বিচার দাবি-নুরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে :জাফর ইকবাল
টিএসসির রাজু ভাস্কর্য ঘিরে প্রতিবাদী অবস্থান নেন ছাত্র, শ্রমিক, কর্মচারী, শিক্ষক, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা। তাদের বুকে কালো ব্যাজ আর প্রতিবাদী হাত মুষ্টিবদ্ধ। এভাবেই ১৫ মিনিট নীরব অবস্থান তাদের। গতকাল শনিবার নাগরিক কমিটি আয়োজিত এ প্রতিবাদী অবস্থান শেষে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ডিসেম্বর মাস এলে মানুষ আনন্দ করে আর আমরা পালন করছি প্রতিবাদ কর্মসূচি। কারণ যারা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, যাদের অবদানে আমরা এ
স্থানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি, তাদের একজনকে হত্যা করা হয়েছে। ভালো মানুষকে হত্যা করলে আনন্দ করব কীভাবে। তিনি অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম ও তার একমাত্র ছেলে তমোহর ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ঘটনাটি সরকার হত্যাকাণ্ড হিসেবে স্বীকার করার পরও বিচারকাজ শুরু হয়নি, শেষ হয়নি তদন্ত কাজ। এভাবে কতদিন চলবে?
বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নাগরিক কমিটি আয়োজিত স্মরণসভায় গণতন্ত্রী পার্টির প্রয়াত সভাপতি নুরুল ইসলাম ও তার একমাত্র ছেলে তমোহর ইসলাম হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি বলেন, কোনোরকম ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়া সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও মৃত্যুরহস্য এখনও উন্মোচন করতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করেন তিনি।
প্রতিবাদী কর্মসূচিতে জাফর ইকবাল বলেন, আমরা জেনেছি, হত্যার কয়েকদিন আগে তাকে ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। আমরা জানতে চাই কারা এই হুমকি দিয়েছিল? এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কী ছিল? কারা এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে আছে। আবার যে ফ্রিজের শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগার কথা বলা হয়েছিল, তা গোয়েন্দাদের কাছে আছে। নিহতদের ফরেনসিক রিপোর্টে কী বের হয়েছে তা আমরা জানতে চাই ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে মনিটরিং সেলে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলাকালে এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।
২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বর নুরুল ইসলাম ও তার ছেলে তমোহর ইসলাম ঘুমন্ত অবস্থায় অগি্নদগ্ধ হন। একদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিতা-পুত্রকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরিবারের পক্ষ থেকে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দাবি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়াসন বিভাগের বিশেষজ্ঞ দল, বাংলাদেশ শিল্প গবেষণা পরিষদ এবং ডিপিডিসির তদন্তে অগি্নকাণ্ডে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তবে পুলিশের তদন্তকারী দল এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চার্জশিট তৈরি করতে পারেনি।
স্মরণসভায় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, সেদিন কী ঘটেছিল তা এখনও রহস্যাবৃত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী তদন্ত করে এখনও কোনো সুরাহা পায়নি। তিনি বলেন, গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, আজ পর্যন্ত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে না পারাটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হতেই হবে।
অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, অজয় রায়, নূহ-উল আলম লেলিন, কবি মহাদেব সাহা, ড. ওয়াজেদ উল খান, মোঃ আফজল, আয়েশা খানম, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, ইব্রাহিম খালিদ, আবদুল কাদের হাওলাদার, আবদুর রহমান প্রমুখ। বক্তারা বলেন, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বর ছিলেন নুরুল ইসলাম। সহজেই মানুষের বন্ধু হতে পারতেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্ত্রী রুবি রহমান এমপি ও কন্যা মৌটুসী ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
মৌন প্রতিবাদ :নুরুল ইসলাম ও তার ছেলে তমোহর ইসলামকে (পুচি) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে দ্রুত বিচার শুরু ও তদন্ত শেষ করতে মৌন প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে 'নাগরিক কমিটি' এ কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল, এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহফুজা খানম, নুরুল ইসলামের সহধর্মিণী কবি রুবি রহমান এমপি, তমোহরের বন্ধু মাসুদ আলী, মকবুল আহমদ, তফাজ্জল হোসেন, মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
No comments