প্রতিদিন ৩০ হাজার মণ জ্বালানি কাঠ পাচার! by এম জসীম উদ্দীন
বরগুনায় বনের গাছ কেটে ইটভাটা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে। স্থানীয় জ্বালানি কাঠ ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী এখান থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ হাজার মণ জ্বালানি কাঠ ইটভাটা ও বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়। কাঠ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন গ্রামে দালাল নিয়োগ করে এসব গাছ কিনে জেলার প্রায় ৫০টি ইটভাটায় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে জ্বালানি কাঠবোঝাই অন্তত ৩০টি ট্রাক
দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরগুনায় বন বিভাগের ১৩৭ দশমিক ৫৫ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল রয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলার সামাজিক, ব্যক্তিমালিকানাধীন এমনকি সংরক্ষিত বন থেকে একশ্রেণীর কাঠ ব্যবসায়ী অবাধে হাজার হাজার মণ জ্বালানি কাঠ কেটে স্থানীয় বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করছেন।
জ্বালানি কাঠ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জানান, বরগুনার ৩০টি ইটভাটা ও ২৫টি ইটের পাঁজায় প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার মণ কাঠ সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া প্রতিদিন জ্বালনি কাঠভর্তি অন্তত ৩০টি ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান তাঁরা। প্রতিটি ট্রাকে ৩৫০ থেকে ৪০০ মণ করে গাছ পরিবহন করা হয়। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা ও আমতলী থেকে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি কাঠ সংগৃহীত হয়।
দীর্ঘদিন ধরে বরগুনা সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া-কদমতলা এলাকাটি কাঠ পাচারের একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। এই এলাকার কাঠ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঠ কিনে তা ইটবাড়িয়া এলাকায় এনে জমা করেন। সেখান থেকে ট্রাকে করে কাঠ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এখানে ব্যবসা-নিয়ন্ত্রণ করেন ইটবাড়িয়া গ্রামের মো. ফেরদৌস। তিনি বলেন, আমি ও আমার লোকজন বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে এসব গাছ সংগ্রহ করে চুয়াডাঙ্গা, মুন্সিগঞ্জসহ অনান্য জেলায় চালান করি। বরগুনা সদরে এমন আরও ১০-১২ জন ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা ইটভাটাগুলোতে কাঠ সরবরাহ করেন।
আমতলীর জ্বালানি কাঠ ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, আমতলীতে তাঁর মতো ১৫-২০ জন ব্যবসায়ী আছেন। তিনি আরও জানান, আমতলী থেকে প্রতিদিন ছয়-সাতটি জ্বালানি কাঠবোঝাই ট্রাক ফরিপুর, কুষ্টিয়া ও ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এ ছাড়া আমতলী উপজেলার ১২টি ইটভাটার প্রতিটিতে দৈনিক কমপক্ষে ২০০ মণ জ্বালানি কাঠ সরবরাহ করেন তাঁরা। একইভাবে পাথরঘাটার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে চরদুয়ানি, কালমেঘা, কূপদোন, কাকচিড়া; বেতাগীর বিভিন্ন স্থান থেকে খেয়াঘাট, চামটা, নিয়ামতি, মোকামিয়া, কাজীরহাট; আমতলীর বিভিন্ন স্থান থেকে তালুকদারহাট, সেকান্দারখালী, নীলগঞ্জ, টিয়াখালী, খলিয়ান এলাকায় জ্বালানি কাঠ এনে রাখা হয়। পরে এসব স্থান থেকে এগুলো প্রতিদিন ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়।
পাথরঘাটায় ব্যক্তিগত বনাঞ্চল ছাড়াও সামাজিক বন, সবুজ বেষ্টনী, সংরক্ষিত বন থেকে কাঠ কেটে ইটভাটা, চারকোল কয়লা কারখানা ও ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে।
বন বিভাগ পাথরঘাটার রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, ট্রাকে করে গাছ পাচারের বিষয়টি অনেক দিন ধরেই চলছে। গাছ কেটে ফেলায় প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর হুমকির পাশাপাশি দুর্যোগপ্রবণ এ জেলার জীবন ও সম্পদের সুরক্ষা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া যেকোনো ধরনের গাছ কাটা সম্পূর্ণ বেআইনি। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের বিরোধিতা ও আমাদের জনবল সংকটের কারণে এসব বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তারপরেও সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা বৃক্ষ নিধন রোধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেব। তবে সংরক্ষিত বন থেকে গাছ চুরির প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি।’
বরগুনা সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে যথা শিগগিরই আমরা ব্যবস্থা নেব।
No comments