শিক্ষকের মর্যাদা ও সম্মান by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
জ্ঞাননির্ভর সমাজ গঠনে প্রয়োজন মানুষ গড়ার কারিগর। তাই শিক্ষকদের পর্যাপ্ত পেশাগত স্বাধীনতা থাকা দরকার। এর পাশাপাশি যথার্থভাবে শিক্ষকদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। দেশব্যাপী শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও মর্যাদা সুরক্ষাসহ শিক্ষকদের জীবনের মান উন্নত করার ব্যাপারে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার জন্যই ইসলামের আগমন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রথমেই বলা হয়েছে, 'ইকরা' বা পড়। আর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্ধকারের ঘোর অমানিশা থেকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার জন্য ঘোষণা করেছেন, 'প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ইলম (জ্ঞান) অর্জন করা ফরজ।'
কোরআনুল কারিমে প্রথম নাজিলকৃত আয়াত আর উপরোক্ত হাদিস ছাড়াও শিক্ষাবিষয়ক অনেক হাদিস রয়েছে। এর দ্বারা এটা বোঝা যায় যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন শিক্ষানুরাগী। হাদিসে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'আমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।' তাই তিনি শিক্ষা, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক ও শিক্ষার ব্যাপকীকরণে সদা সচেষ্ট ছিলেন। বদরের যুদ্ধবন্দিদের তিনি মদিনার শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। জ্ঞান অন্বেষণের গুরুত্ব ও শিক্ষকের মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, 'যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?' (সূরা জুমার : ৯)
শিক্ষকের মর্যাদা প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা বলতে পার কি দানের দিক দিয়ে সর্বাপেক্ষা বড় দাতা কে? সাহাবারা উত্তর করলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই (সা.) অধিক অবগত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, দানের দিক দিয়ে আল্লাহই হচ্ছেন সর্বাপেক্ষা বড়। অতঃপর বনি আদমের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা বড় দাতা। আর আমার পর বড় দাতা হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে ইলম (জ্ঞান) শিক্ষা করবে এবং তার প্রচার-প্রসার করতে থাকবে। কিয়ামতের দিন সে একাই (দলবলসহ) একজন আমির অথবা (রাবির সন্দেহ) একটি উম্মত হয়ে উঠবে। (মিশকাত)
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে এটা স্পষ্ট যে, একজন শিক্ষকের মর্যাদা ও সম্মান আল্লাহতায়ালার দরবারে অনেক বেশি। দুনিয়ায় তার সম্পদ না থাকলেও প্রিয় নবী (সা.)-এর ভাষ্যানুযায়ী জগৎজোড়া তিনি দাতা হিসেবে খ্যাত। তাই আমাদের শিক্ষকদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো উচিত। কারণ শিক্ষকরা মানুষ তৈরির কারিগর। শিক্ষকরা জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। এক কথায় বলা যায়, শিক্ষক মানুষ চাষ করেন। যে চাষাবাদের মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে। পাশাপাশি পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র তার দ্বারা উপকৃত হয়।
একজন আদর্শবান শিক্ষক সমাজ বদলে ও গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। আদর্শ শিক্ষকই শুধু আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ ও রূপরেখা বা কাঠামো তৈরি করতে পারেন। এ জন্যই শিক্ষকতাকে অপরাপর পেশার মানদণ্ডে পরিমাপ করা যায় না বলে অনাদিকাল থেকে এটি একটি সুমহান পেশা হিসেবে সমাজ-সংসারে পরিগণিত। কারণ জ্ঞানই মানুষের যথার্থ শক্তি ও মুক্তির পথনির্দেশ দিতে পারে।
জ্ঞাননির্ভর সমাজ গঠনে প্রয়োজন মানুষ গড়ার কারিগর। তাই শিক্ষকদের পর্যাপ্ত পেশাগত স্বাধীনতা থাকা দরকার। এর পাশাপাশি যথার্থভাবে শিক্ষকদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
দেশব্যাপী শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও মর্যাদা সুরক্ষাসহ শিক্ষকদের জীবনের মান উন্নত করার ব্যাপারে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ফুরকানিয়া মাদ্রাসা, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথা ভাবতে হবে। এ ছাড়া সরকারি স্বীকৃতি না থাকলেও বেসরকারিভাবে দেশের প্রায় ১৫ হাজার কওমি মাদ্রাসাসহ নূরানি মাদ্রাসা ও হিফজ বিভাগের শিক্ষকদের কোন পদ্ধতিতে, কীভাবে সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে একীভূত করা যায় সেটা নিয়েও ভাবতে হবে; তাদেরও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। সমাজে নৈতিকতা ও ধর্মশিক্ষা বিস্তারসহ নিরক্ষরতা দূরীকরণে তাদেরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে এটা স্বীকার করতেই হবে। স্বীকৃতিহীন এসব শিক্ষকের কথা সমাজে অনালোচিতই থাকছে, যা সভ্য সমাজের জন্য পীড়াদায়ক ঘটনা। ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষকতা অতি সম্মানিত ও মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, সামাজিক দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমাদের সমাজে এমনকি জাতীয়ভাবে শিক্ষকদের তেমন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। ক্ষেত্রবিশেষ শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের নজরে দেখা হয়। বলতে লজ্জা হয়, দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে দেখা যায়। এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও অমানবিক কাজ। অথচ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই আমার আপন নয়।' এই হাদিসের আলোকে বলা যায়, যারা শিক্ষকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে তারা তো পরোক্ষভাবে প্রিয় নবী (সা.)-এর আপনজনদেরই তুচ্ছতাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখছে। আর প্রিয় নবী (সা.)-এর আপনজনদের সঙ্গে বিরূপ ধারণা পোষণকারী কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর রাসূলের (সা.) সুপারিশ লাভ থেকে বঞ্চিত হবে।
muftianaet@gmail.com
কোরআনুল কারিমে প্রথম নাজিলকৃত আয়াত আর উপরোক্ত হাদিস ছাড়াও শিক্ষাবিষয়ক অনেক হাদিস রয়েছে। এর দ্বারা এটা বোঝা যায় যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন শিক্ষানুরাগী। হাদিসে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'আমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।' তাই তিনি শিক্ষা, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক ও শিক্ষার ব্যাপকীকরণে সদা সচেষ্ট ছিলেন। বদরের যুদ্ধবন্দিদের তিনি মদিনার শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। জ্ঞান অন্বেষণের গুরুত্ব ও শিক্ষকের মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, 'যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?' (সূরা জুমার : ৯)
শিক্ষকের মর্যাদা প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা বলতে পার কি দানের দিক দিয়ে সর্বাপেক্ষা বড় দাতা কে? সাহাবারা উত্তর করলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই (সা.) অধিক অবগত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, দানের দিক দিয়ে আল্লাহই হচ্ছেন সর্বাপেক্ষা বড়। অতঃপর বনি আদমের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা বড় দাতা। আর আমার পর বড় দাতা হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে ইলম (জ্ঞান) শিক্ষা করবে এবং তার প্রচার-প্রসার করতে থাকবে। কিয়ামতের দিন সে একাই (দলবলসহ) একজন আমির অথবা (রাবির সন্দেহ) একটি উম্মত হয়ে উঠবে। (মিশকাত)
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে এটা স্পষ্ট যে, একজন শিক্ষকের মর্যাদা ও সম্মান আল্লাহতায়ালার দরবারে অনেক বেশি। দুনিয়ায় তার সম্পদ না থাকলেও প্রিয় নবী (সা.)-এর ভাষ্যানুযায়ী জগৎজোড়া তিনি দাতা হিসেবে খ্যাত। তাই আমাদের শিক্ষকদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো উচিত। কারণ শিক্ষকরা মানুষ তৈরির কারিগর। শিক্ষকরা জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। এক কথায় বলা যায়, শিক্ষক মানুষ চাষ করেন। যে চাষাবাদের মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে। পাশাপাশি পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র তার দ্বারা উপকৃত হয়।
একজন আদর্শবান শিক্ষক সমাজ বদলে ও গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। আদর্শ শিক্ষকই শুধু আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ ও রূপরেখা বা কাঠামো তৈরি করতে পারেন। এ জন্যই শিক্ষকতাকে অপরাপর পেশার মানদণ্ডে পরিমাপ করা যায় না বলে অনাদিকাল থেকে এটি একটি সুমহান পেশা হিসেবে সমাজ-সংসারে পরিগণিত। কারণ জ্ঞানই মানুষের যথার্থ শক্তি ও মুক্তির পথনির্দেশ দিতে পারে।
জ্ঞাননির্ভর সমাজ গঠনে প্রয়োজন মানুষ গড়ার কারিগর। তাই শিক্ষকদের পর্যাপ্ত পেশাগত স্বাধীনতা থাকা দরকার। এর পাশাপাশি যথার্থভাবে শিক্ষকদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
দেশব্যাপী শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও মর্যাদা সুরক্ষাসহ শিক্ষকদের জীবনের মান উন্নত করার ব্যাপারে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ফুরকানিয়া মাদ্রাসা, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথা ভাবতে হবে। এ ছাড়া সরকারি স্বীকৃতি না থাকলেও বেসরকারিভাবে দেশের প্রায় ১৫ হাজার কওমি মাদ্রাসাসহ নূরানি মাদ্রাসা ও হিফজ বিভাগের শিক্ষকদের কোন পদ্ধতিতে, কীভাবে সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে একীভূত করা যায় সেটা নিয়েও ভাবতে হবে; তাদেরও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। সমাজে নৈতিকতা ও ধর্মশিক্ষা বিস্তারসহ নিরক্ষরতা দূরীকরণে তাদেরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে এটা স্বীকার করতেই হবে। স্বীকৃতিহীন এসব শিক্ষকের কথা সমাজে অনালোচিতই থাকছে, যা সভ্য সমাজের জন্য পীড়াদায়ক ঘটনা। ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষকতা অতি সম্মানিত ও মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, সামাজিক দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমাদের সমাজে এমনকি জাতীয়ভাবে শিক্ষকদের তেমন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। ক্ষেত্রবিশেষ শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের নজরে দেখা হয়। বলতে লজ্জা হয়, দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে দেখা যায়। এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও অমানবিক কাজ। অথচ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই আমার আপন নয়।' এই হাদিসের আলোকে বলা যায়, যারা শিক্ষকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে তারা তো পরোক্ষভাবে প্রিয় নবী (সা.)-এর আপনজনদেরই তুচ্ছতাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখছে। আর প্রিয় নবী (সা.)-এর আপনজনদের সঙ্গে বিরূপ ধারণা পোষণকারী কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর রাসূলের (সা.) সুপারিশ লাভ থেকে বঞ্চিত হবে।
muftianaet@gmail.com
No comments