কারখানার রেলিং ভেঙে আহত ৫০-আগুন আতঙ্কে প্রাণ হারালেন দুই শ্রমিক

গি্নকাণ্ডের আতঙ্কে তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে রাজধানীতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই পোশাক শ্রমিক। এ সময় আহত হন অন্তত ৫০ জন। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর চানখারপুল এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। নিহতরা হলেন জেসমিন ও তাসলিমা। কারখানার বয়লার মেশিনের পাইপে ছিদ্র হলে প্রচণ্ড শব্দে বাষ্প বেরোতে শুরু করে। এ সময় শ্রমিকদের মধ্যে আগুনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে।


প্রাণ বাঁচাতে একসঙ্গে সব শ্রমিক তাড়াহুড়ো করে কারখানা থেকে নামার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সিঁড়ির রেলিং ভেঙে পড়ে যান অর্ধশতাধিক শ্রমিক। তাদের বেশিরভাগই নারী।
চানখারপুল এলাকার হোসেনী দালান রোডের ৮১/বি/১ নম্বর ভবনের (আল-মতিন প্লাজা) তৃতীয় থেকে সপ্তম তলায় ইউরোটেক্স লিমিটেডের পোশাক কারখানা। তৃতীয় তলায় কারখানাটির ফিনিশিং বিভাগ। সেখানে স্টিম আয়রন দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করা হয়। গতকাল দুপুর ১টার দিকে সেখানকার বয়লার মেশিনের পানির লাইনের একটি ছিদ্র থেকে বাষ্প বেরোতে শুরু করে। কারখানার অপারেটর আব্বাস উদ্দিন সমকালকে বলেন, বাষ্পের ধোঁয়া দ্রুত ঘর ভরে যায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শব্দ ও ধোঁয়ার কারণে অনেকে মনে করেন কারখানায় আগুন ধরেছে। দ্রুত অন্যান্য তলায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিচে নামার দুটি সিঁড়ির একটি বয়লার কক্ষের পাশে হওয়ায় বেশিরভাগই অপর সরু সিঁড়িটি ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে রেলিং ভেঙে বেশ কয়েকজন নিচে পড়ে যান। যারা সবার নিচে পড়েন, তারা গুরুতর আহত হন। পরে আশপাশের লোকজন ও কারখানার অপর কর্মীরা মিলে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। হেলপার জেসমিন ও অপারেটর তাসলিমাকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ২০ বছর বয়সী জেসমিন লালবাগের শহীদনগর এলাকায় থাকতেন। তার বাবার নাম ইদ্রিস আলী। ১৮ বছরের তাসলিমা আবদুল আজিজের মেয়ে। তার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
আহত মুক্তা আক্তার সমকালকে জানান, তিনি চারতলায় কাজ করছিলেন। হঠাৎ আগুনের কথা শুনে সবাই তাড়াহুড়া করে নিচে নামতে শুরু করেন। কয়েকজন সিঁড়ির রেলিং ভেঙে পাশের ফাঁকা স্থানে পড়ে যান। মুক্তা দাবি করেন, ঘটনার সময় সিঁড়ির মুখের কলাপসিবল গেট বন্ধ ছিল।
কারখানার কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর সোহেল রানা সমকালকে বলেন, ছেলেদের বেশিরভাগই আলাদা সিঁড়ি দিয়ে নেমেছে। তারা অনেকক্ষণ জানতেই পারেননি অপর পাশে কী ঘটেছে। এ কারণে আহতদের উদ্ধারে প্রায় আধঘণ্টা বিলম্ব হয়।
পুলিশের লালবাগ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ড. কামরুজ্জামান সমকালকে বলেন, আহত ৫২ জনকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। দু'জনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মাথায় আঘাত পাওয়া চারজনকে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন নাসরিন, পারুল, গীতা ও জাহানারা।
এদিকে বিকেলে জেসমিনের লাশ নিয়ে শ্রমিকরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং এ ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি দাবি করা হয়। পরে মালিক পক্ষ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা চলে যান।

No comments

Powered by Blogger.