বিদ্যুতের জোগান বাড়ানো-ভুটানে সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ প্রস্তাব

বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে, যার প্রতি জনসাধারণের বেশিরভাগের সমর্থন নেই। তবে সরকার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যয়ের সঙ্গে আয় সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে এ খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যাবে না।


উৎপাদন ক্ষমতা কতটা বাড়াতে হবে, সে বিষয়ে একটি তুলনাই যথেষ্ট হবে_ বর্তমানে মাত্র ৪০ ভাগের মতো পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। এখন উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে তা ২০ হাজার মেগাওয়াটে পেঁৗছাবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি যদি প্রত্যাশার তুলনায় বেড়ে যায় তাহলে বিদ্যুৎ চাহিদা এর চেয়েও বেশি হতে পারে। কিন্তু আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সম্পদের সীমাবদ্ধতা ছাড়াও আরও একটি সমস্যা নিজস্ব অপ্রতুল জ্বালানি ভাণ্ডার। বঙ্গোপসাগরে আমাদের সার্বভৌম অধিকারের এলাকা বিপুলভাবে সম্প্রসারিত হলেও সেখানের গ্যাস কিংবা তেল স্থলভাগে এনে তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ব্যয়বহুল। কয়লা একটি বিকল্প এবং এর ভালো মজুদও দেশে রয়েছে। কিন্তু খনি থেকে তার লাভজনক উত্তোলন পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তাছাড়া আগামী দিনের বিপুল বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে কয়লানির্ভর কেন্দ্র যথেষ্ট হবে না। সৌর, বাতাস এবং পরমাণু শক্তি_ এসবও সম্ভাব্য উৎস। তবে যেভাবে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়ছে এবং যেভাবে বাড়তে থাকবে বলে পূর্বাভাস তাতে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুৎপ্রাপ্তির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতেই হবে। 'ভুটানের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে যুক্ত হতে চায় বাংলাদেশ'_ রোববারের সমকালে এ শিরোনামের প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু এ বিবেচনায় আশাব্যঞ্জক। অপরিমেয় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে পাহাড় অধ্যুষিত স্বল্প জনসংখ্যার এ দেশটিতে। তাদের নিজস্ব চাহিদা এখন পর্যন্ত সামান্য। ১০টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে ২০২০ সাল নাগাদ তারা আরও ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এ জন্য মূল সহযোগিতা প্রদান করছে ভারত। তারা আরও নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে চায়। বাংলাদেশ এ খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। তবে এ জন্য ভারতের সম্মতি প্রয়োজন পড়বে। বিদ্যমান প্রকল্পগুলোতেও একই শর্তে বাংলাদেশের বিনিয়োগে ভুটান রাজি হবে, এমন ধারণা দিয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের ত্রিপুরায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সক্রিয় ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়েছে এবং ওই প্রকল্প থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি মোটামুটি নিশ্চিত। আমাদের বিদ্যুৎ ঘাটতির সামান্যই এ থেকে পূরণ হবে; তবে বড় বিষয় হচ্ছে আঞ্চলিক সহযোগিতার একটি নবতর ধারার সূচনা হওয়া। ভুটানে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো এবং সেখান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ নিয়ে আসার জন্য ভারতের সহযোগিতা অপরিহার্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর মার্চ মাসে এ বিষয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কিন্তু গত দেড় বছরে এ উদ্যোগ খুব একটা গতি পেয়েছে বলে মনে হয় না। নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টিও এজেন্ডায় রয়েছে এবং সে ক্ষেত্রেও অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নেই। আমরা আশা করব যে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় নেপাল, ভুটান ও ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য তাদের তৎপরতা বাড়াবে। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি চাহিদা পূরণের জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা অপরিহার্য এবং তা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক-সামাজিক ঐকমত্য গড়ে তোলার প্রতিও মনোযোগী থাকতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.