দুর্নীতি-ভারতে রাজনৈতিক ঝড়ের পূর্বাভাস by সুভাষ সাহা

ভারতের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি আমাদেরসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ওপরই প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে। তবে যে-ই ক্ষমতায় আসুক বা থাকুক আমাদের জন্য ভারতে একটি স্থিতিশীল সরকার উপকারী। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সমস্যাবলি সমাধানে ইতিমধ্যে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সরকার যতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারব রোমান রাষ্ট্রনায়ক-দার্শনিক সিসেরো তার সময়ে সেখানে দুর্নীতি ও পাপাচার দেখে মনস্তাপ


প্রকাশ করেছিলেন। ভারতে সীমাহীন দুর্নীতি ও রাজনীতিবিদদের নীতিহীনতার ঘটনাগুলো একের পর এক ফাঁস হতে থাকার পর ক্লিন ইমেজের মনমোহন সিং কী করবেন সেটাই এখন জিজ্ঞাসা চিহ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
ভারতে একের পর এক দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হওয়ায় মনমোহন সরকারের অবস্থা ইতিমধ্যে অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। সরকার শেষ পর্যন্ত পাঁচ বছরের পুরো মেয়াদ ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে কি-না এ নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে। সরকারের দিক থেকে আশঙ্কার দিকটি হলো_ এসব দুর্নীতির অভিযোগ সাধারণ মানুষ অনেকাংশেই বিশ্বাস করে এবং এই সত্যটি বিভিন্ন সংস্থার জরিপেও প্রকাশ পেয়েছে। দুর্নীতির কলঙ্ক থেকে ক্লিন ইমেজের প্রধানমন্ত্রীও রেহাই পাচ্ছেন না। তিনি কেন জেনেশুনে এতকাল এসব দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছেন সে প্রশ্নও বড় হয়ে উঠছে। বিরোধীরা তো এ নিয়ে তাকে এখনই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাচ্ছে।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত সরকারের বিপক্ষে গড়াতে থাকায় ঝোপ বুঝে কোপ মারার জন্য এখন অনেকেই নিজ নিজ অস্ত্রে শান দেওয়া শুরু করেছে। বাঘে-মোষে এক ঘাটে পানি খাওয়ার মতো করে জানি দুশমন কমিউনিস্ট আর মধ্য-দক্ষিণপন্থি বিজেপি মনমোহন সিংয়ের সরকারের বিরুদ্ধে গলা মেলাতে শুরু করে দিয়েছে। ভারতীয় রাজনীতি সম্পর্কে যারা খোঁজখবর রাখেন তাদের কাছে এটা বিরাট আকারের রাজনৈতিক ঝড়ের পূর্বাভাস। অতীতে বাম-দক্ষিণ যখনই এক সুরে কথা বলেছে, তখনই দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে। বিভিন্ন সময়ে ভারতে কংগ্রেস সরকারের অবসান ও অকংগ্রেসি সরকারগুলোর অধিষ্ঠান চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে এই একই ফল বেরিয়ে আসবে। আর এখন তো কংগ্রেস দিন দিন বিভিন্ন রাজ্যে তার পাওয়ার বেস হারাচ্ছে। সর্বশেষ পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ূ, বিহার, আসাম ও অন্যান্য রাজ্যের নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট হার (সব জায়গায় বিরোধী, আঞ্চলিক, সম্প্রদায়গত ও জাতপাতগত সংগঠনের কাছে কংগ্রেস জমিন হারাচ্ছে) এই আশঙ্কারই প্রতিফলন। ভবিষ্যতে তাদের ভোট হার আরও কমতে পারে। কারণ দেশে যখন দ্রুত একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী দ্রুত বিকাশ লাভ করছে, তখন দলটি সেই পরিবারতান্ত্রিক শাসনকেই এখনও তাদের নির্বাচন ও রাজনৈতিক যুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার করেছে। অথচ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারতান্ত্রিক শাসনের বিরোধী। কারণ পরিবারতান্ত্রিক শাসন সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে না একশ্রেণীর তল্পিবাহক শ্রেণীর ওপর তাকে নির্ভর করতে হয় বলেই। এটি এই শাসনের অন্যতম বাজে দিকও বটে। অথচ শিক্ষিত মধ্যবিত্তের কাছে সুশাসন ও গণতন্ত্র অব্যাহত উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে সরকার উত্তরোত্তর তার আমজনতা নীতি-অবস্থান ত্যাগ করে করপোরেটমুখী হয়ে পড়ায় রাজনৈতিক দল হিসেবে কংগ্রেস আমজনতার সমর্থনও আগের মতো পাচ্ছে না। সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলমানদের ব্যাপারে দ্ব্যর্থক ভূমিকা নেওয়ায় তারা এখনও কংগ্রেসের নিশ্চিত ভোটব্যাংক নয়। এ অবস্থায় দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিজাত জনঅসন্তোষ সরকারের শিরে শনি হয়ে অবস্থান করছে।
অনেকেরই জানা থাকার কথা, এখনও কেন্দ্রে নানা জোড়াতালি দিয়ে সংখ্যালঘু সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মনমোহন সিং। কংগ্রেসের জোট সঙ্গীসহ লোকসভায় মোট আসনসংখ্যা সাকল্যে ২৬০টি। বিভিন্ন উপলক্ষে নানা প্রলোভন দেখিয়ে এতদিন কখনও মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি (অর্থবিল পাসের সময়), কখনও মোলায়েম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি (ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি সংসদে পাস করানোর সময়) বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলের সমর্থন নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ইউপিএ সরকার এতদিন কেন্দ্রে শাসনদণ্ড কব্জায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এখন ২জি-স্পেকট্রাম, কমনওয়েলথ গেমস,অর্থের বিনিময়ে ভোট ক্রয়সহ নানা ক্ষেত্রের লাখ লাখ কোটি রুপির দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় এবং এসব দুর্নীতির সঙ্গে সরকারের মন্ত্রী থেকে নীতিনির্ধারকদের জড়িত থাকার অভিযোগ আসার পর সরকারের কোর সংগঠন কংগ্রেসেই মতানৈক্য সৃষ্টির আলামত দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে আন্না হাজারের দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের তোপও মনমোহন সরকারের ওপর পড়ছে। সম্প্রতি আন্না হাজারে ঘোষণা দিয়েছেন যে, কংগ্রেস দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংসদে লোকপাল বিল পাস না করালে আগামী নির্বাচনে তারা ভোটারদের প্রতি কংগ্রেস প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাবেন। তার ওপর, সরকার অভ্যন্তরীণ শাসন সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
একই সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর অসুস্থতা শাসক দলে নেতৃত্ব সংকটও তৈরি করছে। দল ও সরকারের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি হিসেবে রাহুলকে তুলে ধরার চেষ্টা হলেও তার নেতৃত্বগুণ নিয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে ইতিমধ্যে। নেতৃত্ব প্রশ্নে মিডিয়া তাকে এভারেজের চেয়ে বেশি মার্কস দেয়নি। এমনকি কংগ্রেস সমর্থিত মিডিয়াও তার নেতৃত্বগুণ সেভাবে এখনও আবিষ্কার করতে পারেনি। এ অবস্থায় সোনিয়ার পর রাহুল না প্রিয়াংকা_ এ প্রশ্নেরও মীমাংসা এখনও হয়নি ধরে নেওয়া যায়। সোনিয়া যদি বাঙালি মায়েদের মতো পুত্রস্নেহে অন্ধ হয়ে রাহুলকেই ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি করার জন্য গোঁ ধরে থাকেন, তাহলে দলের ভবিষ্যৎ ঝরঝরা হয়ে যেতে পারে। তিনি নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন যে, আন্না হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সময় রাহুল তেমন নেতৃত্বগুণ প্রদর্শন করতে পারেননি। অথচ মায়ের অবর্তমানে তখনই তার নেতৃত্ব-যোগ্যতা প্রকাশের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। বরং রাহুল দেশে ফিরেই ওই আন্দোলন সম্পর্কে যে বক্তব্য দেন তা মানুষের দৃষ্টিই কাড়তে সক্ষম হয়নি।
আর এখন তো দুর্নীতির ইস্যুতে সরকার প্রায় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়তে যাচ্ছে। যারা এতদিন বিভিন্ন ইস্যুতে সমর্থন দিয়ে আসছিল তারাও আর সরকারকে সঙ্গ দেবে বলে মনে হয় না। বরং কংগ্রেসের অভ্যন্তরেই এখন বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধ দেখা দেবে। ইতিমধ্যে ২জি-স্পেকট্রাম দুর্নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করা অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি নথি নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ওই নথিতে লেখা হয়েছিল, চিদাম্বরম অর্থমন্ত্রী থাকাকালে 'আগে এলে আগে পাবেন' ভিত্তিতে স্পেকট্রাম বণ্টনের বিষয়টি জানতেন। চাইলে বিষয়টি আটকানোও তার পক্ষে সম্ভব ছিল। বর্তমান অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সম্মতিতে পাঠানো এই নোট ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই আলোড়ন তৈরি হয়। আর এই নোটটি তথ্য অধিকার আইনের কল্যাণে জনতা দলের সুব্রামনিয়াম স্বামীর দৌত্যে এখন প্রকাশ্যে এসেছে। আর এরই জেরে কংগ্রেসের প্রভাবশালী মন্ত্রী চিদাম্বরমের পদত্যাগের দাবি জোরালো হলো। একই সঙ্গে তাকে জেলে পোরার দাবিও হালে পানি পেল। ডিএমকে নেতা করুণানিধির প্রিয় কন্যা কানিমুঝি ও একই ঘটনায় দলের সাবেক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজাকে এখনও কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে যখন বিনিদ্র প্রহর গুনতে হচ্ছে, তখন কংগ্রেসের মন্ত্রীরা মন্ত্রিত্ব বজায় রাখেন কী করে এবং বিচারের দায়ওবা এড়ান কী করে_ এ প্রশ্ন ডিএমকে নেতার মধ্যে জাগবেই; আর এর মীমাংসা না হলে তার দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ত্যাগেরও হুমকি দিতে পারে। অথচ ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে কংগ্রেসের ডিএমকে দলীয় লোকসভা সদস্যদের সমর্থন একান্তভাবেই প্রয়োজন।
এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের নোটটি নিয়ে কংগ্রেসের দুই নীতিনির্ধারক মন্ত্রীর মধ্যে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বিরোধ বেধে না যায়, সেটা সামাল দিতে সোনিয়া গান্ধী মাঠে নেমে পড়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছেন। প্রণব ও চিদাম্বরমকে একান্তে ডেকে নিয়ে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করেছেন।
সোনিয়ার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও নেতাদের বৈঠকের পর বলা হচ্ছে, এ নিয়ে দলের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। সরকারের মধ্যেও বিরোধ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন মনমোহন সিং নিজেই। কিন্তু এরপরও মানুষের মনের সন্দেহ সহসা দূর হওয়ার নয়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চিদাম্বরমকে যদি শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয় এবং তাকে জেলে যেতে হয় তাহলে সরকারের আর মুখ দেখানোর জো থাকবে না। বিরোধীরা তখন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং তাকেও একই ঘটনায় বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে। সোনিয়া গান্ধী কি পারবেন সে ধরনের একটা বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার হাত থেকে সরকার ও দলকে রক্ষা করতে?
এবার গান্ধী পরিবারকে সেই কঠিন পরীক্ষাও দিতে হবে। আর এই পরীক্ষায় তেমন কাউকে কাছে পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ। বিদেশিদের মধ্যে মনমোহন সরকারের সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র আন্না হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকে প্রকারান্তরে সমর্থন দিয়ে তাদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার এক তরিকা দেখিয়েছে। সর্বশেষ মার্কিন কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের (সিআরএস) রিপোর্টে বিতর্কিত হিন্দুত্ববাদী নেতা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভারতের আগামী গুরুত্বপূর্ণ প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার উল্লেখ করার ঘটনাটি মনমোহন সিং সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে ওয়াশিংটনের সংশয়ের প্রতিফলন নয় কি?
ভারতের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি আমাদেরসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ওপরই প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে। তবে যে-ই ক্ষমতায় আসুক বা থাকুক আমাদের জন্য ভারতে একটি স্থিতিশীল সরকার উপকারী। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সমস্যাবলি সমাধানে ইতিমধ্যে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সরকার যতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে, একটি ভঙ্গুর সরকারের পক্ষে তা সম্ভব নাও হতে পারে। আর অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে সরকার বেশি মাত্রা ব্যতিব্যস্ত থাকলে তাদের পক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয়, আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ইস্যুর প্রতি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নজর দেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় দু'দেশের প্রবল ইচ্ছা সত্ত্বেও তিস্তা চুক্তি সম্পাদন সম্ভব না হওয়ার ঘটনাটি এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। অভ্যন্তরীণভাবে সিজড একটি সরকার এভাবে জোড়াতালি দিয়ে ক্ষমতা চালিয়ে যেতে চাইতে পারে না বেশিদিন। ভারতের মতো বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের জন্য এটা সুখকরও নয়। এ অবস্থায় নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন করে জনতার ম্যান্ডেট গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ইউপিএ সরকার সম্ভবত গণতন্ত্রের সেই অবশ্যম্ভাবী নিরাপদ পথই বেছে নিতে যাচ্ছে বলেই মনে হয়।

সুভাষ সাহা : সাংবাদিক
 

No comments

Powered by Blogger.