জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-সময়োচিত সিদ্ধান্ত
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল তা কারও কাছেই প্রীতিকর ছিল না। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারি অনুদান বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা এবং সে আশঙ্কা থেকে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পথে নামার ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই নাগরিকদের চিন্তিত করে তুলেছিল। সকলেই আশা করছিলেন, বিষয়টির একটি সুষ্ঠু সমাধান হোক। আশার কথা, প্রধানমন্ত্রী সঠিক সময়ে বিষয়টি নিয়ে আশ্বস্ত হওয়ার মতো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদে এ আশ্বাস মিলেছে যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারি সহায়তা অব্যাহত থাকবে। আর এ সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। অপরাপর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সরকারি সহায়তায় শিক্ষাব্যয় নির্বাহের যে দাবি করেছেন তাতে বাধা ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশেষ আইন। তাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজস্ব আয়েই চলতে পারবে এমন প্রতিশ্রুতি ছিল। সকলেই স্বীকার করবেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিজস্ব আয়ে চলতে পারা যেমন গর্বের, তেমনি উদাহরণ সৃষ্টি করার মতো উদ্যোগ। কিন্তু সে জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যে প্রস্তুতি নিতে হয়, যেভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যেভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হয় তা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পুরোটা করতে পারেনি। ফলে নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার পরও বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজস্ব আয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির এই অপারগতায় দায় কার সে প্রশ্ন জরুরি। কিন্তু সে দায় কোনোভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্তায় না। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা, শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা উপযুক্ত নীতি প্রণয়ন করে যে কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকেও লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে পারতেন। শুধু শিক্ষাব্যয় বাড়ানোই যে সমাধান তা নয়_ প্রতিযোগিতামূলক ও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুনভাবে গড়ে তোলা যেত। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়ভার বহনের সরকারি প্রতিশ্রুতির পরও এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা যেতে পারে। কোথায় বিশ্ববিদ্যালয়টির খামতি আর কোথায় সম্ভাবনা তা বিচার করে এ প্রতিষ্ঠান নতুন যাত্রা শুরু করতে পারে। শুধু জগন্নাথই নয়, যে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই নতুন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা একটি বড় বিষয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষার মান নিয়ে নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন করে শুধু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে ওঠার তাগিদ দরকার। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রস্তুত হতে হবে। নিজস্ব আয় বাড়াতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে আশ্বাস দিলেন সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন যাত্রা শুরু হোক এটাই প্রত্যাশিত। দেশে একটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সেটিই হবে প্রত্যাশিত। সরকারের ঘোষণার পর এ নিয়ে সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান হোক। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষাবিদ, সরকার সকল পক্ষ মিলে বিশ্ববিদ্যালয়টির অপরাপর সমস্যাবলির সমাধানের উদ্যোগ নিক। একটি গঠনমূলক নবযাত্রার দিকে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাক এটিই আমাদের কামনা।
No comments