আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসঃ by ‘প্যাডে থুইছি, মরণও চাইতে পারি না’
‘বারো বছর বয়স অইতে মোর বড় পোলাডার আত-পায়ের শক্তি কইম্যা হুগাইয়্যা যাওয়া শুরু করে। হেয়ার বছর খানেক পর হাডা-চলা বন্ধ, বিছানায় লাশের মতো পইড়্যা থাহে। অ্যাহন ওর বয়স ৩০। ছোড পোলাডার বয়স ১৫, সাত বছর অইতে ওরও আত-পা হুগাইয়্যা কাড অইয়্যা যাওয়া শুরু অয়।
দুইডা পোলারে খাওয়া, গোছল থেইক্কা পায়খানা প্রসাবও করাইয়্যা দেতে অয়। পেডে থুইছি কি হরমু, মরণও চাইতে পারি না। দুইডা জেন্দা লাশ টানতে টানতে একদিন নিজেই লাশ অইয়্যা যামু।’ দুই প্রতিবন্ধী ছেলের লালন-পালনের কষ্টের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের আদাখোলা গ্রামের রিকশাচালক মুনসুর হাওলাদারের স্ত্রী কুলসুম বেগম (৫০)। মুনসুর হাওলাদারের (৬৫) তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। তাঁর তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। সবাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। পঞ্চম সন্তান ছেলে শুক্কুর বাবার সঙ্গে ঢাকায় রিকশা চালায়। সর্বকনিষ্ঠ মনির হোসেন (১৫) শারীরিক প্রতিবন্ধী। সারা দিন খাটের ওপর শুয়ে কোনো রকম নড়াচড়া করতে পারে। অন্যের সাহায্য ছাড়া এপাশ-ওপাশও করতে পারে না। খাওয়া-দাওয়া এমনকি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেও মায়ের ওপর নির্ভর করতে হয়।
মনির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আল্লায় যেমন রাখছে তেমন আছি। কিছু করার নাই। তবে এই বাইচ্চা থাহার চাইয়্যা মরণ অনেক ভালা।’ আবদুল কাদের হাওলাদার জানান, অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত সে মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। অসুস্থ অবস্থায় সে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর তিন ছাত্রছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ায়। সরকারিভাবে প্রতিমাসে ৩০০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। তিন মাস পর পর টাকা আনতে রাজাপুর সদরে যেতে হয়। টাকা আনতে যাওয়া খুব কষ্টের। কারণ অন্যের কাঁধে চড়ে তিন-চারটি বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়। মাকে আর কষ্ট দিতে ভালো লাগে না।
পালট গ্রামের মো. ইলিয়াছের (৩৪) ডান হাতটি জন্ম থেকে অত্যন্ত চিকন। দেখলে মনে হবে দুই বছরের বাচ্চার হাত। এ হাত দিয়ে তিনি কিছুই করতে পারেন না। তবে এক হাতেই চলছে ইলিয়াছের জীবন সংগ্রাম। নৌকা নিয়ে যান বাড়ির কাছের বিষখালী নদীতে। বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন। তা বিক্রি করেই চলে চারজনের সংসার। দুই ছেলে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। মো. ইলিয়াছ বলেন, ‘কেন এমন হয়েছে জানি না। এ গ্রামে অনেকেই এমন আছে। কেউ কখনো কারও খোঁজ রাখে না। এখনো অনেক ঘরে প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ের জন্ম হচ্ছে।’
আবদুল কাদের, মনির ও ইলিয়াছের মতো রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ বাড়িতে পাওয়া যাবে প্রতিবন্ধী। তবে বড়ইয়া ও পালট গ্রামে এই সংখ্যা বেশি। রাজাপুর প্রতিবন্ধী সমিতির হিসাবমতে, ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। রাজাপুর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্যমতে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা এক হাজার ৪৩১ জন। জেলা কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী জেলায় প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা চার হাজার ৫৮২ জন। জেলায় চার উপজেলায় এক হাজার ২৭ জনকে মাসে ৩০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে থাকে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এর মধ্যে রাজাপুর উপজেলায় ভাতা পান মাত্র ৩৩৭ জন। বড়ইয়া ইউনিয়নে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেশি হলেও এই ইউনিয়নের জন্য অতিরিক্ত কোনো বরাদ্দ নেই।
রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবদুল মতিন সরদার বলেন, বড়ইয়া ইউনিয়নে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেশি কেন—এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। ঝালকাঠি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফয়সাল রহমান বলেন, বড়ইয়া ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা একসময় অত্যন্ত খারাপ ছিল। এলাকার মানুষ চিকি ৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। পুষ্টিহীনতা ও অশিক্ষার কারণে এখানে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেশি। ঝালকাঠি সচেতন নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হেমায়েত উদ্দিন বলেন, বড়ইয়া ইউনিয়নে প্রতিবন্ধিতার কারণ অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ, সমাজসেবা অধিদপ্তর ও স্থানীয় নেতারা। সিভিল সার্জন মুহম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আয়োডিনের অভাব, পুষ্টিহীনতা ও পোলিওর কারণে শিশুরা প্রতিবন্ধী হতে পারে।
পালট গ্রামের মো. ইলিয়াছের (৩৪) ডান হাতটি জন্ম থেকে অত্যন্ত চিকন। দেখলে মনে হবে দুই বছরের বাচ্চার হাত। এ হাত দিয়ে তিনি কিছুই করতে পারেন না। তবে এক হাতেই চলছে ইলিয়াছের জীবন সংগ্রাম। নৌকা নিয়ে যান বাড়ির কাছের বিষখালী নদীতে। বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন। তা বিক্রি করেই চলে চারজনের সংসার। দুই ছেলে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। মো. ইলিয়াছ বলেন, ‘কেন এমন হয়েছে জানি না। এ গ্রামে অনেকেই এমন আছে। কেউ কখনো কারও খোঁজ রাখে না। এখনো অনেক ঘরে প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ের জন্ম হচ্ছে।’
আবদুল কাদের, মনির ও ইলিয়াছের মতো রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ বাড়িতে পাওয়া যাবে প্রতিবন্ধী। তবে বড়ইয়া ও পালট গ্রামে এই সংখ্যা বেশি। রাজাপুর প্রতিবন্ধী সমিতির হিসাবমতে, ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। রাজাপুর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্যমতে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা এক হাজার ৪৩১ জন। জেলা কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী জেলায় প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা চার হাজার ৫৮২ জন। জেলায় চার উপজেলায় এক হাজার ২৭ জনকে মাসে ৩০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে থাকে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এর মধ্যে রাজাপুর উপজেলায় ভাতা পান মাত্র ৩৩৭ জন। বড়ইয়া ইউনিয়নে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেশি হলেও এই ইউনিয়নের জন্য অতিরিক্ত কোনো বরাদ্দ নেই।
রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবদুল মতিন সরদার বলেন, বড়ইয়া ইউনিয়নে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেশি কেন—এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। ঝালকাঠি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফয়সাল রহমান বলেন, বড়ইয়া ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা একসময় অত্যন্ত খারাপ ছিল। এলাকার মানুষ চিকি ৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। পুষ্টিহীনতা ও অশিক্ষার কারণে এখানে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেশি। ঝালকাঠি সচেতন নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হেমায়েত উদ্দিন বলেন, বড়ইয়া ইউনিয়নে প্রতিবন্ধিতার কারণ অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ, সমাজসেবা অধিদপ্তর ও স্থানীয় নেতারা। সিভিল সার্জন মুহম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আয়োডিনের অভাব, পুষ্টিহীনতা ও পোলিওর কারণে শিশুরা প্রতিবন্ধী হতে পারে।
No comments