নোবেলে অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট by একরামুল হক শামীম

বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আগামী ৭ অক্টোবর। কে পেতে যাচ্ছেন এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার_ তা নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের নানা ফোরামে নানা রকমের বক্তব্য উঠে আসছে। সংবাদমাধ্যমগুলোও সম্ভাব্য বিজয়ীদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাচ্ছে। এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কারের সঙ্গে শুরু থেকেই 'আরব জাগরণের' নাম জড়িয়ে গেছে। অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান


ক্রিস্টিয়ান বের্গ হার্পবিকেন স্বীকার করে নিয়েছেন যে, এ বছর নোবেলের জন্য 'আরব জাগরণ' সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি এরই মধ্যে জানিয়েছে, এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়ন জমা পড়েছে। গত বছর মোট ২৩৭টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল। এ বছর জমা পড়েছে ২৪১টি বৈধ মনোনয়ন। এর মধ্যে ব্যক্তি ও সংগঠন রয়েছে। ৫৩টি মনোনয়ন জমা পড়েছে সংগঠনের পক্ষে।
এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের সম্ভাব্য বিজয়ীদের নিয়ে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন বিকল্প মিডিয়ার ব্যবহারকারী। ব্লগ, ফেসবুক ব্যবহারকারী কোনো একজন এবারের নোবেল পেয়ে যেতে পারেন। আরব গণজাগরণের নেতৃত্ব যারা দিয়েছেন তাদের মধ্য থেকেই একজনকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হবে_ মনে করছেন অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান ক্রিস্টিয়ান বের্গ হার্পবিকেন। তার মতে, আরব গণজাগরণের মাধ্যমে তিউনিসিয়া, মিসর, লিবিয়াতে একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়েছে। এসব গণজাগরণের শুরু হয়েছে ব্লগার, ফেসবুক অ্যাকটিভিস্টদের মাধ্যমে।
তিউনিসিয়ার ব্লগার লিনা বেন মেহেনি্নর কথা আলোচনায় এসেছে। তিউনিসিয়ার জেসমিন বিপ্লবে তার 'অ্যা তিউনিসিয়ান গার্ল' ব্লগসাইটটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ফলে তিনি এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন। ২৭ বছর বয়সী লিনা তিউনিস ইউনিভার্সিটির টিচার অ্যাসিস্ট্যান্ট। লিনা তার ব্লগে সে সময়ের তিউনিসিয়ার অবস্থা তুলে ধরে সমালোচনা করেছিলেন।
মিসর বিপ্লবের সঙ্গে জড়িত দু'জন ফেসবুক অ্যাকটিভিস্টও রয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন তালিকায়। ইসরা আবদেল ফাত্তাহ ও আহমেদ মাহের মিলে ২০০৮ সালে ফেসবুকে 'এপ্রিল ৬ ইয়ুথ মুভমেন্ট' নামে একটি গ্রুপ খুলেছিলেন। এই গ্রুপটিই মিসর বিপ্লবের শুরুর দিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। মিসর বিপ্লবের অহিংস আন্দোলন নীতি ঠিক করে দিয়েছিল এই গ্রুপ। ফলে ইসরা আবদেল ফাত্তাহর নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মিসরের তাহরির স্কয়ারের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরেকটি নাম। তিনি ওয়ায়েল গনিম। কাজ করেন গুগলে। তাহরির স্কয়ারের আন্দোলন সংগঠনে মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ফলে তিনিও নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন।
এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়নে রয়েছে আরও কিছু নাম। তারা হলেন আফগান মানবাধিকার কর্মী সিমা সামের, লিবিয়ার অ্যাকটিভিস্ট লেমাহ গোবোয়েহ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নামও আছে মনোনয়ন তালিকায়। জানা গেছে, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জও মনোনয়ন পেয়েছেন।
দেখা যাচ্ছে, এ বছরের মনোনয়ন তালিকার আলোচিতদের মধ্যে ফেসবুক ও ব্লগের মতো বিকল্প মিডিয়ার ব্যবহারকারীরাই এগিয়ে। হয়তো এবার নোবেল পেয়ে যেতে পারেন কোনো ব্লগার কিংবা কোনো ফেসবুক অ্যাকটিভিস্ট। ব্লগার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলে তা সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্লগারদেরও অনুপ্রাণিত করবে। ব্লগাররা মতপ্রকাশে আরও সোচ্চার হবেন। অন্যদিকে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর ব্যবহারকারীরাও আগ্রহী হবেন নিজেদের মতামতগুলো নিঃসংকোচে তুলে ধরতে।
 

No comments

Powered by Blogger.