অন্তরাত্মায় বড় হওয়ার দিন- বড়দিন by ফাদার জয়ন্ত এস. গমেজ
বড়দিন বা ক্রিসমাস খ্রিস্টানদের অন্যতম আনন্দময় ও পবিত্র উৎসব। বড়দিন মুক্তিদাতা যীশুখ্রিস্টের জন্মতিথি। পাপময় অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীর মানুষদের উদ্ধার করতে ঈশ্বর তনয় যিশু জন্ম নিলেন বেথেলহেমের মরিয়ম নামের এক কুমারীর গর্ভে। অসীম ঈশ্বর সসীমতায় নেমে এলেন। ঈশ্বরত্বকে আঁকড়ে না থেকে মানুষ হয়ে মানুষের ঘরে জন্ম নিলেন। ঈশ্বর তনয়ের এই জন্ম হয়েছে পবিত্র আত্মার বিশেষ শক্তিতে।
কোনো দেহগত সম্পর্কে নয় বরং ঈশ্বরের সুমহান ইচ্ছানুসারেই যিশুর জন্ম হয়েছে কুমারী মরিয়মের গর্ভে। ঈশ্বরের এই দেহগ্রহণ মানবজাতির জন্য বড় আশির্বাদ। ঈশ্বর নিজেই উদ্যোগী হয়ে রক্ত-মাংসের মানুষ হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিলেন। কিন্তু এই মানব যিশুর মধ্যে ঈশ্বরত্ব অক্ষু্ন্ন রইল। যিশুর দেহগ্রহণের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের মহান প্রেম ও ভালবাসার বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে। বড়দিন হলো ভালোবাসার উৎসব। মিলনের উৎসব।
যিশুর দেহগ্রহণের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের, স্বর্গের সঙ্গে মর্তের এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালবাসার সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। জগৎ সংসারে পরস্পরের সঙ্গে প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনে থাকা একটি সার্বজনীন আহবান। দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বিবাদ-বিশৃংখলা, ঘৃণা, প্রতিহিংসা ও স্বার্থপরতা ত্যাগ করে পরস্পরের মঙ্গল কামনা করা আমাদের প্রতিদিনকার চ্যালেঞ্জ। যিশুর জন্ম হয়েছে বেথেলহেমের এক জীর্ণ গোশালায় অত্যন্ত দরিদ্র পরিবেশে। স্বর্গ-পৃথিবীর রাজা হয়েও তিনি সেদিন জন্মেছিলেন দীন বেশে। এই দীন-হীন দরিদ্র পরিবেশে যিশুর জন্মের তাৎপর্য রয়েছে। পৃথিবীর সকল দীন-দুঃখী, অভাবী, অসহায়, নির্যাতিত, অবহেলিত, লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করলেন। অধিকারবঞ্চিত ও ক্ষমতাহীন লোকদের মানবিক মর্যাদা ও সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার মহান ব্রতে তিনি নিবেদিত হলেন। এ জন্য তাকে অনেক দুঃখ-দাহ, প্রতিকুলতা, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তবুও তিনি পিছ ুপা হননি। তিনি সকল কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামাজিক অন্যায্যতা, বৈষম্য ও ধর্মীয় পূঁজিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ তাঁর প্রচ- বিরুদ্ধাচারণ করেন। তাতেও তিনি ক্ষান্ত হননি। ইহুদি ধর্মীয় বিধান অনুসারে যিশুর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা ও ঈশ্বর নিন্দার অভিযোগ আনা হয়। ঈশ্বরকে নিজের পিতা বলে দাবি করায় ঈশ্বর নিন্দার অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করে, ক্রুশ কাষ্ঠে ঝুলিয়ে নিষ্ঠুরভাবে তাকে হত্যা করা হয়। এসব কিছুকে পাশ কাটিয়ে কিংবা অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে, ঈশ্বর পুত্র হিসাবে তাঁর বিরুদ্ধে আনিত শাস্তি মৃত্যুদ- তিনি উপেক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু করেননি। আর তাতে মানবজাতির মুক্তির জন্য তাঁর আত্মদান বা আত্মোৎসর্গ পরিপূর্ণতা পেয়েছে। তিনি স্বেচ্ছায় বেছে নিলেন ক্রুশ মৃত্যুদ-। কেন?
যে কোনো মহৎ কাজের জন্য চাই বড় ত্যাগ। পৃথিবীর যত মহান কাজ সংগঠিত হয়েছে তার পেছনে রয়েছে মানুষের সাধনা, ত্যাগ, কষ্ট স্বীকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তথা লাল-সবুজের পতাকার প্রতিষ্ঠা পেতে লক্ষ-কোটি শহীদ ও অগণিত ভাইবোনদের আত্মত্যাগ ও জীবন উৎসর্গের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রেরণায় দেশ ও জাতি পরিচালিত হলে, দেশের চেহারাটাই পাল্টে যেতো। যিশুর নিঃস্বার্থ ও নিঃশর্ত আত্মদান ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গোটা মানবজাতির মুক্তির সনদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। যিশুর আত্মত্যাগ বা আত্মোৎসর্গ সদিচ্ছাসম্পন্ন সকল মানুষকে কল্যাণকাজে প্রতিনিয়ত প্রেরণা ও শক্তি যুগায়।
বড়দিন হলো অন্তরাত্মায় বড় হওয়ার দিন। যিশুখ্রিস্ট বলেছেন, আমি তোমাদের যেভাবে ভালবেসেছি, তোমরাও পরস্পরকে সেইভাবে ভালবাসবে। বড়দিন ভালবাসার দিন। বড়দিন যেমন আনন্দের, তেমনি যিশুর শিক্ষা ও আদর্শে পথ চলার অঙ্গিকারের দিন। যিশু খ্রিস্টের নম্রতা, আত্মত্যাগ ও মানবকল্যাণের ব্রতে দীক্ষা নেবার উপযুক্ত সময়। মানুষে-মানুষে রেষারেষি, হিংসা-বিদ্বেষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, হানাহানি পরিত্যাগ করে মিলন ও ভ্রাতৃত্ববোধে এগিয়ে যাওয়া বড়দিনের সার্বজনীন আহবান। তাই প্রতিটি সদিচ্ছাসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন গোশালা থেকে ছোট শিশু যিশুকে তুলে এনে প্রত্যেকের হৃদয়মন্দিরে আসন করে দেওয়া, যেটি তাঁর প্রকৃত স্থান।
লেখক: পরিচালক, খ্রিস্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্র
সম্পাদক, সাপ্তাহিক প্রতিবেশী
যিশুর দেহগ্রহণের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের, স্বর্গের সঙ্গে মর্তের এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালবাসার সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। জগৎ সংসারে পরস্পরের সঙ্গে প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনে থাকা একটি সার্বজনীন আহবান। দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বিবাদ-বিশৃংখলা, ঘৃণা, প্রতিহিংসা ও স্বার্থপরতা ত্যাগ করে পরস্পরের মঙ্গল কামনা করা আমাদের প্রতিদিনকার চ্যালেঞ্জ। যিশুর জন্ম হয়েছে বেথেলহেমের এক জীর্ণ গোশালায় অত্যন্ত দরিদ্র পরিবেশে। স্বর্গ-পৃথিবীর রাজা হয়েও তিনি সেদিন জন্মেছিলেন দীন বেশে। এই দীন-হীন দরিদ্র পরিবেশে যিশুর জন্মের তাৎপর্য রয়েছে। পৃথিবীর সকল দীন-দুঃখী, অভাবী, অসহায়, নির্যাতিত, অবহেলিত, লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মানুষের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করলেন। অধিকারবঞ্চিত ও ক্ষমতাহীন লোকদের মানবিক মর্যাদা ও সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার মহান ব্রতে তিনি নিবেদিত হলেন। এ জন্য তাকে অনেক দুঃখ-দাহ, প্রতিকুলতা, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তবুও তিনি পিছ ুপা হননি। তিনি সকল কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামাজিক অন্যায্যতা, বৈষম্য ও ধর্মীয় পূঁজিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ তাঁর প্রচ- বিরুদ্ধাচারণ করেন। তাতেও তিনি ক্ষান্ত হননি। ইহুদি ধর্মীয় বিধান অনুসারে যিশুর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা ও ঈশ্বর নিন্দার অভিযোগ আনা হয়। ঈশ্বরকে নিজের পিতা বলে দাবি করায় ঈশ্বর নিন্দার অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করে, ক্রুশ কাষ্ঠে ঝুলিয়ে নিষ্ঠুরভাবে তাকে হত্যা করা হয়। এসব কিছুকে পাশ কাটিয়ে কিংবা অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে, ঈশ্বর পুত্র হিসাবে তাঁর বিরুদ্ধে আনিত শাস্তি মৃত্যুদ- তিনি উপেক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু করেননি। আর তাতে মানবজাতির মুক্তির জন্য তাঁর আত্মদান বা আত্মোৎসর্গ পরিপূর্ণতা পেয়েছে। তিনি স্বেচ্ছায় বেছে নিলেন ক্রুশ মৃত্যুদ-। কেন?
যে কোনো মহৎ কাজের জন্য চাই বড় ত্যাগ। পৃথিবীর যত মহান কাজ সংগঠিত হয়েছে তার পেছনে রয়েছে মানুষের সাধনা, ত্যাগ, কষ্ট স্বীকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তথা লাল-সবুজের পতাকার প্রতিষ্ঠা পেতে লক্ষ-কোটি শহীদ ও অগণিত ভাইবোনদের আত্মত্যাগ ও জীবন উৎসর্গের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রেরণায় দেশ ও জাতি পরিচালিত হলে, দেশের চেহারাটাই পাল্টে যেতো। যিশুর নিঃস্বার্থ ও নিঃশর্ত আত্মদান ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গোটা মানবজাতির মুক্তির সনদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। যিশুর আত্মত্যাগ বা আত্মোৎসর্গ সদিচ্ছাসম্পন্ন সকল মানুষকে কল্যাণকাজে প্রতিনিয়ত প্রেরণা ও শক্তি যুগায়।
বড়দিন হলো অন্তরাত্মায় বড় হওয়ার দিন। যিশুখ্রিস্ট বলেছেন, আমি তোমাদের যেভাবে ভালবেসেছি, তোমরাও পরস্পরকে সেইভাবে ভালবাসবে। বড়দিন ভালবাসার দিন। বড়দিন যেমন আনন্দের, তেমনি যিশুর শিক্ষা ও আদর্শে পথ চলার অঙ্গিকারের দিন। যিশু খ্রিস্টের নম্রতা, আত্মত্যাগ ও মানবকল্যাণের ব্রতে দীক্ষা নেবার উপযুক্ত সময়। মানুষে-মানুষে রেষারেষি, হিংসা-বিদ্বেষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, হানাহানি পরিত্যাগ করে মিলন ও ভ্রাতৃত্ববোধে এগিয়ে যাওয়া বড়দিনের সার্বজনীন আহবান। তাই প্রতিটি সদিচ্ছাসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন গোশালা থেকে ছোট শিশু যিশুকে তুলে এনে প্রত্যেকের হৃদয়মন্দিরে আসন করে দেওয়া, যেটি তাঁর প্রকৃত স্থান।
লেখক: পরিচালক, খ্রিস্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্র
সম্পাদক, সাপ্তাহিক প্রতিবেশী
No comments