কম্বল গ্রামের তাঁতি-ঐতিহ্য টিকে থাকবে তো?
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কম্বল গ্রাম নামে পরিচিত কেশুরবাড়ীর তাঁতিরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তাদের বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত পেশাগত দক্ষতাই এখন পর্যন্ত প্রধান সম্বল হয়ে রয়েছে। নেই সরকারি কোনো প্রণোদনা। প্রযুক্তি বিপ্লবের যুগে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া এখানকার তাঁতশিল্পীদের কাছে এখনও অজানা। ফলে জীবন সংগ্রামেও তারা পিছিয়ে পড়ছেন।
পর্যাপ্ত আয়ের সংস্থান নেই বলে অনেকেই ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে একদিন সরকার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দিকে মুখ তুলে চাইবে_ এ আশায় এখনও ক্ষুদ্র শিল্পটি নিদারুণ আর্থিক অনটন নিয়েও টিকিয়ে রেখেছে তাঁতিদের একটি অংশ। সে কারণেই এ বছরও শীতের আগমনীর সঙ্গে সঙ্গে কেশুরবাড়ীতে শোনা যাচ্ছে তাঁতের শব্দ। গত শনিবার সমকালে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত এক রিপোর্টে উঠে এসেছে এখানকার তাঁতিদের দুর্দশার বিবরণ। এক সময়ে এই তাঁতশিল্প কীভাবে এলাকাটিকে সরগরম রাখত এবং আরও অনেক তথ্য। এখানে গরিব, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের শীত নিবারণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের কম্বল ছাড়াও বিছানার চাদরসহ নানা রকম প্রয়োজনীয় তাঁতসামগ্রী উৎপাদিত হয়। অথচ এখানকার তাঁতিদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য নেই বাজার সুবিধা। শুধু তাই নয়, সরকার বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তাও নেই বললেই চলে। অন্যদিকে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একে একটি গতিশীল শিল্পের স্তরে উন্নীত করার মতো প্রয়োজনীয় কারিগরি জ্ঞান অর্জনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনো উদ্যোগও নেই। কম্বল গ্রাম কেশুরবাড়ীর তাঁতিদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, বাজার সুবিধাসহ আনুষঙ্গিক সহায়তা দেওয়া হলে এটি দেশের বিস্তৃত ও অর্থকরী শিল্প উদ্যোগ হিসেবে বিকশিত হতে পারে। এবং এতে আরও মানুষ এ শিল্পে যুক্ত হতে উৎসাহী হবে। কারণ তাঁতের মাধ্যমে উৎপাদিত শাড়ি, কম্বল, গামছা, তোয়ালেসহ নানা সামগ্রীর দেশ-বিদেশে রয়েছে বেশ চাহিদা। তাঁতশিল্পে উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত হলে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাবে। ডিজাইন ও বুননে আসবে নতুনত্ব। একই সঙ্গে কম সময়ে অধিক পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে তাঁতিরা ভালো লাভ পাবেন। এতে তাঁতি পরিবারগুলোর জীবনমান উন্নত হবে। আমরা কম্বল গ্রাম কেশুরবাড়ীর তাঁতিদের প্রয়োজনীয় আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও অবকাঠামোগত সহায়তা দিয়ে এলাকাটিকে আধুনিক তাঁত শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আহ্বান জানাই।
No comments