ওরা বাংলাদেশের পাকিস্তানি সমর্থক! by নাজমুল হক নোবেল

বিজয়ের মাস শুরু হয়েছে। রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে বিজয়ের গৌরবগাথা নিয়ে সংগ্রামী সব স্লোগান চোখে পড়বে, রাজপথে দেখা যাবে বিশাল বিশাল ব্যানার। শিল্পকলা একাডেমীতে ৪০ হাজার মোমবাতি জ্বালিয়ে উদযাপন করা হলো বিজয়ের ৪০ বছর। ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই দেশের সর্বত্র শুরু হয়েছে বিজয় উদযাপন। আসলেই কি তাই! গতকাল ডিসেম্বরের প্রথম দিন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কিন্তু দেখা গেল অন্য চিত্র।


স্টেডিয়ামের বাইরে অনেকের হাতে ছিল সবুজ জমিনে সাদা দিয়ে চান-তারা খচিত পাকিস্তানি পতাকা। চিবুকে পাকিস্তানি পতাকা আঁকা ভক্তের সংখ্যা গ্যালারিতেও কম ছিল না।
ভিআইপি গেটে দাঁড়ানো এক নারী ক্রিকেটপ্রেমীর দুই গালে আবার দুই দেশের পতাকা দেখা গেল। বেশভূষা দেখে প্রথমে মনে হয়েছিল হয়তো তিনি পাকিস্তানি নাগরিক। বিজয়ের মাসের প্রতি শ্রদ্ধা বা দু'দেশের সৌহার্দ্য বজায় রাখতেই হয়তো নিজ দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকাও মুখে এঁকেছেন। কৌতূহল নিয়ে কাছে যেতেই দেখা গেল খাস বাংলায় কথা বলছেন। কোন দেশ সমর্থন করেন_ জিজ্ঞেস করতেই বেশ গর্বের সঙ্গে জবাব দিলেন, 'আমি পাকিস্তানের সাপোর্টার। আফ্রিদির ডাই হার্ড ফ্যান আমি।' সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন, আজ আপনার নিজের দেশের বিপক্ষে খেলা, এরপরও আপনি পাকিস্তানের বিজয় কামনা করবেন! তার সপ্রতিভ জবাব, 'বাংলাদেশ জিতলে তখন আমি বাংলাদেশের সাপোর্টার; কিন্তু আমার প্রথম দল পাকিস্তান।' শুধু তিনি না, পাকিস্তানের জন্য গলা ফাটাতে সেদিন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন আরও অনেকে। এবং তারা গিয়েছিলেন বিপুল সমারোহে। খেলা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে তরুণদের এমন কয়েকটি গ্রুপকে স্টেডিয়াম এলাকার বাইরে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে মিছিলও করতে দেখা গেল।
ডিসেম্বরের প্রথম দিন স্টেডিয়ামজুড়ে পাক পতাকার এমন আধিক্যে হারিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের পতাকা। বিনোদন খুঁজতে স্টেডিয়ামে আসা অনেক দর্শকের চোখেও পড়েছে তা। নজর এড়ায়নি বিভিন্ন গেটে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তাকর্মীদেরও। প্রতিকার হিসেবে গ্যালারিতে প্রবেশের সময় তারা সমর্থকদের কাছ থেকে পাকিস্তানি পতাকা রেখে দেন। দায়িত্বে থাকা এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, 'ডিসেম্বর মাসে এমন কাণ্ডকারখানায় কথা উঠবে ভেবেই আমাদের পাকিস্তানি পতাকা গেটে রেখে দিতে বলা হয়েছে। আমরা তা-ই করছি।' স্টেডিয়ামের সাউথ প্লাজা গেটের পাশে দেখা গেল পাকিস্তানি সমর্থকদের কাছ থেকে রেখে দেওয়া বিপুল পরিমাণ পতাকা। তারপরও ফাঁকফোকর গলে চান-তারা পতাকাসমেত স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়া সমর্থকের সংখ্যাও কিন্তু কম ছিল না। স্টেডিয়ামের গ্যালারির জায়ান্ট স্ক্রিনের ডানপাশে দেখা গেল একদল তরুণ মাঝে মধ্যেই প্রায় বিশ ফুট লম্বা একটি পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে বিরামহীন উল্লাসে মেতে উঠছে। অবশ্য খেলা শুরুর ঘণ্টাখানেক পর আর ওই পতাকাটির দেখা মেলেনি। ওই জায়গায় উড়তে দেখা যায় বিশাল একটি লাল-সবুজ পতাকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তাকর্মীরা ওই যুবকদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে বিশাল আকৃতির পতাকাটা সরিয়ে নিয়েছেন।
পাকিস্তান ক্রিকেট দল অনেক শক্তিশালী। খেলা দিয়ে ক্রিকেটবিশ্বে তারা বিশাল একটি সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করেছে। অনদিকে বাংলাদেশ দল নবীন ও দুর্বল। বিশ্বে ভক্ত তৈরি দূরে থাক, দেশের অনেকেই তাদের খেলায় বিরক্ত। অনেক সময়ই আমরা দেখেছি, নেতিবাচক খেলার প্রতি বিরক্তবশত অনেক দর্শক বিপক্ষ দলের প্রতি সমর্থন করে। আবার নিখাদ ক্রিকেটীয় চেতনা থেকেও পক্ষে-বিপক্ষের ভালো পারফরম্যান্সকে স্বাগত জানাতে পিছপা হয়নি বাংলাদেশের দর্শক। নিছক একটা ক্রিকেট দল হিসেবে পাকিস্তানকে সমর্থন যে কেউ করতেই পারে। আফ্রিদি বা অন্য কারও সমর্থক থাকতেই পারে। তাই বলে নিজেদের মাঠে নিজ দেশের বিপক্ষে খেলার সময়ও বাড়াবাড়ি রকম পাকিস্তানপ্রীতি কি ঠিক?
অনেকে বলতে পারেন, ক্রিকেটের সঙ্গে এসব রাজনীতি টেনে আনা নিরর্থক। কিন্তু তারপরও কথা থাকে। আর সেটা পাকিস্তান বলেই থাকে। বিজয়ের মাস বলেই থাকে। ভারত-পাকিস্তান বা ইংল্যান্ড-পাকিস্তানের খেলায় পাকিস্তানের সমর্থন করা আর বাংলাদেশের বিপক্ষে আবার নিজের মাটিতে পাকিস্তানের সমর্থন করার মধ্যে পার্থক্য আছে নিশ্চয়।

No comments

Powered by Blogger.