নিত্যজাতম্-যে পায় সে চায় না, যে চায় সে পায় না by মহসীন হাবিব
বহুল প্রচলিত সেই বাক্যটিই মনে পড়ছে : যে পায় সে চায় না, যে চায় সে পায় না। শুধু মানুষ নয়, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তা সত্য। একটি বিষয় হয়তো কোনো দেশের জন্য আশীর্বাদ, অন্য দেশের জন্য আপদ। কোনো দেশ চায় কিন্তু পায় না, আর কোনো দেশ পায়, কিন্তু চায় না।
সম্প্রতি ডেনমার্কের কয়েকটি শিশুপালন প্রতিষ্ঠান (আমরা যাকে বেবি হোম বা নার্সারি বলে থাকি) একটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। সন্ধ্যার পর একটি নির্দিষ্ট সময় তারা বিনা খরচে শিশুদের লালন-পালন করবে, যাতে ওই শিশুদের বাবা-মায়েরা একে অন্যকে যথেষ্ট সময় দিতে পারেন। এতে হয়তো ডেনমার্কে মেয়েরা গর্ভবতী হবে এবং দেশে নবাগতের সংখ্যা বাড়বে। এ উদ্যোগ কতটা বাস্তবসম্মত সে প্রশ্নে তাঁরা মনে করেন, এটি একটি প্রতীকী আয়োজন। কারণ ডেনমার্কে বর্তমান দম্পতিরা যদি অধিক হারে সন্তান না নেন, তাহলে দেশের জনসংখ্যা হুমকির মুখে পড়বে। প্রায় ৫৫ লাখ অধিবাসীর দেশ ডেনমার্কে ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে চার হাজার ৪০০-এর কম শিশু জন্ম নিয়েছে। ১৯৮৮ সালের পর থেকে এযাবৎকালে, অর্থাৎ ২০১২ সালে ডেনমার্কে সবচেয়ে কম শিশুর জন্ম হয়েছে। যে কথাটি কেউ মুখে উচ্চারণ করে না তা হলো, এভাবে চলতে থাকলে ড্যানিশ জাতিই কয়েক শ বছরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে! অর্থনীতিবিদ এবং কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর হ্যানস ওলুফ হ্যানসেন বলেছেন, Our fertility rate is well under the replacement rate. In the long run, there will be fewer young people to provide for the elderly.
জনপরিসংখ্যানের পরিভাষায় রিপ্লেসমেন্ট বলে একটি কথা চালু আছে। অর্থাৎ যত লোক দেহত্যাগ করবে, সে সংখ্যক নতুন শিশুর জন্ম হতে হবে। কিন্তু ডেনমার্কসহ পৃথিবীর প্রায় ২০টি দেশে সেই সংখ্যক শিশু জন্মগ্রহণ করছে না বা দম্পতিরা সেই হারে সন্তান নিচ্ছেন না। অথচ বিশাল বিস্তৃত জায়গা পড়ে আছে দেশগুলোতে। ডেনমার্কে ঘনবসতির হার প্রতি কিলোমিটারে মাত্র ১২৪ জন। ডেনমার্কের সরকার, বিশেষজ্ঞ এবং সচেতন কিছু সংগঠন উদ্বিগ্ন হয়ে ভাবছে- এমনভাবে চলতে থাকলে কী হবে আগামী ৫০ বছর পর? তার মানে, ডেনমার্ক চায়, কিন্তু পায় না।
দেশ অনেকটা মায়ের মতোই। ডেনমার্কসহ কয়েকটি দেশ যেখানে সন্তানের অভাব বোধ করছে, বাংলাদেশ নামক আমাদের এই মা কিন্তু সেখানে সন্তানের ভারে রুগ্ণ ও ন্যুব্জ হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ শুধু যে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ (প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০১৫) দেশ তা-ই নয়, জন্মহারেও প্রতিযোগিতা চলছে পাকিস্তান এবং লাইবেরিয়াসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশের মধ্যে। কোনোক্রমেই সফল হচ্ছে না এসব দেশের জন্মনিয়ন্ত্রণ। ফলে এসব দেশে হু-হু করে বাড়ছে মানুষ। পঞ্চম আদমশুমারি হলো ২০১১ সালে। বলা হলো বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। পরে সঠিক হিসাব থেকে জানা গেল, বাংলাদেশে মানুষের সংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার।
১৯৭৪ সালে এ দেশের প্রথম আদমশুমারি অনুযায়ী লোকসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৪ লাখ। ২০০১ সালে দেখা গেছে, লোকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৪৪ লাখ। এই হার কিন্তু সব সময় বাড়ছে চক্রবৃদ্ধি হারে। ভাবতেও ভয় করে, আর মাত্র ২০ বছর পর মানুষ থাকবে কোথায়? দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে গেলে দেখা যায় অসংখ্য, হাজার হাজার শিশু-কিশোরের চিকন পা। এর সঙ্গে রয়েছে আরো মহা বিপৎসংকেত। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে আগামী ৩০-৪০ বছরে বাংলাদেশ হারাবে তার বেশ কিছু ভূমি। আগামী ১০০ বছরে থাকবে না এ দেশের ৪০ ভাগ জমি। বলবেন যে ১০০ বছরের দেরি আছে। না, অনেক সৌভাগ্যবান ১০০ বছর বেঁচে থাকেন। আজ যে কিনা শিশু, ১০০ বছর পরও সে বৃদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকতে পারে। আজ যে হচ্ছে যুবক, মাত্র ১০০ বছর পর তার সন্তান অথবা নাতি-নাতনির দেশ হবে বাংলাদেশ। সেটা খুব দূরের কথা নয়। অন্যদিকে দ্রুত কমে আসছে পানযোগ্য পানি। টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে অভিনেতা শংকর শাঁওজালের একটি বিজ্ঞাপন চিত্র দেখতে পেতাম, ইদানীং দেখছি না। সে বিজ্ঞাপন দেখলে বোঝা যায়, পানির অভাব কী রকম অনুভূত হতে পারে! কমছে চাষের জমি। যতই নিয়মকানুন তৈরি করা হোক, মানুষ তার বাসস্থানের প্রয়োজনে কোনো নিয়ম মানবে না। চাষের জমির মাঝখানে ঘর তুলে ফেলবে। সে দৃশ্য এখনই দেখা যাচ্ছে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই পতিত সরকারি জমি পেলে সেখানে ঘর তুলে ফেলছে কেউ না কেউ। দেশে মানুষ যখন স্বাভাবিক ছিল সংখ্যায়, তখন কেউই কল্পনাও করেনি যে সরকারের জায়গায় ঘর তোলা যায়। ওই যে বললাম, যে পায় সে চায় না, আর যে পায় সে চায় না! এ সমস্যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও আছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় এক প্রকৌশলী ছিলেন নিঃসন্তান। তিনি একটি সন্তানের জন্য এমন কিছু নেই যা করেননি। দেশ-বিদেশের চিকিৎসা যখন ব্যর্থ হয়েছে, তখন পানিপড়া, তেলপড়া, তাবিজ-কবজ, ফকিরি, হেকিমি সব চেষ্টাই করেছেন একটি সন্তানের আশায়। তিনি পাননি। বহুকাল আগে সেখান থেকে এসে বৃহত্তর ফরিদপুরে স্থায়ী আবাস গড়ে তুললেও ভদ্রলোক নিজের ভাষা বা সংস্কৃতি কোনোটাই ছাড়েননি। তিনি উচ্চ স্বরে উত্তর দিলেন, 'আঁই কী কৈত্তাম, আঁর কী দোষ! আঁই কী হেতেনরে কইছিনি যে ব্যাবাক আঁর গরে দি দ্যাও!' শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দোষারোপ করে লাভ নেই। দেশে অসংখ্য শিক্ষিত ও যথেষ্ট অর্থসম্পদের অধিকারী পরিবারে এখনো চার-পাঁচটি সন্তান উৎপাদনের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এক শ্রেণীর মানুষ, এমনকি টেলিভিশনের টকশোতেও বলে থাকেন, 'জনশক্তি কোনো সমস্যা নয়। জনশক্তিকে কর্মশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে।' এর চেয়ে অপরিণামদর্শী, এর চেয়ে কাল্পনিক কথা আর কিছু হতে পারে না। যেখানে বেকারত্বই দেশের অন্যতম বড় সমস্যা। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিই যদি বিদ্যমান থাকে, তাহলে মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী হবেন, এমপির ছেলে এমপি হবেন। এখনই দৃষ্টি না দিলে শাসন করবেন কী? সব হিসাব বাদ দিয়ে দেশের ক্ষমতাশালীদের স্বার্থের কথাই বললাম। সরকারের পরিকল্পনা আছে। পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতিমালা আছে। সেটা খুব একটা খারাপ নয়। কিন্তু তাতে কোনো ধার নেই। সমস্যাটা সেখানেও। দেশে অনেক অসচেতন মানুষের মধ্যে একটি অত্যন্ত অযৌক্তিক ধারণা আছে যে মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি। কিন্তু সেই তিনি নিজেই তো বলেছেন, যে নিজেকে সাহায্য না করে আমি তাকে সাহায্য করি না। এ বিষয়টি সাধারণের মধ্যে বোধগম্য করাতে পারেনি সরকার। আরো একটি বিষয় আছে : বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে অধিক সন্তান জন্ম দেওয়া চার-পাঁচ দশক আগেও ছিল প্রশংসনীয়, গৌরবের। তখন দেশ ছিল প্রায় পুরোপুরি কৃষিভিত্তিক। যাঁদের গোলা ভরা ধান উঠত, তাঁরা অনেক সন্তান চাইতেন। তাঁরা অধিক সন্তানের জন্ম দিয়ে নিজের প্রতিপালনের তাগিদ প্রদর্শন করতেন। কেউ কেউ বংশে লোকবৃদ্ধি করে কায়িক শক্তি প্রদর্শন করতে চাইতেন। দেশের অনেক এলাকায় যে ঝগড়া-বিবাদ হতো, তা ছিল বংশভিত্তিক। যে বংশের লোক বেশি, তারাই এলাকায় অধিক ক্ষমতাশালী। সে সব কী এখন চলে?
সরকারের কাছে এখন সবকিছুর ঊর্ধ্বে, সব ধরনের লক্ষ অর্জনের মধ্যে জনস্যংখ্যা রোধ সবচেয়ে বড় লক্ষ হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে অস্তিত্বই থাকবে না আমাদের। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন, প্রযুক্তি দিয়ে এর সমাধান হবে। যেমন দেশে যত লোক বেড়েছে, তার চেয়ে পরিমাণে ধান-চালের উৎপাদন বেড়েছে বেশি। কিন্তু এ প্রাপ্তি সাময়িক।
লেখক : সাংবাদিক, mohshinhabib@yahoo.com
জনপরিসংখ্যানের পরিভাষায় রিপ্লেসমেন্ট বলে একটি কথা চালু আছে। অর্থাৎ যত লোক দেহত্যাগ করবে, সে সংখ্যক নতুন শিশুর জন্ম হতে হবে। কিন্তু ডেনমার্কসহ পৃথিবীর প্রায় ২০টি দেশে সেই সংখ্যক শিশু জন্মগ্রহণ করছে না বা দম্পতিরা সেই হারে সন্তান নিচ্ছেন না। অথচ বিশাল বিস্তৃত জায়গা পড়ে আছে দেশগুলোতে। ডেনমার্কে ঘনবসতির হার প্রতি কিলোমিটারে মাত্র ১২৪ জন। ডেনমার্কের সরকার, বিশেষজ্ঞ এবং সচেতন কিছু সংগঠন উদ্বিগ্ন হয়ে ভাবছে- এমনভাবে চলতে থাকলে কী হবে আগামী ৫০ বছর পর? তার মানে, ডেনমার্ক চায়, কিন্তু পায় না।
দেশ অনেকটা মায়ের মতোই। ডেনমার্কসহ কয়েকটি দেশ যেখানে সন্তানের অভাব বোধ করছে, বাংলাদেশ নামক আমাদের এই মা কিন্তু সেখানে সন্তানের ভারে রুগ্ণ ও ন্যুব্জ হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ শুধু যে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ (প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০১৫) দেশ তা-ই নয়, জন্মহারেও প্রতিযোগিতা চলছে পাকিস্তান এবং লাইবেরিয়াসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশের মধ্যে। কোনোক্রমেই সফল হচ্ছে না এসব দেশের জন্মনিয়ন্ত্রণ। ফলে এসব দেশে হু-হু করে বাড়ছে মানুষ। পঞ্চম আদমশুমারি হলো ২০১১ সালে। বলা হলো বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। পরে সঠিক হিসাব থেকে জানা গেল, বাংলাদেশে মানুষের সংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার।
১৯৭৪ সালে এ দেশের প্রথম আদমশুমারি অনুযায়ী লোকসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৪ লাখ। ২০০১ সালে দেখা গেছে, লোকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৪৪ লাখ। এই হার কিন্তু সব সময় বাড়ছে চক্রবৃদ্ধি হারে। ভাবতেও ভয় করে, আর মাত্র ২০ বছর পর মানুষ থাকবে কোথায়? দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে গেলে দেখা যায় অসংখ্য, হাজার হাজার শিশু-কিশোরের চিকন পা। এর সঙ্গে রয়েছে আরো মহা বিপৎসংকেত। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে আগামী ৩০-৪০ বছরে বাংলাদেশ হারাবে তার বেশ কিছু ভূমি। আগামী ১০০ বছরে থাকবে না এ দেশের ৪০ ভাগ জমি। বলবেন যে ১০০ বছরের দেরি আছে। না, অনেক সৌভাগ্যবান ১০০ বছর বেঁচে থাকেন। আজ যে কিনা শিশু, ১০০ বছর পরও সে বৃদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকতে পারে। আজ যে হচ্ছে যুবক, মাত্র ১০০ বছর পর তার সন্তান অথবা নাতি-নাতনির দেশ হবে বাংলাদেশ। সেটা খুব দূরের কথা নয়। অন্যদিকে দ্রুত কমে আসছে পানযোগ্য পানি। টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে অভিনেতা শংকর শাঁওজালের একটি বিজ্ঞাপন চিত্র দেখতে পেতাম, ইদানীং দেখছি না। সে বিজ্ঞাপন দেখলে বোঝা যায়, পানির অভাব কী রকম অনুভূত হতে পারে! কমছে চাষের জমি। যতই নিয়মকানুন তৈরি করা হোক, মানুষ তার বাসস্থানের প্রয়োজনে কোনো নিয়ম মানবে না। চাষের জমির মাঝখানে ঘর তুলে ফেলবে। সে দৃশ্য এখনই দেখা যাচ্ছে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই পতিত সরকারি জমি পেলে সেখানে ঘর তুলে ফেলছে কেউ না কেউ। দেশে মানুষ যখন স্বাভাবিক ছিল সংখ্যায়, তখন কেউই কল্পনাও করেনি যে সরকারের জায়গায় ঘর তোলা যায়। ওই যে বললাম, যে পায় সে চায় না, আর যে পায় সে চায় না! এ সমস্যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও আছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় এক প্রকৌশলী ছিলেন নিঃসন্তান। তিনি একটি সন্তানের জন্য এমন কিছু নেই যা করেননি। দেশ-বিদেশের চিকিৎসা যখন ব্যর্থ হয়েছে, তখন পানিপড়া, তেলপড়া, তাবিজ-কবজ, ফকিরি, হেকিমি সব চেষ্টাই করেছেন একটি সন্তানের আশায়। তিনি পাননি। বহুকাল আগে সেখান থেকে এসে বৃহত্তর ফরিদপুরে স্থায়ী আবাস গড়ে তুললেও ভদ্রলোক নিজের ভাষা বা সংস্কৃতি কোনোটাই ছাড়েননি। তিনি উচ্চ স্বরে উত্তর দিলেন, 'আঁই কী কৈত্তাম, আঁর কী দোষ! আঁই কী হেতেনরে কইছিনি যে ব্যাবাক আঁর গরে দি দ্যাও!' শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দোষারোপ করে লাভ নেই। দেশে অসংখ্য শিক্ষিত ও যথেষ্ট অর্থসম্পদের অধিকারী পরিবারে এখনো চার-পাঁচটি সন্তান উৎপাদনের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এক শ্রেণীর মানুষ, এমনকি টেলিভিশনের টকশোতেও বলে থাকেন, 'জনশক্তি কোনো সমস্যা নয়। জনশক্তিকে কর্মশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে।' এর চেয়ে অপরিণামদর্শী, এর চেয়ে কাল্পনিক কথা আর কিছু হতে পারে না। যেখানে বেকারত্বই দেশের অন্যতম বড় সমস্যা। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিই যদি বিদ্যমান থাকে, তাহলে মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী হবেন, এমপির ছেলে এমপি হবেন। এখনই দৃষ্টি না দিলে শাসন করবেন কী? সব হিসাব বাদ দিয়ে দেশের ক্ষমতাশালীদের স্বার্থের কথাই বললাম। সরকারের পরিকল্পনা আছে। পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতিমালা আছে। সেটা খুব একটা খারাপ নয়। কিন্তু তাতে কোনো ধার নেই। সমস্যাটা সেখানেও। দেশে অনেক অসচেতন মানুষের মধ্যে একটি অত্যন্ত অযৌক্তিক ধারণা আছে যে মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি। কিন্তু সেই তিনি নিজেই তো বলেছেন, যে নিজেকে সাহায্য না করে আমি তাকে সাহায্য করি না। এ বিষয়টি সাধারণের মধ্যে বোধগম্য করাতে পারেনি সরকার। আরো একটি বিষয় আছে : বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে অধিক সন্তান জন্ম দেওয়া চার-পাঁচ দশক আগেও ছিল প্রশংসনীয়, গৌরবের। তখন দেশ ছিল প্রায় পুরোপুরি কৃষিভিত্তিক। যাঁদের গোলা ভরা ধান উঠত, তাঁরা অনেক সন্তান চাইতেন। তাঁরা অধিক সন্তানের জন্ম দিয়ে নিজের প্রতিপালনের তাগিদ প্রদর্শন করতেন। কেউ কেউ বংশে লোকবৃদ্ধি করে কায়িক শক্তি প্রদর্শন করতে চাইতেন। দেশের অনেক এলাকায় যে ঝগড়া-বিবাদ হতো, তা ছিল বংশভিত্তিক। যে বংশের লোক বেশি, তারাই এলাকায় অধিক ক্ষমতাশালী। সে সব কী এখন চলে?
সরকারের কাছে এখন সবকিছুর ঊর্ধ্বে, সব ধরনের লক্ষ অর্জনের মধ্যে জনস্যংখ্যা রোধ সবচেয়ে বড় লক্ষ হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে অস্তিত্বই থাকবে না আমাদের। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন, প্রযুক্তি দিয়ে এর সমাধান হবে। যেমন দেশে যত লোক বেড়েছে, তার চেয়ে পরিমাণে ধান-চালের উৎপাদন বেড়েছে বেশি। কিন্তু এ প্রাপ্তি সাময়িক।
লেখক : সাংবাদিক, mohshinhabib@yahoo.com
No comments