পশ্চিমবঙ্গে ইউপিএর ভাঙনের প্রভাব by দোলা মিত্র
যদি বলা হয় কংগ্রেস কিংবা মা মাটি মানুষ এই দুয়ের মধ্যে আপনি কাকে সমর্থন করবেন- আমি বলব শেষেরটাই আমার কাছে অধিক প্রিয়। কথাটা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। কী এতসব ঘটে গেছে যে তৃণমূল কংগ্রেস তড়িঘড়ি করে কংগ্রেসের প্রতি বিরাগভাজন হলো,
আর ইউপিএ থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিল? তাদের সামনে এভাবে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়া ছাড়া কি কোনো বিকল্প ছিল না? আসলে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, এলপিজি থেকে ভর্তুকি হ্রাস এবং বহুজাতিক কম্পানিকে অবাধ সুবিধা প্রদান করাকে সূত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে এই তৃণমূল কংগ্রেস। তিনি স্পষ্ট করে বলে দিলেন, 'আমরা আগেই জোটকে বলে দিয়েছিলাম, গণবিরোধী কোনো সিদ্ধান্তকে আমরা মেনে নেব না। সুতরাং আমাদের বেরিয়ে আসতে হলো। আর অন্যরা আমাদের মতো বেরিয়ে আসবে কি না, তা আমার বলার কথা নয়। এটা তাদের ব্যাপার।'
তবে অন্যরা কিন্তু মমতাকে অনুসরণ করেনি। কংগ্রেস জাতীয়ভাবে বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিয়েছে। সতর্কতামূলক দৃষ্টিও দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, এটা সবার দৃষ্টিতে পড়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআই(এম) এবং বিজেপি- সবাই তাকিয়ে আছে এরপর কী হতে যাচ্ছে। কংগ্রেসও বলে দিয়েছে স্পষ্ট করে। মমতার এই সিদ্ধান্ত আমাদেরও ভারমুক্ত করেছে। আমাদের জোটও সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পাবে। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে সংগঠিত করার অধিক সুবিধা তৈরি হবে এখন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বিষয়টিকে এভাবেই মূল্যায়ন করছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যে জোট গঠন করা হয়েছে, এটা আসলে বোঝার চেয়েও বড় কিছু। আমরা এখন আরো শক্তিশালী হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করার সুযোগ পাব। এই ঘটনার পর আমাদের কর্মীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা পাবেন। নিজেদের মতো কাজ করার বৃহত্তর ক্ষেত্র পাবেন। তৃণমূলের সঙ্গে জোটের ফল হবে আসন ভাগাভাগির খেলা। আমাদের তখন ছাড় দিতে হবে অনেক। কিন্তু এখন আমাদের সংগঠন অধিক শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পাবে। কর্মীরা আগে এক ধরনের হতাশায় ভুগতেন, এখন সেই হতাশা থেকে মুক্তি পাবেন তাঁরা।
আলীমুদ্দিন স্ট্রিটের সিপিআই(এম)-এর অফিসে অনেক আগে থেকেই এমন পরিণতির ব্যাপারে কানাঘুষা চলছিল। বাম রাজনৈতিক শক্তিকে পরাভূত করে যখন রাজ্যে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতাসীন হলো, তখন থেকেই সিপিআই(এম)-এর এই ধারণা জন্মেছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে বিষয়টি তাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। সিপিআই(এম)-এর সাবেক এমপি মোহাম্মদ সেলিম সে কথাই বলেছেন। তিনি বলেছেন, 'অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কী সিদ্ধান্ত নেবে, এর ওপর আমাদের রাজনৈতিক কৌশল খুব একটা পরিবর্তন হবে না। কিংবা আমরা কী কর্মসূচি গ্রহণ করব, তাও নির্ভর করবে না। তবে এই পরিবর্তন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করেছে- সেটা তো সত্যিই। আমাদের দলও তার বাইরে নয়।' আসলে তৃণমূল কংগ্রেস আর কংগ্রেসের যে জোট গঠন করা হয়েছে, এই জোট কিন্তু অভিন্ন কোনো আদর্শভিত্তিক ছিল না। কিংবা ন্যূনতম কোনো কর্মসূচিকে ভিত্তি করেও গঠিত হয়নি তাদের এই জোট। সুতরাং এই জোটের মধ্যে ফাটল তো শুরু থেকেই ছিল। এখন যেটা হয়েছে, তাকে পরিণতি হিসেবে গণ্য করতে হবে। আমরা এটা আগেই জানতাম। এখন দেখলাম মাত্র। এই জোট হয়েছিল বাম শক্তিকে পরাজিত করার মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে। এটা হয়েছে তা-ই, বাকিটাও এখন হলো।
অন্যদিকে সেন্ট্রাল এভিনিউতে অবস্থিত বিজেপি অফিসের হাওয়ারও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তারাও আশাবাদী হচ্ছে। তারাও ভাবতে শুরু করেছে রাজ্যে তাদের শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ এসেছে। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সহসভাপতি তাপস চ্যাটার্জি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বামদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা তো এখানে ৩৪ বছর শাসন চালিয়েছে। সুতরাং এটা মনে করার যুক্তি আছে, এই রাজ্যের মানুষ নতুনদেরও চায়। পশ্চিমবঙ্গে যে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে, এটাও তার একটা লক্ষণ।
তৃণমূল কংগ্রেস আর কংগ্রেসের জোট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আরেকজন এমপি বলেছেন, তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জোটে অনেক কথা হয়েছে। কদিন ধরেই তাদের জোটভঙ্গের সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য বেশ চেষ্টা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, তোমরা জোটে থেকে যাও। কিন্তু মমতা সেদিকে মোটেও যেতে চাইলেন না। তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত বদলালেন না।
পশ্চিমবঙ্গে মমতা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা কিভাবে কাজে লাগাতে হয়, এটা মমতা ভালো করেই জানেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করাটা এত সহজ নয়। কেন্দ্রে যে জুয়া খেলা হয়ে গেল, তার প্রভাব আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে গিয়ে পড়বে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো এবং বহুজাতিক কম্পানিকে তাদের বক্তব্য অনুযায়ী অনাকাঙ্ক্ষিত সুযোগ দেওয়ার মতো অভিযোগগুলো করেছেন মমতা ব্যানার্জি। এগুলো নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় হওয়ার মতো ইস্যু। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটাররা তাঁকে সমর্থন করার আগে তাঁর ব্যাপারে আগপাছ চিন্তা করবেন বেশি। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলদলীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তাঁদের পদত্যাগপত্র প্রদান করেছেন। এটা আসলে ছিল একান্তই আনুষ্ঠানিকতা।
লেখক : সাংবাদিক।
আউটলুক থেকে ভাষান্তর : মোস্তফা হোসেইন।
তবে অন্যরা কিন্তু মমতাকে অনুসরণ করেনি। কংগ্রেস জাতীয়ভাবে বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিয়েছে। সতর্কতামূলক দৃষ্টিও দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, এটা সবার দৃষ্টিতে পড়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআই(এম) এবং বিজেপি- সবাই তাকিয়ে আছে এরপর কী হতে যাচ্ছে। কংগ্রেসও বলে দিয়েছে স্পষ্ট করে। মমতার এই সিদ্ধান্ত আমাদেরও ভারমুক্ত করেছে। আমাদের জোটও সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পাবে। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে সংগঠিত করার অধিক সুবিধা তৈরি হবে এখন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বিষয়টিকে এভাবেই মূল্যায়ন করছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যে জোট গঠন করা হয়েছে, এটা আসলে বোঝার চেয়েও বড় কিছু। আমরা এখন আরো শক্তিশালী হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করার সুযোগ পাব। এই ঘটনার পর আমাদের কর্মীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা পাবেন। নিজেদের মতো কাজ করার বৃহত্তর ক্ষেত্র পাবেন। তৃণমূলের সঙ্গে জোটের ফল হবে আসন ভাগাভাগির খেলা। আমাদের তখন ছাড় দিতে হবে অনেক। কিন্তু এখন আমাদের সংগঠন অধিক শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পাবে। কর্মীরা আগে এক ধরনের হতাশায় ভুগতেন, এখন সেই হতাশা থেকে মুক্তি পাবেন তাঁরা।
আলীমুদ্দিন স্ট্রিটের সিপিআই(এম)-এর অফিসে অনেক আগে থেকেই এমন পরিণতির ব্যাপারে কানাঘুষা চলছিল। বাম রাজনৈতিক শক্তিকে পরাভূত করে যখন রাজ্যে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতাসীন হলো, তখন থেকেই সিপিআই(এম)-এর এই ধারণা জন্মেছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে বিষয়টি তাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। সিপিআই(এম)-এর সাবেক এমপি মোহাম্মদ সেলিম সে কথাই বলেছেন। তিনি বলেছেন, 'অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কী সিদ্ধান্ত নেবে, এর ওপর আমাদের রাজনৈতিক কৌশল খুব একটা পরিবর্তন হবে না। কিংবা আমরা কী কর্মসূচি গ্রহণ করব, তাও নির্ভর করবে না। তবে এই পরিবর্তন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করেছে- সেটা তো সত্যিই। আমাদের দলও তার বাইরে নয়।' আসলে তৃণমূল কংগ্রেস আর কংগ্রেসের যে জোট গঠন করা হয়েছে, এই জোট কিন্তু অভিন্ন কোনো আদর্শভিত্তিক ছিল না। কিংবা ন্যূনতম কোনো কর্মসূচিকে ভিত্তি করেও গঠিত হয়নি তাদের এই জোট। সুতরাং এই জোটের মধ্যে ফাটল তো শুরু থেকেই ছিল। এখন যেটা হয়েছে, তাকে পরিণতি হিসেবে গণ্য করতে হবে। আমরা এটা আগেই জানতাম। এখন দেখলাম মাত্র। এই জোট হয়েছিল বাম শক্তিকে পরাজিত করার মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে। এটা হয়েছে তা-ই, বাকিটাও এখন হলো।
অন্যদিকে সেন্ট্রাল এভিনিউতে অবস্থিত বিজেপি অফিসের হাওয়ারও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তারাও আশাবাদী হচ্ছে। তারাও ভাবতে শুরু করেছে রাজ্যে তাদের শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ এসেছে। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সহসভাপতি তাপস চ্যাটার্জি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বামদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা তো এখানে ৩৪ বছর শাসন চালিয়েছে। সুতরাং এটা মনে করার যুক্তি আছে, এই রাজ্যের মানুষ নতুনদেরও চায়। পশ্চিমবঙ্গে যে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে, এটাও তার একটা লক্ষণ।
তৃণমূল কংগ্রেস আর কংগ্রেসের জোট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আরেকজন এমপি বলেছেন, তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জোটে অনেক কথা হয়েছে। কদিন ধরেই তাদের জোটভঙ্গের সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য বেশ চেষ্টা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, তোমরা জোটে থেকে যাও। কিন্তু মমতা সেদিকে মোটেও যেতে চাইলেন না। তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত বদলালেন না।
পশ্চিমবঙ্গে মমতা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা কিভাবে কাজে লাগাতে হয়, এটা মমতা ভালো করেই জানেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করাটা এত সহজ নয়। কেন্দ্রে যে জুয়া খেলা হয়ে গেল, তার প্রভাব আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে গিয়ে পড়বে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো এবং বহুজাতিক কম্পানিকে তাদের বক্তব্য অনুযায়ী অনাকাঙ্ক্ষিত সুযোগ দেওয়ার মতো অভিযোগগুলো করেছেন মমতা ব্যানার্জি। এগুলো নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় হওয়ার মতো ইস্যু। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটাররা তাঁকে সমর্থন করার আগে তাঁর ব্যাপারে আগপাছ চিন্তা করবেন বেশি। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলদলীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তাঁদের পদত্যাগপত্র প্রদান করেছেন। এটা আসলে ছিল একান্তই আনুষ্ঠানিকতা।
লেখক : সাংবাদিক।
আউটলুক থেকে ভাষান্তর : মোস্তফা হোসেইন।
No comments