ঋণখেলাপি রোধ-পৃথক আদালত গঠন জরুরি

ব্যাংকে তারল্য সংকট থেকে রক্ষা পাওয়া এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখতে হলে স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ জরুরি। ঋণের স্বাভাবিক অবস্থা অর্থনৈতিক ও উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করে। কিন্তু আমাদের দেশে এর ব্যত্যয় ঘটে প্রায় নিয়মিতই। দেশের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করতে চান না। নিজেদের প্রয়োজনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে থাকেন এসব ব্যক্তি। তাঁদের সংখ্যা মোট ঋণগ্রহীতার তুলনায় সামান্য হলেও গৃহীত


ঋণের টাকার পরিমাণ কিন্তু কম নয়। পাশাপাশি সেই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি হওয়ার বয়সও কম নয়। এদের মধ্যে কালেভদ্রে দু-একটি ক্ষেত্র হয়তো থাকতে পারে, যারা প্রকৃত অর্থেই সিক ইন্ডাস্ট্রির আওতায় পড়ে। কিন্তু সেগুলোর বেশির ভাগই প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের মানসিকতাই ঋণ পরিশোধে তাদের পিছিয়ে রাখে। এর পরও তাদের ঋণ আদায়ে সরকার খুব একটা আন্তরিক হয় না। সরকারগুলো তাদের পক্ষাবলম্বন করে থাকে। অন্যদিকে আইনি দুর্বলতার কারণে ঋণখেলাপিরাও বেঁচে যায়। আদালতও তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। বরং বছরের পর বছর সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটে। ফলে নতুন ঋণখেলাপি সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এতে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, উৎপাদনশীলতাও শ্লথ হয়ে পড়ে।
আমাদের দেশে প্রচলিত আইনেই বিধান আছে, ঋণখেলাপিদের কেউ ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। কিন্তু বাংলাদেশের ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রে কার্যত এই বিধান যেন কার্যকর হয় না। এমন অনেক ব্যাংক আছে, যাদের পরিচালকদের মধ্যে ঋণখেলাপিরাও রয়ে গেছেন। তাঁদের কেউ কেউ আবার আদালতের শরণাপন্ন হন শুধুই স্থগিতাদেশ জারি করার প্রয়োজনে। আর একবার যদি স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়ে যায়, তাহলে বছরের পর বছর তা ঝুলতে থাকবে, তার আর সুরাহা হবে না। এ পরিস্থিতিতে ঋণখেলাপি থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে দ্রুত আলাদা বিচারালয় প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে এর আগে দাবিও জানানো হয়েছিল। সরকার এই দাবির যৌক্তিকতা মেনে নিলেও অজানা কারণে আজ পর্যন্ত আলাদা আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। আদালতের স্থগিতাদেশ পাওয়ায় ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে যাঁরা খেলাপি হয়েছেন, তাঁদের আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণখেলাপি হিসেবেও আখ্যায়িত করার কোনো সুযোগ নেই। অর্থনীতির প্রয়োজনে এবং দেশের কল্যাণের জন্য ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতা রোধ করতে হবে। এর জন্য আইন পরিবর্তন করা অপরিহার্য। শক্তিশালী আইন প্রবর্তিত হলে ঋণগ্রহীতাদের পক্ষে অসৎ পথ গ্রহণ করা সহজ হবে না।

No comments

Powered by Blogger.