দুই শিশু সন্তানের সামনে আগুনে পুড়িয়ে স্ত্রী হত্যা
'পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে আমি মারুফার গলা টিপে ধরি। সে নিস্তেজ হয়ে পড়লে দিশাহারা হয়ে যাই। যাতে ধরা না পড়ি এ জন্য গায়ে আগুন ধরিয়ে দিই। এ সময় দুই সন্তান ঘুম থেকে জেগে যায়। তাই মারুফাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি।' রাজধানীর বাড্ডায় স্ত্রী মারুফা সিদ্দিকী ওরফে আকলিমাকে (২৪) নির্মমভাবে হত্যার কাহিনী স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে এভাবেই বর্ণনা করেন স্বামী শেখ ফরিদ উদ্দীন।
শুক্রবার গভীর রাতে মেরুল বাড্ডার ৮/এ নম্বর বাসায় এ ঘটনা ঘটে। মায়ের প্রতি বাবার এমন পাষণ্ড আচরণ চার বছরের মেয়ে অপর্ণা ও দুই বছরের পূর্ণ দেখে ফেলে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, গতকাল ভোরে মারুফাকে তার স্বামী শেখ ফরিদ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। শরীরে পোড়া দাগ আর গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ হলে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মারুফাকে মৃত ঘোষণা করলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন শেখ ফরিদ। এ সময় ফাঁড়ির পুলিশ তাকে আটক করলে তিনি দাবি করেন, মশার কয়েলের আগুনে তার স্ত্রী পুড়ে মারা গেছেন। পরে তাকে বাড্ডা থানা পুলিশের হাতে তুলে দিলে তিনি স্ত্রী হত্যার কথা স্বীকার করেন।
বাড্ডা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শেখ ফরিদ তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে শেখ ফরিদ বলেন, স্ত্রীকে মারার কোনো ইচ্ছা ছিল না। রাতে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আকলিমার গলা টিপে ধরি। এতে পা দাপিয়ে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ে সে। এ সময় পাশে ঘুমানো ছেলে পূর্ণ ও মেয়ে অপর্ণা জেগে যায়। আমি দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আকলিমার নিস্তেজ দেহে আগুন ধরিয়ে দিই। 'আগুন আগুন' বলে চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। নিজেই আগুন নিভিয়ে অচেতন স্ত্রীকে বাঁচাতে হাসপাতালে ছুটে আসি।
মারুফার বড় ভাই আল আমিন সিদ্দিকী আকাশ সমকালকে বলেন, মেরুলের কেমিক্যাল ব্যবসায়ী শেখ ফরিদের সঙ্গে আট বছর আগে তার বোনের বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান থাকার পরও ক'দিন আগে ফরিদ গোপনে আরও একটি বিয়ে করেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে তার বোনের সঙ্গে স্বামীর কলহ শুরু হয়। এক পর্যায়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিতে রাজি হয় ফরিদ; কিন্তু তা না করে কৌশলে তার বোনকে হত্যা করে ফরিদ।
নিহত মারুফার মেয়ে অপর্ণা তার মামা আকাশকে জানায়, রাতভর মাকে নির্যাতন করেন তার বাবা। মায়ের চিৎকারে তার ঘুম ভাঙলেও একসময় মায়ের সাড়াশব্দ বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই মায়ের শরীরে আগুন দেখা যায়। এরপর বাবা চিৎকার দেন।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় থানায় শনিবার রাতে একটি হত্যা মামলা করেছেন মারুফার ভাই আল আমিন আকাশ। এতে গ্রেফতার হওয়া স্বামী শেখ ফরিদ ছাড়াও তার মা ও ভাইকে আসামি করা হয়েছে।
হাসপাতালে স্ত্রীর লাশ ফেলে পালালো স্বামী : এদিকে শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ত্রী সাবিনা বেগমের লাশ রেখে পালিয়েছে তার স্বামী আবদুল হালিম। পরে গতকাল শনিবার সকালে মর্গে স্বজনরা তার লাশ শনাক্ত করেন। ২৬ বছর বয়সী সাবিনা স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে দক্ষিণ বাড্ডায় থাকতেন।
নিহতের ভাই জাহাঙ্গীর আলম সমকালকে বলেন, বাসচালক বোনজামাই হালিম তাদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় বোনকে নির্যাতন করতেন তিনি। শুক্রবার তার বোনকে নির্যাতন করে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যান বোনজামাই নিজেই। রাতে তার বোন মারা গেলে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে রাতে হাসপাতালে ছুটে গেলেও বোনের সন্ধান পাননি তারা। পরে সকালে মর্গে বোনের লাশের খোঁজ পান।
বাড্ডা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান সমকালকে জানান, এ ঘটনায় পুলিশ আবদুল হালিমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে। সাবিনার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত সাবিনার বাবার নাম ইসহাক বেপারী। বাড্ডার বেরাইদে তাদের বাড়ি।
No comments