মনোজগতে বিশাল পরিবর্তন এসেছে’

কসময়ের টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট এখন অস্ট্রেলিয়ার এক নম্বর টেস্ট ওপেনার। কদিন আগে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই করেছেন আদ্যন্ত ব্যাটিং। মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টের আগে একটি ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডেভিড ওয়ার্নার কথা বললেন ক্যারিয়ারের এই উত্থান নিয়ে  এই এমসিজিতেই বিশ্বকে চমকে দিয়ে অভিষেক আপনার (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪৩ বলে ৮৯), প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথম উল্লেখযোগ্য রানও এখানে (৯৯)।


এবার টেস্ট খেলবেন, অনুভূতি কেমন? ডেভিড ওয়ার্নার: এমসিজিতে ঢোকার অনুভূতিটা যেকোনো সময়ই অসাধারণ। টি-টোয়েন্টি অভিষেকের কথা আমার এখনো মনে পড়ে, তখন জানতাম কী হবে। এখন এটা আমার অন্যতম প্রিয় মাঠ। এই স্টেডিয়াম নিজেই আসলে একটা মানদণ্ড। মাঠের মাঝ থেকে চারপাশে তাকালে স্রেফ বলতে হয় ‘ওয়াউ!’
 প্রথম ম্যাচের ওই পারফরম্যান্সে প্রত্যাশার চাপ অনেক বেড়ে গিয়েছিল, যেটা আপনার ব্যাটিংয়ে প্রভাবও ফেলেছে। এখন টেস্ট খেলছেন, কী শিক্ষা নিয়েছেন অতীত থেকে?
ওয়ার্নার: গত দুই বছরে অনেক শিখেছি। শুরুতে মনে হয়েছিল, আমি একটু দ্রুতই দৃশ্যপটে চলে এসেছি। সব সময়ই মনে হতো টি-টোয়েন্টির মেজাজে আছি। সব বলকেই মাঠের বাইরে আছড়ে ফেলতে চাইতাম। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা, নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। ওয়ানডেতেও এখন ইনিংস গড়ে তুলতে শিখেছি।
 মনে হচ্ছে, আপনি এখন অনেক পরিণত, খেলা নিয়ে ভাবতে শিখেছেন...
ওয়ার্নার: আমার মনোজগতে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। আগে উইকেটে গিয়েই খ্যাপাটে হয়ে উঠতাম, উইকেট ছুড়ে আসতাম। এখন আমি নিজের উইকেটকে শতবার বেশি শ্রদ্ধা করতে শিখেছি, এমনকি নেটেও। আগে উইকেটে গিয়ে ধুমধাম কিছু মারতাম আর তাতেই সন্তুষ্ট থাকতাম। এখন ভাবি, ‘এসব কী করতাম!’ এখন আউট হলে নিজের ওপর প্রচণ্ড রাগ হয়, কারণ মাঠে সুযোগ একটাই পাওয়া যায়।
 সব সময়ই বলে এসেছেন আপনার শৈশবের নায়ক শেন ওয়ার্ন, আপনি নিজেও লেগ স্পিন করেন। সেদিন এমসিজিতে (বিগ ব্যাশের ম্যাচে) ওয়ার্নের সঙ্গে কথার লড়াই কেমন হলো?
ওয়ার্নার: সামান্য একটু, তেমন বেশি নয়। শেনের প্রতি আমার অপরিসীম শ্রদ্ধা। ও এমন একজন মানুষ, আমার মনে হয় না ম্যাচে কখনোই আমি ওকে স্লেজিং করব। আর কথা বলতে দিতে হয় ব্যাটকেই। সেদিন অপরাজিত সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়েছিলাম, রাতটা ছিল দারুণ।
 আপনার আরেক নায়ক তো বীরেন্দর শেবাগ, আপনার মাঝে টেস্ট সম্ভাবনা প্রথম দেখেছিলেন তিনিই। কাল তাঁর বিপক্ষে মাঠে নামবেন, কেমন লাগছে?
ওয়ার্নার: দারুণ কিছু হতে যাচ্ছে। বছর দুয়েক হলো দিল্লিতে (ডেয়ার ডেভিলস) তাঁর সঙ্গে আছি। আমাকে ও অনেক সাহায্য করেছে, শুধু টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং নিয়ে নয়, টেস্ট ব্যাটিং নিয়েও। আমার ওপর সব সময়ই তাঁর অগাধ আস্থা। তাঁকে আমি অনেক অনুসরণও করি, কারণ আমরা দুজনই একই রকমের ক্রিকেটার। ও আমাকে যা বলেছে, সেটা অবশ্যই যৌক্তিক, টেস্টে রান করার সুযোগ অনেক বেশি। তবে বল যখন সুইং করে, তখন মানিয়ে নিতে হয়। অনেক বেশি শট খেলে বলেই তাঁর অনেক আউট কটবিহাইন্ড বা স্লিপে। এ ব্যাপারে আমাকে সতর্ক থাকতে হবে। তবে কখনো কখনো ভুল তো আমরা সবাই করি।
 শেবাগের সেরা ইনিংসগুলোর একটি এখানে, ২০০৩ বক্সিং ডে টেস্টের ১৯৫। ইনিংসটা দেখেছিলেন?
ওয়ার্নার: দেখিনি, সম্ভবত আমি তখন স্কুলে একাদশ শ্রেণীতে পড়তাম। আর ক্রিসমাস নিয়েও ব্যস্ত ছিলাম।
 আপনার অনেক ব্যাটিং জুটি বলেছেন, উইকেটে গিয়ে আপনি প্রচুর কথা বলেন, একটু নাকি খিটখিটেও...
ওয়ার্নার: উইকেটে গিয়ে সবাই আসলে যতটা সম্ভব নির্ভার থাকতে চায়। কেউ কথা বলতে পছন্দ করে, কেউ করে না। কেউ আবার আরেকজনের কথা শোনে, বেশি কিছু বলে না। আমি ব্যাটিংয়ের সময় খেলার নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি, কোথায় ফিল্ডার নেই, বেশি রক্ষ্মণাত্মক হয়ে গেলাম কিনা, কঠিন সময়গুলো কীভাবে পার করে দেওয়া যায়—এসব। আমি যা করছি, সেটা নিয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে চাই।
 ক্রিকেট খেলাটা এমন যে অনেক দৃশ্য বা ছবি মনে গেঁথে থাকে। আপনার কি এমন কিছু মনে পড়ে?
ওয়ার্নার: আমার সব সময়ই মনে পড়ে ২০০১ অ্যাশেজের ওভাল টেস্টের ওই ছবিটা, সেঞ্চুরির পর মাটিতে শুয়ে পড়েই ব্যাট উঁচিয়ে ধরে আছেন স্টিভ ওয়াহ! যারা ঠিকমতো জানে না, তারা হয়তো বলবে, ‘ওহ, সেঞ্চুরি করেছে। কিন্তু সেঞ্চুরিটা স্টিভ করেছিল প্রায় এক পায়ে, কাফ মাসলের চোট নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এই ইনিংসটাই প্রমাণ করে কতটা সাহসী ছিল স্টিভ। নিউ সাউথ ওয়েলসের ড্রেসিংরুমে ওই ছবিটা টাঙানো আছে, তাকালেই একটা কথা সব সময় আমার মনে পড়ে ‘সাহসিকতা’।
 আপনার প্রিয় চলচ্চিত্র তো ‘আই অ্যাম স্যাম’, যেখানে দেখানো হয়েছে সন্তান লালন-পালন করতে একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বাবার লড়াই। আপনার চরিত্রের নরম ও আবেগময় দিকটা কি এতে ফুটে ওঠে?
ওয়ার্নার: সবার হূদয়েই নরম একটা জায়গা আছে। আমি সিনেমা দেখতে ভালোবাসি, প্রিয় সিনেমাগুলো বারবার দেখি। এর মধ্যে অনেক দুঃখের সিনেমাও আছে। অন্য অনেকেই হয়তো কমেডি পছন্দ করে। কিন্তু পছন্দ করি এমন চলচ্চিত্র যেগুলো হূদয় ছুঁয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.