আওয়ামী লীগ : মৌলভীবাজার-১ বড়লেখা ও জুড়ী-নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হতাশ জনতা by আবদুল হামিদ মাহবুব ও লিটন শরীফ,

জাতীয় সংসদের মৌলভীবাজার-১ আসন বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনের সংসদ সদস্য বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাবউদ্দিন। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মো. শাহাবউদ্দিন এই আসনে এক লাখ ছয় হাজার ৫৭০ ভোট পেয়েছিলেন। বিএনপি তথা চরদলীয় জোটপ্রার্থী সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬৯ হাজার ৬০৯। মহাজোট সরকারের মেয়াদ তিন বছর হতে চলছে; কিন্তু


বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী মো. শাহাবউদ্দিন নির্বাচনের সময় এলাকার মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর কিয়দংশও বাস্তবায়ন করতে না পারায় যেমন দলীয় নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ, তেমনি সাধারণ জনগণও হতাশ। মো. শাহাবউদ্দিনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা পাওয়ার জন্য এখনই মাঠে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগের জুড়ী উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মুকিত আশুকের ছোট ভাই শিল্পপতি মোহাইমিন সালেহ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট অঞ্চল) মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ বিগত কয়েক মাসে মোহাইমিন সালেহর আমন্ত্রণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসে যোগ দেওয়ায় বড়লেখা ও জুড়ীর নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
বড়লেখা : এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা এখন বিশেষ দিবসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা সংসদ সদস্য মো. শাহাবউদ্দিন বেশির ভাগ সময়ই এলাকায় অবস্থান করেন। তারপরও সংগঠনের কার্যক্রমে চলছে স্থবিরতা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালিক মারা যাওয়ার তিন বছর পার হয়ে গেলেও সে পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। দলের মধ্যে বাহ্যিক কোন্দল না থাকলেও এমপির পরিবারের অনেক কর্মকাণ্ডে সাধারণ কর্মীরা নাখোশ। এমপির এক আত্মীয় টিআর, কাবিখা, জলমহাল, বনমহালসহ সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করায় সাধারণ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ মূলত পারিবারকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। আর এ কারণে অঙ্গসংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগেরও ঝিমিয়ে পড়ার অবস্থা। কমিটির অনেক নেতা-কর্মী দেশের বাইরে চলে গেছেন। যুবলীগের সম্পাদক মাহবুবুল আম্বিয়া ও ছাত্রলীগের সম্পাদক ইমদাদুল ইসলাম সজল প্রবাসে থাকলেও তাঁদের শূন্য পদ পূরণ করা হয়নি। বড়লেখা পৌরসভা নির্বাচনে যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুন্দর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি। বড়লেখা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও ১০টি ইউনিয়নে অুনষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ছয়টি আওয়ামী লীগ, তিনটিতে বিএনপি ও একটিতে জামায়াত জয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, 'ভোটের অবস্থানগত দিক দিয়ে ভালো করলেও দলের সাংগঠনিক অবস্থান নড়বড়ে।' চা বাগান অধ্যুষিত হওয়ায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সহজেই পার পেয়ে যান বলে তিনি মনে করেন।
সজ্জন হিসেবে সবার কাছে পরিচিত বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্য মো. শাহাবউদ্দিন মহাজোটের সমর্থন নিয়ে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও তিন বছর যাওয়ার পরও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। যে কাজগুলো হয়েছে তার মধ্যে আছে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি, রুটিনমাফিক টিআর, কাবিখার বিনিময়ে কিছু রাস্তার উন্নয়ন ও ব্রিজ নির্মাণ। যদিও প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল পরিত্যক্ত ঘোষিত কুলাউড়া-লাতু রেল লাইনে পুনরায় ট্রেন চালু। দেশের অন্যান্য এলাকার পরিত্যক্ত রেল লাইন চালুর সঙ্গে সঙ্গে এটিও কয়েক মাস আগে একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু এলাকার মানুষ এই আমলে কুলাউড়া-লাতু রেল চালু হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। বড়লেখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. প্রণয় কুমার দে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জেলায় আওয়ামী লীগে গ্রুপিং থাকলেও এখানে সেটা নেই। বর্তমানে প্রতি ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নতুন করে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আমরা গ্রামে যাচ্ছি। লোকজন রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার জন্য আবদার করছে।'
জুড়ী : সাত বছরেও জুড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে ভবন নির্মিত না হওয়ায় ক্ষমতাসীন সংগঠনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ। তা ছাড়া রয়েছে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের রাজনৈতিক স্থবিরতা। ২০০৫ সালে ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে জুড়ী উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আজির উদ্দিনকে আহ্বায়ক, এম এ মুমিত আশুক ও মাসুক আহমদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে গঠিত হয় আওয়ামী লীগের জুড়ী উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি। দীর্ঘ সাত বছরেও একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। আহ্বায়ক আজির উদ্দিন বলেন, 'জেলায় নেতাদের গ্রুপিংয়ের কারণে এখানেও কমিটি হয়নি। তা ছাড়া আহ্বায়ক কমিটি দুই যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ মুমিত আশুক ও মাসুক আহমদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে দলীয় কার্যক্রমেও চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে। তবে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি সব সময় পালন করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
আওয়ামী লীগের মতো যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে। প্রায় দুই বছর আগে সম্মেলনের মাধ্যমে আবদুল খালিক সোনা সভাপতি ও রিংকু দাস সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে যুবলীগের কমিটিতে গতিশীলতা আসেনি বলে সাধারণ কর্মীরা জানান। উল্টো যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিল ও বালুমহাল দখল করে লুটপাটের হরেক অভিযোগ। ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগের মতো ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান চৌধুরী প্রবাসে চলে গেলেও আহ্বায়ক কমিটি না ভেঙে যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়ারিছ উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করে চলছে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। জুড়ীর একসময়ের ছাত্রলীগ নেতা মুঞ্জুর আলম লাল বলেন, 'জুড়ীতে নেতা-কর্মীরা যে যেভাবে পারছে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে।'
 

No comments

Powered by Blogger.