তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া অন্য কোনো ফর্মুলা মানি না-দিনাজপুরে বিশাল জনসভায় খালেদা জিয়া by মোশাররফ বাবলু
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবির মুখে এই আওয়ামী লীগ সরকারকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হবে। সরকার যতই বন্দুক, কামান, টিয়ার গ্যাস, গ্রেপ্তার, জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন করুক না কেন, তাতে কোনো কাজ হবে না।
নির্বাচনের সময় নির্দলীয় সরকারের দাবি আওয়ামী লীগকে মানতেই হবে। তিনি বলেন, আগামী দিনে জনগণের দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, 'সরকার নির্বাচনকালীন যে ফর্মুলার কথা বলছে, ওই ফর্মুলা আমরা মানি না। কখনো মেনে নেব না।'
গতকাল রবিবার বিকেলে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলবাসীকে আগামী দিনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, 'এই সরকার বিশ্বচোর, সরকারের লোকজনকে যেখানে পাবেন সেখানেই কান ধরে উঠবোস করাবেন। কোনো ছাড় দেবেন না। আওয়ামী লীগের পরিণতি এমনই হবে। সে জন্যই তাদের এত ভয়। ক্ষমতা থেকে তারা যাবে না, তাদের একজন দলীয় লোক বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি যে ভাষায় কথা বলেন, সেভাবেই রায় হয়েছে। খায়রুল হক অনেক দিন আগে অবসরে গেছেন। অবসরে যাওয়া একজন বিচারপতি এজলাসে বসতে পারেন না, কিন্তু খায়রুল হক দীর্ঘ ১৬ মাস পর এজলাসে বসেছেন, রায় বদলিয়েছেন এবং রায়ে দস্তখত করেছেন। অবসর থেকে ফিরে এসে একজন লোক আইন অনুযায়ী এভাবে করতে পারেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগের ওই আশা কখনো পূরণ হবে না। আওয়ামী লীগ শুধু টাকাই চুরি করে না, জনগণের ভোটও চুরি করে। তাই তাদের অধীনে কখনো সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না, হতে পারে না, হতে পারে না।'
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফুর রহমান মিন্টু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা মকবুল আহমাদ, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এমপি, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলনা মোহাম্মদ ইসহাক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুকুর চৌধুরী।
জনসভায় খালেদা জিয়া ৫৫ মিনিট বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি তাঁর সরকারের আমলের উন্নয়নমূলক ও বর্তমান সরকারের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। বক্তব্যের পর তিনি সার্কিট হাউসে যান। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, দিনাজপুর সীমান্তবর্তী এলাকা। সীমান্তে আজ প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। ফেলানীর মতো ছোট্ট একটি মেয়েকে তারা গুলি করে মেরে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছিল। অথচ সরকার একটি প্রতিবাদও করতে সাহস পায়নি। যারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না, তাদের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই, নেই, নেই। তিনি বলেন, 'আজ সরকার মানুষ গুম করে দেয়। এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীকে গুম করেছে। ড. কামাল হোসেনের মতো বিশিষ্ট ব্যত্তিত্ব আজ গুম হওয়ার আতঙ্কে আছেন। আমাদেরও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।' তিনি বলেন, 'ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের দয়ায় ক্ষমতায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, দেশকে তিনি ডিজিটাল উন্নয়ন দিয়েছেন। আসলে দিয়েছেন ডিজিটাল চুরি।'
নিজের ও আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের দ্রব্যমূল্যের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, 'উত্তরাঞ্চল হচ্ছে কৃষিপ্রধান এলাকা। আজকে কৃষকের অবস্থা ভালো নেই। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। অথচ কৃষি উপকরণের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। সরকার নিজেদের লোক দিয়ে অল্প মূল্যে কৃষিপণ্য কিনে গুদামজাত করে রাখে দেশে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে। এরপর ওদের লোক দিয়ে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করায়। উদ্দেশ্য দেশের টাকা নিজেদের পকেটে নেওয়া। আওয়ামী লীগ দেশের জন্য কিছু করেনি, শুধু করেছে চুরি। আজকের এরা মহাজোট সরকার নয়, মহাচোর সরকার। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তাঁর পরিবারের সদস্য, মন্ত্রী সবাই দুর্নীতি ও চুরিতে ব্যস্ত। দেশের অবস্থা খারাপ। কোনো কিছুই করেনি এই সরকার। দিনাজপুরে যা কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, সবই বিএনপি সরকার আমলে করা।' তিনি বলেন, 'দেশের মানুষের আজ বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেয়ারবাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্ট থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা, ব্যাংক থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকেও চুরি করেছে সরকার। অথচ সরকারের অর্থমন্ত্রী বলেন, হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না। যে দেশের অর্থমন্ত্রী চুরি দেখে পালিয়ে যেতে চান, সেই সরকারকে কি মানুষ সমর্থন দিতে পারে?'
তিনি বলেন, তিস্তা সেতু প্রধানমন্ত্রী উদ্ধোধন করলেন কিন্তু এই সেতু তো তারা করেনি। আমরা এই সেতু করেছি। দেশের বড় বড় সেতু বিএনপি সরকারের আমলেই হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ সরকারকে চাঁদাবাজ সরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, উনি বললেন চাঁদা তুলে পদ্মা সেতু করবেন, তার এই কথায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বিশেষলীগ দেশে চাঁদার উৎসব করলো।
আওয়ামী লীগকে হিংসুটে সন্ত্রাসীদের দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরা কাউকে সম্মান দিতে জানে না। সংসদে ও সংসদের বাইরে বিএনপি ও জিয়াউর রহমান সম্পর্কে অসম্মানজনক কথা বলে। ড. ইউনূস দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন, তিনি ক্ষুদ্রঋণের জন্য কাজ করেছেন। সে জন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এই পুরস্কার পেয়ে তিনি দেশের সম্মান বাড়িয়েছেন। অথচ চুরি-দুর্নীতি করে উনি (প্রধানমন্ত্রী) নোবেল পুরস্কার আশা করেন। এখন নোবেল কমিটির কাছে চিঠি লেখা দরকার যে চুরি-দুর্নীতির জন্য উনাকে একটি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হোক।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও এই সরকার ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের হোতা দাবি করে তিনি বলেন, শায়খ আব্দুর রহমান নামে একজন সন্ত্রাসী ও জঙ্গি ছিল। কে সেই ব্যক্তি? সে মির্জা আজমের দুলাভাই, আত্মীয়। কাজেই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সঙ্গে বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই জড়িত। প্রতিটি জেলায়ই আওয়ামী লীগের একজন গডফাদার আছে।
খালেদা জিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, 'আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে দেশের উন্নয়নে কাজ করব। বিশেষ করে যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। দেশকে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব। আমরা শান্তি, উন্নয়ন, মঙ্গলের জন্য এই বিশ্বচোরদের হাত থেকে মুক্ত করে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করব।'
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশের মানুষ চায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, যার অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু এই নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ, এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'অপনাদের বলছি, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আওয়ামী লীগের নয়। যা করবেন, হিসাব-নিকাশ করে করবেন। কোনো উল্টাপাল্টা করবেন না। মনে রাখবেন, যাঁরা উল্টাপাল্টা কাজ করছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানাসহ সব তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যাঁরা এসব করছেন, তাঁদের পরিণতি খারাপ হবে, শুভ হবে না। অতএব, সাবধান হয়ে যান।'
দিনাজপুরের এই জনসভায় বক্তব্য রাখার জন্য ১৮ দলীয় জোটের নেত্রী খালেদা জিয়া বগুড়া সার্কিট হাউস থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় রওনা হন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে তিনি দিনাজপুরের ফরিদপুর এলাকায় তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে যান, সেখানে তিনি তাঁর বাবা মরহুম এস্কান্দার মজুমদার, মা বেগম তৈয়বা মজুমদার, বড় বোন খুরশীদ জাহান হকসহ পরিবারের পরলোকগত সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।
খালেদা জিয়ার এই জনসভায় যোগ দেওয়ার জন্য দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী রংপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, নীলফামারীসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সকাল থেকেই মিছিল সহকারে ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে জমায়েত হতে থাকেন। এ সময় জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের রঙিন ছবিসহ তাঁদের মাথায় বিভিন্ন রঙের পট্টি, হাতে বিশাল বিশাল ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড ছিল। আয়োজকদের দাবি, এই জনসভায় ১০ লাখের বেশি জনতা অংশ নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলেছে।
গতকাল রবিবার বিকেলে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলবাসীকে আগামী দিনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, 'এই সরকার বিশ্বচোর, সরকারের লোকজনকে যেখানে পাবেন সেখানেই কান ধরে উঠবোস করাবেন। কোনো ছাড় দেবেন না। আওয়ামী লীগের পরিণতি এমনই হবে। সে জন্যই তাদের এত ভয়। ক্ষমতা থেকে তারা যাবে না, তাদের একজন দলীয় লোক বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি যে ভাষায় কথা বলেন, সেভাবেই রায় হয়েছে। খায়রুল হক অনেক দিন আগে অবসরে গেছেন। অবসরে যাওয়া একজন বিচারপতি এজলাসে বসতে পারেন না, কিন্তু খায়রুল হক দীর্ঘ ১৬ মাস পর এজলাসে বসেছেন, রায় বদলিয়েছেন এবং রায়ে দস্তখত করেছেন। অবসর থেকে ফিরে এসে একজন লোক আইন অনুযায়ী এভাবে করতে পারেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগের ওই আশা কখনো পূরণ হবে না। আওয়ামী লীগ শুধু টাকাই চুরি করে না, জনগণের ভোটও চুরি করে। তাই তাদের অধীনে কখনো সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না, হতে পারে না, হতে পারে না।'
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফুর রহমান মিন্টু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা মকবুল আহমাদ, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এমপি, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলনা মোহাম্মদ ইসহাক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুকুর চৌধুরী।
জনসভায় খালেদা জিয়া ৫৫ মিনিট বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি তাঁর সরকারের আমলের উন্নয়নমূলক ও বর্তমান সরকারের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। বক্তব্যের পর তিনি সার্কিট হাউসে যান। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, দিনাজপুর সীমান্তবর্তী এলাকা। সীমান্তে আজ প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। ফেলানীর মতো ছোট্ট একটি মেয়েকে তারা গুলি করে মেরে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছিল। অথচ সরকার একটি প্রতিবাদও করতে সাহস পায়নি। যারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না, তাদের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই, নেই, নেই। তিনি বলেন, 'আজ সরকার মানুষ গুম করে দেয়। এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীকে গুম করেছে। ড. কামাল হোসেনের মতো বিশিষ্ট ব্যত্তিত্ব আজ গুম হওয়ার আতঙ্কে আছেন। আমাদেরও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।' তিনি বলেন, 'ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের দয়ায় ক্ষমতায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, দেশকে তিনি ডিজিটাল উন্নয়ন দিয়েছেন। আসলে দিয়েছেন ডিজিটাল চুরি।'
নিজের ও আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের দ্রব্যমূল্যের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, 'উত্তরাঞ্চল হচ্ছে কৃষিপ্রধান এলাকা। আজকে কৃষকের অবস্থা ভালো নেই। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। অথচ কৃষি উপকরণের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। সরকার নিজেদের লোক দিয়ে অল্প মূল্যে কৃষিপণ্য কিনে গুদামজাত করে রাখে দেশে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে। এরপর ওদের লোক দিয়ে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করায়। উদ্দেশ্য দেশের টাকা নিজেদের পকেটে নেওয়া। আওয়ামী লীগ দেশের জন্য কিছু করেনি, শুধু করেছে চুরি। আজকের এরা মহাজোট সরকার নয়, মহাচোর সরকার। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তাঁর পরিবারের সদস্য, মন্ত্রী সবাই দুর্নীতি ও চুরিতে ব্যস্ত। দেশের অবস্থা খারাপ। কোনো কিছুই করেনি এই সরকার। দিনাজপুরে যা কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, সবই বিএনপি সরকার আমলে করা।' তিনি বলেন, 'দেশের মানুষের আজ বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেয়ারবাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্ট থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা, ব্যাংক থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকেও চুরি করেছে সরকার। অথচ সরকারের অর্থমন্ত্রী বলেন, হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না। যে দেশের অর্থমন্ত্রী চুরি দেখে পালিয়ে যেতে চান, সেই সরকারকে কি মানুষ সমর্থন দিতে পারে?'
তিনি বলেন, তিস্তা সেতু প্রধানমন্ত্রী উদ্ধোধন করলেন কিন্তু এই সেতু তো তারা করেনি। আমরা এই সেতু করেছি। দেশের বড় বড় সেতু বিএনপি সরকারের আমলেই হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ সরকারকে চাঁদাবাজ সরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, উনি বললেন চাঁদা তুলে পদ্মা সেতু করবেন, তার এই কথায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বিশেষলীগ দেশে চাঁদার উৎসব করলো।
আওয়ামী লীগকে হিংসুটে সন্ত্রাসীদের দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরা কাউকে সম্মান দিতে জানে না। সংসদে ও সংসদের বাইরে বিএনপি ও জিয়াউর রহমান সম্পর্কে অসম্মানজনক কথা বলে। ড. ইউনূস দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন, তিনি ক্ষুদ্রঋণের জন্য কাজ করেছেন। সে জন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এই পুরস্কার পেয়ে তিনি দেশের সম্মান বাড়িয়েছেন। অথচ চুরি-দুর্নীতি করে উনি (প্রধানমন্ত্রী) নোবেল পুরস্কার আশা করেন। এখন নোবেল কমিটির কাছে চিঠি লেখা দরকার যে চুরি-দুর্নীতির জন্য উনাকে একটি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হোক।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও এই সরকার ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের হোতা দাবি করে তিনি বলেন, শায়খ আব্দুর রহমান নামে একজন সন্ত্রাসী ও জঙ্গি ছিল। কে সেই ব্যক্তি? সে মির্জা আজমের দুলাভাই, আত্মীয়। কাজেই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সঙ্গে বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই জড়িত। প্রতিটি জেলায়ই আওয়ামী লীগের একজন গডফাদার আছে।
খালেদা জিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, 'আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে দেশের উন্নয়নে কাজ করব। বিশেষ করে যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। দেশকে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব। আমরা শান্তি, উন্নয়ন, মঙ্গলের জন্য এই বিশ্বচোরদের হাত থেকে মুক্ত করে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করব।'
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশের মানুষ চায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, যার অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু এই নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ, এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'অপনাদের বলছি, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আওয়ামী লীগের নয়। যা করবেন, হিসাব-নিকাশ করে করবেন। কোনো উল্টাপাল্টা করবেন না। মনে রাখবেন, যাঁরা উল্টাপাল্টা কাজ করছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানাসহ সব তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যাঁরা এসব করছেন, তাঁদের পরিণতি খারাপ হবে, শুভ হবে না। অতএব, সাবধান হয়ে যান।'
দিনাজপুরের এই জনসভায় বক্তব্য রাখার জন্য ১৮ দলীয় জোটের নেত্রী খালেদা জিয়া বগুড়া সার্কিট হাউস থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় রওনা হন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে তিনি দিনাজপুরের ফরিদপুর এলাকায় তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে যান, সেখানে তিনি তাঁর বাবা মরহুম এস্কান্দার মজুমদার, মা বেগম তৈয়বা মজুমদার, বড় বোন খুরশীদ জাহান হকসহ পরিবারের পরলোকগত সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।
খালেদা জিয়ার এই জনসভায় যোগ দেওয়ার জন্য দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী রংপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, নীলফামারীসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সকাল থেকেই মিছিল সহকারে ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে জমায়েত হতে থাকেন। এ সময় জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের রঙিন ছবিসহ তাঁদের মাথায় বিভিন্ন রঙের পট্টি, হাতে বিশাল বিশাল ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড ছিল। আয়োজকদের দাবি, এই জনসভায় ১০ লাখের বেশি জনতা অংশ নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলেছে।
No comments