পাহাড়ে সংঘর্ষ-সেকেলে চেতনার অবসান প্রয়োজন

রাঙামাটি সরকারি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে বাসের সিটে বসা নিয়ে যে তুচ্ছ কথাকাটাকাটি হয়, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। একে কেন্দ্র করে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ এখন রাঙামাটি পার্বত্য জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার সংঘটিত এ সংঘর্ষে কলেজশিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ ৬০ জন আহত হন।


ছাত্রদের গোলমালে কলেজ প্রাঙ্গণে অনেক বহিরাগত ঢুকে পড়ে বলে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন। বিশেষ সতর্কতা হিসেবে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে এবং রাঙামাটি সরকারি কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সভাস্থলে ঢুকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ওপর হামলার প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলার ইউপি চেয়ারম্যানরা ১০ দিনের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। উল্লেখ্য, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীই আক্রমণের শিকার হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের বর্ণনায় প্রকাশ পেয়েছে।
এই সংঘর্ষের চিত্র থেকে এটা সুস্পষ্ট, এ অঞ্চলে সম্প্রদায়গত সহমর্মিতা বৃদ্ধি না পেয়ে বরং পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠী মানসিকভাবে একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই সেকেলে চেতনার অবসান এখন অতি জরুরি। ভুলে গেলে চলবে না, পাহাড়ি ও বাঙালি সবাই এ দেশের নাগরিক। রাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে দেশের প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার ভোগ করার কথা। ছাত্রদের মধ্যে যেকোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতা হলে সে জন্য কলেজ প্রশাসন রয়েছে, রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দেশের সুনির্দিষ্ট আইন। ধর্ম, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়গত পরিচয় এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই বিবেচ্য নয়, হতে পারে না। দীর্ঘদিন অভিযোগ আছে যে এই পাহাড়ি জেলাগুলোতে স্বার্থান্বেষী মহল অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির অপচেষ্টা চালিয়ে থাকে। তারা সম্প্রদায়গত পরিচয়কে সহিংসতায় রূপান্তর করতে চেষ্টা করে। এদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতসহ প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার। পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠীকে নিয়ে রাজনীতির প্রবণতাও দেখা যায়। দেশে গণতন্ত্রের চর্চা করতে চাইলে, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে চাইলে এসব অপচেষ্টা কঠিন হাতে রোধ করতে হবে। বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। সব ধর্মগত, জাতিগত সম্প্রদায়কে সম্প্রীতির মধ্যেই পাশাপাশি বসবাস করতে হবে। এবং সরকারকেই সেটা সবচেয়ে বেশি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও একটি গুরুদায়িত্ব রয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয় সেটা নিশ্চিত করা। সরকারের উচ্চ মহল থেকে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বাড়াতে হবে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান।

No comments

Powered by Blogger.