স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট-পরিকল্পনার মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে

রকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি মহতী উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলতে হয়। সরকার সীমিত আয়ের মানুষের জন্য রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এফ ব্লকে ১৬ তলাবিশিষ্ট মোট ১২টি ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছে। এতে স্বল্প আয়ের এক হাজার ২০টি পরিবার ঢাকা শহরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে। এই ভবনগুলোর মধ্যে ছয়টির প্রতি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ৮০০ বর্গফুট এবং বাকি ছয়টিতে হবে এক হাজার বর্গফুট করে। ভবনগুলো নির্মাণের বিভিন্ন দিক


অনুমোদনের জন্য রবিবার মন্ত্রিপরিষদের ক্রয়-সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। ঢাকায় আবাসন সংকট বহুকালের। যদিও সরকারের কিছু প্রকল্প বিভিন্ন সময় দেখা গেছে; কিন্তু তা নিয়ে বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনাও চোখে পড়েছে। এই শহর যতটা দ্রুত বিস্তৃত হয়েছে, ততটা যত্ন নিয়ে কোনো দিন কোনো সরকারের পক্ষ থেকে আবাসন সমস্যা মেটানো সম্ভব হয়নি। এখানে বাণিজ্যিক কারণে যেসব বাড়িঘর উঠেছে, তাতে যেমন বিল্ডিং কোড মানা হয়নি, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে ব্যাপকভাবে। চরম ঘনবসতির কারণে ঢাকা শহরে দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিত দালানকোঠা তৈরি হয়েছে। ফলে পরিকল্পিত আবাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে বাড়িভাড়া আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় এবং বাড়িওয়ালাদের অধিক অর্থ আদায়ের মানসিকতার কারণে এই মহানগরীতে স্বল্প ও মধ্য-আয়ের মানুষের টিকে থাকা এক কঠিন লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের এই পরিকল্পনা কিছুটা হলেও আবাসন সমস্যা মেটাবে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে মনে রাখতে হবে, এ ভবন ক্রয়ের সুযোগ যেন সত্যিই স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে পেঁৗছে। আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা বলছে, এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই প্রভাবশালী মহলের পেটে চলে যায়। রাষ্ট্রের সেবা দরিদ্র মানুষ আর ভোগ করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে তেমনটি হলে সেবা বিষয়ে প্রশংসার বদলে দুর্নামের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে অধিক। দ্বিতীয়ত, কারা এই ভবন নির্মাণ করবেন? টেন্ডারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখা, সময়মতো ভবন হস্তান্তর করা ইত্যাদি নানা ধরনের দায়িত্বশীল কাজগুলো সরকারকে স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। যাদের এ ফ্ল্যাটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে, তারা সত্যিই ফ্ল্যাট পাওয়ার জন্য উপযুক্ত কি না, সেটাও সতর্কতার সঙ্গে নজরে রাখতে হবে। তাহলেই এই ফ্ল্যাট তৈরির লক্ষ্য অর্জিত হবে। স্বচ্ছভাবে, অবাধে এই ফ্ল্যাটগুলো হস্তান্তর সম্পন্ন করা গেলে কালক্রমে এ ধরনের আরো অধিক প্রকল্পে সরকার ও জনগণ উৎসাহ বোধ করবে।

No comments

Powered by Blogger.