রাস্তার হাল এবং গণপরিবহনের দুর্দশা by নিয়ামত হোসেন
আমাদের পথের কাহিনীর কথা যেন আর শেষ হবার নয়। সত্যিকার বন্ধুর পথ বলতে যা বোঝায়; ঢাকার এই গলিপথগুলোর অবস্থা সে রকমই হয়ে উঠেছে। হঠাৎ উঁচু, হঠাৎ নিচু। রিকশা বা অন্য যানের চাকা একবার ভাঙ্গা রাস্তার খাদে পড়ছে, আরেকবার উপরে উঠছে।
চলাচলে কষ্টের শেষ নেই। অনেকদিন ধরে এই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে রাজধানীর মানুষ। কিন্তু কেউ দেখছে না। রাজধানীর রাস্তার ব্যাপারে যাদের দায়িত্ব তাঁরা যেন দেখেও দেখেন না। দিনের পর দিন কষ্ট পাচ্ছে এখানকার বাসিন্দা। নগরবাসী কাকে বলবে? কে ঠিক করে দেবে রাজধানীর এসব রাস্তা? তাছাড়া যেসব সংস্থার দায়িত্ব এগুলো দেখার সেসব সংস্থার লোকজন কি পথে চলেন না? তাঁরা নিজের চোখে কি অবস্থা দেখেন না? তাহলে কাজ হয় না কেন?
রাজধানীর আরেক সমস্যা গণপরিবহনের। ছোট-বড় বাস আছে অনেক। ভিড় প্রচ-। ভিড় দেখেই বোঝা যায়, যাত্রীর তুলনায় যান কম। অটোরিকশা, যেগুলো সিএনজিচালিত এবং যেগুলো সিএনজি নামেই পরিচিত হয়ে উঠছে এবং রিকশার ভাড়া সব সময় অস্থির। এসবের ভাড়ায় স্থিরতা নেই। আজ দশ টাকা তো কাল কুড়ি টাকা। যেসব রাস্তায় রিকশা চলে সেগুলো আধা ভাঙ্গা, আধা ভাল অবস্থা। তবু মানুষকে যেতে হয়। সাধারণ মানুষের জন্য রিকশা অনেকখানি ভরসা। কিন্তু দিন দিন রিকশার ভাড়া এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে যাত্রীরা বিস্মিত। তাঁদের অনেকেই এখন হাঁটা ধরেছেন।
অটোরিকশার বিষয়ে নাগরিকদের অভিজ্ঞতা বড্ড তিক্ত। সিএনজিচালিত এসব অটোরিকশা আনা হয়েছিল নাগরিকদের সুবিধার জন্য। অন্তত এটাই বলা হয়েছিল। নাগরিকরা এতে খুব খুশি হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন এবার অন্তত কিছু পয়সা বেশি দিতে হলেও যাতায়াতের একটা সুন্দর ব্যবস্থা পাওয়া যাবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি পড়তে বেশিদিন লাগল না। প্রথম পর্যায়ে ভাড়া নির্ধারণ করে মিটার বসানো হলো। নাগরিকরা তা মেনে নিলেন। কিন্তু কিছুদিন গেলেই শুরু হলো বিড়ম্বনা। মিটার খারাপ। ঠিকা ব্যবস্থায় যেতে হবে। চালকদের পক্ষ থেকে অনেকেই এই দাবি তুললেন। এভাবে কিছুদিন চলল অরাজক অবস্থা। ভঙ্গ হলো নাগরিকদের আশার স্বপ্ন। আবার কিছুদিন পর আলোচনা, বৈঠক ইত্যাদি। যে ভাড়া শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলো তাতে নাগরিকদের অসুবিধা হলেও তাঁরা মেনে নিলেন। কিন্তু তাতেও হলো না। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। জমা দিতে হয় অনেক বেশি। সিএনজির দাম বেড়ে গেছে ইত্যাদি অজুহাত তুলে শুরু হলো অধিকাংশ চালকের বেঁকে বসা। সেই একই কৌশল। মিটারে গেলে পোষায় না। চুক্তি করে যেতে হবে। অথবা লোককে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে এই কথা বলে, যার সারকথা হলো : আপনারা যেখানেই যাওয়ার কথা বলুন না কেন, কোনখানেই যাব না। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা হবে যাত্রীর সঙ্গে মহিলা, শিশু আছে কিনা, যাত্রী যাওয়ার জন্য ব্যাকুলতা দেখাচ্ছেন কিনা, তাহলে উত্তর আসবেÑমিটার খারাপ; অত টাকা দিতে হবে। যাত্রীরা তখন বাধ্য হয়ে বেশি টাকায় রাজি হতে বাধ্য হন। আর সংশ্লিœষ্ট চালক এক খ্যাপে ডবল বা তিনগুণ টাকা কামিয়ে কোন এক স্থানে দাঁড়িয়ে আরাম করে।
মিটার লাগানো অটোরিকশায় মিটার থাকা সত্ত্বেও মিটারে না যাওয়া, দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া আদায় করা বা কোথাও যাওয়ার জন্য যাত্রীরা চালককে ডাকলে যাব না বলা, এগুলোই হচ্ছে অরাজক অবস্থার লক্ষণ। যাত্রীরা কি দোষ করেছে? টাকা মিটার অনুযায়ী নেয়া হবে না কেন? মিটারে গেলেও দশ টাকা, কুড়ি টাকা বাড়াতে হবে এমন আবদার করা হবে কেন? যাত্রীরা কি অপরাধ করেছে যাতে বেশি টাকা দিয়ে যেতে হবে? ভাড়া যখন পুনরায় নির্ধারণ করা হয় তখন সকল পক্ষের মত নেয়া হয়েছিল। এখন তাহলে নির্ধারিত ভাড়া মানা হচ্ছে না কেন? এখন কেন মিটার খারাপ বলা হচ্ছে?
নাগরিকদের জন্য সিএনজি অটো এমন একটা বিড়ম্বনার মতো, যেটা না থাকলেও সমস্যা, থাকলেও সমস্যা। সিএনজির ব্যাপারে বলা হয়েছিল, এগুলো চলবে মিটারে, ডাকামাত্র যাবে এবং যেখানে যেতে বলা হবে সেখানে যাবে। এগুলোর কোনটাই এখন মানা হচ্ছে না। তাহলে একটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সিএনজি অটোরিকশা কি কোনদিনই কোন সিদ্ধান্ত মানবে না? এর কারণ কি? পথে এত অরাজকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে কেন? যাত্রীদের ‘গলা টিপে’ টাকা আদায় করা হবে কেন? কেন বিনাবাক্যে যেখানে যেতে বলা হবে সেখানে যাবে না? যাত্রীদের বার বার আশ্বাস দেয়া হচ্ছে অথচ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসমতো কোন কাজই হচ্ছে না! তাহলে এসব আশ্বাস দেয়ার অর্থ কি? তাহলে নিয়মবিধি বেঁধে দেয়ার প্রয়োজন কি? একেকজন চালকের হাতে সিএনজি অটোরিকশা তুলে দিয়ে বললেই হয়, যে যেভাবে পারো যাত্রীসেবার নামে যা খুশি করতে থাকো!
এই অবস্থাই বর্তমানে চলছে। অবস্থাটি সিএনজি অটোর মালিক বা চালকদের জন্য অনুকূল হতে পারে, কিন্তু যাত্রীদের জন্য অসম্ভব বিড়ম্বনার, বিরক্তির। প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবস্থা কি চলতেই থাকবে? এর কি কোন প্রতিকার নেই। লাখ লাখ যাত্রী আর কতকাল এমন ঝামেলা এবং কষ্ট পোহাতে থাকবে?
ঢাকার রাস্তাগুলো যেমন অবিলম্বে মেরামত করার কাজ শুরু করা উচিত তেমনি গণপরিবহন সমস্যার দিকে অবিলম্বে নজর দেয়া উচিত। রাস্তাগুলো বর্ষার সময় যথেষ্ট ভুগিয়েছে। এখনও ভোগাচ্ছে। যানজট যেমন ভোগাচ্ছে এখনও তেমনি ভাঙ্গা রাস্তাও ভোগাচ্ছে মানুষকে। যার যার দায়িত্ব সেটুকু পালন করলেই রাস্তার চেহারা পাল্টে যেতে পারে। কিছুদিন পর হেমন্তকাল, তারপর শীত। ভাঙ্গা রাস্তা মেরামত এখনই করার উদ্যোগ না নেয়া হলে রাস্তায় ধুলা উড়বে, বাড়িতে গিয়ে সেসব জমবে। নাগরিকদের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করবে আরও বেশি করে। ঢাকা নগরীতে যেখানে যেসব গাছপালা আছে সেগুলোর পাতায় সবুজ ঢেকে যাবে ধুলার পর্দায়। রাস্তাগুলো মেরামত করুন। বন্ধুর গলি এবং রাস্তাকে সমান করুন। যানজট এখনও হচ্ছে, এমনকি ছুটির দিনেও হয়। যানজটের ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। যতদূর সম্ভব নাগরিকদের সামনের সমস্যাগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। এসব সমস্যার বড় একটি সিএনজি অটো। সিএনজির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দরকার। নাগরিকরা অসহায় হয়ে পথে দাঁড়িয়ে থাকবে কেন? এগুলোর মিটার নষ্ট হচ্ছে কেন? আসলে কি নষ্ট হচ্ছে? নষ্ট মিটার নিয়ে কোন অটো পথে নামতে পারবে না সেই নির্দেশ দিতে হবে। নাগরিকদের সুবিধার্থে পদক্ষেপ নিতে হবে। মিটারে সিএনজি অটো চলবে এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করার সার্বিক ব্যবস্থা প্রয়োজন। যদি সিএনজির ক্ষেত্রে সেটা ব্যবহার করা না হয় তাহলে ওগুলো নামকাওয়াস্তে রেখে লাভ কি, উঠিয়ে দিলেই হয়। রাজধানীতে অগণিত যাত্রী। কম বয়সী, বেশি বয়সী এবং নারী-পুরুষ চলছেন রাস্তায়। কেউ রিকশা খুঁজছেন। কেউ বাসের জন্য বা সিএনজি অটোর জন্য অথবা ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছেন। রিকশাচালক ভাড়া চাচ্ছে বেশি, সিএনজি চালক হয় বেশি ভাড়া চাচ্ছে বা ‘ওদিকে যাব না’ বলে যাত্রীকে এড়িয়ে যাচ্ছে। স্ট্যান্ডে একটা বাস এলো তো হুড়মুড় করে তাতে ওঠার চেষ্টা করছে অগণিত যাত্রী। ধাক্কাধাক্কি, গুঁতোগুঁতি। বোঝাই যায় অফিস চলার সময় বা ছুটির সময় যাত্রীদের প্রচ- চাপ এবং বাসের প্রচ- অভাব। শহরে কত যাত্রী চলাচল করে সেই অনুপাতে বাস বা যানের সংখ্যা কম সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সেটা কি দেখার কেউ নেই। অগণিত মানুষ রাস্তায় নেমে কতকাল আর অসহায়ভাবে দুর্ভোগ পোহাতে থাকবে? এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যানবাহনও প্রয়োজন। ঢাকার নদীগুলোতে সুন্দর নৌপথের ব্যবস্থা হবে, সার্কুলার রেল, মনোরেল, পাতালরেল ইত্যাদি কতকিছুর পরিকল্পনার কথা বহুকাল ধরে শোনা গেছে।
শুধু শোনাই গেল। কাজ হলো না। হওয়ার সম্ভাবনা যে নেই তাও নয়। তবে এসব বিষয় এককথায় নগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের ব্যাপারে এখনই পরিকল্পনা নিয়ে সেসব রাস্তবায়ন করতে হবে। যাত্রীভাড়া যাতে কোনখানে ইচ্ছামতো বাড়তে না পারে সেটাও নিশ্চিত রাখতে হবে। ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য তালিকা থেকে সরিয়ে আনতে হবে এবং যাতে এখানে বসবাসকারীরা অন্তত নাগরিক সুবিধাগুলো ঠিকমতো পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। নগরবাসী এটাই আশা করে।
রাজধানীর আরেক সমস্যা গণপরিবহনের। ছোট-বড় বাস আছে অনেক। ভিড় প্রচ-। ভিড় দেখেই বোঝা যায়, যাত্রীর তুলনায় যান কম। অটোরিকশা, যেগুলো সিএনজিচালিত এবং যেগুলো সিএনজি নামেই পরিচিত হয়ে উঠছে এবং রিকশার ভাড়া সব সময় অস্থির। এসবের ভাড়ায় স্থিরতা নেই। আজ দশ টাকা তো কাল কুড়ি টাকা। যেসব রাস্তায় রিকশা চলে সেগুলো আধা ভাঙ্গা, আধা ভাল অবস্থা। তবু মানুষকে যেতে হয়। সাধারণ মানুষের জন্য রিকশা অনেকখানি ভরসা। কিন্তু দিন দিন রিকশার ভাড়া এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে যাত্রীরা বিস্মিত। তাঁদের অনেকেই এখন হাঁটা ধরেছেন।
অটোরিকশার বিষয়ে নাগরিকদের অভিজ্ঞতা বড্ড তিক্ত। সিএনজিচালিত এসব অটোরিকশা আনা হয়েছিল নাগরিকদের সুবিধার জন্য। অন্তত এটাই বলা হয়েছিল। নাগরিকরা এতে খুব খুশি হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন এবার অন্তত কিছু পয়সা বেশি দিতে হলেও যাতায়াতের একটা সুন্দর ব্যবস্থা পাওয়া যাবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি পড়তে বেশিদিন লাগল না। প্রথম পর্যায়ে ভাড়া নির্ধারণ করে মিটার বসানো হলো। নাগরিকরা তা মেনে নিলেন। কিন্তু কিছুদিন গেলেই শুরু হলো বিড়ম্বনা। মিটার খারাপ। ঠিকা ব্যবস্থায় যেতে হবে। চালকদের পক্ষ থেকে অনেকেই এই দাবি তুললেন। এভাবে কিছুদিন চলল অরাজক অবস্থা। ভঙ্গ হলো নাগরিকদের আশার স্বপ্ন। আবার কিছুদিন পর আলোচনা, বৈঠক ইত্যাদি। যে ভাড়া শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলো তাতে নাগরিকদের অসুবিধা হলেও তাঁরা মেনে নিলেন। কিন্তু তাতেও হলো না। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। জমা দিতে হয় অনেক বেশি। সিএনজির দাম বেড়ে গেছে ইত্যাদি অজুহাত তুলে শুরু হলো অধিকাংশ চালকের বেঁকে বসা। সেই একই কৌশল। মিটারে গেলে পোষায় না। চুক্তি করে যেতে হবে। অথবা লোককে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে এই কথা বলে, যার সারকথা হলো : আপনারা যেখানেই যাওয়ার কথা বলুন না কেন, কোনখানেই যাব না। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা হবে যাত্রীর সঙ্গে মহিলা, শিশু আছে কিনা, যাত্রী যাওয়ার জন্য ব্যাকুলতা দেখাচ্ছেন কিনা, তাহলে উত্তর আসবেÑমিটার খারাপ; অত টাকা দিতে হবে। যাত্রীরা তখন বাধ্য হয়ে বেশি টাকায় রাজি হতে বাধ্য হন। আর সংশ্লিœষ্ট চালক এক খ্যাপে ডবল বা তিনগুণ টাকা কামিয়ে কোন এক স্থানে দাঁড়িয়ে আরাম করে।
মিটার লাগানো অটোরিকশায় মিটার থাকা সত্ত্বেও মিটারে না যাওয়া, দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া আদায় করা বা কোথাও যাওয়ার জন্য যাত্রীরা চালককে ডাকলে যাব না বলা, এগুলোই হচ্ছে অরাজক অবস্থার লক্ষণ। যাত্রীরা কি দোষ করেছে? টাকা মিটার অনুযায়ী নেয়া হবে না কেন? মিটারে গেলেও দশ টাকা, কুড়ি টাকা বাড়াতে হবে এমন আবদার করা হবে কেন? যাত্রীরা কি অপরাধ করেছে যাতে বেশি টাকা দিয়ে যেতে হবে? ভাড়া যখন পুনরায় নির্ধারণ করা হয় তখন সকল পক্ষের মত নেয়া হয়েছিল। এখন তাহলে নির্ধারিত ভাড়া মানা হচ্ছে না কেন? এখন কেন মিটার খারাপ বলা হচ্ছে?
নাগরিকদের জন্য সিএনজি অটো এমন একটা বিড়ম্বনার মতো, যেটা না থাকলেও সমস্যা, থাকলেও সমস্যা। সিএনজির ব্যাপারে বলা হয়েছিল, এগুলো চলবে মিটারে, ডাকামাত্র যাবে এবং যেখানে যেতে বলা হবে সেখানে যাবে। এগুলোর কোনটাই এখন মানা হচ্ছে না। তাহলে একটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সিএনজি অটোরিকশা কি কোনদিনই কোন সিদ্ধান্ত মানবে না? এর কারণ কি? পথে এত অরাজকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে কেন? যাত্রীদের ‘গলা টিপে’ টাকা আদায় করা হবে কেন? কেন বিনাবাক্যে যেখানে যেতে বলা হবে সেখানে যাবে না? যাত্রীদের বার বার আশ্বাস দেয়া হচ্ছে অথচ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসমতো কোন কাজই হচ্ছে না! তাহলে এসব আশ্বাস দেয়ার অর্থ কি? তাহলে নিয়মবিধি বেঁধে দেয়ার প্রয়োজন কি? একেকজন চালকের হাতে সিএনজি অটোরিকশা তুলে দিয়ে বললেই হয়, যে যেভাবে পারো যাত্রীসেবার নামে যা খুশি করতে থাকো!
এই অবস্থাই বর্তমানে চলছে। অবস্থাটি সিএনজি অটোর মালিক বা চালকদের জন্য অনুকূল হতে পারে, কিন্তু যাত্রীদের জন্য অসম্ভব বিড়ম্বনার, বিরক্তির। প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবস্থা কি চলতেই থাকবে? এর কি কোন প্রতিকার নেই। লাখ লাখ যাত্রী আর কতকাল এমন ঝামেলা এবং কষ্ট পোহাতে থাকবে?
ঢাকার রাস্তাগুলো যেমন অবিলম্বে মেরামত করার কাজ শুরু করা উচিত তেমনি গণপরিবহন সমস্যার দিকে অবিলম্বে নজর দেয়া উচিত। রাস্তাগুলো বর্ষার সময় যথেষ্ট ভুগিয়েছে। এখনও ভোগাচ্ছে। যানজট যেমন ভোগাচ্ছে এখনও তেমনি ভাঙ্গা রাস্তাও ভোগাচ্ছে মানুষকে। যার যার দায়িত্ব সেটুকু পালন করলেই রাস্তার চেহারা পাল্টে যেতে পারে। কিছুদিন পর হেমন্তকাল, তারপর শীত। ভাঙ্গা রাস্তা মেরামত এখনই করার উদ্যোগ না নেয়া হলে রাস্তায় ধুলা উড়বে, বাড়িতে গিয়ে সেসব জমবে। নাগরিকদের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করবে আরও বেশি করে। ঢাকা নগরীতে যেখানে যেসব গাছপালা আছে সেগুলোর পাতায় সবুজ ঢেকে যাবে ধুলার পর্দায়। রাস্তাগুলো মেরামত করুন। বন্ধুর গলি এবং রাস্তাকে সমান করুন। যানজট এখনও হচ্ছে, এমনকি ছুটির দিনেও হয়। যানজটের ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। যতদূর সম্ভব নাগরিকদের সামনের সমস্যাগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। এসব সমস্যার বড় একটি সিএনজি অটো। সিএনজির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দরকার। নাগরিকরা অসহায় হয়ে পথে দাঁড়িয়ে থাকবে কেন? এগুলোর মিটার নষ্ট হচ্ছে কেন? আসলে কি নষ্ট হচ্ছে? নষ্ট মিটার নিয়ে কোন অটো পথে নামতে পারবে না সেই নির্দেশ দিতে হবে। নাগরিকদের সুবিধার্থে পদক্ষেপ নিতে হবে। মিটারে সিএনজি অটো চলবে এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করার সার্বিক ব্যবস্থা প্রয়োজন। যদি সিএনজির ক্ষেত্রে সেটা ব্যবহার করা না হয় তাহলে ওগুলো নামকাওয়াস্তে রেখে লাভ কি, উঠিয়ে দিলেই হয়। রাজধানীতে অগণিত যাত্রী। কম বয়সী, বেশি বয়সী এবং নারী-পুরুষ চলছেন রাস্তায়। কেউ রিকশা খুঁজছেন। কেউ বাসের জন্য বা সিএনজি অটোর জন্য অথবা ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছেন। রিকশাচালক ভাড়া চাচ্ছে বেশি, সিএনজি চালক হয় বেশি ভাড়া চাচ্ছে বা ‘ওদিকে যাব না’ বলে যাত্রীকে এড়িয়ে যাচ্ছে। স্ট্যান্ডে একটা বাস এলো তো হুড়মুড় করে তাতে ওঠার চেষ্টা করছে অগণিত যাত্রী। ধাক্কাধাক্কি, গুঁতোগুঁতি। বোঝাই যায় অফিস চলার সময় বা ছুটির সময় যাত্রীদের প্রচ- চাপ এবং বাসের প্রচ- অভাব। শহরে কত যাত্রী চলাচল করে সেই অনুপাতে বাস বা যানের সংখ্যা কম সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সেটা কি দেখার কেউ নেই। অগণিত মানুষ রাস্তায় নেমে কতকাল আর অসহায়ভাবে দুর্ভোগ পোহাতে থাকবে? এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যানবাহনও প্রয়োজন। ঢাকার নদীগুলোতে সুন্দর নৌপথের ব্যবস্থা হবে, সার্কুলার রেল, মনোরেল, পাতালরেল ইত্যাদি কতকিছুর পরিকল্পনার কথা বহুকাল ধরে শোনা গেছে।
শুধু শোনাই গেল। কাজ হলো না। হওয়ার সম্ভাবনা যে নেই তাও নয়। তবে এসব বিষয় এককথায় নগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের ব্যাপারে এখনই পরিকল্পনা নিয়ে সেসব রাস্তবায়ন করতে হবে। যাত্রীভাড়া যাতে কোনখানে ইচ্ছামতো বাড়তে না পারে সেটাও নিশ্চিত রাখতে হবে। ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য তালিকা থেকে সরিয়ে আনতে হবে এবং যাতে এখানে বসবাসকারীরা অন্তত নাগরিক সুবিধাগুলো ঠিকমতো পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। নগরবাসী এটাই আশা করে।
No comments