ইলিশ সংরক্ষণ-সময়ে এক ফোঁড় দিন
উপকূলীয় এলাকার সাত হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমায় গতকাল থেকে পূর্ণিমার আগে-পরের ১০ দিন ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জাতীয় মাছটি সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতাই স্পষ্ট করেছে। আমরা জানি, এপ্রিল ও মে মাসে জাটকা না ধরা সম্পর্কিত ছয় দশক পুরনো আইনটিও গত কয়েক বছর ধরে প্রয়োগ করা হচ্ছে। পদ্ধতিগত কিছু সমালোচনা থাকলেও এর ফলে দেশের ইলিশ উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাবই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নতুন সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে
বলতে হবে সংশ্লিষ্টদের বাস্তববুদ্ধি ও নমনীয়তার কথাও। ডিম্ববতী ইলিশ রক্ষায় ২০০৬ সাল থেকে অক্টোবরের শেষার্ধে যদিও এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল; ইতিমধ্যে তিথি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় তা কাজে আসছিল না। নতুন সময়সীমা সুফল দেবে বলে প্রত্যাশা। তবে শেষ মুহূর্তে অনেকটা তাড়াহুড়া করে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে ইতিমধ্যে সাগরে চলে যাওয়া জেলেরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তেমনি কর্মসূচির সাফল্য নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে। এই সময় অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে বিষয়টি মনে রাখা সঙ্গত হবে। আবার নিষেধাজ্ঞা যাতে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোতে পরিণত না হয়, তাও মনে রাখা জরুরি। আমরা আশা করি, মা ইলিশ রক্ষার কর্মসূচি বাস্তবায়নে আগামী বছর থেকে যথেষ্ট প্রচারণা চালানো এবং প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য জেলেদের আরও সময় দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ইলিশ সংরক্ষণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নদী দূষণ রোধ করার ব্যাপারে আমরা আবারও জোর দিতে চাই। জোর দিতে হবে ইলিশের স্থায়ী অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে। ইলিশের বিচরণ ও প্রজননের জন্য নদীতে যথেষ্ট প্রবাহ থাকাও জরুরি। কিন্তু একদিকে যেমন নদ-নদী প্রবাহ হারাচ্ছে, অন্যদিকে দূষণও বাড়ছে। দূষণ ও প্রবাহহীনতার কবল থেকে যদি এখনই নদী মুক্ত না হয়, কেবল জাটকা বা মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচি দীর্ঘমেয়াদে কাজে আসবে না। এখন যদি আমরা এক ফোঁড় দিতে না পারি, অসময়ে দশ ফোঁড় দিয়েও কিছু হবে না।
No comments