বৈষম্যের শিকার নারী উদ্যোক্তারা-এসএমই ঋণ by ওবায়দুল্লাহ রনি
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকারের কথা বলা হলেও এখনও তারা আগের মতোই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতির কারণে হোঁচট খাচ্ছে নারীদের অনেক উদ্যোগ। ঋণের জন্য আবেদন করে না পেয়ে নারী উদ্যোক্তাদের অনেকেই অভিযোগ করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) এসএমই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৪০
হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়েছে মাত্র দেড় হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ বিতরণ করা হয়েছে পুরুষ উদ্যোক্তাদের মধ্যে।সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৯ মাসে ৩৯ হাজার ৯৪০ কোটি ৬২ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এ ঋণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫০ জন উদ্যোক্তাকে দেওয়া হয়েছে । এর মধ্যে দুই লাখ ২৩ হাজার ১৫৮ জন পুরুষ উদ্যোক্তাকে দেওয়া হয়েছে ৩৮ হাজার ৪০১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৯৬ শতাংশ। আর ১১ হাজার ২৯২ জন নারী উদ্যোক্তাকে দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৫৩৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের মাত্র ৪ শতাংশ। ঋণ আদায় না হতে পারে এমন আশঙ্কায় ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নারীদের প্রতি বৈষম্য করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগের মহা-ব্যবস্থাপক সুকোমল সিংহ চৌধুরী সমকালকে বলেন, চলতি বছরের ৯ মাসে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ২১ শতাংশের বেশি বিতরণ হয়েছে এসএমই খাতে। এ ঋণ পেতে অনেক গ্রাহক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যখনই এ ধরনের অভিযোগ আসছে তা সমাধান করা হচ্ছে। অনেক সময় উদ্যোক্তাকে ডেকে তার সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা, সভা-সেমিনার করে তাদের সচেতন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়ন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎপরতায় এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ছে। এসএমই ঋণ পেতে নারী উদ্যোক্তাদের যেন কোনো বিড়ম্বনার শিকার হতে না হয় সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সচেষ্ট বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরে এসএমইতে ৫৬ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ হিসেবে ৯ মাসে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ বিতরণ হয়েছে। বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ব্যবসা খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে। এ খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৬০৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা এক লাখ ৭২ হাজার ৮০৩ জন গ্রাহক পেয়েছেন। শিল্প খাতে ৫২ হাজার ৩১৪ জন উদ্যোক্তার মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৬৫১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর সেবা খাতে ৯ হাজার ৩৩৩ জনের মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৬৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
মোট এসএমই ঋণের মধ্যে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৩৮ হাজার ৬২৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিতরণ করেছে মাত্র এক হাজার ৩১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২৩ হাজার ৪২১ উদ্যোক্তাকে ২ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা দিয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো পাঁচ হাজার ৮৬২ উদ্যোক্তার মধ্যে এক হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এক লাখ ৯৬ হাজার ৯৯ উদ্যোক্তার মধ্যে বিতরণ করেছে ৩২ হাজার ৮৩৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর বিদেশি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২ হাজার ৪৫৮ উদ্যোক্তাকে দিয়েছে মাত্র ৮৯৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরে এসএমইতে ৫৬ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ হিসেবে ৯ মাসে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ বিতরণ হয়েছে। বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ব্যবসা খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে। এ খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৬০৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা এক লাখ ৭২ হাজার ৮০৩ জন গ্রাহক পেয়েছেন। শিল্প খাতে ৫২ হাজার ৩১৪ জন উদ্যোক্তার মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৬৫১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর সেবা খাতে ৯ হাজার ৩৩৩ জনের মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৬৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
মোট এসএমই ঋণের মধ্যে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৩৮ হাজার ৬২৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিতরণ করেছে মাত্র এক হাজার ৩১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২৩ হাজার ৪২১ উদ্যোক্তাকে ২ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা দিয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো পাঁচ হাজার ৮৬২ উদ্যোক্তার মধ্যে এক হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এক লাখ ৯৬ হাজার ৯৯ উদ্যোক্তার মধ্যে বিতরণ করেছে ৩২ হাজার ৮৩৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর বিদেশি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২ হাজার ৪৫৮ উদ্যোক্তাকে দিয়েছে মাত্র ৮৯৩ কোটি টাকা।
No comments