতে চেষ্টা করেছেন, কিভাবে শয়তানের এমন শক্তি হতে পারে, যেখানে বাইবেলে জনের প্রথম চিঠিতে বলা হয়েছে, 'ঈশ্বর হলেন ভালোবাসা। তিনি যা দেখতে পেয়েছেন তা হলো, দুষ্ট বা শয়তান কখনো মঙ্গলের সঙ্গে থাকতে পারে না। যদি কখনো তা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে, এটা মিথ্যা, প্রতারণা অথবা প্রতারণা। শুধু নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য।' এডি মনে করতেন, ধূর্ত বা বিশ্বাসঘাতকের কাজ নিজেকে লুকিয়ে রাখা।
বিষয়টি মালালা আমাদের সামনে আরো একবার প্রকাশ করল। তার মহৎ কাজ অশুভ শক্তিকে মুখোশ খুলে দিয়েছে।
এই অশুভ শক্তি এখন কোথায় লুকাবে? সহজ করে চিন্তা করা মানুষদের জন্য সম্ভব নয়। সায়েন্স মনিটরের প্রতিনিধি হিসেবে আমি পাকিস্তানে গিয়েছিলাম। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ তাদের দেশের সহিংস অবস্থা নিয়ে খুবই আতঙ্কিত। কিন্তু একই সঙ্গে তারা গর্বিত। তাদের নীতিজ্ঞান অত্যন্ত তীব্র। আমার বিশ্বাস, মালালা তার দেশবাসী পাকিস্তানিদের এই মহৎ গুণ দেখতে পেয়েছে। পাকিস্তানিদের ওই শক্তি তার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু মালালা তার দেশবাসীর কাছে এবং আমাদের সবাইকে কী দেখিয়েছে? তার এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা দেখিয়েছে যে কিভাবে পাকিস্তানকে অমঙ্গল চারদিক থেকে অবরোধ করে ফেলছে। মালালাকে গুলি করার আগে পাকিস্তানে এ ধরনের বিষয় ছিল ঠোঁট কামড়ে প্রতিবাদ করার মতো। এখন এটা গোটা জাতির জন্য এক দুর্দমনীয় আহ্বান হয়ে পড়েছে।
কিন্তু মালালা নিজে কি ভালো থাকবে, যা সে বলেছে? মরণশীল কোনো দৃষ্টিভঙ্গি এমন উল্লেখযোগ্য নয়। যে রাতে যিশুখ্রিস্টকে নির্যাতন করে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, তখন তিনি শিষ্যদের বলেছিলেন, 'আমি আমার শান্তি তোমাদের দিয়ে গেলাম, পৃথিবী যেভাবে দেয় সেভাবে আমি দেইনি।'
যাঁরা বিশ্বের বাস্তবতার বাইরে তাকান, তাঁদের জন্য বিশ্বের দৃশ্যাবলি খুব সুখের নয়। যিশু বেঁচেছিলেন কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। তিনি তাঁর ভেতর দিয়েই নিজেকে অভাবনীয়ভাবে গড়ে তুলেছিলেন। নিজের দুঃখ-যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে পিটার এ শিক্ষা পেয়েছিলেন যে, 'ঈশ্বর ব্যক্তিবিশেষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। এই বাণীর মধ্য দিয়েই আমরা আস্থার সঙ্গে এডির কথায় সায় দিয়ে বলতে পারি, ভালোত্ব কখনো তার ঈশ্বরকে হারায় না।'
একটি সন্ত্রাসবাদী ঘটনাও কি ভালোকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে পেরেছে? না।
লেখক : ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরের ডেপুটি এডিটর। দ্য ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর থেকে
ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments