সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী-ভর্তুকি কমানো, এডিপি বাস্তবায়ন, বৈদেশিক সহায়তা ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা হবে by আবুল কাশেম

র্তুকির চাপ কমানোর জন্য গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজেট ঘাটতি মোকাবিলা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন নিয়ে আজ রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন দেশের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকরা। সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।


এ বিষয়ে গতকাল শনিবার অর্থমন্ত্রী কালের কণ্ঠকে জানান, 'দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রায়ই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সোমবার মিয়ানমার যাচ্ছেন। তার আগে রবিবার তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। সেখানে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করব।'
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, পরিকল্পনাসচিব শফিকুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য অধ্যাপক শামসুল আলমসহ সরকারের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত থাকবেন।
শামসুল আলম জানান, অর্থনীতিতে সব সময়ই কিছু ঝুঁকি থাকে। এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপও নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগসহ সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
তবে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে বলে জানান জিইডির এ সদস্য। তিনি বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও বেড়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অর্থনীতিতে যে বেশ কিছু ঝুঁকি আছে, তা অর্থমন্ত্রী নিজেও বরাবর স্বীকার করেছেন। আজকের বৈঠকে অর্থনীতির ঝুঁকি মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁটের বিষয়েও আলোচনা হবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই_অক্টোবর) উন্নয়ন কর্মসূচির ১৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। খরচ কমানো ও বাস্তবায়নের হার বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই প্রকল্প কমানোর কাজ শুরু করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বিপুল ভর্তুকি ও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৈদেশিক সহায়তা ছাড় না হওয়ায় সামষ্টিক অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে। আর এ কারণেই ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ভর্তুকি কমাতে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোরও চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় সরকার জ্বালানি তেল ও পাইকারিপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। গ্যাস ও খুচরাপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কতটা বাড়ানো যৌক্তিক, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নেওয়া হবে।
তা ছাড়া চলতি অর্থবছরের ৪৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁটের মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ২০ নভেম্বর অর্থনৈতিক সমন্বয় কমিটির (ইকোনমিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল) বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ নয়_এমন উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে এ বছর প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাদ পড়তে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
তাঁরা জানান, অর্থমন্ত্রী সরকারের ব্যয় কমানোসহ আয় বাড়াতে কতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে_আপাতত সব খাতে সরকারের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখা, নতুন করে আর কোনো কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের অনুমোদন না দেওয়া, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমানো, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে ভারসাম্য আনতে অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক হার বাড়ানো ও রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আরো প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অর্থনীতিতে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখিতা। গত অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১১.৪২ শতাংশ। আন্তর্জাতিকপর্যায়ে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্যের ওপর মূল্যস্ফীতি নির্ভর করলেও এর প্রভাব থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে_সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকরা।

No comments

Powered by Blogger.