ইতিউতি-টয় স্টোরি by আতাউস সামাদ
আপেলটার
একদিক খানিকটা খাওয়া হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত পার্সোনাল কম্পিউটার
কম্পানির লোগো এটি। কম্পানির নাম Apple Computer (অ্যাপল কম্পিউটার)।
তথ্যপ্রযুক্তিকে সারা দুনিয়ায় ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিল। একটা ছোট স্যুটকেসের
সমান এই যন্ত্র। তারপর পাতলা অ্যাটাশি কেইসের মতো ল্যাপটপ এবং সব শেষে
আমাদের ছোটবেলার (১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশকে) স্লেটের সমান ipad (আইপ্যাড)।
স্লেটে লিখতে একটা স্লেট পেনসিল লাগত। আইপ্যাডে লিখতে হাতের একটা আঙুল
লাগে, যা দেখতে পাওয়া যায় এবং ছুঁতে পাওয়া যায়। প্রাণিকুলের এই ক্ষমতাকে
প্রযুক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে খুব সহজে সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা ও কাজ করা
যাবে_এমন ধারণা নিয়ে গবেষণা ও ডিজাইনিং করে যিনি আইপ্যাড সৃষ্টি করেন, তিনি
স্টিভ জবস। প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সারে আক্রান্ত এই মানুষটি গত বুধবার
মাত্র ৫৬ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
স্টিভ
জবস ২০০৪ সালে জানতে পারেন যে তাঁর ক্যান্সার হয়েছে। ২০০৫ সালের ১২ জুন
তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের
সমাবর্তন উৎসবে মূল ভাষণ দেন। বক্তৃতাটি ছিল ছোট, তবু তিন ভাগে ভাগ করা।
স্টিভ জবস বলেছিলেন, বক্তৃতা নয়, তিনি বস্তুতপক্ষে তিনটি গল্প বলবেন। এর সব
কয়টিই তাঁর নিজের জীবন নিয়ে। ভাষণের শেষ গল্পটি মৃত্যু সম্পর্কে তাঁর
নিজের ধারণা নিয়ে।
মৃত্যুচিন্তা সম্পর্কে স্টিভ জবস ওই ভাষণে মন্তব্য করেছেন, 'কেউ মরতে চান না। এমনকি যাঁরা স্বর্গে যেতে চান, তাঁরাও সেখানে পৌঁছার জন্য মারা যেতে চান না। তবু মৃত্যু হচ্ছে এমন গন্তব্য, আমরা সবাই যার অংশীদার। এই গন্তব্য কোনো দিন কেউ এড়াতে পারেনি এবং তা-ই হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ সম্ভবত মৃত্যুই হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে সেরা আবিষ্কার। এটা (মৃত্যু) জীবনের পরিবর্তনের মাধ্যম। এটা পুরনোকে সরিয়ে দিয়ে নতুনের জন্য পথ করে দেয়। এই মুহূর্তে তোমরা হচ্ছ নতুন, তবে অদূর-ভবিষ্যতে তোমরা ক্রমেই বুড়ো হতে থাকবে এবং তোমাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। এ রকম নাটকীয়ভাবে বর্ণনা করলাম বলে আমি দুঃখিত, কিন্তু যা বলেছি তা সত্য।'
(No one wants to die. Even people who want to go to heaven don�t want to die to get there. And get death is the destination we all share. No one has ever escaped it. And that is as it should be, because death is very likely the single best invention of life. It is Life�s change agent. It clears out the old to make way for the new. Right now the new is you, but some day not too long from now, you will gradually become the old and be cleared away. Sorry to be so dramatic, but it is quite true.)
Old order changeless yielding place to the new. (নতুনকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে পুরনো ব্যবস্থা বদলে যায়) এই ইংরেজি প্রবচনটি যাঁরা আজও মনের কোঠায় ধরে রেখেছেন, তাঁদের কেউ হয়তো বলতে পারেন, স্টিভ জবস যা বলেছেন আর ওই পুরনো কথাটা তো প্রায় একই। ঠিক তা নয়, কারণ স্টিভ জবস মৃত্যুকে জীবনের সেরা আবিষ্কার বর্ণনা করে মহিমান্বিত করেছেন এবং একে পরিবর্তনের মাধ্যমে আখ্যা দিয়ে এর গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন।
তবে মৃত্যু নিয়ে মন্তব্য করেই তিনি তাঁর কথা শেষ করেননি। এর পরপরই তিনি বলেছেন, 'তোমাদের সময় সীমিত। কাজেই অন্য কারো জীবনকে তোমার করে (অর্থাৎ অনুকরণ করে) সময় নষ্ট করো না। প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত চিন্তাধারার ফাঁদে আটকে যেয়ো না; কারণ তা হবে অন্যের চিন্তার ফসল নিয়ে জীবন যাপন করা। অন্যদের মতামতের শোরগোলকে তোমার অন্তরের কণ্ঠকে ডুবিয়ে দিতে দিয়ো না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তোমার নিজের হৃদয় ও নিজের অনুভূতির মাধ্যমে অর্জিত স্বতঃস্ফূর্ত জ্ঞানকে অনুসরণ করার সাহস রেখো। তারা হৃদয় ও অন্তরের জ্ঞান কোনো না কোনোভাবে এখনই জানে তুমি কী হতে চাও। অন্য সব কিছুই গৌণ। (Your time is limited, so don�t waste it living someone else�s life. Don�t be trapped by dogma- which is living, with the results of other people�s thinking. Don�t let the noise of others opinions drown out your own inner voice. And most important, have the courage to follow your heart and intuition. They somehow already know what you truly want to become. Everything else is secondary.) স্টিভ জবস নিজের কাজ দিয়ে তাঁর চিন্তার সারবত্তা প্রমাণ করেছেন। অ্যাপল কম্পিউটার কম্পানি দারুণভাবে সফল হওয়া সত্ত্বেও এর ব্যবসায়িক নীতি কী হবে, সেই বিতর্কে মতপার্থক্যের দরুন তাঁকে ওই প্রতিষ্ঠান ছাড়তে হয়। স্টিভ জবসের নিজের জবানিতেই তাঁর পরের পাঁচ বছরে তিনি প্রথমে Next নামে একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন আর স্টার ওয়ার নির্মাতা জর্জ লুকাসের কাছ থেকে Pixar নামের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান কিনে নিয়ে এটিকে বিশাল এক কম্পানিতে পরিণত করেন। তার বদলে স্টিব জবস হয়ে যান ডিজনির সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার। Pixar-এর মূল অংশ হচ্ছে একটা অ্যানিমেশন স্টুডিও এবং এই স্টুডিও তৈরি করে বিখ্যাত অ্যানিমেশন ফিচার ফিল্ম Toy Story (টয় স্টোরি)। এই ছবিটি কার্টুন ও অ্যানিমেশন ছবির জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়। পরে ডিজনি স্টুডিও Pixar-এর স্বত্বাধিকার কিনে নেয় স্টিভ জবসের কাছ থেকে। আর তার Next এখন অ্যাপল কম্পিউটার কম্পানির প্রধান স্তম্ভ।
Pixar ও Next প্রতিষ্ঠা করার সময়টা সম্পর্কে স্টিভ জবস স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বলেছেন, 'আমি তখন বিষয়টাকে এমনভাবে দেখতে পাইনি। অ্যাপল থেকে বহিষ্কৃত হওয়াটা আমার জীবনে সবচেয়ে ভালো ঘটনা হয়ে থাকতে পারে। সফল হওয়ার যে ওজন বইছিলাম, তা নবাগত হওয়ার ভারশূন্যতায় এবং সব কিছু সম্পর্কে কম নিশ্চিত হওয়ার মানসিকতায় পরিবর্তিত হলো। আর তা আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল সময়টাতে ঢোকার জন্য মুক্ত করে দিয়েছিল।' (I didn�t see it then, but is turned out that getting fired from Apple was the best thing that could have even happened to me. The heaviness of being successful was replaced by the lightness of being a beginner again, less sure about everything. It freed me to enter one of the most creative periods of my life.)
স্টিভ জবস স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটির শেষে একটা মহৎ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তাঁর কৈশোরে তিনি একটি ম্যাগাজিন পড়তেন, যার নাম ছিল 'The whole Earth Catalog' তাঁর ভাষায় সাময়িকীটি ছিল অনেকটাই google-এর কাগজে মুদ্রিত একটা সংস্করণের মতো। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জন স্টুয়ার্ট নামের এক ব্যক্তি। গত শতকের সত্তরের দশকের মাঝামাঝি এসে ম্যাগাজিনটি বন্ধ হয়ে যায়। এর শেষ সংখ্যার পেছনের প্রচ্ছদে জন স্টুয়ার্ট ও তাঁর সহকর্মীরা তাঁদের পাঠকদের বিদায় সম্ভাষণ জানান এই বলে, 'Stay Hungry, Stay Foolish�। যার মানে 'ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো'। তিনি বলেছিলেন যে তিনি নিজেকে সব সময় এ কথাটাই বলতেন। স্ট্যানফোর্ডের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তাঁর ভাষণের শেষ কথাগুলোও ছিল 'Stay Hungry, Stay Foolish।
স্টিভ জবস প্রসঙ্গে ইতি টানার আগে আমি বিনীতভাবে স্বীকারোক্তি পেশ করে রাখি যে আমি নিজে প্রযুক্তি বা তথ্যপ্রযুক্তির কোনোটিতে বিশেষজ্ঞ তো নয়ই, এমনকি প্রশিক্ষিতও নই। আর তাঁর বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড ভাষণ আমার নিজের গবেষণালব্ধ নয়। আমার ছোট ভাই সাংবাদিক আতিকুস সামাদ লন্ডন থেকে ফোন করে স্টিভ জবসের ভাষণটা ইন্টারনেট থেকে পড়ে শোনায় এবং সঙ্গে সঙ্গে ই-মেইল করে পাঠিয়ে দেয়। ওই ভাষণের দার্শনিক অংশ তাকে অভিভূত করেছে বলেই ও আমাদের পড়ার জন্য সেটা হাতে পেয়েই পাঠিয়ে দিয়েছিল। আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সেই ভাষণের কিছুটা এখানে তুলে দিলাম।
স্টিভ জবসের জীবনটা সরলরেখায় চলেনি। বস্তুতপক্ষে মায়ের পেটে আসার সময় থেকেই জটিলতার শুরু। তিনি বেড়ে ওঠেন পালক মা-বাবার কাছে। তাঁরা হলেন ক্ল্যারা ও পল জবস। তাঁর আসল বাবার নাম আবদুল ফাতাহ জান্দালি। তিনি সিরীয় মুসলিম। উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রনীতিতে অধ্যাপনা করতেন। স্টিভের মা তাঁরই ছাত্রী জোয়ান সিম্পসন। তাঁদের বিয়ের আগেই জোয়ানের গর্ভে আসে এক সন্তান। তখন তাঁরা বিয়ে করতে চাইলেও জোয়ানের বাবার অনমনীয়তার দরুন তা সম্ভব হয়নি। তখন জোয়ান সানফ্রান্সিসকো গিয়ে এক হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেন। এক ধনী দম্পতি হাসপাতালকে বলে রেখেছিলেন যে তাঁরা জোয়ানের সন্তানকে দত্তক নেবেন। কিন্তু তাঁরা চেয়েছিলেন কন্যা। হাসপাতাল থেকে যখন তাঁদের জানানো হলো যে জোয়ান একটি পুরুষ শিশু জন্ম দিয়েছেন, তাঁরা পিছিয়ে গেলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন দত্তক নিতে আগ্রহীদের যে তালিকা তাঁদের কাছে ছিল, সেখান থেকে ক্ল্যারা ও পলকে বেছে নিয়ে জানতে চান, তাঁরা এই ছেলে শিশুটিকে গ্রহণ করবেন কি না। তাঁরা সানন্দে সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে নিয়ে আসেন। নাম রাখেন স্টিভ জবস। স্টিভের মা ক্ল্যারা ছিলেন হিসাবরক্ষক আর বাবা পল ছিলেন কোস্টগার্ড সদস্য ও কারিগর (মেশিনিস্ট)। এই বাবার কাছেই স্টিভ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি খোলা ও লাগানো শেখেন। আর অ্যাপল কম্পানি শুরু হয়েছিল এই জবসদের বাড়ির গ্যারেজে।
স্টিভ জবসের জন্মদাত্রী মা জোয়ান সিম্পসন লেখিকা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। আবদুল ফাত্তাহ জান্দালির সঙ্গে শেষ পর্যন্ত জোয়ানের বিয়ে হয়। তাঁদের এক কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। স্টিভ তাঁর এই বোন মোনার সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। তিনি মা জোয়ানের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু বাবা আবদুল ফাত্তাহ জান্দালির সঙ্গে কোনো দিন দেখা করেছেন বলে জানা যায়নি। জান্দালি এ সম্পর্কে বলেছেন, 'আমি তার অর্থের জন্য লালায়িত_স্টিভ এ রকম ভাবতে পারে এই ভয়ে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করি না, তবে ওকে নিয়ে এক কাপ কফি খেতে পারলে খুবই খুশি হব।' জান্দালি সে আনন্দ পেয়েছেন কি না সে সম্পর্কে স্টিভ কোনো দিন কিছু বলেননি।
বড় কথা হচ্ছে, স্টিভ জবস জীবনের জটিলতাকে তাঁকে থামিয়ে রাখতে দেননি। তিনি যেই অ্যাপল কম্পানির একজন প্রতিষ্ঠাতা সেখান থেকে তাঁকে বেরিয়ে যেতে হলো। কিন্তু ছিটকে তিনি পড়লেন না। তৈরি করলেন Next ও Pixar। তারপর অ্যাপল যখন ব্যবসায় খারাপ করছিল, তখন তাঁকে ফিরিয়ে আনা হলো। এবার তিনি দিলেন ipod, iPhone ও ipod। পরিচিত হলেন বিশ্বের এক সেরা প্রযুক্তি ভবিষ্যদ্দ্রষ্টা হিসেবে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষণে স্টিভ জবস এও মন্তব্য করেছেন, 'তোমাকে কোনো কিছুতে আস্থা রাখতে হবে_তোমার সাহস, ভাগ্য, জীবন, কাজ, তা যা কিছু হোক।' তিনি বলেছেন, এই আশাবাদ তাঁকে কখনো ফাঁকি দেয়নি।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মৃত্যুচিন্তা সম্পর্কে স্টিভ জবস ওই ভাষণে মন্তব্য করেছেন, 'কেউ মরতে চান না। এমনকি যাঁরা স্বর্গে যেতে চান, তাঁরাও সেখানে পৌঁছার জন্য মারা যেতে চান না। তবু মৃত্যু হচ্ছে এমন গন্তব্য, আমরা সবাই যার অংশীদার। এই গন্তব্য কোনো দিন কেউ এড়াতে পারেনি এবং তা-ই হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ সম্ভবত মৃত্যুই হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে সেরা আবিষ্কার। এটা (মৃত্যু) জীবনের পরিবর্তনের মাধ্যম। এটা পুরনোকে সরিয়ে দিয়ে নতুনের জন্য পথ করে দেয়। এই মুহূর্তে তোমরা হচ্ছ নতুন, তবে অদূর-ভবিষ্যতে তোমরা ক্রমেই বুড়ো হতে থাকবে এবং তোমাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। এ রকম নাটকীয়ভাবে বর্ণনা করলাম বলে আমি দুঃখিত, কিন্তু যা বলেছি তা সত্য।'
(No one wants to die. Even people who want to go to heaven don�t want to die to get there. And get death is the destination we all share. No one has ever escaped it. And that is as it should be, because death is very likely the single best invention of life. It is Life�s change agent. It clears out the old to make way for the new. Right now the new is you, but some day not too long from now, you will gradually become the old and be cleared away. Sorry to be so dramatic, but it is quite true.)
Old order changeless yielding place to the new. (নতুনকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে পুরনো ব্যবস্থা বদলে যায়) এই ইংরেজি প্রবচনটি যাঁরা আজও মনের কোঠায় ধরে রেখেছেন, তাঁদের কেউ হয়তো বলতে পারেন, স্টিভ জবস যা বলেছেন আর ওই পুরনো কথাটা তো প্রায় একই। ঠিক তা নয়, কারণ স্টিভ জবস মৃত্যুকে জীবনের সেরা আবিষ্কার বর্ণনা করে মহিমান্বিত করেছেন এবং একে পরিবর্তনের মাধ্যমে আখ্যা দিয়ে এর গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন।
তবে মৃত্যু নিয়ে মন্তব্য করেই তিনি তাঁর কথা শেষ করেননি। এর পরপরই তিনি বলেছেন, 'তোমাদের সময় সীমিত। কাজেই অন্য কারো জীবনকে তোমার করে (অর্থাৎ অনুকরণ করে) সময় নষ্ট করো না। প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত চিন্তাধারার ফাঁদে আটকে যেয়ো না; কারণ তা হবে অন্যের চিন্তার ফসল নিয়ে জীবন যাপন করা। অন্যদের মতামতের শোরগোলকে তোমার অন্তরের কণ্ঠকে ডুবিয়ে দিতে দিয়ো না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তোমার নিজের হৃদয় ও নিজের অনুভূতির মাধ্যমে অর্জিত স্বতঃস্ফূর্ত জ্ঞানকে অনুসরণ করার সাহস রেখো। তারা হৃদয় ও অন্তরের জ্ঞান কোনো না কোনোভাবে এখনই জানে তুমি কী হতে চাও। অন্য সব কিছুই গৌণ। (Your time is limited, so don�t waste it living someone else�s life. Don�t be trapped by dogma- which is living, with the results of other people�s thinking. Don�t let the noise of others opinions drown out your own inner voice. And most important, have the courage to follow your heart and intuition. They somehow already know what you truly want to become. Everything else is secondary.) স্টিভ জবস নিজের কাজ দিয়ে তাঁর চিন্তার সারবত্তা প্রমাণ করেছেন। অ্যাপল কম্পিউটার কম্পানি দারুণভাবে সফল হওয়া সত্ত্বেও এর ব্যবসায়িক নীতি কী হবে, সেই বিতর্কে মতপার্থক্যের দরুন তাঁকে ওই প্রতিষ্ঠান ছাড়তে হয়। স্টিভ জবসের নিজের জবানিতেই তাঁর পরের পাঁচ বছরে তিনি প্রথমে Next নামে একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন আর স্টার ওয়ার নির্মাতা জর্জ লুকাসের কাছ থেকে Pixar নামের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান কিনে নিয়ে এটিকে বিশাল এক কম্পানিতে পরিণত করেন। তার বদলে স্টিব জবস হয়ে যান ডিজনির সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার। Pixar-এর মূল অংশ হচ্ছে একটা অ্যানিমেশন স্টুডিও এবং এই স্টুডিও তৈরি করে বিখ্যাত অ্যানিমেশন ফিচার ফিল্ম Toy Story (টয় স্টোরি)। এই ছবিটি কার্টুন ও অ্যানিমেশন ছবির জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়। পরে ডিজনি স্টুডিও Pixar-এর স্বত্বাধিকার কিনে নেয় স্টিভ জবসের কাছ থেকে। আর তার Next এখন অ্যাপল কম্পিউটার কম্পানির প্রধান স্তম্ভ।
Pixar ও Next প্রতিষ্ঠা করার সময়টা সম্পর্কে স্টিভ জবস স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বলেছেন, 'আমি তখন বিষয়টাকে এমনভাবে দেখতে পাইনি। অ্যাপল থেকে বহিষ্কৃত হওয়াটা আমার জীবনে সবচেয়ে ভালো ঘটনা হয়ে থাকতে পারে। সফল হওয়ার যে ওজন বইছিলাম, তা নবাগত হওয়ার ভারশূন্যতায় এবং সব কিছু সম্পর্কে কম নিশ্চিত হওয়ার মানসিকতায় পরিবর্তিত হলো। আর তা আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল সময়টাতে ঢোকার জন্য মুক্ত করে দিয়েছিল।' (I didn�t see it then, but is turned out that getting fired from Apple was the best thing that could have even happened to me. The heaviness of being successful was replaced by the lightness of being a beginner again, less sure about everything. It freed me to enter one of the most creative periods of my life.)
স্টিভ জবস স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটির শেষে একটা মহৎ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তাঁর কৈশোরে তিনি একটি ম্যাগাজিন পড়তেন, যার নাম ছিল 'The whole Earth Catalog' তাঁর ভাষায় সাময়িকীটি ছিল অনেকটাই google-এর কাগজে মুদ্রিত একটা সংস্করণের মতো। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জন স্টুয়ার্ট নামের এক ব্যক্তি। গত শতকের সত্তরের দশকের মাঝামাঝি এসে ম্যাগাজিনটি বন্ধ হয়ে যায়। এর শেষ সংখ্যার পেছনের প্রচ্ছদে জন স্টুয়ার্ট ও তাঁর সহকর্মীরা তাঁদের পাঠকদের বিদায় সম্ভাষণ জানান এই বলে, 'Stay Hungry, Stay Foolish�। যার মানে 'ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো'। তিনি বলেছিলেন যে তিনি নিজেকে সব সময় এ কথাটাই বলতেন। স্ট্যানফোর্ডের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তাঁর ভাষণের শেষ কথাগুলোও ছিল 'Stay Hungry, Stay Foolish।
স্টিভ জবস প্রসঙ্গে ইতি টানার আগে আমি বিনীতভাবে স্বীকারোক্তি পেশ করে রাখি যে আমি নিজে প্রযুক্তি বা তথ্যপ্রযুক্তির কোনোটিতে বিশেষজ্ঞ তো নয়ই, এমনকি প্রশিক্ষিতও নই। আর তাঁর বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড ভাষণ আমার নিজের গবেষণালব্ধ নয়। আমার ছোট ভাই সাংবাদিক আতিকুস সামাদ লন্ডন থেকে ফোন করে স্টিভ জবসের ভাষণটা ইন্টারনেট থেকে পড়ে শোনায় এবং সঙ্গে সঙ্গে ই-মেইল করে পাঠিয়ে দেয়। ওই ভাষণের দার্শনিক অংশ তাকে অভিভূত করেছে বলেই ও আমাদের পড়ার জন্য সেটা হাতে পেয়েই পাঠিয়ে দিয়েছিল। আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সেই ভাষণের কিছুটা এখানে তুলে দিলাম।
স্টিভ জবসের জীবনটা সরলরেখায় চলেনি। বস্তুতপক্ষে মায়ের পেটে আসার সময় থেকেই জটিলতার শুরু। তিনি বেড়ে ওঠেন পালক মা-বাবার কাছে। তাঁরা হলেন ক্ল্যারা ও পল জবস। তাঁর আসল বাবার নাম আবদুল ফাতাহ জান্দালি। তিনি সিরীয় মুসলিম। উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রনীতিতে অধ্যাপনা করতেন। স্টিভের মা তাঁরই ছাত্রী জোয়ান সিম্পসন। তাঁদের বিয়ের আগেই জোয়ানের গর্ভে আসে এক সন্তান। তখন তাঁরা বিয়ে করতে চাইলেও জোয়ানের বাবার অনমনীয়তার দরুন তা সম্ভব হয়নি। তখন জোয়ান সানফ্রান্সিসকো গিয়ে এক হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেন। এক ধনী দম্পতি হাসপাতালকে বলে রেখেছিলেন যে তাঁরা জোয়ানের সন্তানকে দত্তক নেবেন। কিন্তু তাঁরা চেয়েছিলেন কন্যা। হাসপাতাল থেকে যখন তাঁদের জানানো হলো যে জোয়ান একটি পুরুষ শিশু জন্ম দিয়েছেন, তাঁরা পিছিয়ে গেলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন দত্তক নিতে আগ্রহীদের যে তালিকা তাঁদের কাছে ছিল, সেখান থেকে ক্ল্যারা ও পলকে বেছে নিয়ে জানতে চান, তাঁরা এই ছেলে শিশুটিকে গ্রহণ করবেন কি না। তাঁরা সানন্দে সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে নিয়ে আসেন। নাম রাখেন স্টিভ জবস। স্টিভের মা ক্ল্যারা ছিলেন হিসাবরক্ষক আর বাবা পল ছিলেন কোস্টগার্ড সদস্য ও কারিগর (মেশিনিস্ট)। এই বাবার কাছেই স্টিভ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি খোলা ও লাগানো শেখেন। আর অ্যাপল কম্পানি শুরু হয়েছিল এই জবসদের বাড়ির গ্যারেজে।
স্টিভ জবসের জন্মদাত্রী মা জোয়ান সিম্পসন লেখিকা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। আবদুল ফাত্তাহ জান্দালির সঙ্গে শেষ পর্যন্ত জোয়ানের বিয়ে হয়। তাঁদের এক কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। স্টিভ তাঁর এই বোন মোনার সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। তিনি মা জোয়ানের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু বাবা আবদুল ফাত্তাহ জান্দালির সঙ্গে কোনো দিন দেখা করেছেন বলে জানা যায়নি। জান্দালি এ সম্পর্কে বলেছেন, 'আমি তার অর্থের জন্য লালায়িত_স্টিভ এ রকম ভাবতে পারে এই ভয়ে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করি না, তবে ওকে নিয়ে এক কাপ কফি খেতে পারলে খুবই খুশি হব।' জান্দালি সে আনন্দ পেয়েছেন কি না সে সম্পর্কে স্টিভ কোনো দিন কিছু বলেননি।
বড় কথা হচ্ছে, স্টিভ জবস জীবনের জটিলতাকে তাঁকে থামিয়ে রাখতে দেননি। তিনি যেই অ্যাপল কম্পানির একজন প্রতিষ্ঠাতা সেখান থেকে তাঁকে বেরিয়ে যেতে হলো। কিন্তু ছিটকে তিনি পড়লেন না। তৈরি করলেন Next ও Pixar। তারপর অ্যাপল যখন ব্যবসায় খারাপ করছিল, তখন তাঁকে ফিরিয়ে আনা হলো। এবার তিনি দিলেন ipod, iPhone ও ipod। পরিচিত হলেন বিশ্বের এক সেরা প্রযুক্তি ভবিষ্যদ্দ্রষ্টা হিসেবে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষণে স্টিভ জবস এও মন্তব্য করেছেন, 'তোমাকে কোনো কিছুতে আস্থা রাখতে হবে_তোমার সাহস, ভাগ্য, জীবন, কাজ, তা যা কিছু হোক।' তিনি বলেছেন, এই আশাবাদ তাঁকে কখনো ফাঁকি দেয়নি।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
With over 30 years of specialisation in seamless
ReplyDeleteflooring, Flawless Flooring has managed to satisfy the different and unique requirements of every customer.
Despite the fact that it uses concrete, an unfriendly environmental material, it has a few advantages
over tires and shares most of the earthship advantages. And when we would
cut for the plumbing work, I had to patch around that and make it solid.
Nanokeratin locks onto the hair, forming a fine,
ReplyDeletesmooth coat of keratin. Habits die hard and whatever your regime has been in the past, you do need to have a good look around at what
is on offer for different hair types and textures. The professional hair merchandise of Loreal are
effectively currently being sold all more than the world in about
one hundred thirty different countries.
my webpage - hair products
If you are like me and love garlic, you are already too late.
ReplyDeleteDue to the popularity of organic gardening, organic potting soil and compost are available at most garden
centers. Subtle gardening themes act upon the subconscious, and merely
give the observer a pleasant feeling.
My page ... conjectural
Most of these senior citizens are not comfortable with the use of internet or are incapable of visiting the State Comptrollers office and thus for them newspaper listings
ReplyDeletedoes the job. Or, when we speak of American capitalism, do we mean jobs for our people, medical care for all of
us, decent wages and decent retirements. As a whole the
paper has some major drawbacks, there are no pictures, essentially no world news and the front page contained a spelling error.
However, the English newspapers are much central to
urban areas. The dishes and ingredients differ slightly from region to
region, with each region having their own specialties.
Feel free to visit my web-site; click here
Also, they are lighter and can be used around plants which prefer somewhat acid content in the soil composition.
ReplyDeleteOwning a regular lawn mower does not mean you have to give
up on mulching your
yard; you just have to be willing to do some
work. Depending on the density of the mulch,
one should lay two to six inches of mulch over topsoil in the vegetable garden.
bookmarked!!, I love your blog!
ReplyDeleteHere is my page: fat loss factor