ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ by একরামুল হক শামীম
ইন্টারনেট যখন মত প্রকাশের শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে তখন সরকারি নজরদারিও বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়েছে। আরব বিপ্লব ও অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট ঘরানার সব আন্দোলনে ইন্টারনেটের প্রভাব রয়েছে। টাইম ম্যাগাজিন 'প্রতিবাদীদের' ২০১১ সালের সেরা ব্যক্তিত্ব নির্বাচন করেছে। টাইমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রতিবাদীরা তাদের প্রতিবাদকে তুলে ধরতে এবং এর প্রচার চালাতে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। তিউনিসিয়ার জেসমিন
বিপ্লব, মিসর, লিবিয়া কিংবা সিরিয়ার আরব বিপ্লব থেকে শুরু করে দেশে দেশে অকুপাই আন্দোলন স্পষ্ট করেছে তরুণদের গণজাগরণের বিষয়টি। এই আন্দোলনগুলো প্রত্যক্ষভাবে সরকার বা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গেছে। ফলে সরকার পক্ষ এখন ইন্টারনেটের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া কিছু পদক্ষেপই তা প্রমাণ করে। ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে ভারতের কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী কপিল সিবাল ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, টুইটারসহ অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে আক্রমণাত্মক উপাদান সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো অনলাইনের বিষয়বস্তুর আত্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পেঁৗছতে ব্যর্থ হয়েছে।
ভারতের মন্ত্রীর কথায়ই বোঝা যাচ্ছিল ইন্টারনেটে লেখালেখি নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের এক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ২১টি ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে। এর মধ্যে ফেসবুক, গুগল, ইয়াহু, মাইক্রোসফট এবং ইউটিউবের মতো সাইট রয়েছে। এসব সাইট মূলত সামাজিক যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এদের ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষ। এসব সাইটের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা মানেই ব্যবহারকারীদের ওপর নিয়মকানুন আরোপ করা। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট সমনে জানিয়েছে, ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ২১টি ওয়েবসাইট থেকে সব মর্যাদাহানিকর তথ্য মুছে ফেলতে হবে। এ কাজে ব্যর্থ হলে এসব ওয়েবসাইটকে আপত্তিকর বিষয়বস্তু ওয়েবকাস্ট করার দায়ে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। কোর্ট এসব ওয়েবসাইটকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়ে ১৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিপালন প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে। সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো এসব কাজ না করলে কিংবা করতে ব্যর্থ হলে তা আদালতের অবমাননা হিসেবে বিবেচিত হবে। এই সমন জারির তিন দিন আগে আরেকটি কোর্ট কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ সাইটের ওপর নির্দেশ দিয়েছে। সে অনুযায়ী ফেসবুক, গুগল ও ইউটিউবসহ অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে ধর্মবিরোধী ও সমাজবিরোধী, যা ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক বিরোধ ছড়ায় তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ইন্টারনেটের বিষয়বস্তুর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে ইতিবাচক মনে করছেন না ভারতের সিভিল রাইটস আইনজীবীরা। এছাড়া অনলাইন অ্যাকটিভিস্টরাও এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বলছেন। তাদের মতে, এসব পদক্ষেপ ইন্টারনেটে মুক্ত মত প্রকাশ বাধাগ্রস্ত করবে। কোন কোন বিষয়বস্তু 'মর্যাদাহানিকর' বিবেচিত হবে কিংবা কার প্রেক্ষিতে তা মর্যাদাহানিকর হবে তা পরিষ্কার হয় আদালতের নির্দেশনামায়। ফলে নিয়ন্ত্রণের নামে সরকারের সমালোচনা রুখার চেষ্টা হতে পারে।
ভারতের সাম্প্রতিক এই আলোচনা বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কয়েক দিন আগে 'তথ্য স্বাধীনতা : ইন্টারনেটের যুগে চ্যালেঞ্জ কোথায়?' শীর্ষক এক সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেছেন, কোনো ওয়েবসাইটে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ কোনো ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করা হলে সেই সাইটটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। স্মরণ করা যেতে পারে, কুরুচিপূর্ণ ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের কথা বলে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক কয়েক দিনের জন্য বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তখন সেই সিদ্ধান্ত দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর ব্যবহার আইন করে নির্ধারণ করা যাবে কি-না তা নিয়ে সরকারি পর্যায় থেকে ভাবা উচিত। সামাজিক যোগাযোগ সাইটের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন কেবল এসব সাইটের ব্যবহারকারীরা। কিছু হলেই ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়ার প্রবণতা মোটেও ইতিবাচক নয়।
samim707@gmail.com
No comments