প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি-দীর্ঘশ্বাসের দৈর্ঘ্য কমেনি

হাজোট সরকারের তিন বছর পার হলেও মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ী) আসনে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের সময় দেওয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। নির্বাচনের আগে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলাকে পর্যটন উপজেলা করার অঙ্গীকার করলেও আজ পর্যন্ত কোনো ঘোষণা আসেনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ জনগণের জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে।


বড়লেখার শাহবাজপুর বাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, 'হুনচি লাতুর ট্রেন চালু হইব, সরকারের সময় যার গিয়া-আবও চালু হল না, চালু হইব কি না আল্লাহ জানেন।' স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রুটে ট্রেন চালু (লাতুর ট্রেন) অঙ্গীকার থাকলেও এখনো চালু হয়নি। সম্প্র্রতি একনেকের বৈঠকে এ রুটে ট্রেন চালুর জন্য ১১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবুও সরকারের মেয়াদে কাজ শুরু হয় কি না এ নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা।
বড়লেখার আড়াই লক্ষাধিক জনগণের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্কে ৩১ থেকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে রূপান্তরের কথা থাকলেও সে প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখেনি। সড়ক ও জনপথের বড়লেখা-কুলাউড়ার ২৮ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা বেহাল। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সংসদ সদস্য মো. শাহাবউদ্দিন বড়লেখা-কুলাউড়া সড়কের সংস্কারকাজের উদ্বোধন করলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
দেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত মাধবকুণ্ডের আট কিলোমিটার রাস্তার অবস্থাও বেহাল। পর্যটকরা এসে নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের চেয়ে যাতায়াতের দুর্ভোগের অভিজ্ঞতা নিয়ে যান। মাধবকুণ্ডে বেড়াতে আসা বরিশালের ছাত্র শিহাব আহমদ বলেন, 'এত কষ্ট করে মাধবকুণ্ডে এসে রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখে পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জাগে_তাহলে সরকার কী করছে।'
এ ছাড়া দেশের বৃহত্তম হাকালুকি হাওর উন্নয়নে কোনো বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ১৮টি জলমহালকে নিয়ে অভয়াশ্রমের ঘোষণা কাগজপত্রে বিদ্যমান।
জুড়ী উপজেলায় ভূমিসংক্রান্ত জটিলতায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। জুড়ীর সাগরানলের গৃহবধূ জামিলা আক্তার বলেন, 'ভোটের সময় আইলে সবাই সেবার কথা বলেন। ভোটের পর আর কারো দেখা মেলে না। জুড়ীতে হাসপাতাল না থাকায় আমাদের ৬০ কিলোমিটার দূরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল কিংবা কুলাউড়া হাসপাতালে যাইতে হয়।'
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জুড়ী উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানামুখী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। চাকরিজীবী মাসুক আহমদ জানান, জুড়ীতে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস না থাকায় কুলাউড়া হিসাবরক্ষণ অফিসের মাধ্যমে বেতন-ভাতাদি তুলতে গিয়ে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হন। তাঁরা আশা করেন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যের মাধ্যমে এর সমাধান হবে।
জুড়ী উপজেলার ফুলতলা সীমান্তের বটুলি স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভিসা নিয়ে ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশে আসতে পারলেও বাংলাদেশিরা ভারতে যাওয়ার সুবিধা পাচ্ছে না। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে এ দাবি জানালেও সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। তারা বর্তমান সরকারের মেয়াদে দাবিটি বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি কামনা করছে।

No comments

Powered by Blogger.