২১ কোম্পানি রাইট শেয়ার ছেড়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা তুলেছে by সুজয় মহাজন
বছরজুড়ে মন্দার মধ্যেও রাইট শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজার থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে তালিকাভুক্ত ২১টি কোম্পানি। অভিহিত মূল্যের সঙ্গে প্রিমিয়াম যোগ করে এই অর্থ সংগ্রহ করেছে কোম্পানিগুলো, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালের চাঙা বাজার থেকে রাইট শেয়ার ইস্যু করে সংগ্রহ করা হয়েছিল প্রায় পৌনে দুই হাজার কোটি টাকা। ডিএসই ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর
তালিকাভুক্ত ২১টি কোম্পানি রাইট শেয়ারের মাধ্যমে প্রায় ১১৭ কোটি সাধারণ শেয়ার বাজারে ছেড়েছে, যার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে দুই হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। জানা গেছে, সংগৃহীত টাকা বেশির ভাগ কোম্পানিই চলতি মূলধন হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। আবার অনেকে এ টাকায় কোম্পানির মূলধন বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মন্দা বাজারে রাইট শেয়ার ইস্যুর ফলে তা বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ক্ষতি পোষাতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
যোগাযোগ করা হলে বাজার বিশ্লেষক আখতার হোসেন সান্নামাত প্রথম আলোকে বলেন, বলতে গেলে চলতি বছরের প্রায় পুরোটা সময় বাজারে দরপতন ঘটেছে। তাই চাঙা বাজারে যাঁরা চড়া দামে শেয়ার কিনেছিলেন, তাঁরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। এ অবস্থায় অনেক কোম্পানি বাজারমূল্যের চেয়ে কম মূল্যে রাইট শেয়ার ইস্যু করে। যেসব বিনিয়োগকারী রাইট শেয়ার নিয়েছেন, তাঁদের শেয়ারের গড় ক্রয়মূল্য অনেক নিচে নেমে এসেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কিছুটা হলেও কমেছে।
সান্নামাত আরও বলেন, বাজার এখন বিনিয়োগের বেশ ভালো একটি অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তাদের হাতে থাকা রাইট বা আইপিও আবেদনগুলো দ্রুত ছাড় করা।
জানা গেছে, চলতি বছর যে ২১টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যু করেছে তার মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের পাঁচটি, বিমা খাতের আটটি, বস্ত্র খাতের দুটি এবং বিনিয়োগ, খাদ্য, বিদ্যুৎ, সিমেন্ট, ভ্রমণ ও বিবিধ খাতের একটি করে কোম্পানি। এর মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলো তাদের মূলধন বাড়াতে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে।
২০১০ সালের বাজার ধসের পর সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে রাইট শেয়ার ইস্যুকে বাজার কারসাজির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে। তাই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) রাইট শেয়ার ইস্যু নীতিমালা সংশোধন করে।
সাপ্তাহিক বাজার: দেশের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী একটি সপ্তাহ পার হয়েছে। গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারের সব কটি সূচকেই ঊর্ধ্বগতি ছিল। সপ্তাহ শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮০৯ কোটি টাকায়, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ৩২ শতাংশ বা ৪৪১ কোটি টাকা বেশি।
এদিকে আগামীকাল সোমবার থেকে চলতি বছরের শেষ সপ্তাহের লেনদেন শুরু হবে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিন উপলক্ষে আজ রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকবে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন ছাড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে বাজারে অস্বাভাবিক কোনো উত্থান-পতন দেখা যায়নি।
সপ্তাহ শেষে ঢাকার বাজারের দৈনিক গড় লেনদেন বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩৬২ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৮৮ কোটি টাকা বেশি। পাশাপাশি ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ২৩২ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ২৩২ পয়েন্টে।
যোগাযোগ করা হলে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক সালাহউদ্দিন আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আরোপের ফলে সাময়িকভাবে হলেও বাজারের পতন থেমেছে। এসইসির এ সিদ্ধান্তের ফলে নিষ্ক্রিয় অনেক বিনিয়োগকারী আবারও সক্রিয় হয়েছেন। নতুনভাবে আশাবাদী হয়ে ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা আবারও বিনিয়োগ শুরু করেছেন।
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের অর্থের বা তহবিলের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই বাজারের বর্তমান ধারা অব্যাহত রেখে এটি স্থিতিশীল রূপ দিতে হলে তারল্য সরবরাহ বা তহবিল বাড়াতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে বা নতুন শেয়ার বাজারে এনে তহবিলের জোগান বাড়ানো যেতে পারে।
সপ্তাহজুড়ে ঢাকার বাজারে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৪৪টিরই দাম বেড়েছে আর কমেছে ২২টির।
২০১১ সালে রাইট শেয়ার ইস্যু করা ২১ কোম্পানি
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (১:১)
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (১:১)
ব্যাংক এশিয়া (১:৪)
প্রিমিয়ার লিজিং (১:১)
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং (১:১)
এইমস ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড (১৩০%)
ফুয়াং ফুড (১:১)
বিডি ওয়েল্ডিং (১:২)
সোনারগাঁও টেক্সটাইল (১:১)
ইউনাইটেড এয়ার ( ১:১)
সিনোবাংলা (১:১)
লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট (১:১)
সিএমসি কামাল (১:২)
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স (১:১)
জনতা ইন্স্যুরেন্স (১:২)
ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ( ১:২)
পাইওনিয়র ইন্স্যুরেন্স ( ৫:১)
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স (১:১)
সিটি ইন্স্যুরেন্স (১:১)
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স (২:১)
এশিয়া ইন্স্যুরেন্স (১:১)
No comments