মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে হলমার্ক গ্রুপ by আবুল কাশেম
বহু বিতর্কিত হলমার্ক গ্রুপের উত্থান বিস্ময়কর। তাদের দেওয়া তথ্যেই আছে- ১৯৯৪ সালে হলমার্ক প্যাকেজিং নামের কার্টন তৈরির একটি কারখানা ছিল নামমাত্র। এর এক দশক পর ২০০৪ সালে সোনালী ব্যাংকের টাকা দিয়ে গড়ে তোলা হয় হলমার্ক ফ্যাশন নামের একটি গার্মেন্ট কারখানা।
তারপর শুধুই সামনের দিকে দৌড়ানো। হলমার্ক গ্রুপের কর্ণধার তানভীর মাহমুদ ব্যাংক থেকে ভুয়া কাগজপত্রে নেওয়া আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করা শুরু করেন দেদার। তাঁর ভাবনায় ছিল, যেহেতু ঋণের সবই ভুয়া, তাই ব্যাংকের টাকা আর ফেরত দিতে হবে না। এভাবে মাত্র আট বছরে কাগজে-কলমে ৮৪টি কারখানা গড়ে তোলেন তিনি। এর মধ্যে ৩৫টি কারখানা সচল। বাকি সব কাগুজে। তানভীর মাহমুদ রপ্তানি আয়ে দেশে শীর্ষ হওয়ার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামনে। যেখানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ২২ বিলিয়ন ডলার, সেখানে তানভীর স্বপ্ন দেখান প্রতিবছর তাঁর কারখানাগুলো থেকে তিন বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করবেন।
এর মধ্যেই ঘটে গেল ছন্দপতন। মিথ্যার ওপর দাঁড় করানো 'শিল্প-সাম্রাজ্যের' ভিত নড়ে গেল। পোশাক শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে 'ট্রফি' নিয়েছিলেন তানভীর। এর ১০ মাসের মাথায় ঋণ জালিয়াতির মামলায় কারাগারে যেতে হলো হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ ও মহাব্যবস্থাপক তাঁরই শ্যালক তুষার আহমেদকে। রপ্তানি এখন প্রায় বন্ধ, বেতন-ভাতা ও মালিকের মুক্তির দাবিতে সাভারের কারখানা চত্বরে মিছিল করছেন শ্রমিকরা। গ্রুপটির আগারগাঁও প্রধান কার্যালয় এখন প্রায় পরিত্যক্ত। ভুয়া এলসির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা লোপাটের পর গত এপ্রিল থেকেই এ গ্রুপের আর কোনো রপ্তানির এলসি (ঋণপত্র) নিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। নতুন করে প্রতারণায় জড়ানোর ভয়ে ব্যাক টু ব্যাক এলসিও নিচ্ছে না কেউ। তাই ওই সময় থেকে বাতিল হয়ে গেছে হলমার্কের দেড় শ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ। এভাবে অর্থ লোপাটের মাধ্যমে গড়ে তোলা হলমার্ক গ্রুপের ২৫টি গার্মেন্ট কারখানার রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন টিকে থাকার জন্য কোনো রকমে অন্য গার্মেন্ট মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু সাব-কন্ট্রাক্টের কাজ করছে তারা। তাই ঝকমকা লাল গালিচা বিছানো হলমার্ক গ্রুপের প্রধান কার্যালয়েও নেমে এসেছে অন্ধকার। হলমার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কারখানার শ্রমিকদেরও কেউ কেউ মান-সম্মানের ভয়ে চাকরি ছাড়ছেন।
হলমার্ক গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) আবু রায়হান গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, হলমার্ক গ্রুপের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে গত এপ্রিলে সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই সরকারি-বেসরকারি বা বিদেশি কোনো ব্যাংকই এ গ্রুপের এলসি খুলছে না। ব্যাংকারদের মধ্যে অবিশ্বাস ও ভয় জন্মেছে গ্রুপটি সম্পর্কে। ব্যাংকগুলোর এই অসহযোগিতার কারণেই এপ্রিল থেকে টু ব্যাংক এলসি খোলাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দুই কোটি ডলার (১৬০ কোটি টাকা) রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, 'আগামী এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের ১০০ কোটি টাকার রপ্তানি অর্ডারের এলসি খোলা ছিল। এত দিন সেই রপ্তানি আদেশের বিপরীতে শিপমেন্ট করেছি। আগের অর্ডার ফুরিয়ে গেছে। এখন পুরোপুরি সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে কারখানা চালু রাখা হয়েছে। এতে কারখানাগুলোর উৎপাদন ক্ষমতার ৩০-৩৫ ভাগ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় বন্ধই হয়ে যাবে।'
হলমার্ক গ্রুপ নিয়ে ব্যাংকগুলোর ভয় এতই প্রকট যে, এলসি খুলে গত এপ্রিলে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৫ কোটি টাকার ফেব্রিক আমদানি করে গ্রুপটি। ওই এলসি নিষ্পত্তি করতেও ভয় পায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত আগস্ট মাসে নগদ টাকা দিয়ে আমদানি করা ফেব্রিক ছাড় করিয়ে আনতে বাধ্য হয় হলমার্ক গ্রুপ। এখনো বন্দরে পড়ে আছে একটি স্পিনিং মিল স্থাপনের জন্য আমদানি করা ১৫ কোটি টাকা মূল্যের মূলধনী যন্ত্রপাতি। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নগদ টাকা ছাড়া ওই এলসি নিষ্পত্তি করতে রাজি হচ্ছে না। সোনালী ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে নেওয়া অর্থ নানাভাবে সরিয়ে নেওয়ার কারণে নগদ টাকা দিয়ে ওই যন্ত্রপাতিগুলো ছাড়িয়ে আনার মতো আর্থিক সামর্থ্যও এখন আর নেই হলমার্কের।
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) গিয়ে ঋণের ২০ গুণ সম্পদ থাকার কথা দম্ভের সঙ্গে উচ্চারণ করলেও আড়াই হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া হলমার্ক এখন তার পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতনই দিতে পারছে না। কারখানাগুলোর প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিকের মাসিক বেতন বাবদ ২০ কোটি টাকাও এখন তাদের জুটছে না। চলতি মাসে কারখানাগুলোর শ্রমিকদের বেতনও দিতে পারেনি তারা। সাভারের হেমায়েতপুরের কারখানা শ্রমিকরা তাই বেতনের জন্য ফুঁসছে, শুরু করেছে বিক্ষোভ।
প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় দুই হাজারের মতো শ্রমিক চাকরি ছেড়ে চলে গেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকায় আগারগাঁওয়ের ২০৫/এ তালতলার পুরনো ভবনটির দ্বিতীয় তলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত হলমার্ক গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। দ্বিতীয় তলায় বসে অফিস করতেন গ্রুপটির এমডি তানভীর মাহমুদ। গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাগারে থাকলেও তাঁর অফিস ফ্লোরের মুখে বন্দুক নিয়ে এখনো পাহারা দেন দুই আনসার। সেখানে সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই। তৃতীয় তলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত পুরো ফ্লোরেই দামি লালগালিচা বিছানো। দামি সব গ্লাস, এয়ার কন্ডিশনার আর আসবাবপত্রে সাজানো ফ্লোরগুলো। তবে সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর সব জৌলুস এখন ম্লান।
এর মধ্যেই ঘটে গেল ছন্দপতন। মিথ্যার ওপর দাঁড় করানো 'শিল্প-সাম্রাজ্যের' ভিত নড়ে গেল। পোশাক শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে 'ট্রফি' নিয়েছিলেন তানভীর। এর ১০ মাসের মাথায় ঋণ জালিয়াতির মামলায় কারাগারে যেতে হলো হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ ও মহাব্যবস্থাপক তাঁরই শ্যালক তুষার আহমেদকে। রপ্তানি এখন প্রায় বন্ধ, বেতন-ভাতা ও মালিকের মুক্তির দাবিতে সাভারের কারখানা চত্বরে মিছিল করছেন শ্রমিকরা। গ্রুপটির আগারগাঁও প্রধান কার্যালয় এখন প্রায় পরিত্যক্ত। ভুয়া এলসির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা লোপাটের পর গত এপ্রিল থেকেই এ গ্রুপের আর কোনো রপ্তানির এলসি (ঋণপত্র) নিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। নতুন করে প্রতারণায় জড়ানোর ভয়ে ব্যাক টু ব্যাক এলসিও নিচ্ছে না কেউ। তাই ওই সময় থেকে বাতিল হয়ে গেছে হলমার্কের দেড় শ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ। এভাবে অর্থ লোপাটের মাধ্যমে গড়ে তোলা হলমার্ক গ্রুপের ২৫টি গার্মেন্ট কারখানার রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন টিকে থাকার জন্য কোনো রকমে অন্য গার্মেন্ট মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু সাব-কন্ট্রাক্টের কাজ করছে তারা। তাই ঝকমকা লাল গালিচা বিছানো হলমার্ক গ্রুপের প্রধান কার্যালয়েও নেমে এসেছে অন্ধকার। হলমার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কারখানার শ্রমিকদেরও কেউ কেউ মান-সম্মানের ভয়ে চাকরি ছাড়ছেন।
হলমার্ক গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) আবু রায়হান গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, হলমার্ক গ্রুপের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে গত এপ্রিলে সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই সরকারি-বেসরকারি বা বিদেশি কোনো ব্যাংকই এ গ্রুপের এলসি খুলছে না। ব্যাংকারদের মধ্যে অবিশ্বাস ও ভয় জন্মেছে গ্রুপটি সম্পর্কে। ব্যাংকগুলোর এই অসহযোগিতার কারণেই এপ্রিল থেকে টু ব্যাংক এলসি খোলাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দুই কোটি ডলার (১৬০ কোটি টাকা) রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, 'আগামী এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের ১০০ কোটি টাকার রপ্তানি অর্ডারের এলসি খোলা ছিল। এত দিন সেই রপ্তানি আদেশের বিপরীতে শিপমেন্ট করেছি। আগের অর্ডার ফুরিয়ে গেছে। এখন পুরোপুরি সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে কারখানা চালু রাখা হয়েছে। এতে কারখানাগুলোর উৎপাদন ক্ষমতার ৩০-৩৫ ভাগ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় বন্ধই হয়ে যাবে।'
হলমার্ক গ্রুপ নিয়ে ব্যাংকগুলোর ভয় এতই প্রকট যে, এলসি খুলে গত এপ্রিলে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৫ কোটি টাকার ফেব্রিক আমদানি করে গ্রুপটি। ওই এলসি নিষ্পত্তি করতেও ভয় পায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত আগস্ট মাসে নগদ টাকা দিয়ে আমদানি করা ফেব্রিক ছাড় করিয়ে আনতে বাধ্য হয় হলমার্ক গ্রুপ। এখনো বন্দরে পড়ে আছে একটি স্পিনিং মিল স্থাপনের জন্য আমদানি করা ১৫ কোটি টাকা মূল্যের মূলধনী যন্ত্রপাতি। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নগদ টাকা ছাড়া ওই এলসি নিষ্পত্তি করতে রাজি হচ্ছে না। সোনালী ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে নেওয়া অর্থ নানাভাবে সরিয়ে নেওয়ার কারণে নগদ টাকা দিয়ে ওই যন্ত্রপাতিগুলো ছাড়িয়ে আনার মতো আর্থিক সামর্থ্যও এখন আর নেই হলমার্কের।
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) গিয়ে ঋণের ২০ গুণ সম্পদ থাকার কথা দম্ভের সঙ্গে উচ্চারণ করলেও আড়াই হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া হলমার্ক এখন তার পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতনই দিতে পারছে না। কারখানাগুলোর প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিকের মাসিক বেতন বাবদ ২০ কোটি টাকাও এখন তাদের জুটছে না। চলতি মাসে কারখানাগুলোর শ্রমিকদের বেতনও দিতে পারেনি তারা। সাভারের হেমায়েতপুরের কারখানা শ্রমিকরা তাই বেতনের জন্য ফুঁসছে, শুরু করেছে বিক্ষোভ।
প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় দুই হাজারের মতো শ্রমিক চাকরি ছেড়ে চলে গেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকায় আগারগাঁওয়ের ২০৫/এ তালতলার পুরনো ভবনটির দ্বিতীয় তলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত হলমার্ক গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। দ্বিতীয় তলায় বসে অফিস করতেন গ্রুপটির এমডি তানভীর মাহমুদ। গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাগারে থাকলেও তাঁর অফিস ফ্লোরের মুখে বন্দুক নিয়ে এখনো পাহারা দেন দুই আনসার। সেখানে সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই। তৃতীয় তলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত পুরো ফ্লোরেই দামি লালগালিচা বিছানো। দামি সব গ্লাস, এয়ার কন্ডিশনার আর আসবাবপত্রে সাজানো ফ্লোরগুলো। তবে সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর সব জৌলুস এখন ম্লান।
No comments