প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবি-বিক্ষোভে উত্তাল রাশিয়া

রাশিয়ার নিম্নকক্ষ দুমায় পুনর্নির্বাচনের দাবিতে গতকাল শনিবার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানী মস্কো। মস্কোর সাখারভ এভিনিউয়ে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনের পদত্যাগ ও নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানায়। গত ১০ ডিসেম্বররের পর আবারও এত বড় বিক্ষোভ দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাখারভ এভিনিউয়ে গতকাল সকাল


থেকে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে থাকে। তারা সাদা বেলুন ও ‘অবাধ নির্বাচন’ স্লোগান লেখা ব্যানার বহন করে। বিক্ষোভকারী ওলেগ লেফোনভ বলেন, ‘আমরা এখানে আমাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে এসেছি। কর্তৃপক্ষ নিজের বন্ধুদের ক্ষমতায় বসাতে চায়, তারা সবকিছুই নিজের মতো করে নিচ্ছে। আসলে তারা সোভিয়েত আমলের কমিউনিস্টদের মতো আচরণ করছে।’
বিক্ষোভস্থলে মাইক ব্যবহার করে রকস্টার ভিক্টর তিসোইয়ের ‘আমরা পরিবর্তন চাই’ শিরোনামের গান বাজানো হয়। কয়েকজন বিক্ষোভকারীর হাতে থাকা বড় আকৃতির ব্যানারে ‘আমরা জেগে উঠেছি, এটা কেবল শুরু’ লেখা দেখা যায়।
বিক্ষোভের আয়োজকেরা জানিয়েছেন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখায়েল গর্বাচেভসহ অনেকেই এই বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বক্তৃতা করবেন। রাশিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী আলেক্সি কুদরিন গতকাল প্রথমবারের মতো বিক্ষোভে যোগ দেন। ক্রেমলিনবিরোধী ব্লগার আলেক্সি নাভালনি কারাভোগ শেষে মুক্তি পাওয়ার পর গতকালই ওই বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার কথা। এর আগে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার দায়ে তাঁকে কিছু দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বিক্ষোভ আয়োজকদের একজন রাজনীতিবিদ ভ্লাদিমির রিজখভ। তিনি দাবি করেন, বিক্ষোভে অন্তত এক লাখ ২০ হাজার বিক্ষোভকারী অংশ নেয়। তবে মস্কোর পুলিশ গতকাল এক বিবৃতিতে জানায়, বিক্ষোভে ২৮ হাজারের মতো মানুষ অংশ নেয়। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রত্যক্ষদর্শী একজন সাংবাদিক জানান, বিক্ষোভকারীদের জমায়েত শাখারভ এভিনিউ ছাড়িয়ে আশপাশের সড়কগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর একই দাবিতে মস্কোতে এমন বিক্ষোভ হয়।
গতকাল এই বিশাল বিক্ষোভ হলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সহিংসতার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ কোথাও বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয়নি বলে জানা গেছে। বিক্ষোভকারীরা কোথাও সহিংস আচরণ করেনি।
এর আগে বিভিন্ন বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে কয়েক দিনের অভিযানে শত শত লোককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর মস্কোয় বিক্ষোভের অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে ক্রেমলিন রাইটস প্যানেল গতকাল এক বিবৃতিতে দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্লাদিমির চুরভের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে।
গত ৪ ডিসেম্বর রাশিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার ৪৫০টি আসনের মধ্যে ভ্লাদিমির পুতিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া ২৩৮টি আসনে বিজয়ী হয়। ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইউনাইটেড রাশিয়া ৩১৫টি আসন পেয়েছিল। এবারের নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে দেশটির হাজার হাজার মানুষ পুতিনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে। এএফপি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.