ফের ওয়ান-ইলেভেনের শঙ্কা শেখ হাসিনার-তারাই আবার তৎপর

ওয়ান-ইলেভেনের মতো অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে যাঁরা অবস্থান নিয়েছিলেন, তাঁরাই আবার অসাংবিধানিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চান।


গতকাল শনিবার গণভবনে ক্ষমতাসীন দলের জাতীয় কমিটির বৈঠকে প্রারম্ভিক বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, 'কিছু লোকের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ আছে কিন্তু জনগণের সামনে দাঁড়ানোর সাহস নেই। তাদের খায়েশ পূরণ করতেই আজ এই অবস্থা।' তিনি আরো বলেন, 'যারা অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় যেতে চায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পৃষ্ঠপোষক হতে চায়, তারা আবারও নতুন করে ষড়যন্ত্রে নেমেছে।'
কারো নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, 'যাঁরা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এ প্লাস সার্টিফিকেট দিয়েছেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকতে পারে বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী, তাঁরাই আবার খেলা শুরু করেছেন। তাঁরাই অসাংবিধানিক ধারায় ক্ষমতায় যেতে চান।'
অসাংবিধানিক সরকার এলে তাঁদের মূল্য বাড়ে : নাম উল্লেখ না করলেও বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ করেই প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, 'ফতোয়াবাজরা তো অসাংবিধানিক সরকার চাইবেনই। কারণ এ ফতোয়াবাজরা সাংবিধানিক সরকারের সময়ে মূল্য পান না। অসাংবিধানিক সরকার এলে তাঁদের মূল্য বাড়ে। সে কারণে তাঁরা অসাংবিধানিক সরকার চান। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করার এবং অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁরা চক্রান্ত করেন।'
অসাংবিধানিক সরকার আসতে পারে- এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সভাপতি দলীয় নেতা-কর্মীদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন।
দলের সঙ্গে এমপিদের দূরত্ব কমানোর তাগিদ : সূত্র জানায়, বৈঠকে জাতীয় কমিটির ২৩ জন সদস্য বক্তব্য দেন। তাঁরা তৃণমূল পর্যায়ে দলের দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন। তৃণমূল সংগঠনের সঙ্গে দলীয় সংসদ সদস্যদের দূরত্বের কথা তুলে ধরে তাঁরা বলেন, এখনই সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং দলের সঙ্গে এমপিদের দূরত্ব কমানো না গেলে পরবর্তী নির্বাচনে দলকে এর মূল্য দিতে হবে। বৈঠকে মেয়াদ উত্তীর্ণ বর্তমান কমিটির মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে।
মিডিয়ার সমালোচনা : বৈঠক সূত্র জানায়, জাতীয় কমিটির সদস্যরা মিডিয়ার সমালোচনা করেন দলীয় সভাপতির সামনে। তাঁরা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে যেসব টেলিভিশন চ্যানেল অনুমোদন পেয়েছে তারা সরকারের বিরুদ্ধে বেশি সরব। তাঁরা আরো বলেন, পত্রিকা খুললেই সরকারের বিরুদ্ধে সব রিপোর্ট দেখা যায়। সরকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করলেও সেগুলো মিডিয়ায় আসছে না।
শেখ হাসিনা বলেন, এক শ্রেণীর মানুষ সরকারের কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করতে না পারায় মধ্যরাতের টক শো থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। টক শোর বক্তাদের সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, 'মানুষ কতটা উন্নতি করেছে, তা তাঁরা দেখেন না। দেখবেন কীভাবে? চোখে তো ঠুলি পরা।' তবে ষড়যন্ত্র চললেও তা নস্যাৎ করে সংবিধান অনুযায়ীই দেশ চলবে বলে দলীয় নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনের পর গতকালই প্রথম বৈঠক হলো জাতীয় কমিটির। তবে এখন থেকে নিয়মিত বৈঠক হবে বলে সবাইকে আশ্বস্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের অ্যাকাউন্টে বর্তমানে আট কোটি টাকার এফডিআর আছে বলে জানানো হয় বৈঠকে। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া চাঁদা এবং শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ পাঁচ কোটি টাকা বলে জানানো হয়। এই অর্থ দিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভেঙে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণের কথা জানানো হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।
সূত্র জানায়, জাতীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হওয়া আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল জলিলসহ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও সাহারা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনিসহ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশির ভাগ সদস্য উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

No comments

Powered by Blogger.