উপজেলা চেয়ারম্যান-আইনানুগ সুবিধা নিশ্চিত হোক

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার সরকারের। অঙ্গীকার পূরণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। কিন্তু নির্বাচনের পরই দেখা দেয় বিপত্তি। সেই বিপত্তি হালে ব্যাপকতর হয়েছে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৫৮ জন উপজেলা চেয়ারম্যানের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার মধ্য দিয়ে। সম্প্রতি এই ১৫৮ জন তাঁদের সমিতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব-কর্তৃত্ব নিয়ে যে সমস্যা


সৃষ্টি হয়, তার অবসান হয়নি বলেই তাঁদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। শুরু থেকেই আইনগত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়েছেন তাঁরা। সরকার আইনগত বিপত্তিগুলো সারিয়ে তোলার জন্য প্রণয়ন করে স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) আইন। কিন্তু সেই আইনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল ব্যাপক। আলোচনা-পর্যালোচনার পর সরকার এ সম্পর্কে ভেবে দেখার আশ্বাস দেয়। সরকার একমত পোষণ করে, আইনটি সংশোধন হওয়ার প্রয়োজন আছে। একই সঙ্গে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়, আইনটি শিগগিরই সংশোধন করা হবে। কিন্তু প্রায় দেড় বছর হলো আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। ত্রুটিপূর্ণ একটি আইন এখনো ঝুলে আছে উপজেলা প্রশাসনের ওপর। ফলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও এমপির সঙ্গে তিন ধারায় মতানৈক্যে ফুঁসে উঠছেন। সাধারণত উপজেলায় যে ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দপ্তর রয়েছে, সেসব স্থানেও তাঁদের ক্ষমতা দুর্বলতম করা হয়েছে। স্থানীয় উন্নয়ন ধারায় সংগত কারণেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁদেরই কর্তৃত্ব থাকার কথা। কিন্তু তাঁদের কর্তৃত্ব নেই বললেই চলে। এ পরিস্থিতিতে উপজেলা চেয়ারম্যানরা যেভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন, তাতে বড় ধরনের আন্দোলন সংঘটিত হলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে দৃঢ়তর করার ব্যাপারে আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। সরকার সেই বিধান মানতে বাধ্য। এমন অবস্থায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের অযাচিতভাবে প্রশাসনের চোখ রাঙানোর মুখে পড়তে হবে, এটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এমপিরা সংগত কারণেই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখেন। তাঁদের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে উপজেলা চেয়ারম্যান হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। তেমনি উপজেলার উন্নয়নের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের যে কর্তৃত্ব থাকা উচিত, তাতেও এমপিদের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। সে ক্ষেত্রে কিছু উন্নয়নমূলক কাজ এমপিদের হাতে রাখার ব্যবস্থা করলেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু সরকার পরিচালনার সুযোগ এমপিদের হাতে থাকে বলে তাঁরা যদি উপজেলা চেয়ারম্যানদের কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করেন, তাহলে রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নও ব্যাহত হতে বাধ্য। সুতরাং এ মুহূর্তেই উপজেলা চেয়ারম্যানদের যথাযথ মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) আইনকে দ্রুত সংশোধন এবং তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.